অনুপ্রাস অলংকারের সংজ্ঞাসহ বিভিন্ন ভাগের পরিচয় দাও।
অনুপ্রাস
বাক্যের মধ্যে একই বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ যুক্ত বা বিযুক্তভাবে একাধিকবার ধ্বনিত হলে অনুপ্রাস অলংকার হয়।
উদাহরণ ১
চল চপলার চকিত চমকে
করিছ চরণ বিচরণ।
ব্যাখ্যা: কবিতার এই ছত্রটিতে একই ‘চ’ ব্যঞ্জনধ্বনি বহুবার উচ্চারিত হওয়ায় শ্রুতি-সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণে ‘চ’ ধ্বনিটি এই ছত্রের অনুপ্রাস অলংকার।
উদাহরণ ২:
হায়রে হৃদয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ব্যাখ্যা: এখানে ‘দিনান্তে’, ‘নিশান্তে’, ‘পথপ্রান্তে’ এই তিনটি শব্দবন্ধে ‘আন্তে’ ধ্বনিগুচ্ছ একাধিকবার উচ্চারিত হয়ে বাক্যের শ্রুতি-সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। এই কারণে এখানে অনুপ্রাস অলংকার সৃষ্টি হয়েছে।
অনুপ্রাসের শ্রেণিবিভাগ
অনুপ্রাস প্রধানত পাঁচ প্রকারের— অন্ত্যানুপ্রাস, বৃত্যনুপ্রাস, ছেকানুপ্রাস, লাটানুপ্রাস, শ্রুত্যনুপ্রাস।
অন্ত্যানুপ্রাস
কবিতার এক চরণের শেষে যে শব্দধ্বনি থাকে অন্য চরণের শেষে তার পুনরাবৃত্তি ঘটলে তাকে অন্ত্যানুপ্রাস বলে।
উদাহরণ:
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।
ব্যাখ্যা: এখানে প্রথম চরণের শেষে ‘আ’ স্বরধ্বনিসহ ‘ন’ ব্যঞ্জনধ্বনি আছে, দ্বিতীয় চরণের শেষে তার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। সুতরাং এটি অন্ত্যানুপ্রাসের উদাহরণ।
বৃত্ত্যনুপ্রাস
বাক্যের মধ্যে যদি একটি ব্যঞ্জনধ্বনি একাধিকবার ধ্বনিত হয় বা ব্যঞ্জনধ্বনিগুচ্ছ যথার্থ ক্রমানুসারে সংযুক্ত বা বিযুক্তভাবে একাধিকবার ধ্বনিত হয় তবে বৃত্যনুপ্রাস হয়।
উদাহরণ:
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা।
ব্যাখ্যা: এখানে ‘তার’ ‘কবেকার’ ‘অন্ধকার’ ‘বিদিশার’ চারটি শব্দবন্ধে ‘আর’ ধ্বনিগুচ্ছের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। তাই এটি বৃত্যনুপ্রাসের উদাহরণ।
ছেকানুপ্রাস
বাক্যের মধ্যে একই ধ্বনিগুচ্ছ যদি যথার্থ ক্রমানুসারে সংযুক্তভাবে মাত্র দুইবার ধ্বনিত হয় তাহলে ছেকানুপ্রাস অলংকার হয়।
উদাহরণ:
ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
ব্যাখ্যা: এখানে ‘ন্ধ’ ধ্বনিগুচ্ছ সংযুক্তভাবে একইক্রমে মাত্র দুইবার ধ্বনিত হয়েছে। তাই এটি ছেকানু্প্রাসের উদাহরণ।
লাটানুপ্রাস
বাক্যের মধ্যে একই শব্দ প্রায় একই অর্থে একাধিকবার ব্যবহৃত হলে লাটানুপ্রাস হয়।
উদাহরণ:
যত গোপনে ভালবাসি পরাণ ভরি
পরাণ ভরি উঠে শোভাতে।
ব্যাখ্যা: এখানে ‘পরাণ’ এবং ‘ভরি’ শব্দদুটি প্রায় একইঅর্থে একাধিকবার ব্যবহৃত হয়েছে। তাই এটি লাটানু্প্রাস। বাংলায় লাটানুপ্রাসের তেমন কোনো প্রয়োগ দেখা যায় না।
শ্রুত্যনুপ্রাস
বাগযন্ত্রের একই স্থান থেকে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনির শ্রুতিমধুর সমাবেশকে শ্রুত্যনুপ্রাস বলে।
উদাহরণ:
পরপারে দেখি আঁকা তরুছায়া মসীমাখা।
ব্যাখ্যা: এখানে কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত ‘ক’ এবং ‘খ’ ব্যঞ্জনধ্বনি ‘আ’ স্বরধ্বনির সঙ্গে যুক্ত হয়ে শ্রুতিমধুর হয়ে উঠেছে। তাই এটি শ্রুত্যনুপ্রাসের উদাহরণ।
Leave a Reply