ক্রিয়াপদের সংজ্ঞাসহ বিভিন্ন ভাগের উদাহরণ দাও।

ক্রিয়াপদ

বাক্যের অন্তর্গত কার্য-বোধক পদকে বলা হয় ক্রিয়াপদ। বাক্যের মধ্যে কোন-না-কোন একটি কার্য সংঘটনের বিবৃতি থাকে। যে পদের দ্বারা কার্যটির সংঘটন বোঝায়, তাই ক্রিয়াপদ। অধিকাংশ বাক্যেই ক্রিয়াপদটি স্পষ্টভাবেই প্রকাশিত থাকে। আবার, কোনও কোনও বাক্যে উহ্য থাকতেও পারে। উহ্য থাকলেও ক্রিয়াপদের অস্তিত্ব বর্তমান থাকবেই। ক্রিয়াপদের অস্তিত্ব ব্যতীত বাক্য সংগঠিত হতে পারে না। আমি তোমাকে নিয়ে আসব।’— বাক্যে ‘নিয়ে আসব’ ক্রিয়াপদ উপস্থিত। কিন্তু ‘আমি (হই) তো জীবন্ত প্রাণ, আমি (হই) এক অঙ্কুরিত বীজ।’— বাক্যটি দুটি ক্ষুদ্র বাক্যের সমষ্টি এবং দুটি বাক্যেই ‘হই’ ক্রিয়াপদ উহ্য।

ধাতু

ক্রিয়াপদ বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় ধাতু এবং প্রত্যয় ও বিভক্তি। যেমন— হাতলটি ‘ভাঙিয়া গিয়াছে।’ এই বাক্যে ‘ভাঙিয়া গিয়াছে’ ক্রিয়াপদ। ‘ভাঙিয়া গিয়াছে’ —এই ক্রিয়াপদটিকে বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় ‘ভাঙ্’+ ‘ইয়া’+‘যা’ [গ]+‘ইয়াছে’ —অর্থাৎ, ‘ভাঙ্’ ধাতুর সঙ্গে অসমাপিকা ধাতু-বিভক্তি ‘ইয়া’ যুক্ত হয়েছে এবং যা ধাতুর সঙ্গে ‘ইয়াছে’ এই সমাপিকা ধাতু-বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। ‘ভাঙ্’ এবং ‘যা’— এরা ধাতু-প্রকৃতি। এদের প্রাতিপদিকও বলে। কারণ, ‘ভাঙ্’ এবং যা’— এদের আর বিশ্লেষণ করা যায় না।

কাজেই, প্রত্যেকটি ক্রিয়াপদকে বিশ্লেষণ করলে বা ভাঙলে, শেষ পর্যন্ত এমন একটি মূল বা জড় পাওয়া যায়, যাকে আর বিশ্লেষণ বা ভাগ করা সম্ভব নয়, অথচ যার দ্বারা ক্রিয়াপদের অন্তর্নিহিত ভাবটি মাত্র প্রকাশিত হয়, ক্রিয়াপদে এই অবিভাজ্য জড় অংশ, ক্রিয়ার এই শুদ্ধ ভাব-দ্যোতক মূল— একেই বলা হয় ধাতু। যেমন: সে হাসে— বাক্যটির ক্রিয়াপদটিকে বিশ্লেষণ করলে ‘হাসে’= ‘হাস্+‘এ’ পাওয়া যায়। ‘হাসে’ ক্রিয়াপদটির মূল হল ‘হাস্’ ধাতু। কাজেই, ক্রিয়ার মূলই হল ধাতু।

মূল ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় ও বিভক্তি যোগে যে কার্য-বোধক পদ গঠিত হয়, তাই-ই ক্রিয়াপদ। যেমন: ‘দেখ’— এটি একটি ধাতু। এর সঙ্গে ‘ই’ বিভক্তি যোগ করলে ‘দেখি’— উত্তম পুরুষের এই ক্রিয়াপদটি গঠিত হয়। তেমনি, ‘দেখ’+অ= ‘দেখ’ মধ্যম পুরুষের ক্রিয়াপদ, ‘দেখ’+এ= ‘দেখে’ (প্রথম পুরুষের ক্রিয়াপদ]।

গঠন-অনুসারে ধাতু প্রধানত দু’প্রকার— মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু এবং সাধিত ধাতু।

ক. মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু

যে ধাতু স্বয়ংসিদ্ধ এবং যাকে আর বিশ্লেষণ করা যায় না, তাকে মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু বলা হয়। যেমন: কর্, চল‌, বল্, দেখ‌্, হাস‌, ডাক্, পড়্, নে, দে, পা, খা, চা, আন‌্, গা, শিখ‌্ ইত্যাদি।

