রঙ্গমঞ্চের ইতিহাসে সিটি থিয়েটারের অবদান আলোচনা কর।
সিটি থিয়েটার
প্রথম পর্যায়
বীণা থিয়েটার মঞ্চে (৩৮নং মেছুয়াবাজার স্ট্রিট) প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠাতা: নীলমাধব চক্রবর্তী। প্রতিষ্ঠা: ১৬ মে, ১৮৯১। নাটক: গিরিশচন্দ্রের চৈতন্যলীলা।
রাজকৃষ্ণ রায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত বীণা থিয়েটার চালাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। তখন (১৮৯১) তিনি তাঁর বীণা থিয়েটার ভাড়া দিতে শুরু করেন। একসময়ে এই থিয়েটার ভাড়া নিলেন নীলমাধব চক্রবর্তী। সেখানে খুললেন ‘সিটি থিয়েটার’। প্রোপাইটার তিন জন—নীলমাধব চক্রবর্তীর নেতৃত্বে প্রবোধচন্দ্র ঘোষ ও অঘোরনাথ পাঠক। লেসী ও সেক্রেটারী: নীলমাধব চক্রবর্তী। ১৬ মে, ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে বীণা থিয়েটার মঞ্চে সিটি থিয়েটারের উদ্বোধন হল, গিরিশের ‘চৈতন্যলীলা’ নাটক দিয়ে। গিরিশ ছিলেন এই থিয়েটারের পরামর্শদাতা ও মুখ্য নাট্যকার। তাঁর ছেলে দানীবাবুও এখানে অভিনয় করতে থাকেন।
হাতিবাগানের স্টার থিয়েটার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গিরিশের মনোমালিন্য শুরু হয়। তিনি স্টার ছেড়ে চলে আসেন ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯১। গিরিশের সঙ্গে স্টার ছাড়েন নীলমাধব চক্রবর্তী। তাঁরই নেতৃত্বে অঘোরনাথ পাঠক, প্রবোধচন্দ্র ঘোষ, শরৎচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (রাণুবাবু), দানীবাবু, প্রমদাসুন্দরী, মানদাসুন্দরী প্রমুখেরাও স্টার পরিত্যাগ করেন। গিরিশের উৎসাহে ও নীলমাধবের নেতৃত্বে সিটি সম্প্রদায় তৈরি হল। তারাই খুললেন সিটি থিয়েটার। গিরিশ সম্মুখে না এসে পেছন থেকে এই সম্প্রদায়কে সাহায্য ও উৎসাহ দিতে থাকেন।
১৮৯১-তে অভিনয় করে: চৈতন্যলীলা (১৬ মে)। সরলা (১৭ মে), তাজ্জব ব্যাপার (২৩ মে), বিধ্বমঙ্গল ও বিবাহবিভ্রাট (৩১ মে), সীতার বনবাস (১৭ জুন), নলদময়ন্তী (২০ জুন), মলিনাবিকাশ (৫ জুলাই), বুদ্ধচরিত (১৮ জুলাই), তরুবালা (৯ আগস্ট), বিদ্যাসাগর (২১ আগস্ট), লীলা (৩ অক্টোবর), বুড়ো শালিখের ঘাড়ে রোঁ (৩১ অক্টোবর), পয়জারে পাজি (দুর্গাদাস দে, ২৪ ডিসেম্বর)।
১৮৯২-তে গত বছরের নাটকগুলিই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে অভিনয় করানো হয়। সরলা, বিশ্বমঙ্গল, বেল্লিকবাজার, বুদ্ধদেবচরিত, মলিনাবিকাশ প্রভৃতি পুরনো নাটকের সঙ্গে চোরের ওপর বাটপাড়ি (অমৃতলাল, ৩০ জানুয়ারি), ভোট-ভেল্কি (২৭ মার্চ) প্রভৃতি নাটকের নতুন অভিনয় করা হয়।
