রঙ্গমঞ্চের ইতিহাসে অন্যান্য থিয়েটারের অবদান আলোচনা কর।
অন্যান্য থিয়েটার
সাঁ সুসি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও বেশ কিছু বিদেশী থিয়েটার কলকাতায় চলেছিল। ‘ড্রামান্ডস একাডেমি’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে, প্রতিষ্ঠাতা মিঃ ড্রামান্ড ইংরেজি স্কুলের ছাত্রদের নাট্যাভিনয়ের শিক্ষা দিতেন। তিনি ধর্মতলায় ছোট ও সুন্দর প্রেক্ষাগৃহ তৈরি করে সেখানে অভিনয়ের ব্যবস্থা করেন। ১৮২৪-এর ২০ জানুয়ারি এখানে বিয়োগান্ত নাটক ‘ডগলাস’-এর অভিনয় হয়। নাটকের গোড়ায় মঞ্চে ডিরোজিও স্বরচিত প্রস্তাবনা কবিতা আবৃত্তি করেন। তখন তিনি ১৪ বছরের কিশোর।
১৮৪৮ সালে কুলিবাজার অঞ্চলে জুভেনাইল থিয়েটার এবং অন্যত্র রয়াল এলবার্ট থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময়েই আরো কিছু নবপ্রতিষ্ঠিত থিয়েটারের খবর পাওয়া যায়। সেন্ট জেমস থিয়েটার, মিসেস লিউইস-এর থিয়েটার রয়া, লিন্ডসে স্ট্রিটের অপেরা হাউসে মিসেস ইংলিশ-এর রঙ্গালয়, ফোর্ট উইলিয়াম থিয়েটার রয়াল এবং গ্যারিসন থিয়েটার উল্লেখযোগ্য।
অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দীতে কলকাতা ছাড়াও বিভিন্ন শহরে সাহেবদের থিয়েটার ছিল। বোম্বাই, মাদ্রাজ, কানপুর, মীরাট, সুরাট, আগ্রা, বাঙ্গালোর, এলাহাবাদ, নৈনিতাল, বেরিলি প্রভৃতি শহরেও সাহেবদের থিয়েটার ছিল। বাংলায় কলকাতা, দমদম ছাড়াও ব্যারাকপুর, বহরমপুর অঞ্চলেও ইংরেজরা থিয়েটার করেছিল।
১৯ শতকের শেষার্ধে থিয়েটার রয়াল এবং অপেরা হাউস-কলকাতায় বহুদিন চলেছিল। তাছাড়া বিদেশাগত থিয়েটার কোম্পানীগুলি এখানে এসে অভিনয় করে যেত। মিসেস লুইস তাঁর লুইস থিয়েটার রয়েল চালিয়েছিলেন কিছুদিন। গিরিশচন্দ্র লুইসের সংস্পর্শে এসেই ইংরেজি থিয়েটার ও অভিনয়ে উজ্জীবিত হয়েছিলেন।
ময়দানে তাবু খাটিয়ে অস্থায়ী রঙ্গমঞ্চেও অনেক বিদেশী কোম্পানী নাট্যাভিনয় করে যেত। এইরকম একবার অলিম্পিক থিয়েটার এসে অভিনয় করে। তাদের ম্যাকবেথ অভিনয় বিশেষ খ্যাতিলাভ করেছিল।
তাছাড়াও অন্য কিছু দলেরও পরিচয় পাওয়া যায়। হার ব্যান্ডম্যান্স কোম্পানী ১৮৮২-৮৫ পর্যন্ত অভিনয় করে থিয়েটার রয়ালে। পোলার্ডস লিলিপুটিয়ান অপেরা অভিনয় করে অপেরা হাউসে ১৮৯৬-৯৯ অবধি। দি ব্রাউ কমেডি কোম্পানী ১৮৯৬ তে থিয়েটার রয়ালে অভিনয় করে যায়। এছাড়াও কিছু নাট্যদল থিয়েটার রয়াল ও করিন্থিয়ান থিয়েটার ভাড়া নিয়ে কিছুদিন করে অভিনয় করেছিল। যেমন—দি এমেচার ড্রামাটিক সোসাইটি, এলিপস্, জ্যানেট ওয়ালড্রফ কোম্পানী, হাডসন ড্রামাটিক কোম্পানী, হেনরি দালালের সাউথ আফ্রিকান ড্রামাটিক কোম্পানী প্রভৃতি।
