//
//

রঙ্গমঞ্চের ইতিহাসে আর্ট থিয়েটারের অবদান আলোচনা কর।

আর্ট থিয়েটার

হাতিবাগানে স্টার থিয়েটার মঞ্চ

প্রতিষ্ঠাতা: আর্ট থিয়েটার লিমিটেড

প্রতিষ্ঠা: ৩০ জুন, ১৯২৩

স্থায়িত্বকাল: ৩০ জুন, ১৯২৩ – সেপ্টেম্বর, ১৯৩৩

নাটক: কর্ণার্জুন (অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়)

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর হাতিবাগানের স্টার থিয়েটারের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়ে। ১৯২০-তে অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রবোধচন্দ্র গুহের সহায়তায় এবং অভিনেত্রী তারাসুন্দরীর আনুকূল্যে স্টার থিয়েটার ‘লীজ’ নিয়ে চালাতে থাকেন। ক্রমে অপরেশচন্দ্র এবং প্রবোধচন্দ্র উদ্যোগী হয়ে ‘আর্ট থিয়েটার লিমিটেড’ নামে এক যৌথ প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। সহায়তা পেলেন তখনকার বেঙ্গল ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের পরিচালক ভূপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে (ইনি নাট্যকার ভূপেন্দ্রনাথ নন)। এই যৌথ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ছিলেন— ভূপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সতীশচন্দ্র সেন, কুমারকৃষ্ণ মিত্র, হরিদাস চট্টোপাধ্যায়, নির্মলচন্দ্র চন্দ্র, অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (ম্যানেজার), প্রবোধচন্দ্র গুহ (সেক্রেটারি)। এই যৌথ প্রতিষ্ঠান স্টার থিয়েটার ‘লীজ’ নিয়ে সেখানে আর্ট থিয়েটার চালু করলেন। অভিনেত্রী তারাসুন্দরীও এই থিয়েটারের আংশিক মালিক ছিলেন। এইভাবে কলকাতার কয়েকজন ধনী ও সম্রান্ত ব্যক্তির আনুকূল্য পেয়ে অপরেশচন্দ্র ও প্রবোধচন্দ্র দ্বিগুণ উৎসাহী হয়ে উঠলেন। অবশ্য আর্ট থিয়েটারের মূল ব্যক্তি ছিলেন অপরেশচন্দ্র। তিনি ম্যানেজারের সঙ্গে একাধারে নাট্যকার, নাট্যশিক্ষক ও অভিনেতা। প্রথমে কিছুদিন শরৎচন্দ্রের ‘পল্লীসমাজ’ চালিয়ে গেলেন।

১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুন অপরেশচন্দ্রের লেখা নতুন নাটক ‘কর্ণাজুন’ দিয়ে আর্ট থিয়েটারের পাকাপাকি উদ্বোধন হল। অভিনয় করলেন: কর্ণ—তিনকড়ি চক্রবর্তী। অর্জুন—অহীন্দ্র চৌধুরী। শকুনি—নরেশ মিত্র। পরশুরাম—অপরেশচন্দ্র। বিকর্ণ—দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। পদ্ম—কৃষ্ণভামিনী। নিয়তি—নীহারবালা। দ্রৌপদী—নিভাননী। এছাড়া ইন্দু মুখোপাধ্যায়, তুলসী বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোরমা প্রভৃতিও অংশ গ্রহণ করেন। পরে গিরিশপুত্র দানীবাবু এখানে যোগ দেন ও নানা ভূমিকায় অভিনয় করেন।

২৬০ রাত্রি একাদিক্রমে ‘কর্ণার্জুনে’র অভিনয় বঙ্গরঙ্গমঞ্চে যুগান্তকারী ঘটনা। ‘কর্ণার্জুন’ অভিনয় প্রসঙ্গে শিশির পত্রিকা লিখেছিল—