১৮৯২-এর ৮ এপ্রিল ‘সরলা’ ও ‘তাজ্জব ব্যাপার’ অভিনয় সিটি থিয়েটারের প্রথম পর্যায়ের শেষ অভিনয়।
এখানে বেশির ভাগ নাটকই গিরিশের লেখা। অমৃতলাল বসুর কয়েকটি (তাজ্জব ব্যাপার, তরুবালা, বিবাহবিভ্রাট, সরলা, চোরের ওপর বাটপাড়ি) নাটকেরও অভিনয় হয়। নতুন নাট্যকার (দুর্গাদাস দে’র একটি গীতিনাট্য ছাড়া) বা নতুন কোনো নাটকের অভিনয় এখানে হয়নি। পুরনো প্রচলিত নাটকগুলিই এখানে অভিনীত হয়েছিল।
দ্বিতীয় পর্যায়
বীণা থিয়েটার মঞ্চে প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠাতা: নীলমাধব চক্রবর্তী। প্রতিষ্ঠা: ৭ অক্টোবর, ১৮৯৩; নাটক: সরলা (নাট্যরূপ: অমৃতলাল বসু)।
নীলমাধব চক্রবর্তী প্রথম পর্যায়ের সিটি থিয়েটার বন্ধ করে দিয়ে বীণা থিয়েটার থেকে চলে আসেন। এদিকে গিরিশ তখন মিনার্ভা থিয়েটার প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যস্ত। সিটি সম্প্রদায়ের সঙ্গে গিরিশের মনোমালিন্য বেড়ে চললো। অবশেষে গিরিশ প্রথম পর্যায়ের সিটি থিয়েটারের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অনেককে নিয়েই মিনার্ভায় চলে যান। দানীবাবু, প্রবোধ ঘোষ মিনার্ভায় যোগ দেন। গিরিশের সাহায্য ও উপদেশ থেকে সিটি সম্প্রদায় বঞ্চিত হয়।
বীণা থিয়েটারে তখন অন্য দল নাটক করছিল। তারা ব্যর্থ হয়ে ‘বীণা’ ছেড়ে দিলে নীলমাধব চক্রবর্তী আবার উদ্যোগী হয়ে বীণা থিয়েটার ভাড়া নেন। সেখানে তাঁর সিটি থিয়েটারের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু করেন। ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ অক্টোবর অমৃতলাল বসুর নাট্যরূপ দেওয়া ‘সরলা’ (তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘স্বর্ণলতা’ উপন্যাস) নাটক দিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের সিটি থিয়েটারের উদ্বোধন হল। নীলমাধবই লেসী ও অনারারী সেক্রেটারী। আগের সিটি থিয়েটারের ভাঙা দল নিয়েই নীলমাধব চক্রবর্তী অভিনয় শুরু করলেন বীণা থিয়েটার মঞ্চে।
১৮৯৩-তে অভিনয় করলেন: সরলা (৭ অক্টোবর), ধ্রুবচরিত্র ও বিবাহবিভ্রাট (৮ অক্টোবর), তাজ্জব ব্যাপার (১৪ অক্টোবর), নলদময়ন্তী ও বিবাহবিভ্রাট (১৫ অক্টোবর), বিজয়াতে আগমন (২৮ অক্টোবর), চৈতন্যলীলা (৪ নভেম্বর), আনন্দলহরা বা হরিলীলা (৯ ডিসেম্বর), প্রফুল্ল (১৭ ডিসেম্বর), বেল্লিকবাজার (৩০ ডিসেম্বর), বেহদ্দ বেহায়া (কেদারনাথ মণ্ডল, ৩১ ডিসেম্বর)।
