//
//

বাংলাদেশের কবি আলাউদ্দিন আল আজাদের কৃতিত্ব আলোচনা কর।

আলাউদ্দিন আল আজাদ

পঞ্চাশের দশকে পূর্ব-পাকিস্তানের অন্যতম উদ্দীপনাময় কবি আলাউদ্দিন আল আজাদ (১৯৩২-২০০৯)। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে নতুন দেশ পাকিস্তান লাভ করার পর অচিরেই সেই দেশলাভের মোহমুক্তি ঘটে। স্বল্পসময়েই উন্মোচিত হয় পাকিস্তানপন্থীদের আসল স্বরূপ। তাঁদের আগ্রাসী থাবা ধাবিত হয় মাতৃভাষা বাংলার দিকে। এর প্রতিবাদেই ফেটে পড়ে পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণ। এই প্রাক-বাহান্নো পর্বে যে সমস্ত তরুণ কাব্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়ে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে আলাউদ্দিন আল আজাদ অন্যতম। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলি হল— মানচিত্র (১৯৬১), ভোরের নদীর মোহনায় জাগরণ (১৯৬২), সূর্যজ্বালার সোপান (১৯৬৫), লেলিহান পাণ্ডুলিপি (১৯৭৫), নিখোঁজ সনেটগুচ্ছ (১৯৮৩), আমি যখন আসবো (১৯৮৪), সাজঘর (১৯৯০)। মানচিত্র কাব্যের অধিকাংশ কবিতাই পঞ্চাশের অগ্নিগর্ভ সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে রচিত। কবি ভাষা আন্দোলনের উত্তাপকে সরাসরি কবিতায় স্থান দিয়েছেন। তাঁর এই সাহসিক কাজ এই সময়ের সাহিত্য-সংস্কৃতি বিশেষত বাংলা কবিতার বাঁকবদলে সাহায্য করেছে। একুশে ফেব্রুয়ারি নিহত শহিদদের সম্মান জানাতে ভাষাপ্রেমীরা যে মিনার তৈরি করেছিল তা শাসকশ্রেণি ভেঙে দিয়েছিল। এই ঘটনার প্রতিবাদে আবেগের বশবর্তী হয়ে পাকিস্তানী শাসকের প্রতি কবির হুঙ্কার—

স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো

চার কোটি পরিবার

খাড়া রয়েছি তো!…

ইটের মিনার ভেঙেছে ভাঙুক। একটি মিনার গড়েছি আমরা

চারকোটি কারিগর

বেহালার সুরে, রাঙা হৃদয়ের বর্ণলেখায়।

পলাশের আর

রামধনুকের গভীর চোখের তারায় তারায়

দ্বীপ হয়ে ভাসে যাদের জীবন, যুগে যুগে সেই

শহীদের নাম

এঁকেছি প্রেমের ফেনিল শিলায়, তোমাদের নামে।

তাই আমাদের

হাজার মুঠির বজ্রশিখরে সূর্যের মতো জ্বলে শুধু এক

শপথের ভাস্কর।

শব্দমালার সংহত বন্ধনে গাঁথা কবিতাটি স্মৃতিস্তম্ভের মতোই বলিষ্ঠ স্থাপত্যেরই প্রতীক। কেবল স্মৃতিস্তম্ভ নয় মানচিত্র কাব্যের একাধিক কবিতাতেই শাসকশ্রেণির প্রতি কবির প্রতিবাদের সুর ধ্বনিত হয়েছে। আসলে এই সময়ের সামাজিক-রাজনৈতিক-আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির দিকে নজর দিলে দেখা যায় তৎকালীন স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর প্রবল বাধার মুখেও আল আজাদের মতো কবিরা কেবল সাহসকে অবলম্বন করে তাঁদের কবিতায় মানবিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছে। স্মৃতিস্তম্ভ কবিতার পাশাপাশি প্রফাইল, শান্তিগাথা, কৃষকের গান, এপিটাফ, হাড়, পূর্বলেখ প্রভৃতি কবিতাতেও ঘুরে ফিরে একুশের রক্তমাখা স্মৃতি ফিরে এসেছে। যা পাঠকের চিত্তেও দুর্জয় প্রতিবাদী চেতনার জন্ম দেয়। বলা যায় হাড় কবিতাটির কথা। আলোচ্য কবিতায় লাল পলাশ এসেছে হলুদ পলাশের বদলে একুশের অনুষঙ্গে পলাশীর রক্তঝরা ইতিহাসের রঙ প্রতিফলিত করার প্রত্যয়ে। ফুটে উঠেছে সংগ্রামী শপথ—

