সংস্কৃত ভাষায় রচিত চৈতন্যদেবের জীবনী কাব্য সম্পর্কে আলোচনা কর।

মুরারি গুপ্তের কড়চা

সমগ্র চৈতন্যজীবনী কাব্যের মধ্যে মুরারি গুপ্তের কড়চা বা ‘শ্ৰীশ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্যচরিতামৃতম্’ আদিতম এবং প্রামাণ্য গ্রন্থ। মুরারি গুপ্ত ছিলেন শ্রীগৌরাঙ্গের বয়োজ্যেষ্ঠ এবং অন্য কালের সঙ্গী। মুরারি চৈতন্যের ভক্ত ছিলেন এবং তার ভক্তিবাদে মুরারির বিশ্বাস ছিল।

মুরারি তাঁর কড়চায় চৈতন্য জীবনের বাল্য থেকে তিরোধান পর্যন্ত ঘটনা বর্ণনা করেছে আঠাত্তরটি সর্গে। কবিরাজ গোস্বামীর মতে—

আদিলীলার মধ্যে প্রভুর যতেক চরিত্র।

সূত্ররূপে মুরারি গুপ্ত করিলা গ্রন্থিত।

মুরারি যেহেতু শ্রীচৈতন্যের অনুচর এবং তার নবদ্বীপলীলার প্রধান সাক্ষী তাই কবি কর্ণপুর, বৃন্দাবনদাস, কৃষ্ণদাস কবিরাজ প্রভৃতি জীবনীকারগণ শ্রীচৈতন্যের নবদ্বীপলীলা প্রসঙ্গে মুরারির গ্রন্থকে প্রামাণ্য বলে গ্রহণ করেছে।

পরমানন্দ সেন (কবি কর্ণপুর)

শ্রীচৈতন্যের অন্যতম পরিচারক শিবানন্দ সেনের পুত্র পরমানন্দ সেন কবি ও নাট্যকার রূপে সংস্কৃত সাহিত্যে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তিনি ছিলেন পারম্যবাদের প্রবক্তা। তিনি ‘কবি কর্ণপুর’ নামে বৈষ্ণব সমাজে অধিক খ্যাত হয়েছিলেন।

তাঁর ‘চৈতন্যচরিতামৃত’ মহাকাব্য ১৫৪২ খ্রিস্টাব্দে সমাপ্ত হয়। তাঁর মতে চৈতন্য আবির্ভাবের কারণ কলিযুগে ত্ৰিতাপ দগ্ধ জীবনের উদ্ধার।

তাঁর ‘চৈতন্যচন্দ্রোদয়’ নাটকটি রূপক নাটক। তা দশ অঙ্কে সমাপ্ত। প্রথম পাঁচ অঙ্কে চৈতন্যের পুরীধামে বসবাস পর্যন্ত এবং শেষ পাঁচ অঙ্কে চৈতন্যদেবের শেষ কয় বৎসরের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।

এছাড়া কবি কর্ণপুরের ‘গৌরগণোদ্দেশদীপিকা’ গ্রন্থে চৈতন্যাবতার ও চৈতন্য পরিকরদের অবতারত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

প্রবোধানন্দ সরস্বতী

শ্রীচৈতন্যের পরম ভক্ত প্রবোধানন্দ সরস্বতী চৈতন্য জীবন অবলম্বনে ‘চৈতন্যচন্দ্রামৃত’ নামে একটি স্তব-গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। চৈতন্যতত্ত্বের বিকাশ এই গ্রন্থের প্রধান সম্পদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!