//
//

আগমনী ও বিজয়ার গান: বাঙালির পারিবারিক ও গার্হস্থ্য চিত্র।

আগমনী ও বিজয়ার গান: বাঙালির পারিবারিক ও গার্হস্থ্য চিত্র

কন্যা এবং মাতার মধ্যে স্নেহ-প্রীতির সম্পর্ককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বাংলার উমাসঙ্গীত বা আগমনী-বিজয়ার গান। অবশ্য আগমনী-বিজয়া গানের একটি পৌরাণিক পটভূমি আছে। মেনকা-উমা— এঁরা পৌরাণিক চরিত্র। বিভিন্ন পুরাণে সতীর দেহত্যাগের কথা আছে। দেহত্যাগের পর সতী হিমালয়-মেনকার গৃহে পুনরায় জন্মগ্রহণ করেন— এই সময় তার নাম হয় উমা। উমার সঙ্গে শিবের বিবাহ এবং কার্তিক-গণেশরূপী পুত্রদের কথাও শাস্ত্রে পাওয়া যায়। সপ্তমী-অষ্টমী-নবমীতে দুর্গাপূজার বিধান এবং দশমীতে বিজয়া তথা বিসর্জনের বিধানও শাস্ত্রসম্মত। বাঙালি কবিরা পৌরাণিক এই পটভূমিকে কাজে লাগিয়েছেন বাঙালির নিজস্ব কাব্য রচনায়। বাঙালি কবির সৃষ্টিতে উমা সাধারণ বাঙালি কন্যা যিনি দীর্ঘকাল স্বামীগৃহে থাকায় শোককাতরা মেনকা স্বামীকে কৈলাসধামে পাঠালেন কন্যাকে স্বগৃহে আনতে। কন্যার আগমনে হিমালয়-গৃহ আনন্দে উদ্ভাসিত হল। মাতা-কন্যার মান-অভিমান এবং কুশল-মঙ্গল আদান-প্রদানের মধ্যে তিনটে দিন—সপ্তমী- অষ্টমী-নবমী অতিবাহিত হল। দশমীর প্রভাতে পিতৃগৃহ অন্ধকার করে মেনকাকে শোকসাগরে নিক্ষিপ্ত করে উমা আবার পতিগৃহে যাত্রা করলেন। এই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পদকর্তারা উমাসঙ্গীত বা আগমনী-বিজয়ার গান রচনা করেছেন।

পৌরাণিক পটভূমি ছাড়াও নানা সাহিত্যিক ঐতিহ্যসূত্রে শাক্ত-গীতিকাররা আগমনী-বিজয়া গানের বিষয়বস্তুর সন্ধান পেয়েছিলেন। প্রকীর্ণ কবিতায় প্রাপ্ত হর-পার্বতীর দাম্পত্য জীবনের আলেখ্য, হিমালয়াত্মজার পিতৃগৃহে আগমন ইত্যাদি ঘটনা শাস্ত্র-গীতিকারদের উদ্দীপ্ত করেছিল আগমনী-বিজয়া সঙ্গীত রচনায়। এই সকল সংস্কৃত প্রকীর্ণ কবিতা থেকে সম্ভবত শাস্ত্রকাররা মেনকার খেদ, সম্ভানের মাতৃঅভিমান, মাতৃনির্ভরতা, সংসার-উদাসীন দরিদ্র-শিবের জীবন চিত্রের আভাস পেয়েছিলেন যা তারা নিজেদের কাব্যের কায়াগঠনে কাজে লাগিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন পুরাণতন্ত্র ও পুরাণাশ্রিত সাহিত্য- শ্রীশ্রীচণ্ডী, চণ্ডীশতক, আনন্দবর্ধনের দেবীশতক, শঙ্করাচার্যের রচনাবলী ইত্যাদি শাক্তপদাবলীর গঙ্গোত্রীস্বরূপ। পুরাণের পটভূমিটি তাই মাঝে মাঝেই আগমনী-বিজয়ার গানে আভাসিত হতে দেখা যায়। বাংলার শক্তি উপাসনার ধারার এক প্রান্তে আছে পৌরাণিক দুর্গা, যিনি গিরি-দুহিতা দুর্গতি-নাশিনী পার্বতী; যিনি একই সঙ্গে দশমহাবিদ্যা আবার অসুরনাশিনী চণ্ডী, আর অন্যদিকে তিনিই কালিকা। আগমনী পদেও এই পৌরাণিক বিশ্বাসের প্রকাশ দেখা যায়। কমলাকান্তের পদে মেনকা স্বপ্ন দেখেছেন—

