অর্থান্তরন্যাস অলংকারের সংজ্ঞাসহ উদাহরণ দাও।
অর্থান্তরন্যাস
সামান্যের দ্বারা বিশেষ, বিশেষের দ্বারা সামান্য, কারণের দ্বারা কার্য, কার্যের দ্বারা কারণ যদি সমর্থিত হয় তাহলে হয় অর্থান্তরন্যাস। সংজ্ঞা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে সাধারণত চারভাবে অর্থান্তরন্যাস হয়—
সামান্যের দ্বারা বিশেষের সমর্থন
উদাহরণ:
হেন সহবাসে
হে পিতৃব্য, বর্ব্বরতা কেন না শিখিবে?
গতি যার নীচসহ, নীচ সে দুর্ম্মতি।
ব্যাখ্যা: এটি মেঘনাদবধ কাব্যে বিভীষণের প্রতি মেঘনাদের উক্তি। বিভীষণ রামচন্দ্রের মতো নীচ ব্যক্তির সহবাসে বর্বরতা শিখেছে-এটা বিশেষ বিষয়। এই বিশেষ বিষয়টি সমর্থিত হচ্ছে— গতি যার নীচসহ নীচ সে দুর্মতি অর্থাৎ যে নীচের সঙ্গে বসবাস করে সে নীচই হয়।–এই সাধারণ বিষয়ের দ্বারা। তাই এটি অর্থান্তরন্যাস অলংকার।
বিশেষের দ্বারা সামান্যের সমর্থন
উদাহরণ:
এ জগতে হায় সেই বেশী চায় আছে যার যার ভূরি ভূরি,
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি।
ব্যাখ্যা: এখানে সাধারণ বিষয়-যার বেশী আছে সে আরো বেশী চায়। বিশেষ বিষয়-রাজা কাঙ্গালের ধন চুরি করে। লক্ষ করা যায় প্রথম বাক্যটিকে সমর্থন করছে দ্বিতীয় বাক্যটি। জগতে যার বেশী আছে সে আরো বেশী চায়-তার প্রমাণ রাজা যার অনেক আছে। তবু কাঙ্গালের ধন লুঠ করে। এই যে বিশেষ বিষয়টি সাধরণ বিষয়কে সমর্থন করলো—এটাই অর্থান্তরন্যাস অলংকার।
কারণের দ্বারা কার্যের সমর্থন
উদাহরণ:
কাঁদে বলে ওরে ষষ্ঠীর ভোরে গাল দিয়ে কিবা ফল?
কত না প্রলেপে ধরাবুকে আজও তিনভাগই লোণাজল।
ব্যাখ্যা: ওরে = দুঃখের কবিকে। তিনভাগই লোণাজল = পৃথিবীর একভাগ মাত্র মাটি আর তিনভাগ নোনাজলের সমুদ্র। দুঃখবাদী কবি তো কাঁদবেই; ওর মা যে বসুন্ধরা তারই জীবনে যখন বারো আনা কান্না, তখন ওর পক্ষে কান্না যে জন্মগত অন্ধকার।
কার্যের দ্বারা কারণের সমর্থন
উদাহরণ:
দীন দুনিয়ার মালিক যে জন তাঁর নাকি বড়ো ন্যায়বিচার!
মমতাজ্ পায় তাজের শিরোপা, নূরজাহানের কাফন সার!
ব্যাখ্যা: ‘নাকি’র ব্যঞ্জনা এই যে দুনিয়ার মালিকের বিচারে ন্যায়ের অভাব আছে। এই অভাবরূপ কারণটি সমর্থিত হচ্ছে তার মমতাজ আর নূরজাহানের ওপর বৈষম্যপূর্ণ ব্যবহাররূপ কার্য দ্বারা।
Leave a Reply