‘‘স্টার থিয়েটার যে নূতনত্ব দেখাইতেছেন, ভরসা করি তাহা চিরদিনই দেখাইতে পারিবেন।…এদেশের চিরাচরিত মলিন, নিপ্রাণ ভাবধারাকে বিদায় দিয়া তাহারা নূতনত্বের সূচনা করিয়াছেন। তাহাদের আমরা সর্বান্তঃকরণে ধন্যবাদ প্রদান করিতেছি।’’ এখানে অজন্তা গুহার চিত্রের আঙ্গিকে বেশভূষা ও অলঙ্কার তৈরি করে ব্যবহার করা হয়েছিল।

অভিনয়ে, সাজসজ্জায়, চাকচিক্যে, মঞ্চকৌশলে এবং তরুণ তাজা নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীর সমন্বয়ে আর্ট থিয়েটার প্রথম থেকেই সাফল্য লাভ করে। এইখান থেকেই পরবর্তীকালে অনেক খ্যাতিমান অভিনেতার আবির্ভাব ঘটে। অহীন্দ্র চৌধুরী, নরেশচন্দ্র মিত্র, তিনকড়ি চক্রবর্তী, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্মলেন্দু লাহিড়ী, নিভাননী, নীহারবালা, কৃষ্ণভামিনী। স্বয়ং অপরেশচন্দ্র তো ছিলেনই।

আর্ট থিয়েটার চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা ও সাফল্য লাভ করে। ঠিক সেই সময়েই শিশির ভাদুড়ি সাধারণ রঙ্গালয়ে এসে পাকাপাকি অভিনয় শুরু করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সেই একই সময়ে আর্ট থিয়েটারের সগৌরব অস্তিত্ব ঘোষণা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। তারপর থেকে আর্ট থিয়েটার টানা দশবছর ধরে স্টার থিয়েটারের মঞ্চে অভিনয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছিল।

১৯২৩— কর্ণার্জুন (অপরেশচন্দ্র, ৩০ জুন), মুক্তির ডাক (মন্মথ রায়, একাঙ্ক, ২৫ ডিসেম্বর), রাজা ও রানী (রবীন্দ্রনাথ, ২৯ আগস্ট)। ১৯২৪—ইরাণের রানী (অস্কার ওয়াইল্ডের ‘দি ডাচেস অফ পাড়ুয়া’/ অপরেশ, ১ জানুয়ারি)। ১৯২৫—গোলকোণ্ডা (ক্ষীরোদপ্রসাদ, ৪ ফেব্রুয়ারি), চিরকুমার সভা (রবীন্দ্রনাথ, ১৮ জুলাই), গৃহপ্রবেশ (রবীন্দ্রনাথ, ৫ ডিসেম্বর), বন্দিনী (অপরেশ, ২৫ ডিসেম্বর)। ১৯২৬—বশীকরণ (রবীন্দ্রনাথ, ১০ জানুয়ারি), বিদায়-অভিশাপ (রবীন্দ্রনাথ, ১৬ এপ্রিল), শোধবোধ (রবীন্দ্রনাথ, ২৩ জুলাই), দ্বন্দ্বেমাতনম (অমৃতলাল, ১০ নভেম্বর), অপরেশচন্দ্রের শ্রীকৃষ্ণ (১৫ মে) এবং চণ্ডীদাস (২৫ ডিসেম্বর)। ১৯২৭—চিত্রাঙ্গদা (রবীন্দ্রনাথ, ১০ মে), পরিত্রাণ (রবীন্দ্রনাথ, ১০ সেপ্টেম্বর), মগের মুলুক (অপরেশ, ৩ ডিসেম্বর)। ১৯২৮—পল্লীসমাজ (শরৎচন্দ্র/ হরিদাস চট্টোপাধ্যায়, ৪ আগস্ট), ফুল্লরা(অপরেশ, ২১ অক্টোবর)। ১৯২৯—চিরকুমার সভা (রবীন্দ্রনাথ, ২৯ জুলাই) (অহীন্দ্র চৌধুরীর অনুপস্থিতিতে একরাত্রি শিশির ভাদুড়ি ‘চন্দ্রে’র ভূমিকায় অভিনয় করেন।) আগস্ট মাসে প্রবোধচন্দ্র গুহ আর্ট থিয়েটার ছাড়লেন। মন্ত্রশক্তি (অনুরূপাদেবী/অপরেশ, ২৩ নভেম্বর)। ১৯৩০—চিরকুমার সভা (রবীন্দ্রনাথ, ২৮ মে/চন্দ্র—শিশির ভাদুড়ি), অভিজ্ঞান-শকুন্তলম্ (৩০ অক্টোবর)। ১৯৩১—মুক্তি (অপরেশ, ১ জানুয়ারি), স্বয়ংবরা (সৌরীন্দ্রমোহন, ২৭ জুন), শ্রীগৌরাঙ্গ (১৯ সেপ্টেম্বর)। ১৯৩২—

