উত্তর-অবয়ববাদ সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর-অবয়ববাদ (Post-Structuralism)
বিশ শতকের ছয়ের দশকে উত্তর অবয়বাদের সূচনা। এই মতবাদের প্রতিষ্ঠা ও প্রসারে বহু দার্শনিকের নাম যুক্ত আছে। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন— জ্যাক দেরিদা, রলাঁ বার্ত, জুলিয়া ক্রিস্তিভা, জাঁক লাকা, মিশেল ফুকো প্রমুখ। বহুমুখী প্রতিভাধর অজস্র ব্যক্তি এরসঙ্গে জড়িত থাকায় এই তত্ত্ব বহু শাখা প্রশাখায় বিস্তৃত ও দীর্ঘ হয়ে উঠেছে।
স্যসুরের তত্ত্বাদর্শের বিপরীতমুখী ঢেউ তুলেছে উত্তর অবয়ববাদী ভাবনার নবতরঙ্গ। স্যসুরের মতানুসারে ভাষা আসলে কতকগুলি চিহ্বের বিন্যাস। চিহ্ন গুলি তৈরি হয় ভাষার দ্যোতক (Signifier) ও দ্যোতিতের (Signified) সম্পর্কের ভিত্তিতে। যে কোনো ভাষার অবয়বে দ্যোতক ও দ্যোতিতের সম্পর্ক নির্দিষ্ট। তবে কখনো কখনো দ্যোতক প্রচলিত দ্যোতিতকে ছাড়িয়ে অন্য দ্যোতিতের প্রতি ইঙ্গিত করতে পারে। যেমন এরকম একটি বাক্য—
হলধর তোমার মেয়েদের সন্ধ্যেবেলা বাঁশতলা দিয়ে আসতে দিও না। ওখানে শেয়াল আছে।
এই বাক্যে ‘শেয়াল’ শব্দটি এই বিশেষ প্রয়োগে একটি বিশেষ দ্যোতিতকে ইঙ্গিত করে। যা ধূর্ত কোনো ব্যক্তিকে বোঝায়।
স্যসুরের তত্ত্বানুসারে ভাষার অর্থ নির্ভর করে এক দ্যোতকের সাথে অন্য দ্যোতকের পার্থক্যের ওপর। ‘জল’ জলই, কারণ তা ‘ফল’, নয়, ‘বল’ নয়, কিংবা ‘কল’ও নয়। কিন্তু নেতিকরণের ক্রমাগত প্রক্রিয়ায় অর্থের সম্ভাবনা সবসময় এগিয়েই চলে তাই চুড়ান্ত অর্থে যেন কখনোই পৌঁছানো হয় না। ফলত দ্যোতক দ্যোতিতের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের ধারণা অস্বীকৃত হয়। দেরিদার ভাষায় তাই— ‘Meaning is never driveled’।
ভাষা মানে দ্যোতকের খেলা। দ্যোতক দিয়ে দ্যোতকের ব্যাখ্যার খেলা। তাতে এক দ্যোতক থেকে আর এক দ্যোতকে যাবার সময় হারিয়ে যায় দ্যোতিত। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়—‘মা’, এই দ্যোতকটির অর্থ খুঁজতে গিয়ে আমরা হারিয়ে যাই আরও অন্য দ্যোতকে—জননী, গর্ভধারিণী, পুত্রবতী ইত্যাদি। তাই দেরিদার মতে ‘মা’ শব্দটির অর্থ খুঁজতে গিয়ে আমাদের ক্রমাগত হারিয়ে যেতে হচ্ছে অন্য দ্যোতকে। সুতরাং তিনি গভীর সংশয়ে এই প্রশ্ন তুলেছেন— অর্থের কোনো চূড়ান্ত অস্তিত্ব আছে কি? বাখতিনও বলেছেন ভাষায় অর্থের ব্যাপারটা আপেক্ষিক। তা প্রসঙ্গ ও পরিবেশের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।
দ্যোতকের পারস্পরিক বৈপরীত্য বোঝাতে দেরিদা “ডেফারেন্স’ (Difference) নামে একটি পরিভাষার সৃষ্টি করেছেন। প্রতিটি দ্যোতক অন্য দ্যোতক থেকে পৃথক এবং তা অন্য দ্যোতকের পরিবর্ত হিসাবে বসে দ্যোতিতে পৌঁছাবার ভাবনাকে স্থগিত করে দেয়। প্রতিটি দ্যোতকই একইসঙ্গে বৈপরীত্য ও স্থগিতায়নের বৈশিষ্ট্যবহ। দেরিদার মতে একটা কোনো দ্যোতকের মধ্যে অর্থের চূড়ান্ত হদিশ নেই।