এদের অভিনয়ের মধ্যে শেক্সপীয়রের ট্রাজেডি কমেডিগুলি ছিল, ছিল রবিনসন ক্রুশো, মিকাডো, এ ভিলেজ প্রিস্ট, আলিবাবা, রবিনহুড, সাইন অবদি ক্ৰশ, এ কান্ট্রি গার্ল, এ্যান আইডিয়াল হাজব্যান্ড, অর্কিড প্রভৃতি নৃত্যগীতময় অপেরা, লঘু, প্রহসন ও উত্তেজক নাটক।
বাংলা নাটক ও নাট্যশালার আলোচনায় এই বিদেশী রঙ্গালয়গুলির পরিচয়ের প্রাসঙ্গিকতা বা প্রয়োজনীয়তা কতোখানি? কিংবা সাহেবদের থিয়েটারের নাট্যাভিনয় বাঙালির থিয়েটার ও নাটকাভিনয়ের ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পেরেছে কি?
থিয়েটারের ঐতিহ্যে লালিত এবং নাটক-পাগল ইংরেজ এদেশে এসে নিজেদের মানসিক প্রয়োজনেই নাটক শুরু করে। ইংলন্ডের অষ্টাদশ শতকের প্রচলিত রঙ্গালয়ের মডেলেই এখানে থিয়েটার বাড়ি ও প্রসেনিয়াম মঞ্চ তৈরি করে। তৎকালীন ইংলন্ডের থিয়েটারের নাট্য প্রযোজনা, স্টেজ নির্মাণ, সিনসিনারী, সাজসজ্জা তারা এদেশে প্রচলন করার চেষ্টা করেন। এসব ব্যাপারে তারা বিলেতের মঞ্চাভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাহায্য ও উপদেশ গ্রহণ করে। লণ্ডনের বিখ্যাত সব মঞ্চ থেকে খ্যাতিমান নট-নটীদের এখানে আনা হতো; তারাও ইংলন্ডের মঞ্চের অভিনয়রীতি এখানে উপস্থাপন করতো। তাছাড়া সমসাময়িককাল ও অব্যহিত পূর্ববর্তী নাট্যকার ফিল্ডিং, গে, গোল্ডস্মিথ, সেরিডান এবং অবশ্যই শেক্সপীয়রের নাটকগুলি এখানে অভিনয় করত।
দেখা যাচ্ছে মঞ্চ ও প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ ও গঠনকৌশল, দৃশ্যসজ্জা, আলোকসম্পাত, পোষাক-পরিচ্ছদ, অভিনয়রীতি, নাটক নির্বাচন—সবই ইংলন্ডের তৎকালীন রঙ্গালয়ের আদর্শে এদেশে প্রচলন করা হয়েছিল। অষ্টাদশ শতকে লন্ডনের থিয়েটারের মতোই এখানে বহুতল বিশিষ্ট প্রেক্ষাগৃহ, সম্মুখভাগে দর্শকাসন, পিট (Pit) ও বক্সের (Box) ব্যবস্থা, সামনে অর্কেস্ট্রার-বাদ্যযন্ত্রীদের স্থান, চার দেওয়াল বিশিষ্ট প্রসেনিয়াম মঞ্চ, তিনদিক ঘেরা, সামনে খোলা, কার্টেন বা পর্দা, ভেতরে উইংস-প্রবেশ-প্রস্থানের পথ, আঁকা দৃশ্যপটের ব্যবহার, নাটকের চরিত্রানুযায়ী পোষাক-পরিচ্ছদ, তেল বা গ্যাসের আলো, মঞ্চের পেছনে শব্দপ্রয়োগের ব্যবস্থা—ইত্যাদি কলকাতার রঙ্গমঞ্চে অনুসৃত হয়েছিল।