তারপরে, ১৮৯৪-এ যা অভিনয় করে, তার মধ্যে নতুন কোনো নাট্যকার বা নাটক ছিল না। পুরনো নাটকগুলিরই পুনরভিনয় চলতে থাকে। ১৮৯৪-এর ১১ ফেব্রুয়ারি বীণা থিয়েটার মঞ্চে সিটি থিয়েটারের দ্বিতীয় পর্যায়ের শেষ অভিনয়।
পরে অবশ্য নীলমাধব চক্রবর্তী এই মঞ্চে আবার ভাড়া নিয়ে ‘গেইটি থিয়েটার’ (Gaiety Theatre) খোলেন। ‘গেইটি’ সিটি থিয়েটারেরই পরিবর্তিত নাম, সিটি থিয়েটারের নীলমাধব-এর লেসী ও সেক্রেটারী এবং সিটি সম্প্রদায়ের লোকেরাই এখানে অভিনয় করে। ‘গেইটি’ এখানে ১৮৯৪-এর শেষের দিক থেকে ১৮৯৬-এর গোড়ার দিক পর্যন্ত চলেছিল। কিন্তু সে তো অন্য ইতিহাস।
তৃতীয় পর্যায়
মিনার্ভা মঞ্চে সিটি থিয়েটার। প্রতিষ্ঠা: ১১ এপ্রিল, ১৮৯৬।
নীলমাধব চক্রবর্তী মিনার্ভা মঞ্চ ভাড়া করে আবার তার দলবল নিয়ে সিটি থিয়েটার চালিয়েছিলেন, ১৮৯৬-এর ১১ এপ্রিল থেকে ১৮৯৬-এর ১৪ জুন পর্যন্ত, মোটে দু’মাস। কোনরকমে এখানে পুরনো কয়েকটি নাটকের অভিনয় করেন। স্থায়িত্বকাল খুবই সংক্ষিপ্ত এবং কার্যাবলীও খুবই সীমিত।
চতুর্থ পর্যায়
এমারেল্ড মঞ্চে সিটি থিয়েটার, ৬৮নং বিডন স্ট্রিট। প্রতিষ্ঠা: ২০ জুন, ১৮৯৬। প্রতিষ্ঠাতা: নীলমাধব চক্রবর্তী। নাটক: মোহমুক্তি।
১৮৯৬-তে এমারেল্ড থিয়েটারের অবস্থা খুবই খারাপ হয় এবং বেশ কিছু দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়ে নীলমাধব চক্রবর্তী এমারেল্ড মঞ্চ লীজ নেন এবং সেখানে খোলেন সিটি থিয়েটার। এমারেল্ড মঞ্চে সিটি থিয়েটারের উদ্বোধন হয়: ২০ জুন, ১৮৯৬; নাটক: মোহমুক্তি। ম্যানেজার ধর্মদাস সুর। ১৮৯৬-তে এখানে অভিনীত হয়—মোহমুক্তি (২০ জুন), আবুহোসেন ও বৃষকেতু (২১ জুন), তরুবালা ও তাজ্জব ব্যাপার (অমৃতলাল, ৫ জুলাই), বুদ্ধচরিত (২৫ জুলাই), প্রফুল্ল (৯ আগস্ট), সরলা (২৯ আগস্ট), বেহদ্দ-বেহায়া (কেদারনাথ মণ্ডল, ৩০ আগস্ট), মাধবী (৫ সেপ্টেম্বর), কালীয়দমন, চৈতন্যলীলা (১৩ সেপ্টেম্বর), সারস্বত কুঞ্জ (২৬ সেপ্টেম্বর), চারযুগ, স্বৰ্গনরক, মাধবী (৪ অক্টোবর), হীরার ফুল (৮ নভেম্বর), দেবী চৌধুরানী (১৯ ডিসেম্বর) এবং ১৮৯৭-তে-মাধবী, কষ্টিপাথর (The Touch Stone, ১ জানুয়ারি), বিল্বমঙ্গল (১০ জানুয়ারি) এইভাবে পুরনো এবং বারবার অভিনীত নাটকগুলিই এখানে অভিনীত হয়ে চললো। এবং বেশির ভাগইগিরিশের নাটক।