অবয়ববাদ ছিল নির্দেশাত্মক দৃষ্টিনির্ভর, কিন্তু উত্তর অবয়ববাদ অনির্দেশাত্মক। ভাষা অনিশ্চিত, অর্থের অবস্থান অনিশ্চিত। দ্যোতক-দ্যোতিতের সম্পর্কও সুস্থির নয়। তাই প্রশ্ন ওঠে কেমন করে সুনির্দিষ্ট চিন্তার বাহন হবে ভাষা? ভাষা স্বচ্ছ নয়। লেখার মধ্যদিয়ে নিজেকে যথাযথভাবে প্রকাশ করাও সম্ভব নয়। ফলত পুরো বিষয়টাই ধোঁয়াশা থেকে যায়। এই চরম অনিশ্চয়তার মধ্য থেকেই সৃষ্ট হয়েছে বিনির্মান (De-Construction) তত্ত্বের। এই তত্ত্বের মূল কথা হল কোনো নির্দিষ্ট বয়ানের অন্তর্গত পরস্পর বিরোধী বৈশিষ্ট্যসমূহ খুঁজে বের করা।
অবয়ববাদীরা সমালোচনার ভাষাকে একধরনের অধিভাষা বলেছেন। উত্তর-অবয়ববাদীরা তারও চূড়ান্ত অস্তিত্বে অবিশ্বাসী। তাই রলা বার্ত মনে করেন, ভাষার আসলে কোনো তল নেই। সাহিত্যের ভাষা অর্থ শূন্যতায় ভাসমান। তাই বার্ত আমাদের সামনে দুটি সিন্ধান্ত উপস্থাপিত করেছেন—
- লেখকের মৃত্যু বা the death of the author.
- গ্রন্থের অনেকার্থ বা plurality of meaning.
প্রথম প্রসঙ্গে বার্ত জানালেন, প্রকৃতপক্ষে লেখক নিজে রচনা করেন না। তাঁর ভাষা-সংস্কৃতিতে যেসব চিহ্ন আগেই লিখিত তাকেই তিনি তুলে ধরেন পাঠকের সামনে। পাঠকও লেখকের কাছে পৌঁছাতে পছন্দ মতো পথ বেছে নিতে পারেন। লেখক-নির্ধারিত দ্যোতিতকে পাঠক অস্বীকার করতে পারেন।
বার্তের দ্বিতীয় সিদ্ধান্তটি হল—গ্রন্থের অনেকার্থতা। একই রচনার ভিন্ন ভিন্ন পাঠক ভিন্ন ভিন্ন অর্থ করতে পারেন। ফলে গ্রন্থটি নিশ্চিতভাবে অনেকার্থবোধক হয় ওঠে। আর এর ফলে গ্রন্থ-পাঠের আনন্দের ক্ষেত্রেও বহুমুখিতা ঘটে। তাই যেকোনো বয়ানের একই নির্মাণ পুনঃপঠনের মধ্যে দিয়ে হয়ে ওঠে বহু নির্মাণ।
উত্তর-অবয়ববাদের বৈশিষ্ট্য
১. উত্তর অবয়ববাদীরা আধুনিকতাকে সভ্যতার চূড়ান্ত বিকাশ বলে মনে করে না। এদের মতে পৃথিবীতে একটি মাত্র সত্য আছে, একথা ঠিক নয়— মূলত পৃথিবীতে একাধিক সত্য আছে। এরা রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ ও বহিঃসম্পর্কের মধ্যে আধুনিকতার সমগোত্রীয় বা সমভাবাপন্ন প্রভাব সৃষ্টির ক্ষমতাকে ‘ভিন্ন ধরনের’, ‘ভিন্নমত পোষণকারী’ ও ‘অনুগামী’ বলে অস্বীকার না করে, সেগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেন। যেমন, রিচার্ড এশলে (Richard Ashley) বাস্তববাদীদের সার্বভৌমত্বের তত্ত্বকে বিনির্মাণের মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে বাস্তববাদীরা যেভাবে সার্বভৌম রাষ্ট্রকে একটি অখণ্ড, সংগঠিত ও এককসত্ত্বা বিশিষ্ট ব্যবস্থা বলে মনে করেন, তা কিন্তু বাস্তবের সঠিক চিত্রের প্রতিফলন ঘটায় না। অথবা আর. বি. জে. ওয়াকার (R, B, J, Walker) তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Inside/Outside: International Relations as Political Theory’ (১৯৯৩)-তে দেখিয়েছেন রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের দুটি দিক আছে। একটি হচ্ছে স্থানিক (Spatial) দিক—এখানে