//
//

বাংলা রঙ্গমঞ্চের ইতিহাসে এথেনিয়াম থিয়েটারের অবদান আলোচনা কর

এথেনিয়াম থিয়েটার

উদ্বোধন: ৩০ মার্চ, ১৮১২       

স্থায়িত্বকাল: ১৮১২-১৮১৪

প্রতিষ্ঠাতা: মিঃ মরিস

নাটক: আর্ল অফ এসেক্স এবং রেজিং দি উইন্ড

দীর্ঘস্থায়ী ক্যালকাটা থিয়েটার বন্ধ হয়ে যাবার (১৮০৮) পর মাঝে দু’ একটি রঙ্গালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও সেগুলি চলেনি। এর প্রায় সাড়ে তিন বছর পর মিঃ মরিস নামে এক ব্যবসায়ী নব উদ্যোগে এথেনিয়াম থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮ নং সার্কুলার রোডে নির্মিত ছোট এই থিয়েটারে আসন ছিল দুশো, প্রবেশমূল্য ছিল এক মোহর।

সাড়ে তিন বছর কলকাতায় কোনো থিয়েটার ছিল না বলে এই থিয়েটার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে দর্শকমহলে সাড়া পড়ে যায়। উদ্বোধন দিনে প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ হয়ে গেল। উদ্বোধন হল সোমবার, ৩০ মার্চ, ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দে। প্রথম রাত্রে একটি বিয়োগান্ত নাটক ‘আর্ল অফ এসেক্স’ এবং একটি প্রহসন ‘রেজিং দি উইন্ড’—পরপর অভিনীত হল। এখানেও শেক্সপীয়রের ট্রাজেডিগুলি এবং অন্য নাট্যকারদের নাটক ও প্রহসন প্রযোজিত হয়েছিল। তবে শেক্সপীয়রের ট্রাজেডিগুলির অভিনয়ে এরা সাফল্য লাভ করতে পারেনি। দর্শকাসন শূন্য থাকত। তার দুটি কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে—

  • এই থিয়েটারে ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রী ছিল না যারা গভীর রসাত্মক নাটক সুচারুভাবে অভিনয় করতে পারে।
  • এই সময়েই বিখ্যাত চৌরঙ্গী থিয়েটারের উদ্বোধন হয়। সেখানে উৎকৃষ্ট অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দিয়ে সুনিপুণভাবে শেক্সপীয়র ও অন্য নাট্যকারদের নাটক অভিনীত হচ্ছিল। দর্শক সেদিকে আকৃষ্ট হয়েছে বেশি।

বারবার আর্থিক লোকসান দিয়ে এথেনিয়াম থিয়েটার দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং দুই তিনবার মালিকানার হাতবদল হয়। পরে আবার প্রথম মালিক মিঃ মরিস থিয়েটারটি কিনে নিয়ে নতুন করে চালাবার চেষ্টা করেন।

১৮১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘হ্যামলেট’ নাটক দিয়ে দ্বিতীয় দফার উদ্বোধন হয়। সঙ্গে ছিল হাল্কা প্রহসন ‘লাইং ভালেট’। মিঃ মরিসের ঝোঁক ছিল বিয়োগান্ত নাটকাভিনয়ের দিকে। অবশ্য তিনিও ব্যর্থ হন নিপুণ শিল্পীর অভাবে।

ঐ বছরেরই নভেম্বর মাসে মিঃ মরিস এখানে ‘আর্ল অফ ওয়ারউইক’ অভিনয়ের পর ‘দি ম্যাজিক পাইপ’ বা ‘ড্যানসিং ম্যাড’ প্রহসন মঞ্চস্থ করেন। এই প্রহসনে বিচারক, কৌসলী, কেরাণী, ভাড়, কসাই, বাজারের ফোডে, সৈনিক, নাবিক প্রভৃতি বিচিত্র ধরনের চরিত্র দিয়ে নাটক জমিয়ে দর্শক আকর্ষণ করতে চেয়েছেন। তাতেও তিনি ব্যর্থ হন। চৌরঙ্গী থিয়েটারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এথেনিয়ামের সামর্থ্য ছিল না অস্তিত্ব বজায় রাখার।

১৮১৪ সালে এই থিয়েটারের অভিনয় প্রচেষ্টা শেষ হয়ে যায়।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!