কমেডি সংজ্ঞাসহ বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা কর।
কমেডি
অ্যারিস্টটল তাঁর ‘Poetics’ গ্রন্থের ৪র্থ ও ৫ম অধ্যায়ে কমেডির উত্স ও ক্রমবিকাশ নিয়ে আলোচনা করেছেন, যেখানে তিনি কমেডি এবং ট্র্যাজেডির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য তুলে ধরেছেন। ট্র্যাজেডির মূল লক্ষ্য উচ্চতর মানুষের জীবনের অনুকরণ, যেখানে মহত্ত্ব, বীরত্ব, এবং বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে চরিত্রের উত্থান-পতন ফুটিয়ে তোলা হয়। অন্যদিকে, কমেডি নিম্নতর মানুষের জীবনকে তুলে ধরে, কিন্তু এখানে ‘নিম্নতর’ বলতে খারাপ বা নীচ ব্যক্তি বোঝানো হয় না, বরং সাধারণ মানুষদের দৈনন্দিন জীবনের ত্রুটি ও বিচ্যুতিগুলির মধ্য দিয়ে হাসির সৃষ্টি করা হয়। অ্যারিস্টটলের সংজ্ঞা অনুযায়ী, কমেডি হলো এমন এক শিল্প যা মানুষের জীবনের ত্রুটিগুলিকে অনুকরণ করে, কিন্তু তা অন্যদের ক্ষতি বা ব্যথা দেয় না। পোয়েটিকস্ গ্রন্থের ৫ম অধ্যায়ে কমেডির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে— “As for comedy, it is (as has been observed) an imitation of men worse that the average ; worse, how ever not as regards any and every sort of fault, but only as regards one particular kind, the Ridiculous may be defined as a mistake or deformity not productive of pain or harm to others”.
কমেডির বৈশিষ্ট্য
অ্যারিস্টটলের সংজ্ঞা থেকে কমেডির কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য উঠে আসে:
১. নিম্নতর মানুষের জীবনচিত্র: কমেডিতে মানুষের জীবনের অসঙ্গতি ও বিচ্যুতিগুলি তুলে ধরা হয়। তবে এই “নিম্নতর” শব্দটি খারাপ অর্থে ব্যবহৃত হয় না; বরং এতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও তাদের সীমাবদ্ধতাগুলি প্রতিফলিত হয়। স্থূলবুদ্ধি বা সীমাবদ্ধতার কারণে তারা হাস্যকর হয়ে ওঠে।
২. হাস্যরস সৃষ্টির উদ্দেশ্য: কমেডির মূল লক্ষ্য মানুষের জীবনের অসঙ্গতিকে তুলে ধরে হাস্যরস সৃষ্টি করা। চরিত্রগুলির ছোটখাটো ত্রুটি বা অসঙ্গতিগুলি অত্যন্ত সাধারণভাবে দেখা হয়, যা হাসির উপাদান হিসেবে কাজ করে।
৩. চরিত্রের স্বাভাবিকতা: কমেডির চরিত্ররা তাদের নিজেদের অসঙ্গতিগুলি ধরতে পারেন না, ফলে তাদের কার্যকলাপ এবং সিদ্ধান্ত অন্যদের কাছে অস্বাভাবিক ও মজার বলে প্রতীয়মান হয়। তাদের অচেতন ও ভুল ধারণাগুলি থেকেই হাসির সঞ্চার হয়।
অ্যারিস্টটল ‘পোয়েটিকস্’ গ্রন্থে মূলত ট্র্যাজেডি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন, তবে ট্র্যাজেডির প্রেক্ষাপটে কমেডির কথা উল্লেখ করেছেন। যদিও তিনি কমেডির জন্য আলাদাভাবে বিস্তৃত আলোচনা করেননি, তবুও তাঁর ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যায়, কমেডি হলো অসঙ্গতিজনিত ঘটনার নাট্যরূপ। মানুষের জীবনের বিচ্যুতি, মূর্খতা, এবং ত্রুটি থেকে কমেডির বিষয়বস্তু গড়ে ওঠে। যদিও ট্র্যাজেডির মতো কমেডিও মানব জীবন থেকে উপাদান গ্রহণ করে, কিন্তু কমেডির মূল উদ্দেশ্য হলো জীবনের অসঙ্গতির উপর ভিত্তি করে হাস্যরস সৃষ্টি করা। অ্যারিস্টটলের মতে, কমেডি এমন এক শিল্প যেখানে মানুষের ছোটখাটো ভুল, স্খলন বা সীমাবদ্ধতা হাসির রসদ হিসেবে কাজ করে এবং তা বাস্তব জীবনের প্রতিফলন।
তথ্যসূত্র:
কাব্যজিজ্ঞাসা – অতুলচন্দ্র গুপ্ত | Download |
কাব্যতত্ত্ব: আরিস্টটল – শিশিরকুমার দাস | Download |
কাব্যমীমাংসা – প্রবাসজীবন চৌধুরী | Download |
ভারতীয় কাব্যতত্ত্ব – নরেন বিশ্বাস | Download |
ভারতীয় কাব্যতত্ত্ব – অবন্তীকুমার সান্যাল | Download |
কাব্যজিজ্ঞাসার রূপরেখা – করুণাসিন্ধু দাস | Download |
কাব্য-শ্রী – সুধীরকুমার দাশগুপ্ত | Download |
কাব্যালোক – সুধীরকুমার দাশগুপ্ত | Download |
কাব্যপ্রকাশ – সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত | Download |
নন্দনতত্ত্ব – সুধীর কুমার নন্দী | Download |
প্রাচীন নাট্যপ্রসঙ্গ – অবন্তীকুমা সান্যাল | Download |
পাশ্চাত্য সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্যভাবনা – নবেন্দু সেন | Download |
সাহিত্য প্রকরণ – হীরেণ চট্টোপাধ্যায় | Download |
সাহিত্য জিজ্ঞাসা: বস্তুবাদী বিচার – অজয়কুমার ঘোষ | Download |
Leave a Reply