নীলমাধব চক্রবর্তী ঠিকমতো এমারেল্ড থিয়েটারের ভাড়া দিতে পারেননি। তাই এমারেন্ডের মালিক গোপাল লাল শীল সিটি থিয়েটারকে উঠিয়ে দেন। এমারেল্ড সিটি থিয়েটারের চতুর্থ পর্যায়ের শেষ অভিনয়: ১০ জানুয়ারি, ১৮৯৭। নাটক: গিরিশের বিদ্বমঙ্গল। তারপর সেখানে অমরেন্দ্রনাথ দত্ত খোলেন ক্লাসিক থিয়েটার।
পঞ্চম পর্যায়
সিটি থিয়েটার কার্জন থিয়েটারের মঞ্চে। ৯১ হ্যারিসন রোড।
১৯০০ খ্রিস্টাব্দে নীলমাধব চক্রবর্তী হ্যারিসন রোডের কার্জন থিয়েটার ভাড়া নিয়ে আবার সিটি থিয়েটার চালু করেন। উদ্বোধন হল, রবিবার ২৩ ডিসেম্বর, ১৯০০।
উদ্বোধনের দিন অভিনীত হল গিরিশচন্দ্র ঘোষের ‘পারিসানা’ নাটক। ‘পারিসানা’ গিরিশের আগের লেখা ও অভিনীত হয়ে যাওয়া ‘পারস্য-প্রসূন’ গীতিনাট্যের পরিবর্তিত নাম। এর সঙ্গে অমৃতলালের প্রহসন ‘কৃপণের ধন’ অভিনীত হয়। কৃপণের ধন নাটকে নীলমাধব হলধরের ভূমিকায় অভিনয় করেন। তারপরে এখানে আলিবাবা, হীরার ফুল প্রভৃতি নাটকেও অভিনয় হয়েছিল। এই মঞ্চেও সিটি থিয়েটারের স্থায়িত্বকাল খুবই অল্প সময়ের। ক্ষণিকের এই থিয়েটার-এর অস্তিত্বও তাই খুবই ক্ষীণ।
নীলমাধব চক্রবর্তী মূলত অভিনেতা ছিল। কিন্তু সে যুগের খ্যাতনামা অভিনেতাদের তুলনায় তিনি ক্ষমতায় ও প্রতিভায় অনেক ন্যূন ছিলেন। অথচ সে যুগের শ্রেষ্ঠ প্রতিভা গিরিশের তিনি অনুগ্রহভাজন ছিলেন। গিরিশ প্রয়োজনে তাকে অনেক সময়েই কাজে লাগিয়েছেন। দলাদলি ও মননামালিন্যের সময়ে গিরিশ প্রায়শই নীলমাধবকে সামনে রেখে পেছন থেকে লড়াই চালিয়েছে।
তাছাড়া সে যুগের রীতি অনুযায়ী নীলমাধব নিজের একটি থিয়েটারের জন্য প্রায়ই লালায়িত হতেন। সেখানে অপরের মুখাপেক্ষী বা খেয়াল-খুশির ওপর নির্ভর করে থাকতে হয় না, নিজের অভিনয় ক্ষমতার ন্যূনতা, পেছন থেকে গিরিশের অনুপ্রেরণা লাভ এবং নিজের থিয়েটারের মোহে নীলমাধব অনেক সময়েই খালি রঙ্গমঞ্চ ভাড়া নিয়ে নিজের থিয়েটার খুলেছেন, এইভাবে প্রথমে বীণা রঙ্গমঞ্চে সিটি থিয়েটার দু’বার দু’ভাবে চালাতে চেষ্টা করেছেন। পরে আবার এমারেল্ড মঞ্চ ভাড়া নিয়ে নতুন করে সিটি থিয়েটার চালাতে চেয়েছেন। সঙ্গে প্রথম দিকে পেয়েছেন গিরিশকে। পরে দানীবাবু, প্রবোধচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ অভিনেতাদের পেয়েছেন। শেষের দিকে তাও সেরকম কাউকে পাননি।