আর শুন অসম্ভব চারিদিকে শিবারব হে।

তার মাঝে আমার উমা একাকিনী শ্মশানে।।

হরিশচন্দ্র মিত্রের একটি পদে—

বাছার আমার নাই সে বরণ নাই আভরণ

হেমাঙ্গী হইয়াছে কালির বরণ।

পতিগৃহে অযত্নে উমার সোনার বর্ণ কালো হয়েছে—পংক্তিদ্ধয়ে সাধারণভাবে এই অর্থ বোঝালেও দুর্গা আর কালিকা যে এক—গূঢ়ার্থে সেই ব্যঞ্জনাই এখানে প্রকাশিত। প্রকৃতপক্ষে আগমনী-বিজয়া সঙ্গীতগুলি পুরাণের পটভূমিকায় বাঙালির গার্হস্থ্য জীবনের ছবি। রবীন্দ্রনাথ এ সম্পর্কে তাঁর ‘লোকসাহিত্য’ গ্রন্থের ‘গ্রাম্যসাহিত্য’ প্রবন্ধে যথার্থই বলেছেন— “হরগৌরীর কথা আমাদের ঘরের কথা। সেই হরগৌরীর কথায় আমাদের বাংলাদেশের একটা বড়ো মর্মের কথা আছে। কন্যা আমাদের গৃহের এক মস্ত ভার; কন্যাদায়ের মতো দায় নাই। সমাজের অনুশাসনে নির্দিষ্ট বয়স এবং সংকীর্ণ মণ্ডলীর মধ্যে কন্যার বিবাহ দিতে আমরা বাধ্য। সুতরাং সেই কৃত্রিম তাড়নাবশতই বরের দর অত্যন্ত বাড়িয়া যায়, তাহার রূপগুণ অর্থসামর্থ্যে আর তত প্রয়োজন থাকে না। কন্যাকে অযোগ্য পাত্রে সমর্পণ করা, ইহা আমাদের সমাজের নিত্য নৈমিত্তিক দুর্ঘটনা। ইহা লইয়া দুশ্চিন্তা, অনুতাপ, অশ্রপাত, জামাতা পরিবারের সহিত বিরোধ, পিতৃকুল ও পতিকূলের মধ্যবর্তিনী বালিকার নিষ্ঠুর মর্মবেদনা, সর্বদাই ঘরে ঘরে উদ্বৃত্ত হইয়া থাকে। একান্নবর্তী পরিবারে আমরা দূর ও নিকট, এমনকি নামমাত্র আত্মীয়কেও বাঁধিয়া রাখিতে চাই; কেবল কন্যাকেই ফেলিয়া দিতে হয়। যে সমাজে স্বামীস্ত্রী ব্যতীত পুত্রকন্যা প্রভৃতি সকলেই বিচ্ছিন্ন হইয়া যায় তাহারা আমাদের এই দুঃসহ বেদনা কল্পনা করিতে পারিবে না। আমাদের মিলনধর্মী পরিবারে এই একমাত্র বিচ্ছেদ। হরগৌরীর কথা বাংলার একান্ন পরিবারের সেই প্রধান বেদনার কথা।”