সিদ্ধ বা মৌলিক ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়া-বিভক্তি (ইতেছে, ইয়াছে, ইল, ইত, ইব ইত্যাদি) যুক্ত হয়ে মৌলিক ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। যেমন: [কর্+ইতেছে=] করিতেছে [>করছে],[কর্+ইয়াছে=] করিয়াছে [>করেছে], [বল্+ইল=] বলিল [>বলল], [চল্+ইত=] চলিত [>চলত], [বস্+ইব=] বসিব [>বসব]। বাংলায় ব্যবহৃত সিদ্ধ বা মৌলিক ধাতু দু’প্রকারের: সংস্কৃত বা তৎসম সিদ্ধ ধাতু এবং তদ্ভব বা প্রাকৃতজ সিদ্ধ ধাতু। সংস্কৃত বা তৎসম সিদ্ধ ধাতু— যা, চল্, দুহ‌, কৃ, ক্রী, লিখ্, লভ‌, দৃশ্ ইত্যাদি। তদ্ভব বা প্রাকৃতজ সিদ্ধ ধাতু— কর্, খা, বল্, দে, পড়‌, গড়্, ধর্, দেখ‌, আন্, জান্, চা, নড়‌ ইত্যাদি। তাছাড়া, খাঁটি বাংলা সিদ্ধ ধাতু এবং ধ্বন্যাত্মক সিদ্ধ ধাতুও সিদ্ধ বা মৌলিক ধাতুর অন্তর্গত।

এই সিদ্ধ বা মৌলিক ধাতু থেকে নানা ধাতু ও শব্দ গঠিত হয়ে ভাষার শক্তি ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করে। বাংলা সিদ্ধ ধাতু নামে যে সিদ্ধ ধাতুগুলি পরিচিত, তাদের মধ্যে কিছু তৎসম শব্দের মতো পরিবর্তিত আকারে এসেছে সংস্কৃত সিদ্ধ ধাতু থেকে। যেমন: তট্, চর‌‌‌্, চল্, জ্বল্, দুল‌্, দা, দুহ্, পাল‌্, পিষ্, পুষ‌্, ফল‌্, যা, শুষ‌্, সাধ‌্ ইত্যাদি। আবার, কিছু বাংলা সিদ্ধ ধাতু তদ্ভব শব্দের মতো সংস্কৃত সিদ্ধ ধাতু থেকে নানা রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে এসেছে। যেমন: কৃ [সংস্কৃত সিদ্ধ ধাতু] > কর্ [বাংলা সিদ্ধ ধাতু], ধৃ [সংস্কৃত সিদ্ধ ধাতু] > ধর্ [বাংলা সিদ্ধ ধাতু], বৃ [সংস্কৃত সিদ্ধ ধাতু > ব [বাংলা সিদ্ধ ধাতু], মৃ [সংস্কৃত সিদ্ধ ধাতু] > ম [বাংলা সিদ্ধ ধাতু], খাদ্ [সংস্কৃত সিদ্ধ ধাতু] > খা [বাংলা সিদ্ধ ধাতু], জ্ঞা [সংস্কৃত সিদ্ধ ধাতু] > জান্ [বাংলা সিদ্ধ ধাতু] ইত্যাদি। তাছাড়া, বাংলার নিজস্ব কিছু সিদ্ধ ধাতুও আছে, সেগুলির কোথাও উৎস নির্দেশ করা যায় না। যেমন: কাট্, খাট‌্, ডাক্, বাজ‌্, ভাজ‌্, ভাস্, ডুব‌্, বাঁচ্, বল্, এড়‌্, ঠেল‌্, খেল‌্, রুখ‌্, জড়‌্, টুট‌্, গড়‌্, খুল‌্, ভুল‌্ ইত্যাদি। এগুলিকে খাঁটি বাংলা সিদ্ধ ধাতুও বলা হয়। আর আছে ধ্বনি থেকে জাত কিছু সংখ্যক ধ্বন্যাত্মক ধাতু। যেমন: কুট্, ঠুক‌্, ধুঁক্, ফুঁক‌্, হাঁচ্ ইত্যাদি।

খ. সাধিত ধাতু

মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন ধাতু গঠিত বা সাধিত হলে, তাকে বলা হয় সাধিত ধাতু। সাধিত ধাতুকে বিশ্লেষণ করলে মূল ধাতু ও প্রত্যয় পাওয়া যায়। যেমন: [কর+আ প্রত্যয় =] করা, [চল‌+আ=] চলা, [বল্+আ =] বলা, [দেখ্+আ=] দেখা, [হাস্+আ=] হাসা, [ডাক্+আ=] ডাকা। এগুলি ণিজন্ত ধাতু বা প্রযোজক ধাতু।

সাধিত ধাতু আবার চার প্রকার— ১ নামধাতু, ২. ধ্বন্যাত্মক ধাতু, ৩. ণিজন্ত ধাতু বা প্রেরণার্থক ধাতু বা প্রযোজক ধাতু, ৪. কর্মবাচ্যের ধাতু।