পোষ্যপুত্র (অনুরূপা দেবী / অপরেশ, ১২ মার্চ), মানময়ী গার্লস স্কুল (রবীন্দ্রনাথ মৈত্র, ২৬ ডিসেম্বর), এছাড়া অপরেশের বিদ্রোহিনী (৫ নভেম্বর), নরেশ সেনগুপ্তের বড়বৌ (২৪ ডিসেম্বর)। ১৯৩৩—বৈকুণ্ঠের খাতা (রবীন্দ্রনাথ, ১৭ জুন), ২রা জুলাই থেকে ‘কেদার’—শিশির ভাদুড়ি। প্রথমে করতেন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। জলধর চট্টোপাধ্যায়ের ‘মন্দির প্রবেশ’ (২৭ মে)।

দানীবাবু এখানকার খ্যাতিমান অভিনেতা ছিলেন। ‘পোষ্যপুত্র’ নাটকে তাঁর অভিনীত শ্যামাকান্তের অভিনয় খুবই প্রশংসা লাভ করে ওকের মুখে মুখে ফিরেছিল। কিন্তু ১৯৩৩-এ দানীবাবুর মৃত্যুতে আর্ট থিয়েটারের মনোবল ভেঙে যায়। দেনার দায়ে আর্ট থিয়েটারের অভিনয় বন্ধ হয়ে যায়। পরের বছরেই অপরেশচন্দ্রের মৃত্যু হয় (১৫ মে, ১৯৩৪)। তার সঙ্গে সঙ্গেই স্টার থিয়েটারে ‘আর্ট থিয়েটার’-এর নাট্যাভিনয়ের ইতিহাস শেষ হয়।

অপরেশচন্দ্রের উদ্যমে, প্রবোধ গুহের পরামর্শে এবং তারাসুন্দরীর আনুকূল্যে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে যে থিয়েটার খোলা হয়েছিল দশ বছর ধারাবাহিক নাট্যাভিনয়ের পর তা উঠে যায়। অপরেশচন্দ্রের একুশটি নাটক ছাড়া এখানে গিরিশ, ক্ষীরোদপ্রসাদ, অমৃতলাল প্রভৃতির পুরনো কিছু নাটকের অভিনয় হয়েছিল। বেশ কিছু নতুন নাটকের অভিনয়ও এরা করে। শরৎচন্দ্রের, অনুরূপা দেবীর উপন্যাসের নাট্যরূপও এখানে অভিনীত হয়। এখানে পরপর রবীন্দ্রনাথের নয়টি নাটক ও উপন্যাস-ছোটগল্পের নাট্যরূপ অভিনীত হয়। উদ্বোধনের দু’মাসের মধ্যেই তারা ‘রাজা ও রানী’ অভিনয় করে। অহীন্দ্র চৌধুরী—কুমার সেন। তিনকড়ি চক্রবর্তী—বিক্রম। নরেশ মিত্র—শঙ্কর। অপরেশ মুখখাপাধ্যায়—দেবদত্ত। কৃষ্ণভামিনী—সুমিত্রা। নীহারবালা—ইলা।

