চণ্ডীমঙ্গল কাব্যধারায় রামানন্দ যতির কৃতিত্ব আলোচনা কর।
রামানন্দ যতি
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে রামানন্দ যতি নামক এক বৈষ্ণব সন্ন্যাসী ‘চণ্ডীমঙ্গল’ রচনা করেছিলেন। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনিলবরণ গঙ্গোপাধ্যায় রামানন্দ যতির চণ্ডীমঙ্গল সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন। রামানন্দ গ্রন্থ রচনার সমাপ্তিকাল সম্পর্কে নিজেই জানিয়েছেন—
গজ বসু ঋতু চন্দ্র শোকে গ্রন্থ হয়।
চণ্ডীর আদেশ পায়্যা রামানন্দ কয়।।
এই সূত্র অনুযায়ী কবির কাব্য রচনাকাল ১৬৮৮ শকাব্দ বা ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দ অর্থাৎ অন্নদামঙ্গল কাব্য রচনাকালের চৌদ্দ বৎসর পর এই কাব্য রচিত হয়েছিল।
রামানন্দ কবি মুকুন্দের কাব্যের গ্রাম্যতা বা অশ্লীলতার সমালোচনা করেছেন। তবুও রামানন্দ কবি মুকুন্দের কাব্যের দোষগুলি বাদ দিয়ে, কোন কোন অংশ সংক্ষিপ্ত করে, কোন কোন অংশ আত্মসাৎ করে নিজের রচনা প্রকাশ করেছেন।
মঙ্গলকাব্যে সে যুগে আদিরস এমনভাবে ঠাই পেয়েছিল সেজন্য রামানন্দ তার মঙ্গলকাব্যে আদিরস বর্জন করতে চেয়ে বলেছেন—
আদিরস প্রকাশে মূঢ়ের মন মজে।
তেঞি কবি সকলেই সেই রসে ভজে।।
আসলে রামানন্দ কবি মুকুন্দের কবিপ্রতিভাকে সম্যক উপলব্ধি করতে পারেননি। সে যাই হোক রামানন্দ যেভাবে কাহিনি সংক্ষিপ্ত করেছিলেন, তাতে মঙ্গলগানের এক একটি পালার দাবি পূরণ করতে পারেননি। রামানন্দ লোকসাহিত্যের জন্য তাঁর কাব্য রচনা করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন—
রামানন্দ যতি জগতে বিদিত।
লোকহিত হেতু করে ভাযা গীত।।
তবে রামানন্দের এই যুক্তি সমাজ মেনে নেয়নি। কারণ জীবনের মধ্যে দিয়ে জীবনের নীতি প্রকাশ পায়। সুতরাং রামানন্দের চণ্ডীমঙ্গল সমাজে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি।
তথ্যসূত্র:
১. বাংলা মঙ্গলকাব্যের ইতিহাস: আশুতোষ ভট্টাচার্য
২. বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত: অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
৩. বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস: সুকুমার সেন
Leave a Reply