ঝরেছে সকল রক্ত। এখন ক’খানা হাড়ে

ঝক্‌ঝক্ করে তীব্র তীক্ষ্ণ বর্শা-ফলা:

নতুন দস্যু আসে যদি, দেশ দেবোনা তারে

ইস্পাত-হাড়ে গড়েছি বজ্র বহ্নি-জ্বালা।

অতীত ইতিহাসের পটভূমিকায় বর্তমানের বাস্ত অভিজ্ঞতার আলোকে সমকালীন সমাজের জাগরণের আকাঙ্খা ধ্বনিত হয়েছে উপরোক্ত কবিতায়। উপমহাদেশের স্বাধীনতার জন্য কবি ব্রিটিশ ভারতে বাঙালির আত্মদানের ইতিকথা যেমন বর্ণনা করেছেন তেমনি একই সঙ্গে নতুন আগ্রাসী শক্তি, শাসক শোষক ও দস্যুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার ও সংগ্রামের দৃঢ় প্রত্যয় এখানে প্রকটিত।

আলাউদ্দিন আল আজাদের কবিতার এক বিরাট অংশ সংগ্রামী ভাবনায় উজ্জ্বল হলেও তাঁর কাব্যচেতনার অনেকাংশই প্রেম-প্রকৃতিনির্ভর। ভোরের নদীর মোহনায় জাগরণ কাব্যের কবিতাগুলিতে দেখা যায় কবি প্রত্যক্ষ সংগ্রামের পথ ছেড়ে ব্যক্তিগত ভাবানুভূতি, আবেগ-আর্তি, নারী-প্রেম এবং সবোর্পরি মানবপ্রেমে নিমজ্জিত হয়েছেন। কবির দৃঢ় বিশ্বাস শত বাঁধ দিয়েও কবির হৃদয়কে বাঁধা যাবে না কবি সমুদ্রের সঙ্গে হাত মেলাবেনই। এমনকি কবির ইচ্ছার পদে পদে সাহারা-গোবি মরুভূমির দল বাধা হয়ে দাঁড়ালেও কবি হৃদয়ের প্রেম দিয়ে মরুভূমির বালিকে সোনালি ফসলে পরিণত করে মরুভূমিকে সবুজ করে তুলবেন। জীবনপ্রেমিক বলেই কবি সবকিছুর মধ্যেই জীবনের সন্ধান করেন। তাই মেঘনা, পদ্মা  কবির কাছে পাগলিনী নয়, বর্ষার সময়ে তাদের ফেলে যাওয়া পলিমাটিতে সোনার বাংলা ভরে ওঠায় এই নদী কবির কাছে মাতৃরূপিণী। তাই প্রকৃতির বিবর্তনে তিনি মানবসভ্যতার ধারাবাহিক পরিবর্তনে মিশে থাকতে চান—

পথচলতি জনতার ভিড়ে, পাখি

হয়ে যাই, যদিও হারাই আমি:

পরবর্তী শিশুর ধারায় থাকি,

থাকি যে উৎসবে এই তো দামী!

জীবনের আড়ম্বর, কৃত্রিমতাকে ঘৃণা করতেন কবি। মানব সভ্যতার বিকাশে সারাজীবন অশুভ শক্তিকে পাশ কাটিয়ে চলার চেষ্টা করেছেন কবি। বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী হওয়ায় সারাজীবন তিনি গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেছেন। যদিও সারাজীবন তিনি গণতন্ত্রের সন্ধান পান নি। তাই শেষপর্যন্ত প্রকৃতির মধ্যেই গণতন্ত্রের সন্ধান করেছেন—

