কবি সুরেন্দ্রনাথ মজুমদারের কৃতিত্ব আলোচনা কর।
সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার
বাংলা গীতিকবিতার ধারায় সুরেন্দ্রনাথ মজুমদারের (১৮৩৮-১৮৭৮) কবিপ্রতিভা বিকশিত হয়েছে ‘মহিলা কাব্য’ (১৮৮০) নামক একটি অসমাপ্ত গ্রন্থের মাধ্যমে। কবি বিহারীলালের ‘বঙ্গসুন্দরী’ কাব্যের আদর্শানুসারে তিনি ‘মহিলা কাব্যের’ পরিকল্পনা করেছেন। এখানে কবি নারীর তিনটি বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা দিয়েছেন—মাতা, জায়া ও ভগ্নী। এই তিনটি অধ্যায়ে তা বর্ণিত হয়েছে। কবির মতে সংসারের অপূর্ণতার বেদনা বিদূরিত কাজই বিধাতাকর্তৃক কল্যাণময়ী নারীর সৃষ্টি। ‘মহিলা কাব্যে’ কবির এই মনোভাবের প্রকাশ লক্ষ্যণীয়। কবি মনে করেছেন, নারীপ্রকৃতি আত্মোৎসর্গের যে স্তরে উন্নীত হয়েছে, নরপ্রকৃতি যখন সে স্তরে উন্নীত হবে তখনই ভূতলে স্বর্গ নেমে আসবে। কবির ভাষায় নারীসৃষ্টির প্রেক্ষিত—
পূজিবার তরে ফুল ঝরে পড়ে পায়,
হৃদি-ফল পরশে পাখীতে,
মুগ্ধমুখে কুরঙ্গিনী মুগ্ধ মুখে চায়,
ধায় অলি অধরে বসিতে!
স্পর্শে পদরাগ ভরা,
অশোক লভিল ধরা;
এল-কেশে কে এল রূপসী!—
কোন্ বন-ফুল কোন্ গগনের শশী।
সুরেন্দ্রনাথের কাব্যে সংস্কৃতানুযায়ী উপমা, রূপক ও অনুপ্রাসের ব্যবহারে বিশিষ্টতা বিদ্যমান। ক্লাসিক্যাল রীতির মননশীল দৃঢ়তা এবং শ্রদ্ধান্বিত ভাবসংযমের মাধ্যমে কবি নারীসৌন্দর্যের বর্ণনা দিয়েছেন। রোমান্টিক ভাবকল্পনার ক্ষেত্রে কবি সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার ছিলেন কবি বিহারীলালের অনুসারী। বিহারীলালের আবেগ-সমৃদ্ধ কল্পনার শক্তি সুরেন্দ্রনাথকে আকৃষ্ট করেছিল। কিন্তু শিল্প নির্মাণে সুরেন্দ্রনাথ ছিলেন অধিকতর সচেতন। সেজন্য রূপকল্প, ছন্দ, শব্দ প্রয়োগ সব ক্ষেত্রেই কবির কৃতিত্ব লক্ষ করা যায়। সুরেন্দ্রনাথের অন্যান্য রচনাও রয়েছে। তাঁর গুরু প্রকাশিত কাব্য ‘ষড়ঋতু বর্ণনা’ বাল্যরচনা। ‘সবিতাসন্দর্শন’, ‘ফুল্লরা’ প্রভৃতি সংক্ষিপ্ত কাব্য। তিনি টডের ‘রাজস্থান কাহিনি’র বঙ্গানুবাদ করেছিলেন ‘বিশ্বরহস্য’ তার অন্য একটি গদ্যগ্রন্থ। ‘হামির’ মৃত্যুর পরে প্রকাশিত নাটক।
Leave a Reply