তখনকার ইংলন্ডের মঞ্চাভিনয়রীতি ছিল বক্তৃতাধর্মী, আতিশয্যপূর্ণ, উচ্চকিত এবং অতিনাটকীয়। প্রখ্যাত শিল্পীরা তার মধ্যেই সূক্ষ্মভাব সৃষ্টি করতে পারতেন। এখানকার স্টোকলার, ব্যারী, জেমস ভাইনিং, মিসেস ব্রিস্টো, মিসেস ফ্রান্সিস, মিসেস ডীকল প্রমুখ অভিনেতা-অভিনেত্রী ইংলন্ডের মঞ্চ থেকেই এসেছিলেন।
এখানেও অভিনীত হতে শেক্সপীয়রের ট্রাজেডি, কমেডি, রেস্টোরেশান যুগের কমেডি, ১৮ শতকের ‘Beggar’s Opera’ জাতীয় গীতিনাটিকা, অপেরা এবং কৌতুক নাট্য ও হাল্কা প্রহসনগুলি।
বিদেশী এই থিয়েটারের সঙ্গে ইংরেজরাই সবকিছু নিয়ে জড়িত ছিল। এই থিয়েটারের সঙ্গে প্রথমদিকে বাঙালির কোনো যোগাযোগ ছিল না। ১৮ শতকের শেষ দিকে কিছু ‘হঠাৎ নবাব’ ধনী বাঙালি এই থিয়েটারে দর্শক হিসেবে যেতেন সাহেবদের পিছু পিছু। তারা এই থিয়েটারের মজা, স্ফূর্তি ও গর্ব অনুভব করলেও ভাষা সমস্যা এবং উচ্চ প্রবেশমূল্যের জন্য সংযোগ সহজ ও স্বাভাবিক ছিল না। ইংরেজের সাহচর্যও তখন বেশি বাঙালির ছিল না।
উনিশ শতকের গোড়াতে এসে বাঙালির সঙ্গে এই থিয়েটারের যোগাযোগ ভালভাবে গড়ে উঠতে থাকে। ব্যবসা, দেওয়ানী, দালালী, চাকরি সূত্রে বাঙালি ও ইংরেজদের যোগসূত্র গড়ে ওঠে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের (১৭৯৩) ফলে নবসৃষ্ট কলকাতাবাসী জমিদার শ্ৰেণীও ইংরেজের সঙ্গী হতে শুরু করেছে। মেলামেশার সূত্রে এরা ইংরেজদের থিয়েটারে যেতে শুরু করে। অবশ্য এই থিয়েটারের চাকচিক্য, সাজসজ্জা, মঞ্চসজ্জা-বিলিতি থিয়েটারের অভিনব সব কৌশল এবং সর্বোপরি তাদের অদৃষ্টপূর্ব থিয়েটারি মঞ্চব্যবস্থা তাদের আকৃষ্ট করলো।
অন্যদিকে ইংরেজি শিক্ষা প্রচলনের ফলে (হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা: ১৮১৭) বাঙালিরা ইংরেজি লেখাপড়ার সঙ্গে ইংরেজি নাটকও পড়তে থাকে। এই নতুন নাট্যপ্রণালী তাদের উদ্বুদ্ধ করে। এরাই আবার সাহেবদের থিয়েটারে ইংরেজি নাটকের অভিনয় দেখা শুরু করে। ক্যাপ্টেন রিচার্ডসন এবং অধ্যাপক উইলসনের ভূমিকা এই প্রসঙ্গে স্মরণীয়। স্কুল-কলেজে নাটকপাঠ এবং থিয়েটারে নাট্যাভিনয় দেখা—এই উভয় প্রণালীর মধ্যে দিয়ে নব্যশিক্ষিত বাঙালি তরুণ ইংরেজি নাটক এবং বিদেশী থিয়েটার সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠে। স্কুল-কলেজে বিদেশী থিয়েটারের পরিচালকদের নির্দেশনায় বাঙালি ছাত্রেরা ইংরেজি নাটকের অভিনয়ে অংশগ্রহণ করে বিলিতি নাট্যানুশীলনে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে।
