কবি অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরীর অবদান আলোচনা কর।
অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী
বাংলা সাহিত্যে রোমান্টিক আখ্যায়িক কাব্য ও গাথাকবিতা রচনার ধারার প্রবর্তন করেন অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী (১৮৫০-১৯১৮)। তিনি এদিক থেকে রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ কবিগণের রচনার প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগ এবং তার প্রভাবেই রবীন্দ্রনাথ কাহিনিকাব্য রচনায় অনুপ্রাণিত হন। অসাধারণ মেধা ও পাণ্ডিত্যের অধিকারী অক্ষয় চৌধুরী কাব্য ব্যতীত সঙ্গীতশিল্পেও দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। ‘উদাসিনী’ নামক কাহিনিকাব্য, ভারতবর্ষের ধারাবাহিক ইতিহাস অবলম্বনে ‘ভারতগাথা’, ইংরেজ কবি পোপ-এর কাব্য অবলম্বনে ‘মাধব কাব্য’ প্রভৃতি তাঁর রচনা। তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল আত্মবিস্মৃত সৌন্দর্য-স্বপ্নাকুলতা। তাঁর কাব্যে স্বপ্ন-সুরভিত প্রেম সৌন্দর্যের রোমান্টিক পিপাসা গীতমূর্ছনায় তরঙ্গিত হয়ে উঠেছে। সারল্য ও স্বচ্ছতা অক্ষয়কুমার চৌধুরীর কাব্যের বৈশিষ্ট্য। ইংরেজি সাহিত্যেও তাঁর যথেষ্ট অধিকার ছিল। গীতিকবিতার অনুভূতির অকৃত্রিম প্রকাশ তাঁর কাব্যে বিরল নয়। যেমন—
দেখিব বিকায়ে হিয়ে
পরাণ-সর্বস্ব দিয়ে
গম্ভীর সাগর-প্রেম পাওয়া কিনা যায়!
দেখিব এ দগ্ধ হৃদি নাহি কি জুড়ায়!
না জুড়াক মন প্রাণ,
নাই পাই প্রতিদান,
জ্বলন্ত যাতনে হৃদি হোক দগ্ধপ্রায়,
তবুও উজানে ফিরে
যেতে সাধ হয় কিরে!
প্রাণ মন বিসর্জিয়ে রহিব হেথায়,
যাহাতে মিশেছি প্রেমে মিশিব তাহায়।
Leave a Reply