রাষ্ট্রীয় জনগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ (Inside) দিকটি দেখান হয়। নিরাপত্তা ও সামঞ্জস্যের এখানে চিরায়ত অবস্থান। আর, এর বাইরে (outside) রয়েছে আইন শৃঙ্খলাহীনতা, নিরাপত্তাহীনতা ও শত্রুতার এক অখণ্ড অস্তিত্ব। রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের অপর দিকটি হচ্ছে সময়গত (Temporal)। এদিক থেকে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও প্রগতির স্বপ্ন দেখা যেতেই পারে। কিন্তু বহিঃর্বিশ্বের সংঘাত, নৈরাজ্য ও যুদ্ধবিগ্রহ ছাড়া অন্য কোন ভাবনা আসতেই পারে না। ওয়াকারের মতে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বিদেশনীতির ক্ষেত্রে এই অভ্যন্তরীণ ও বহিঃর্বিশ্বের কৃত্রিম বিভাজনের মধ্য দিয়ে সার্বভৌমত্বকে একটি অনতিক্রম্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ওয়াকারের বক্তব্য হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব একটি বিশেষ ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে সপ্তদশ শতকে সৃষ্টি হয়েছে এবং এর উদ্দেশ্যই হচ্ছে বিশ্ব ব্যবস্থাকে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করার একটি প্রয়াস অর্থাৎ, সার্বভৌমত্ব একটি ঐতিহাসিক গঠনমাত্র (historical construct)—এটি জাতীয় রাষ্ট্রের নাগরিক ও বিশ্ব নাগরিকের ধারণার মধ্যে স্বতঃবিরধিতা সমাধানের একটি পদ্ধতি ছাড়া আর কিছু নয়।
২. এই মতাবলম্বীদের মতে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে মত বা সিদ্ধান্তকে সর্বজনীন বা চিরায়ত বলে মনে করা হয়েছে, তা প্রকৃতপক্ষে একটি নির্দিষ্ট দিক মাত্র। সিদ্ধান্ত গ্রহণের তারও অজশ্র সম্ভবনা থাকতে পরে যা যে কোন কারণেই হোক না কেন, স্বীকার করে নেওয়া হয়নি। এই তত্ত্বের কোন কোন প্রবক্তা দেখিয়েছেন সার্বভৌমশক্তি হিসেবে রাষ্ট্র কীভাবে রাষ্ট্রের সীমানায় বসবাসকারী কোন কোন সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে নিজ রাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অধিকার দিতে বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে তাদের দাবী তুলে ধরবার অধিকারকে অস্বীকার করেছেন। পল কীল (Paul Keal) বা উইলিয়াম কনোলী (William Connolly) এই ধরনের মত প্রকাশ করেছেন।
৩. উত্তর অবয়ববাদের সমর্থকগণ মনে করেন যেটাকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা বাস্তব (reality) বলে মনে করছেন, তা আসলে ‘সামাজিক নির্মাণ’ (social construction) ছাড়া আর কিছু নয়। এরন বিয়ার্স স্যাম্পসন (Aaron Beers Sampson) দেখিয়েছেন যে কেনেথ ওয়ালটজ (Kenneth Waltz) বা আলেকজর ওয়েন্ট (Alexander Wendt) আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে একটি আদিম সমাজব্যবস্থা হিসেবে দেখিয়েছেন এবং এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সামনে দুটি