এইভাবে ধনী বাঙ্গালি এবং নব্যশিক্ষিত তরুণ বাঙালির মধ্যে বিদেশী রঙ্গালয়ের প্রতি উৎসাহ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ক্রমে দেখা যাচ্ছে, শুধু দর্শক নয়, বাঙালি এইসব রঙ্গালয়ের সদস্য, পৃষ্ঠপোষক ও উপদেষ্টা হচ্ছেন। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর তো চৌরঙ্গী থিয়েটারের সদস্য-পৃষ্ঠপোষক থেকে একেবারে মালিক পর্যন্ত হয়েছিলেন। সাঁ সুসির পৃষ্ঠপোষণায় ধনী বাঙালিরা অর্থ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসে মঞ্চটিকে রক্ষা করেন। ক্রমে বাঙালি তরুণ বিদেশী রঙ্গালয়ে মূল অভিনেতা হিসেবে অংশগ্রহণ করছে। সাঁ সুসিতে ‘ওথেলো’ নাটকে বৈষ্ণবচরণ আঢ্যর মূল ভূমিকায় অভিনয় অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। ওরিয়েন্টাল থিয়েটারে (প্রতিষ্ঠা: সেপ্টেম্বর, ১৮৫৩) বাঙালি তরুণরা সাহেবদের দেখাদেখি টিকিট বিক্রি করে শেক্সপীয়ারের বেশ কিছু নাটকের অভিনয় করে।
এইভাবে ধনী ও শিক্ষিত বাঙালির আগ্রহাতিশয্যে অভিজাত বাঙালির বাড়িতে বিলিতি থিয়েটার তৈরি করে নাটকাভিনয় শুরু হলো। এতদিন যেখানে বাঈজীনাচ, কবিগান, খেউড় এবং যাত্রা অভিনয় হতো, তার জায়গায় এসে গেল এক নতুন মডেল-বিদেশী থিয়েটার—এক অভিনব নতুন ‘বিলিতি যাত্রা।
এইভাবে সাহেবদের থিয়েটার বাঙালির আঙিনায় এসে গেল। শিক্ষিত তরুণদের উৎসাহ ও ধনী বাঙালির আগ্রহে প্রাসাদে মঞ্চ তৈরি হলো। সাহেবদের থিয়েটার থেকে লোক আনিয়ে সাহেবদের মতো মঞ্চ ও তার ব্যবস্থাদি তৈরি করা হলো। পোষাক-পরিচ্ছদ, দৃশ্যসজ্জা, দৃশ্যপট অঙ্কন, আলোর ব্যবস্থা বিদেশী থিয়েটারের মতো করা হলো। অভিনয়রীতিও শিক্ষা করা হলো ওই থিয়েটারের নটনটীদের মতো করেই।
সাহেবদের মতো হয়ে ওঠার আগ্রহাতিশয্যে ওদের মতো রঙ্গালয় তৈরি হয়ে গেল তড়িঘড়ি, কিন্তু বাংলা ভাষায় অভিনয় উপযোগী নাটক ছিল না। সব দেশেই নাটক লেখা হয়েছে আগে, সেই নাটক অভিনয়ের প্রয়োজনে তৈরি হয়েছে মঞ্চ। বাঙালির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয়েছে উল্টো। আগে এসেছে মঞ্চ—তার দাবীতে লেখা হয়েছে নাটক।