প্রস্তাব মতে রবীন্দ্রনাথ ‘প্রজাপতির নিবন্ধ’-এর নাট্যরূপ ‘চিরকুমার সভা’ শিশির ভাদুড়িকে না দিয়ে আর্ট থিয়েটারকে অভিনয়ের জন্য দেন। এই অভিনয়ে অভূতপূর্ব সাড়া পড়ে যায়। রবীন্দ্রনাথের যে কটি নাটক সাধারণ রঙ্গালয়ে সাফল্যলাভ করেছে, চিরকুমার সভা তাদের মধ্যে অন্যতম। অহীন্দ্র চৌধুরী (চন্দ্রবাবু), তিনকড়ি (অক্ষয়), দুর্গাদাস (পূর্ণ), অপরেশ (রসিক), নীহারবালা (নীরবালা) কমেডি নাটকের অভিনয়ে এবং নাচে গানে নাটকটিকে জমিয়ে দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের নির্দেশে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর মঞ্চ, দৃশ্যসজ্জা, দৃশ্যপট তৈরিতে সাহায্য করেন এবং দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর গান শিখিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া রবীন্দ্রনাথের গৃহপ্রবেশ, বশীকরণ, বিদায়-অভিশাপ, শোধবোধ (কর্মফল গল্পের কবিকৃত নাট্যরূপ), পরিত্রাণ (‘বউঠাকুরাণীর হাট’ উপন্যাসের কবিকৃত নাট্যরূপ), বৈকুণ্ঠের খাতা, চিত্রাঙ্গদা অভিনয় করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আর্ট থিয়েটার উদ্যোগ নিয়ে রবীন্দ্রনাথের নাটককে সাধারণ রঙ্গালয়ে নিয়ে আসে। এই পর্যায়ে আর্ট থিয়েটারই সর্বাধিক রবীন্দ্রনাটকের অভিনয়ের আয়োজন করে। তারা রবীন্দ্রনাথের সক্রিয় সাহায্য, উপদেশ ও সহযোগিতা পেয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের প্রতি অনুরাগ, শ্রদ্ধা ও অপরেশচন্দ্রের পরিচালনার আন্তরিকতা এবং সে যুগের সব ক্ষমতাশালী অভিনেতা-অভিনেত্রীর দক্ষতায় রবীন্দ্র-নাটকগুলি আর্ট থিয়েটারে সাফল্যলাভ করেছিল। এই একই সময়ে শিশির ভাদুড়ি তাঁর থিয়েটারে রবীন্দ্রনাটকের যা অভিনয় করেছেন, আর্ট থিয়েটার তার চেয়ে অনেক বেশি করেছে এবং যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে অভিনয়ের চেষ্টা করেছে। সবগুলি সমান সাফল্য না পেলেও তারা অভিনয় চালিয়ে গেছে। তখনকার পত্র-পত্রিকায় রবীন্দ্রনাটকের অভিনয়ের প্রশংসাই করা হয়েছিল। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের সমর্থন, প্রশংসা ও আশীর্বাদ তারা লাভ করেছিল। বহু নাটকের অভিনয় রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে ও স্বজন বান্ধবসহ দেখতে গিয়েছিলেন।

রবীন্দ্রনাটকাভিনয়ের সঙ্গে অনেক সময়েই তারা প্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেতা শিশির ভাদুড়িকে ডেকে এনে অভিনয় করিয়েছে। শিশির ভাদুড়ির উপস্থিতি ও অভিনয়ে আর্ট থিয়েটারের মর্যাদা আরো বেড়ে গেছে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ঝিমিয়ে পড়া বাংলা সাধারণ রঙ্গালয়কে আর্ট থিয়েটার চাঙ্গা করে তুলেছিল। নাটক নির্বাচন, অসামান্য অভিনেতা-অভিনেত্রী’র সমাবেশ, অপরেশচন্দ্রের নিষ্ঠা এবং প্রয়োগ কৌশলের গুণে শিশির ভাদুড়ির সমকালে আর্ট থিয়েটার জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠেছিল। আর্ট থিয়েটারের সাফল্যের ইতিহাস টানা দশ বছর অব্যাহত ছিল। অপরেশচন্দ্রের ২১টি, রবীন্দ্রনাথের ৯টি এবং অন্যান্য নাট্যকারের আরো ২২টি, মোট প্রায় ৫২ টি নাটক আর্ট থিয়েটার মঞ্চস্থ করে।