আগমনী-বিজয়া সঙ্গীতগুলি পৌরাণিক পটভূমিকায় রচিত হলেও, শুধুমাত্র পৌরাণিক পটভূমিকার জন্যেই মানবচিত্তে এই সঙ্গীতগুলির আবেদন সুচিরস্থারী নয়। এগুলির উৎকর্ষগত সৌন্দর্য অন্যত্র নিহিত। শুধুমাত্র ধর্মীয় সঙ্গীতরূপে এগুলি বিচার্য নয়, মাতা-কন্যার সম্পর্কের এমন বাস্তব ও স্পর্শকাতর চিত্র বিশ্বসাহিত্যের অন্যত্র দুর্লভ। আগমনী-বিজয়া সঙ্গীতের মর্মকেন্দ্রে একটি বিশেষ সম্প্রদায়গত ধর্মদর্শন থাকলেও সঙ্গীতগুলি বিচার্য কিন্তু সমকালীন গার্হস্থ্য ও সমাজ জীবনের অনির্বচনীয় কাব্যগত প্রকাশের জন্যে। এদের উৎসভূমি কৈলাস বা হিমালয়পুরী নয়; প্রতি গৃহস্থের হৃদয়ই যেন আগমনী-বিজয়া সঙ্গীতের গঙ্গোত্রী। এখানে বাঙালির পারিবারিক জীবনের সুখদুঃখের কথা করুণ-মধুর রাগিণীতে বেজে উঠেছে।

কন্যার প্রতি পিতা-মাতার বাৎসল্য, তার বিবাহের জন্যে দুশ্চিন্তা, বিবাহের পর স্বামীগৃহে কন্যার দুঃখ-দারিদ্যের কথা চিন্তা করে মাতৃ-হৃদয়ের অন্তহীন ব্যাকুলতা, কন্যাকে দেখার জন্যে মাতৃ অন্তরের অপরিসীম আগ্রহ ইত্যাদি সমস্তই যেন একাত্মভাবে বাঙালির গাহস্থ্য চিত্র। শাক্তপদাবলীর আগমনী-বিজয়া অংশের সঙ্গীতগুলিতে বাঙলাদেশের সুপরিচিত গার্হস্থ্য জীবনসঙ্গীতই ধ্বনিত হয়েছে। মাতা-পিতা সন্তানকেন্দ্রিক বাংলাদেশে ষে গার্হস্থ্য পারিবারিক জীবন নানা সুখে-দুঃখে আনন্দ-বেদনায় বিচলিত সেখানে প্রতিবেশীরাও যুক্ত। শাক্ত পদাবলিতে সেই বৃহৎ সংসারের রূপ চিত্রিত।

আগমনী-বিজয়া অংশের সঙ্গীতগুলি গড়ে উঠেছে কৈলাশপুরী ও শিবপুরীকে কেন্দ্র করে। দুটি সংসারের গৃহস্থালি, হাসি- কান্না, মান-অভিমান, দম্পতির রহস্যালাপ, সন্তানের জন্যে মাতৃহৃদয়ের ব্যাকুলতা ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে আগমনী-বিজয়ার সঙ্গীতগুলি উদ্বেলিত। আগমনী-বিজয়ার কাহিনী পুরাণের কাহিনী, চরিত্রগুলিও দেবদেবী চরিত্র, কিন্তু কাহিনি ও চরিত্র উভয়েরই মানবায়ন ঘটেছে। পৌরাণিক আখ্যায়িকা বাঙালি জননীর অশ্রুজলে অভিষিক্ত হয়ে বস্তজগতের পারিবারিকভাবে পূর্ণ হয়ে উঠেছে।

‘আগমনী’ পর্যায়ের কয়েকটি পদে বাঙালি জননীর চিরকালীন বাসনার কথা ব্যক্ত হয়েছে। মেনকা উমাকে আর পতিগৃহে পাঠাতে চাননা, তাতে সামাজিক নিন্দা যদি বরণ করে নিতে হয়, তাও স্বীকার্য—

