কবি মরদনের ‘নসীরানামা’ কাব্য সম্পর্কে আলোচনা কর।

মরদনের নসীরানামা

‘নসীরানামা’ নামক কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা কবি মরদন রোসাঙ্গরাজ শ্রীসুধর্মার রাজত্বকালে (১৬২২-৩৮) আবির্ভূত হয়েছিলেন বলে অনুমান করা হয়। তাঁর কাব্যে আরাকান রাজের প্রশংসা করা হয়েছে। ড. মুহম্মদ এনামুল হক কবির কাল ১৬০০ থেকে ১৬৪৫ সাল বলে উল্লেখ করেছেন। কবি সম্ভবত রোসাঙ্গের কাঞ্চি নামক নগরে বসবাস করতেন। হয়ত তিনি সেখানেই কাব্যসাধনায় মগ্ন ছিলেন। কবি কাব্যরচনায় কোন অমাত্যের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেননি। মরদন সতের শতকের চতুর্থ দশকের মধ্যেকার কবি। কবি মরদন রোসাঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত তার আবাসস্থল কাঞ্জি প্রসঙ্গে লিখেছেন—

সে রাজ্যেতে আছে এক কাঞ্জি নামে পুরী

মুমীন মুসলমান বৈসে সে নগরী।

আলিম মৌলানা বৈসে কিতাব কারণ

কায়স্থগণ বৈসে সব লেখন পড়ন।

ব্রাহ্মণ সজ্জন তাত বৈসএ পণ্ডিত 

নানা কাব্য রস সব কহএ সুরীত।

কাব্যের কাহিনিতে দেখা যায় নসীরা বিবি কীভাবে প্রতিকূল ঘটনার মধ্যেও পিতৃবন্ধুর পুত্রের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। ভাগ্যের অনিবার্য পরিণতি দেখানোই কাব্যের উদ্দেশ্য। ‘আরাকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্য’ গ্রন্থে এ কাব্যকে মৌলিক রচনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কাব্যের উল্লেখিত গল্প এ দেশে আগেই প্রচলিত ছিল, কবি তাকে কাব্যাকারে রূপায়িত করেছেন। দেশীয় উপাদানে এমন কাব্যরচনার কৃতিত্বে কবি মরদন গৌরবান্বিত। কাব্যের কাহিনিতে নিয়তির অমোঘ লীলা প্রতিফলিত হয়েছে। তবে উপাখ্যানে আছে রোমান্স ও আদিরসের পরিচয়। তাই ধর্মবুদ্ধিসম্পন্ন পাঠকের কাছে তা প্রিয় হতে পারে না । কবি লোকশিক্ষার উদ্দেশ্যে লোকশ্রুতির উপাখ্যানকে স্বাধীনভাবে কাব্যে রূপায়িত করে তুলেছিলেন। কবি তার কাব্যের বিভিন্ন স্থানে ‘দুই সাধু কথা’, ‘নসিরা বিবি-নুরুদ্দিন বিহা’ এবং ‘নুরুদ্দিন বাখান’ নামে উপাখ্যানটিকে অভিহিত করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!