ধানের গমের গুচ্ছ গণতন্ত্র

পাটের তুলোর জন্ম গণতন্ত্র

ক্ষুধার তৃষ্ণার তৃপ্তি গণতন্ত্র

দিনের রাতের দীপ্তি গণতন্ত্র

পৃথিবীর সন্তান আলাউদ্দিন আল আজাদ প্রবলভাবে অস্তিত্ব সচেতন। চারপাশের পরিবেশ তাঁর চেনা। তাই একঘেয়ে চিরচেনা সম্ভবনাহীন পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে তিনি আগামী দিনের পথে এগিয়ে যেতে চান। কবি জানেন তাঁর যাত্রাপথে ঝড়ঝাপ্টার মতো অনেক বাধাবিপত্তি অপেক্ষে করছেন কিন্তু তাতেও তিনি দমবার পাত্র নন। নিশ্চিত পতন জেনেও অসীম সাহসকে অবলম্বন করে কবি এগিয়ে চলেন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে—

আমি চলেছি ধ্বংসের মুখে

ফিরবোনা আর

আমি চলেছি পতন সুখে

ফিরবোনা আর

কবি দেশের গায়ে দেখেছেন জখমের দাগ, ভাষার গায়ে আঘাতের চিহ্ন। চারপাশের মানুষের মনে বয়ে যেতে দেখেছেন হতাশার প্রবল বাতাস। তাই সমাজ ও রাষ্ট্রের জটিল বেড়াজাল থেকে মানবতার মুক্তি কামনা করেছেন তিনি। লেলিহান পাণ্ডুলিপি কাব্যের কবিতায় কবির এই মুক্তিকামনা প্রবল আকার ধারণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে কবি দেখেছেন পাকিস্তানী ঘাতক বাহিনির অত্যাচার। তারা শহর ভাঙছে, গ্রাম পোড়াচ্ছে। তারই মধ্যে দিয়ে লক্ষ লক্ষ গ্রামবাসী মৃত প্রিয়জনের লাশ নিয়ে মহাযাত্রা শুরু করছে কারণ তারা মৃত্যুতে ভীত নয় বুলেটের বাধা অতিক্রম করেও তারা স্বাধীনতার আস্বাদ লাভ করতে চায়। সেদিনের লক্ষ লক্ষ মুক্তিকামী জনগণের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা একত্রিত হয়ে কবির কলমে ঝরে পড়েছে—

ক্লান্ত; দারুণ ক্লান্ত আমি—আরো কতবার মরবো স্বাধীনতা

ওগো স্বাধীনতা, তোমার জন্য? গুলিতে গুলিতে জর্জরিত

আমার মুখ

উৎপাটিত আমার চোখ এবং একটি-একটি ক’রে

তুলে নিয়েছে

ওরা আমার বুকের পাঁজর, চামড়া কেটেছে, জ্বলন্ত আকসিতে

টেনে বার করেছে আমার জিভ এবং হৃৎপিণ্ড

এতই অবাঞ্ছিতা তুমি? অভিশপ্তা?

আরো কত দাম দিতে হবে বলো। বলো, বলো।

আমার নিহত মুখের উপরে বসে যখন কাক

ঠোকরাচ্ছে মাংস তখন, আবার জেগে ওঠবার আগে।

দাও, দাও

দাও তোমার উত্তর।

আলাউদ্দিন আল আজাদ কালের কবি। তিনি বাংলা কবিতায় যে আবেগ সঞ্চারিত করেছে তার ফলে বাংলা কবিতা হয়ে উটেছে বিপ্লবের বার্তাবহ। কোনো অত্যাচারের কাছে নতি স্বীকার না করে নিজের হৃদয়ের বাসনাকে তিনি কবিতায় মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। কবিতার প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন বলেই নিজের বলিষ্ঠ মেজাজজে তিনি কবিতায় প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টা বাংলা কবিতাকে একটি স্বতন্ত্র ভাষা দিতে সক্ষম হয়েছে।