গিরিশ পারিবারিক শর্তের কারণে কখনোই কোনো মঞ্চের মালিক আর হননি। জীবনের প্রথম দিকে দু একটি ছাড়া। গিরিশ তাই যখনই কোনো মঞ্চের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝগড়া করে বা শর্ত ভেঙে বেরিয়ে গেছেন, তখনই বেশ কিছু অভিনেতা অভিনেত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। যতদিন না পাকাপোক্ত কোনো নতুন থিয়েটার কাউকে দিয়ে খোলাতে পেরেছেন, বা চালু কোনো থিয়েটারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন, ততদিন তার সঙ্গী অনুগ্রহভাজন অভিনেতা অভিনেত্রীদের অভিনয় জীবন অব্যাহত রাখার জন্য অস্থায়ী অন্তর্বর্তীকালীন একটি থিয়েটারের ব্যবস্থা রাখতে হয়েছে। তখনই তিনি নীলমাধবকে কাজে লাগিয়ে সামনে রেখে নিজে পেছন থেকে তাকে সচল রাখার চেষ্টা করেছেন। এইভাবে গিরিশের উৎসাহে ও সাহায্যে নীলমাধব বারে বারে স্বল্পকালীন থিয়েটার শুরু করেছেন আবার বন্ধ করে দিয়েছেন।
এইভাবে গিরিশের সঙ্গে অন্য কোনো থিয়েটারের মামলা হলে তার ফল অনেক সময়েই সিটি থিয়েটারকেও ভোগ করতে হয়েছে। কখনো জয়, কখনো পরাজয় ঘটেছে। যেমন স্টার থেকে বেরিয়ে গিরিশ নীলমাধবকে দিয়ে বীণা মঞ্চে সিটি থিয়েটার খুললেন। স্টার মামলা করল, চুক্তির কারণে গিরিশের কোনো নাটক সিটি করতে পারবে না। গিরিশের শিশু পুত্রের মৃত্যুর কারণে গিরিশের ওপর থেকে মামলা তুলে নিলেও, সিটির বিরুদ্ধে মামলা চলেছিল। সেবার সিটি জিতেছিল, তাই নবোদ্যমে আবার অভিনয় করতে পেরেছিল।
আবার গিরিশ মিনার্ভা থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করিয়ে সিটির দলবল নিয়ে মিনার্ভায় যোগ দিলেন। বীণা মঞ্চে সিটি থিয়েটার বন্ধ হয়ে গেল। অবশ্য মিনার্ভার সঙ্গে টাকা পয়সা নিয়ে মতান্তর হওয়ায় নীলমাধব ফিরে এসে আবার বীণা মঞ্চে সিটি থিয়েটার খুললেন। এবার আর গিরিশের সাহায্য পেলেন না।
নীলমাধবের প্রত্যেকটি প্রচেষ্টাই খুবই স্বল্পকালীন। এই স্বল্পকালীন প্রচেষ্টায় তিনি রঙ্গমঞ্চের নতুন কোনো পরিবর্তন করতে পারেননি, সেরকম চিন্তাও তার ছিল না। তিনি তখনকার চলতি জনপ্রিয় নাটকগুলি নিয়েই, তার সীমাবদ্ধ শিল্পীদের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে, গতানুগতিক পদ্ধতিতেই অভিনয় চালিয়ে গেছেন। নাটক-অভিনয়-প্রযোজনা—কোনো দিকেই তিনি নতুন কোনো উদ্যম বা ভাবনা চিন্তার পরিচয় রাখতে পারেননি। শুধুমাত্র বাংলা নাট্যশালার প্রথাসিদ্ধ যাত্রাপথের চলতি পথিক হিসেবেই পা মিলিয়েছেন। এবং তাঁর স্বল্পকালীন উদ্যম ইতিহাসের বিস্তৃত পরিসরে কোনো স্থানই লাভ করতে পারেনি।
Leave a Reply