গিরি এবার আমার উমা এলে, আর উমা পাঠাব না

বলে বলবে লোকে মন্দ, কারো কথা শুনবো না।

সাধারণ জননীর ন্যায় মেনকা উমাকে স্বপ্নে দর্শন করেন— “বাছার নাই সে বরণ, নাই আভরণ, হেমাঙ্গী হইয়াছে কালী বরণ” প্রাণের কন্যা উমার মঙ্গল সংবাদ না পেয়ে বিচলিতাচিত্তা মেনকা হিমালয়ের বিরুদ্ধে অনুযোগ করেন—“তুমি তো অচল পতি, বল কি হইবে গতি/…না ভাব তাহার জন্য তুমি একবার।” বাংলাদেশের এই উমাসঙ্গীতের প্রসঙ্গে এমন বলা যেতে পারে যে, দেবমহিমার অন্তরালে এখানে হয়তো মর্ত্যজীবনের দুঃখ-দারিদ্রের চিত্রকে আবৃত করার চেষ্টা করা হয়েছে অথবা দেবমহিমার আবরণে গভীর দুঃখকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সাধারণ মর্ত্যজননীর ন্যায় মেনকা কন্যা উমাকে রাত্রে স্বপ্নে সন্দর্শন করেন, উমার কথা বলতে বলতে নয়নদ্বয় অশ্রবারিতে নিষিক্ত হয়, অন্তর বেদনায় দীর্ঘ হয়। সংসারধর্ম পালন তার কাছে অসার বলে মনে হয়। উমাকে দেখার জন্যে মেনকার প্রাণ ব্যাকুল হওয়ায় মেনকা গিরিরাজের বিরুদ্ধে অনুযোগ উপস্থাপিত করেছেন। ভাগ্যদোষে নারী জন্ম হওয়ায় মেনকা নিজেকে ধিকার দিয়ে বলেন— “নারীর জনম কেবল যন্ত্রণা সহিতে”। মেনকা গিরিবরকে অনুরোধ করেন— উমা কেমন আছে তার খবর নিতে; কঠিন-হৃদয় গিরিরাজ বলেন— “জান তো জামাতার রীত, সদাই পাগলের মত, পরিধান বাঘাম্বর, শিরে জটাভার’’। কমলাকান্তের একটি পদে মাতৃহৃদয়ের বেদনা অপরূপ অভিব্যক্তি লাভ করেছে। উমার বিধুমুখ না দেখে মেনকার ঘর অন্ধকারাচ্ছন্ন বলে মনে হয়। উমাকে আনতে না পাবাব জন্যে মেনকা নিজেকে ও গিরিরাজকে ধিকার জানাচ্ছেন— “ধিক্‌ হে আমারে, ধিক হে তোমাবে জীবনে কি সাধ আর”। উমাও সাধারণ বাঙালি কন্যার মত পিতৃগৃহে গমনের জন্যে স্বামীর অনুমতি প্রার্থনা করেন। তিন দিন পরে যে প্রত্যাগমন করবেন সে কথা জানাতেও ভোলেন না। শিবও সাধারণ মানুষের মত উমাকে পিতৃগৃহে গমনের অনুমতি দেন এবং স্বয়ং উমার সঙ্গে যাওয়ার বাসনা ব্যক্ত করেন।

অবশেষে উমা মেনকার গৃহে আসেন; মাতা মেনকা প্রাণের উমাকে দর্শন কবে কৃতার্থ হন। উমার মুখশশী দেখে মেনকার দুঃখরাশি দুঃখ হয়। উমার আগমনবার্তা শ্রবণে অশ্রুপ্লাবিত নয়নে, আলুলায়িত কুস্তলে, অসংলগ্ন বসনে মেনকা উমাকে গৃহে আনার জন্যে দ্রুত ধাবিত হন। উমার মুখমণ্ডল নিরীক্ষণ করে, চুম্বন করে দিগম্বরের হাতে সম্প্রদানের জন্যে দুঃখ প্রকাশ করেন। সহচরীরা এসে উমার সঙ্গে আনন্দোৎসব করে, কুশল বিনিময় করে। মর্ত্যমমতাসিক্ত মাতৃহৃদয় আর্তিতে, বেদনায় চিরন্তন মাতৃস্বরূপে আরও নিবিড়ভাবে বিকশিত হয়।