সবমিলিয়ে বলা যায় পঞ্চাশের কবিকূলের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণি থেকে উঠে এসেছেন। প্রত্যকেই পৃথকভাবে তাঁদের কবিতার মধ্য দিয়ে নিজেদের ভাবনা ব্যক্ত করলেও দেখা যায় নাগরিক জীবনের জটিলতা, কৃত্রিমতাকে সমালোচনা করে তাঁরা প্রত্যেকেই রোমাণ্টিকতার দিকে ধাবিত হয়েছেন। এছাড়া একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে পঞ্চাশের বাংলা কবিতায় যে রাজনৈতিক প্রতিবাদ, স্বদেশ ও ভাষানুরাগ ব্যক্ত হয়েছে তাই গোটা ষাটের দশক জুড়ে বাঙালি মনকে প্রবলভাবে আলোড়িত করেছে। ফলে ষাটের দশকে কবিতার যে প্রতিবাদ তার উত্থান পঞ্চাশের দশক থেকেই। পঞ্চাশের দশকে ভাষাকে কেন্দ্র করে কবিদের যে প্রতিবাদী কবিতার ধারা সূচিত হয় তার ফলে বাঙালির বাস্তবিক নবজাগরণ ঘটে। খুলে যায় সৃজনশীল কাব্যের নতুন পথ।

পূর্ব-পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে ষাটের দশক গুরুত্বপূর্ণ সময়পর্ব হিসাবে বিবেচিত। সাংস্কৃতিক নবজাগরণের অঙ্গীকারে উন্মুখ হয়ে পূর্ব-পাকিস্তানের বাংলা কবিতা চল্লিশ-পঞ্চাশের উত্তাল সময় পেরিয়ে ষাটের দশকে প্রবেশ করে। ষাটের দশকের শুরু থেকেই পূর্ব-পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হয়। আইয়ুব খান ত্রাণকর্তারূপে হাজির হওয়ার চেষ্টা করলেও ধীরে ধীরে তার স্বরূপ উন্মোচিত হতে শুরু করে। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত সময়ে পূর্ব-পাকিস্তানের রাজর্নতিক পরিবেশ উত্তাল হতে শুরু করে। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের আন্দোলন আবার দানা বাঁধে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে। এই সময় শিক্ষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের যুবশক্তি পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করে, এরই মাঝে ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ঘটে যায় রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ছয়-দফা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাঙালি নতুন উদ্যমে সংঘবদ্ধ হতে শুরু করে। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় গণঅভ্যুত্থান। সবমিলিয়ে পূর্ব-পাকিস্তানের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে হতাশা ও নৈরাজ্যের কাল হিসাবে চিহ্নিত এই সময়পর্বকে ‘কালো দশক’ বলে অভিহিত করা হয়। এই সময় সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের ফলে পাকিস্তানের শিল্পায়ন তরান্বিত হয় কিন্তু এর সুফল ভোগ করে পশ্চিম-পাকিস্তান। কারণ পূর্ব-পাকিস্তান শাসক বিরোধী হওয়ায় তাদেরকে সবক্ষেত্রেই বঞ্চনা করা হয়। এই বঞ্চনাই মুক্তিযুদ্ধকে অনিবার্য করে তোলে। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে শূন্যতার সৃষ্টি হয়। এই শূন্যতাকে পূরণের উদ্দেশ্যেই এই সময় স্বাক্ষর, পূর্বমেঘ, কণ্ঠস্বর, বক্তব্য, সমকাল প্রভৃতি পত্রিকার জন্ম হয়। ষাটের এই গণজাগরণের পটভূমিতে কেউ গাইলেন শ্যামল মাটির গান, কারো কণ্ঠে শোনা গেল বিদ্রোহের স্লোগান। কবিরা তাঁদের কাব্যভাবনা দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুললেন ষাটের দশকের বাংলা কবিতার ক্ষেত্রটিকে। এই সময় পর্বের উল্লেখযোগ্য কবিরা হলেন—শহীদ কাদরী, রফিক আজাদ, আব্দুল মান্নান সৈয়দ, মহাদেব সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, মোহাম্মদ রফিক, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, সিকদার আমিনুল হক, হেলাল হাফিজ, মুহম্মদ নূরুল হুদা আবুল হাসান, হুমায়ুন আজাদ, ফরহাদ মাযহার প্রমুখ। এঁদের সম্মিলিত কণ্ঠে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্লোগান ধ্বনিত হয়েছিল তাতেই এদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!