গীতিকবিতার ধারায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কৃতিত্ব আলোচনা কর।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
নাট্যকার হিসাবে দ্বিজেন্দ্রলাল (১৮৬৩-১৯১৩) সমধিক পরিচিত হলেও কবিতা ও গানে তাঁর প্রতিভা বিকশিত হয়েছে। ব্যঙ্গরসাত্মক কবিতা নিয়েই সাহিত্যক্ষেত্রে তাঁর আগমন। ‘আর্যগাথা’, ‘মন্দ্র’, ‘আলেখ্য’, ‘ত্রিবেণী’, ‘হাসির গান’ ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ তাঁর রচিত। এই সব রচনায় কৌতুকরসের প্রাধান্য এবং ভাষা ও ছন্দের ক্ষেতে প্রচলিত রীতির ব্যতিক্রম সমসাময়িক কবিগোষ্ঠীর থেকে তাকে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করেছিল। স্বদেশী গানের রচয়িতা হিসেবেও তাঁর বিশেষ পরিচয় উল্লেখযোগ্য। ‘হাসির গানের রাজা’ হিসেবে তাঁর খ্যাতি নাটক রচনাকারীর চেয়েও বেশি। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় জীবনের বহু বিচিত্র বিষয়কে তীব্র ব্যঙ্গবিদ্রপের উপজীব্য করেছিলেন। তাঁর প্রতিভা ছিল প্রধানত গীতিকবির। ব্যঙ্গকবিতা ও হাসির গানের আকারে তাঁর এ ধরনের প্রতিভার সার্থক বিকাশ ঘটেছিল। কখনও তার আবেগ-প্রবাহ রোমান্স-স্বপ্নঘন গান ও কবিতার আকারে আত্মপ্রকাশ করেছিল।
বাক্-প্রতিমা নির্মাণে ও ছন্দশৈলী রূপায়ণে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় নতুনত্বের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। বাংলা কাব্যে তা ছিল অনন্য বৈশিষ্ট্যের পরিচায়ক। স্বীয় ধর্ম ও স্বসমাজকেও তিনি পরিহাসের বিষয় বিবেচনা করতে পেরেছিলেন। ‘গীতা আবিষ্কার’ কবিতা থেকে তার নিদর্শন হিসেবে কিছুটা অংশ উল্লেখ করা যায়। যেমন—
সকাল বেলায় অফিস গিয়ে গাধার মত খাটি,
নিত্য নিত্য প্রভুর রাঙা পা দুখানি চাটি;
বাড়ি ফিরে—বন্ধুবর্গ জড় হলে খালি,
যাদের তরে ভরণ-পোষণ, তাদের পাড়ি গালি;
একা হলে (হায়রে কপাল জোটেও না দড়ি!)
বুঝি বা সে না-ই বুঝি—গীতাখানি পড়ি।।
আমার গীতাখানি পড়ি।
কবিতার ক্ষেত্রে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের প্রতিভার বিকাশ হয়েছে ভাষা ও ছন্দের মধ্যে দুঃসাহসিকতা প্রদর্শনের মাধ্যমে। তাঁর ভাষা গদ্যঘেষা এবং ছন্দে আছে শৈথিল্য। যত্নহীনতা তাঁর কাব্যশিল্পকে উৎকর্ষের পর্যায়ে স্থান দিতে পারেনি। তাছাড়া শব্দ নির্বাচনেও তাঁর দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। বাংলা সাহিত্যে প্যারডি রচনায় তিনি পথিকৃৎ।
Leave a Reply