পথের মধ্যে যে কোন একটিকে গ্রহণ করতে হবে: হয় এই স্থায়িত্ব (status quo) মেনে নিতে হবে অথবা আন্তর্জাতিক দুনিয়াকে ‘সভ্য’ হতে হবে, অর্থাৎ পশ্চিমী দুনিয়ার আর্থ-রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে অনুকরণ করতে হবে। স্যাম্পসন দেখিয়েছেন ওয়ালটজ মূলত এমিল ডুরকহাইমের (Emile Durkheim) তত্ত্ব অনুকরণ করেছেন। এই তুটির মূল লক্ষ্য ছিল। সাম্রাজ্যের প্রতিভূ হিসেবে যে প্রশাসকেরা তথাকথিত আদিম সাম্রাজ্যগুলি নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন তারা কিভাবে প্রশাসন পরিচলনা করবেন। ওয়ালটজু এই ধারণাটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে এমন এক তত্ত্ব তৈরি করলেন যার লক্ষ্যই হচ্ছে প্রগতির চেয়ে ক্ষমতাকে গুরুত্ব দেওয়া, পরিবর্তনের চেয়ে ভারসাম্যকে প্রাধান্য দেওয়া এবং আরোগ্যের চেয়ে প্রতিষেধকের ওপর নির্ভর করা।
৪. এই তত্ত্বের প্রবক্তাগণ মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞান (Objective Knowl edge) প্রতিষ্ট করা সম্ভব নয়। বরং তারা মনে করেন সদর্থকবাদ (Positivism) যে আদিকল্পের (Paradigm) উল্লেখ করে, তা আসলে সমাজে ক্ষমতার সম্পর্কের (Power Relations) প্রতিফলন মাত্র। রিচার্ড এশলে তার বিখ্যত প্রবন্ধ ‘The Poverty of Neo Realism’-এ (১৯৮৪) দেখিয়েছেন নয়াবাস্তববাদ কিভাবে নিয়ন্ত্রণের কার্যসূচিকে বিস্তৃত করে এবং ক্ষমতা প্রসারের যুক্তিকে প্রসারিত করে এবং ক্ষমতার যে নিজস্ব সীমাবদ্ধতা আছে তাকে স্বীকার করে না। এই তত্ত্বের প্রবক্তাগণ মনে করেন সদর্থকবাদ যে আখ্যায়িকা (Narration) বা আদিকল্পের উল্লেখ করেন তা কখনই বস্তুনিষ্ঠ নয়। কারণ, যে তথ্যের (data) ওপর এই আখ্যানগুলি দাঁড়িয়ে আছে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আংশিক সত্যের প্রতিফলন ঘটায়।
৫. যে প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তা হচ্ছে উত্তর অবয়ববাদ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নৈতিকতার প্রশ্নকে কীভাবে দেখে থাকে? আপাতদৃষ্টিতে, এই তত্ত্বের মধ্যে নিঃসন্দেহে নৈতিকতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে, এর প্রবক্তাগণ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের যে কোন সমস্যাকেই দেখতে চেয়েছেন একটি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে। স্বাভাবিকভাবে আন্তর্জাতিক নৈতিকতার। প্রশ্নও এই তত্ত্বের সমর্থকেরা কিন্তু কোন চিরায়ত নৈতিকতার মানদণ্ড তুলে ধরতে পারেননি বা সচেষ্ট হননি। এই তত্ত্বের সমর্থকেরা যখন সার্বভৌমত্বের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তখন তা তাদেরকে বিশ্বজনীনতাবাদের (Cosmopolitanism) কাছাকাছি নিয়ে যায়। আবার যখন তারা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিভিন্ন ধারণা বা ঘটনাকে তার পটভূমিকায় এবং