//
//

শ্রীকর নন্দীর ছুটিখানী মহাভারত সম্পর্কে আলোচনা কর।

শ্রীকর নন্দী ও ছুটিখানী মহাভারত

শ্রীকর নন্দীর ভূমিকায় অন্য একটি মহাভারত কাব্যের অস্তিত্ব আছে। ভণিতায় কোথাও শ্রীকর নন্দী নামও উল্লেখিত আছে। তিনি পরাগল খানের পুত্র ছুটিখানের আদেশে জৈমিনি মহাভারতের ওপর নির্ভর করে কেবল ‘অশ্বমেধ পর্বে’র অংশ নিয়ে মহাভারত রচনা করেন। কাব্যটি ‘ছুটিখানী মহাভারত’ নামে পরিচিত। ছুটিখান সম্ভবত কবীন্দ্র পরমেশ্বরের বস্তুসংক্ষেপ জাতীয় কাব্যে পরিতৃপ্তি লাভ করেননি। তাই তিনি আরও বিস্তৃত করে কাব্য রচনার জন্য কবি শ্রীকর নন্দীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ছুটিখানের নির্দেশ সম্পর্কে কবি লিখেছেন—

অশ্বমেধ কথা শুনি প্রসন্ন হৃদয়।

সভাখণ্ডে আদেশিল খান মহাশয়॥

দেশী ভাষায় এহি কথা রচিল পয়ার।

সঞ্চারৌক কীর্তি মোর জগত সংসার॥

তাহার আদেশ মাল্য মস্তকে ধরিয়া।

শ্রীকর নন্দী কহিলেন পয়ার রচিয়া॥

কবীন্দ্র পরমেশ্বর ও শ্রীকর নন্দী এই দুই ভণিতাই পরাগলী মহাভারতে রয়েছে, কিন্তু ছুটিখানী মহাভারতে কেবল শ্রীকর নন্দীর ভণিতা আছে। এ সমস্যার সমাধান সম্পর্কে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ লিখেছেন— ‘‘প্রথমে ছুটিখান শ্রীকর নন্দীকে জৈমিনি ভারত অনুবাদে নিযুক্ত করেন এবং তাঁহাকে কবীন্দ্র পরমেশ্বর উপাধি দেন। তারপর পরাগল খা তাহাকে মহাভারতের অনুবাদ করিতে নিযুক্ত করেন। সেই সময় কবির উপাধি এত প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিল যে তাহার নিজের নাম ব্যবহারের কোনও প্রয়োজন ছিল না।’’ ড. সুকুমার সেন প্রমুখ যারা শ্রীকর নন্দীকে স্বতন্ত্র কবি মনে করেন তাঁরা ছুটিখানী মহাভারতে কবিপ্রতিভার কিছুটা উৎকর্ষ লক্ষ করেছেন এবং তাদের মতে দুই কবি প্রায় এক সময়ে এক শাসক বংশের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন বলে একের কাব্যে অন্যের ভণিতা ও রচনাংশ প্রবেশ করেছে। শ্রীকর নন্দী শুধু অশ্বমেধ পর্বের অনুবাদ করেছিলেন বলে বিস্তারিতভাবে মূল অনুসরণ করেছিলেন। তাঁর অনুবাদ আলঙ্কারিক বর্ণনায় সমৃদ্ধ না হলেও বক্তব্যের সহজ প্রকাশের জন্য প্রশংসার যোগ্য। রচনার কাল নির্ণয় প্রসঙ্গে সুখময় মুখোপাধ্যায় অনুমান করেছেন—পরমেশ্বরের মহাভারতের উচ্চতম সীমা ১৫০১; এবং শ্রীকর নন্দীর মহাভারত, অশ্বমেধ পর্ব লেখা হয়েছিল ১৫১৮ সালে হুসেন শাহের রাজত্ববসানের আগেই।

ছুটি খানের প্রকৃত নাম নসরত খান। কবি শ্রীকর নন্দী তার প্রশংসায় লিখেছেন—

লস্কর পরাগল খানের তনয়।

সমরে নির্ভীক ছুটি খান মহাশয়॥

তাহার যথেক গুণ শুনিয়া নরপতি।

সম্বাদিয়া আনিলেক কুতূহল মতি॥

নৃপতি আগ্রেত তার বহুত সম্মান।

ঘোটক প্রসাদ পাইল ছুটি খান॥

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!