সাহেবদের মতো থিয়েটারে বাঙালির বাড়িতে প্রথমে ইংরেজি নাটকই অভিনীত হয়েছে। ক্রমে ইংরেজী ও সংস্কৃত নাটকের বাংলা অনুবাদ এবং শেষে প্রয়োজনের তাগিদে মৌলিক বাংলা নাটকের সৃষ্টি হয়েছে। পুরোপুরি বিদেশী থিয়েটারের প্রভাবে, সেখান থেকে দেখে শুনে বুঝে, কখনো না বুঝে এবং অনুসরণ করেই বাঙালির থিয়েটারের ইতিহাস শুরু হয়েছে। অষ্টাদশ শতকের ইংলন্ডের মঞ্চব্যবস্থা ও নাটক সাহেবরা এনে দিল কলকাতায়। এবার সেই হাত ঘুরে বাঙালির কাছে এসে গেল ইংলন্ডজাত বিদেশী থিয়েটার। কলকাতায় ধনী বাঙালির সখের নাট্যশালাগুলিতে তারই অনুবর্তন ছড়িয়ে পড়লো।
ধনী বাঙালির প্রাসাদমঞ্চ ছাড়িয়ে এরপরে যখন মধ্যবিত্ত বাঙালির চেষ্টায় সাধারণ রঙ্গালয়ের ধারা তৈরি হয়েছে তখনো কলকাতায় চালু বিদেশী রঙ্গালয়গুলি থেকে অনেক কিছু গ্রহণ করা হয়েছে। স্টেজ নির্মাণকৌশল, দৃশ্যপট অঙ্কন, সাজসজ্জা, আলো, সিনসিনারি, অডিটোরিয়াম প্রভৃতি রঙ্গমঞ্চের নানা বিষয় গৃহীত হয়েছে। গিরিশচন্দ্র মিসেস লুইসের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন অনেকাংশেই। থিয়েটার রয়ালের আদর্শে ধর্মদাস সুর গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার বাড়ি ও মঞ্চ তৈরি করেন। টিকিট বিক্রি এবং ব্যবসায়িক রঙ্গমঞ্চ পরিচালনার ধারণাটাও এসেছে এইসব বিদেশী থিয়েটার থেকেই।
হিন্দু রাজত্বের পর থেকেই এদেশে নাট্যশালা ও অভিনয় লুপ্ত হয়। লোকনাট্যের মধ্যে অভিনয়ের ধারা বেঁচে ছিল। আধুনিক যুগে লোকনাট্য যাত্রা ইত্যাদি নিম্নরুচিতে আসক্ত হয়ে পড়ে। নতুন যুগের ইংরেজি শিক্ষিত মানুষজনের কাছে এইসব প্রমোদ উপকরণ অবহেলিত হয়। সেই সময়ে সাহেবদের থিয়েটারের প্রভাবে এদেশে ১৯ শতকে নতুন থিয়েটার গড়ে ওঠে। আধুনিক যুগে বাঙালির নাট্যচর্চার পেছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিদেশী থিয়েটারের প্রভাব পড়েছে।
পলাশীর যুদ্ধের (১৭৫৭) পর বাঙালির রাজনৈতিক দাসত্বের শুরু। ইংরেজ ক্রমে বাঙালিকে অর্থনৈতিক দাসত্বের বন্ধনে বেঁধে ফেলে। ক্রমে শিক্ষা-সংস্কৃতি-দর্শনের চিন্তাতেও ইংরেজি ভাবনৈতিক দাসত্বের বিস্তার শুরু হয়ে যায়। থিয়েটার প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে প্রথমে নিজেদের প্রমোদ এবং ক্রমে বাঙালিকে আকৃষ্ট করে ব্যবসা ও সংস্কৃতির ভাব-দাসত্ব চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হতে থাকে। বাঙালিও নবজাগরণের ঐতিহাসিক ধাপ্পায় (Historical Hoax) নিজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বর্জন করে আমদানী করা সংস্কৃতিতে মশগুল হয়ে পড়ল। বাঙালির থিয়েটার এই বিদেশী থিয়েটারেরই প্রভাবজাত।
Leave a Reply