আনুষঙ্গকিতার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা করেন, তখন তা অনেকাংশেই হয়ে ওঠে সমভোগতান্ত্রিকতার (Communitarianism) নিকটবর্তী চিন্তাধারা। কিন্তু এতদ্সত্ত্বেও এই তাত্ত্বিকদের লেখায় নৈতিকতার প্রশ্ন উঠে এসেছে। যেমন, জুডিথ বাটলার (Judith Butler) মনে করেন ‘আত্ম’ (Self) কখনই ‘অপরকে’ ছাড়া গড়ে ওঠে না। ক্যাম্পবেল (Campbell) উল্লেখ করেছেন স্থান, সংস্কৃতি, সীমানার দূরত্ব অতিক্রম করে ‘দায়িত্ব’ পালনের প্রয়োজনীয়তার। মাইকেল সাপিরো ‘অপ্রত্যাশিত’ সাক্ষাতের নৈতিকতার (ethics of encounter) কথা বলেছেন। এর মুখ্য বক্তব্য হচ্ছে নিজস্ব সত্তা বা নিজের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলেও অপরকে স্বাগত জানাতে হবে। এছাড়াও, এই তত্ত্বের আলোকে সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয়, যেমন, মানবাধিকার, মানবিকতার খাতিরে হস্তক্ষেপ (humanitarian intervention), উদ্বাস্তু সমস্যা, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ (War on Terror), নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, বিশ্বজনীনতাবাদের যে ক্রমবিবর্তনের পথে শান্তির প্রতিষ্ঠা, অথবা উচ্চ আদর্শসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি নির্মাণ ইত্যাদি সম্পর্কে এই তত্ত্বের কিছুটা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী আছে।
সবশেষে বলা যায় উত্তর অবয়ববাদ সার্বভৌমত্বের ধারণাকে যেমন বিনির্মাণ করে, তেমনি বিনির্মাণের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক-এর মধ্যে পার্থক্য এবং একে অপরকে বিভিন্ন ধরণের দ্বৈততার মধ্যে দিয়ে কীভাবে পারস্পরিক স্থায়িত্ব আনতে পারে তার আলোচনা করে। আর, এই তত্ত্ব কখনই সর্বজনীন প্রত্যকে বিশ্বাস করে না কারণ সব প্রত্যর্ক বা তত্ত্ব কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতার সম্পর্কের দ্বারা গঠিত হয়।
তথ্যসূত্র:
কাব্যজিজ্ঞাসা – অতুলচন্দ্র গুপ্ত | Download |
কাব্যতত্ত্ব: আরিস্টটল – শিশিরকুমার দাস | Download |
কাব্যমীমাংসা – প্রবাসজীবন চৌধুরী | Download |
ভারতীয় কাব্যতত্ত্ব – নরেন বিশ্বাস | Download |
ভারতীয় কাব্যতত্ত্ব – অবন্তীকুমার সান্যাল | Download |
কাব্যজিজ্ঞাসার রূপরেখা – করুণাসিন্ধু দাস | Download |
কাব্য-শ্রী – সুধীরকুমার দাশগুপ্ত | Download |
কাব্যালোক – সুধীরকুমার দাশগুপ্ত | Download |
কাব্যপ্রকাশ – সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত | Download |
নন্দনতত্ত্ব – সুধীর কুমার নন্দী | Download |
প্রাচীন নাট্যপ্রসঙ্গ – অবন্তীকুমা সান্যাল | Download |
পাশ্চাত্য সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্যভাবনা – নবেন্দু সেন | Download |
সাহিত্য প্রকরণ – হীরেণ চট্টোপাধ্যায় | Download |
সাহিত্য জিজ্ঞাসা: বস্তুবাদী বিচার – অজয়কুমার ঘোষ | Download |
Leave a Reply