শুধু মাতা-কন্যার হাদয় বেদনাই নয়, প্রতিবেশীদের আনন্দও শাক্ত পদাবলির অনেক পদে প্রকাশিত হয়েছে বলে একে বাঙালির গার্হস্থ্য জীবনের সঙ্গীত বললে অত্যুক্তি হয় না। কমলাকান্তের একটি পদে (“আমার উমা এলো বলে রানী এলোকেশে ধায়”) উমা-মেনকার বিরহ চিত্রের পরিবার্তে প্রতিবেশী রমণীবৃন্দের প্রতিক্রিয়ার চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। কমলাকান্তের আর একটি পদে (শরত কমলমুখে আধ আধ বাণী মায়ের”) শিবের দৈবী মহিমার প্রকাশ ঘটলেও মানবিক অভিজ্ঞতার প্রকাশও দুর্লভ নয়। মাতা মেনকার মাধ্যমে বাঙালি মায়ের চিরন্তন ভাবনার কথা যেমন প্রকাশিত হয়েছে তেমনি উমাও প্রথা অনুযায়ী চিরপরিচিতা কন্যার ন্যায় স্বামীর গুণগান করে মায়ের চিন্তা দূর করতে প্রয়াসী।

‘আগমনী’ অংশে মাতা-কন্যার মিলন দৃশ্য যেমন মাধুর্য্যে-মাতৃপ্রেমে অনন্য, বিজয়ার বিদায় দৃশ্য তেমনি মর্মম্পর্শী বেদনার হৃদয়-নিঃসৃত বাণী-বন্দনায় মৌন। বিজয়ায় শুধুই বিরহ, অনন্ত বিচ্ছেদ—‘ওরে নবমী নিশি, না হইও রে অবসান’ পদটিতে আসন্ন বিচ্ছেদ কল্পনায় মেনকার বেদনার অভিপ্রকাশ এবং নবমীর রাত্রিকে প্রাণদাত্রীরূপে কল্পনা করে তাকে চলে না যাওয়ার জন্যে নিবেদন জ্ঞাপনে মেনকা ন্নেহময়ী চিরকালীন বঙ্গজননীরূপে চিত্রিত হয়েছে—

যেয়ো না রজনি-আজি লয়ে তারা দলে

গেলে তুমি দয়াময়ি, এ পরাণ যাবে।

উদিলে নির্দয় রবি উদয় অচলে

নয়নের মণি মোর নয়ন হারাবে।

নবমী নিশি অবসিত হলে দশমীর প্রভাত আরও করুণ হয়ে দেখা দেয়। শিবের ঘন ঘন ডমরু ধ্বনিতে মাতৃহাদয় বিদীর্ণ; বেদনার্ত মেনকা শিবকে সর্বস্ব দিতে পারেন, কিন্তু উমাকে দিতে পারেন না— ভিখারী ত্রিশূলধারী, যা চাহো তা দিতে পারি’ কিন্তু ‘পরাণ থাকিতে কায়, গৌরী কি পাঠানো যায়।’ কিন্তু গৌরীকে তবু পাঠাতে হয়— যে মাটির কন্যার আগমনী গান সেদিন বেজেছিল আজ বিজয়ার গানে তার বিদায়। শ্মশানবাসী পাগলের আবির্ভাব হয়েছে, মেঘের ডমরু ঘন ঘন বেজে উঠেছে।

সবমিলিয়ে বলা যায় আগমনী-বিজয়া সঙ্গীত ধর্মীয় বা পৌরাণিক পটভূমির উপর রচিত হলেও সেখানে উভয় পটভূমিই ম্লান হয়ে গেছে। তার পরিবর্তে মুখ্যরূপে ব্যক্ত হয়েছে বাঙালির দৈনন্দিন জীবনের তুচ্ছতার চিত্রের মধ্যেও অনাবিল আনন্দের মধুর সুন্দর প্রাণস্পর্শী সঙ্গীতধর্মিতা। আগমনী-বিজয়া সঙ্গীতে অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত বাঙালি গার্হস্থ্য জীবনের চিত্রই প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!