মাঝে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে আর্ট থিয়েটার মনোমোহন থিয়েটার ভাড়া নেয়। তখন একই সঙ্গে দুটো থিয়েটারই আর্ট থিয়েটার লিমিটেড চালাতে থাকে। আর্ট থিয়েটার সেই সময়ে স্টার মঞ্চে অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে মনোমোহন মঞ্চে অপরেশের শ্রীরামচন্দ্র (১ জুলাই), মন্মথ রায়ের চাঁদসওদাগর (১৮ সেপ্টেম্বর), পাঁচকড়ি চট্টোপাধ্যায়ের আরবী হুর (২৩ ডিসেম্বর) অভিনয় করেছিল। এছাড়া কিছু পুরনো নাটকেরও অভিনয় চালানো হয়েছিল।

১৯২৮-এর জুন মাসে মনোমোহন মঞ্চ ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো। কেননা, এই দুই মঞ্চেই একই শিল্পীরা অভিনয় করতেন। একই দিনে অনেক শিল্পীকে দুটো থিয়েটারেই অংশ নিতে হতো। ফলে শিল্পী পরিচালক এবং অন্যেরা অত্যধিক শারীরিক চাপের দরুন দুটো দিক সামলাতে পারছিলেন না। তাই শুধু স্টার মঞ্চ রেখে আর্ট থিয়েটার মনোমোহন মঞ্চে অভিনয় বন্ধ করে দেয়।

আর্ট থিয়েটারের সমকালে শিশির ভাদুড়ির নাট্য-প্রযোজনাগুলি বেশি স্বীকৃতি এবং প্রচার পায়—বিশেষ করে বিদগ্ধ, শিক্ষিত মহলে। আর্ট থিয়েটার অন্যদিকে সাধারণ দর্শকের সমাদর লাভ করেছিল অনেক বেশি। বহু সময়ে বিদগ্ধ দর্শকদেরও তারা আকৃষ্ট করতে পেরেছিল। আর্ট থিয়েটারের নাট্যাভিনয়ের কাল বাংলা থিয়েটারের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়।

রঙ্গমঞ্চের ইতিহাসে আর্ট থিয়েটারের অবদান

আর্ট থিয়েটার সম্পর্কে বলা যেতে পারে—

  • প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বাংলার মৃতপ্রায় থিয়েটারকে নতুনভাবে চাঙ্গা করে তুলেছিল আর্ট থিয়েটার।
  • একাদিক্রমে দশবৎসর ধরে পঞ্চাশাধিক নানাভাব ও রসের নাটক অভিনয় করে দর্শকের মনকে থিয়েটার অভিমুখী করে তুলেছিল।
  • সমসময়ে শিশিরকুমার ভাদুড়ি বাংলা থিয়েটারে যে প্রাণ-বন্যা এনেছিলেন, সেখানে বিদগ্ধরুচিশীল মানুষের সাজুয্য পেয়েছিলেন। আর্ট থিয়েটার একই সময়ে সাধারণ দর্শক ও বিদগ্ধ দর্শক—উভয়েরই মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছিল।
  • তরতাজা সব নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রী দিয়ে আর্ট থিয়েটার নাট্যাভিনয়ে তারুণ্যের প্রাণ এনেছিল। এরাই পরবর্তী যুগে স্বনামখ্যাত হয়েছিলেন।
  • গিরিশচন্দ্রের অভিনয়ধারাকে আর্ট থিয়েটার এগিয়ে নিয়েছিল। অন্যদিকে শিশিরকুমার নতুন অভিনয়ধারা প্রবর্তন করেছিলেন।
  • স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ স্বেচ্ছায় আর্ট থিয়েটারে তাঁর ‘চিরকুমার সভা’ অভিনয়ের সময়ে নিজে এবং তার অনুগামীদের দিয়ে অভিনয়ে নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন।
  • এরাই সাধারণ রঙ্গালয়ে সবচেয়ে বেশি রবীন্দ্রনাটকের অভিনয় করেছিল।
  • নাট্যকার, অভিনেতা এবং নাট্য পরিচালক হিসেবে বাংলা থিয়েটারে অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও সিদ্ধি এই আর্ট থিয়েটারের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছিল।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!