বাংলা রঙ্গমঞ্চের ইতিহাসে কালিকা থিয়েটারের অবদান আলোচনা কর।

কালিকা থিয়েটার

(১৯৪৪-১৯৫২)

উত্তর কলকাতা অঞ্চল জুড়েই এতোদিন যতো পেশাদার সাধারণ রঙ্গালয়গুলি গড়ে উঠেছিল। এবারে দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট অঞ্চলে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে কালিকা থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রধান উদ্যোক্তা এবং প্রতিষ্ঠাতা রামচন্দ্র চৌধুরী।

১৯৪৪-এর ২২ ডিসেম্বর শরৎচন্দ্রের উপন্যাস ‘বৈকুণ্ঠের উইল’-এর নাট্যরূপ ( বিধায়ক ভট্টাচার্য) দিয়ে এই থিয়েটারের উদ্বোধন হয়।

প্রথম নাটকই এখানে জমে গেল। অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করার ফলে কালিকা থিয়েটারের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। উদ্যোক্তারাও উৎসাহিত হয়ে পরপর নাট্যাভিনয় করে যেতে থাকে। ১৯৪৫-এ ধীরেন্দ্র নারায়ণ রায়ের ‘অচলপ্রেম’ (১৭ ডিসেম্বর), ১৯৪৬-এ তারক মুখোপাধ্যায়ের ‘রামপ্রসাদ’ (২৭ নভেম্বর), ১৯৪৮-এ তারক মুখোপাধ্যায়ের ‘যুগদেবতা’ (১৯ নভেম্বর) অভিনীত হয়।

‘রামপ্রসাদ’ নাটক বেশ জমে গিয়েছিল এবং চলেও ছিল ভালো। তবে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের কাহিনী অবলম্বনে নাটক ‘যুগদেবতা’ অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করলো। উত্তর কলকাতার থিয়েটারের দর্শকেরাও দক্ষিণ কলকাতায় ভিড় করতে লাগলো। ‘যুগদেবতা’ অনেক পেশাদার মঞ্চকে প্রভাবিত করেছিল।

তারক মুখোপাধ্যায়ের ‘মীরাবাঈ’-এর অভিনয় শুরু হলো ২০ জুলাই, ১৯৪৯। ‘মীরাবাঈ’ নাটকটিও গানে ও অভিনয়ে দর্শক মনোরঞ্জনে সমর্থ হয়। পরেই শরৎচন্দ্রের উপন্যাস ‘বিরাজবৌ’-এর নাট্যরূপ (কানাই বোস) অভিনীত হয় ২৩ নভেম্বর, ১৯৪৯। ‘বিরাজ বৌ’ সেভাবে না চলাতে এবারে ১৯৫০-এর গোড়ায় নামানো হলো ‘২৬ জানুয়ারি’। নাট্যকার বিধায়ক ভট্টাচার্য। নাটকটি খুবই খ্যাতি অর্জন করে। অভিনয়, প্রয়োগ এবং সঙ্গীতে এই নাটক জনপ্রিয় হয়েছিল।

১৯৫০-এর আরেকটি প্রযোজনা ‘কল্যাণী’, তারক মুখখাপাধ্যায়ের রচনা। অভিনীত হলো ১৮ মার্চ। নাটকটি একমাসের বেশি চলেনি। তাই ২৮ এপ্রিল নামানো হলো মণিলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটক ‘কাজল গাঁয়ের মেয়ে’। এই নাটক তিনচার মাস চলার পরে অভিনীত হলো ওই একই নাট্যকারের ঐতিহাসিক নাটক ‘পেশোয়া মাধবরাও’ (১৬.১২.১৯৫০)। এটিও খুব সার্থক হয়নি।

স্বাধীনতার বছরে (১৯৪৭) যেমন নামাননা হয়েছিল ‘স্বাধীনতার সাধনা’ এবং ‘যশোরেশ্বরী’—সেগুলি একেবারেই চলেনি। তেমনি পরবর্তী কালের এই নাটকগুলিও সাফল্য লাভ করেনি।

এবারে অভিনীত হলো তারাশঙ্করের নাটক ‘দ্বীপান্তর’। অভিনীত হলো ১৯৫১-এর ৩০ মার্চ। কালিকা থিয়েটারের এটিই শেষ উল্লেখযোগ্য প্রয়োজনা। কয়েকমাস চলার পর এটির অভিনয় বন্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে কালিকা থিয়েটারেরও দরজা বন্ধ হয়ে যায়। সাত বছর নিয়মিত চলার পর এই থিয়েটার আর্থিক অনটনে বন্ধ হয়ে যায়। তারপরে এই থিয়েটার সিনেমা হলে রূপান্তরিত হয়ে দরজা খোলে।

 

 

Publication date:
Author: Admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!