১. নামধাতু

বিশেষ্য, বিশেষণ ও অব্যয়— এই নামপদগুলির সঙ্গে প্রত্যয় (সাধারণত ‘আ’] যুক্ত হয়ে ধাতু গঠিত হলে তাদের নামধাতু বলা হয়। যেমন: সংস্কৃত বা তৎসম নামধাতু— দমন [বিশেষ্য]+আ+ইলা = দমনিলা, পবিত্র [বিশেষণ]+আ+ইলা = পবিত্রিলা, দান [বিশেষ্য]+আ+ইলা = দানিলা, উত্তর [বিশেষ্য]+আ+ইল = উত্তরিল, জিজ্ঞাসা [বিশেষ্য]+আ+ইল = জিজ্ঞাসিল, কাতর [বিশেষণ]+আ+ইল = কাতরিল, চূর্ণ (বিশেষণ]+আ+ইবে = চূর্ণিবে, ঘন [বিশেষণ)+আ+ক্য+শান = ঘনায়মান, শ্যাম [বিশেষণ]+আ+ক্য+শান = শ্যামায়মান, ধূম [বিশেষ্য]+আ+ক্যঙ+শান] = ধূমায়মান, দণ্ড [বিশেষ্য+আ+ক্য+শান] = দণ্ডায়মান।

প্রয়োগ দৃষ্টান্ত: আকাশে ঘনায়মান মেঘপুঞ্জে দশদিক অন্ধকার হইয়া আসিল। দূরে শ্যামায়মান বনশ্রেণী কাঁপিতে লাগিল। সম্মুখে ধূমায়মান পর্বত শ্রেণী দণ্ডায়মান। বাংলা নামধাতু—ফেন্ [বিশেষ্য]+আ = ফেনা: ‘ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান।’ ঠেঙা [বিশেষ্য+ আ] = ঠেঙা: ‘ওকে ওরা খুব ঠেঙিয়েছে।’ বেত [বিশেষ্য]+আ = বেতা: সে তাকে বেতিয়ে লম্বা করে দেবে বলে শাসিয়েছে। জুতা [বিশেষ্য]+আ=জুতা: সে তাকে ধরলে জুতিয়ে ছাড়বে। কিল [বিশেষ্য]+আ =কিলা: কিলিয়ে কাঠাল পাকানো যায়, কিন্তু মানুষ পাকানো যায় না। রাঙা [বিশেষ্য]+আ = রাঙা: ‘রঙে রঙে রাঙালো আকাশ।’ ‘আমাকে চোখ রাঙাচ্ছ কেন?’ ঘন [বিশেষণ]+আ = ঘনা: ‘ওপারে আঁধার ঘনিয়েছে’ [<ঘনাইয়াছে) দেখ চাহিরে।’ আগল [বিশেষ্য]+আ = আগলা: বাবা কাজে যায়, আর মেয়ে ঘর আগলায়। আঁচড় [বিশেষ্য]+আ = আঁচড়া: তুমি চুল আঁচড়াওনি কেন? কামড় [বিশেষ্য]+আ = কামড়া: কুকুরটা কি কামড়ায়? ধমক (বিশেষ্য]+আ = ধমকা: ছেলেটাকে মিছিমিছি ধমকাচ্ছ কেন? বিদেশী নামধাতু— চাবুক [বিশেষ্য]+আ = চাব্‌কা: তাকে পেলেই সবাই চাব্‌কাবে। তড়পা [বিশেষ্য]+আ = তড়পা: এত তড়পাচ্ছ কেন?

২. ধ্বন্যাত্মক ধাতু

প্রত্যয়যোগে ধ্বন্যাত্মক অব্যয় বা অনুকারাত্মক অব্যয় ধাতুরূপে ব্যবহৃত হলে তাকে ধ্বন্যাত্মক ধাতু বলে। যেমন: ফুঁস্+আ = ফুঁসা: ‘ফুঁসিছে নাগিনী।’ ধুঁক্+আ = ধুকা: সে রাস্তার ধারে পড়ে ধুঁকছে। হাঁক+আ = হাঁকা: সে জোর গলায় হাঁকাচ্ছে। হাঁচ্+আ = হাঁচা: সে আজ খুব হাঁচছে। শন‌্শন্+আ = শন‌্শনা: শনশনিয়ে উঠলো গাছের পাতাগুলো। ঝম‌্ঝম্‌+আ = ঝমঝমা: ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এলো। হন‌্হন‌্+আ = হনহনা: যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে?’ টগ্‌বগ্+আ=টগবগা: “আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার পরে টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে।’ ঝিল্‌মিল্ + আ = ঝিলমিলা: ‘রোদ উঠেছে ঝিলমিলিয়ে বাঁশের ডালে ডালে। টন‌্টন‌্ + আ = টনটনা: পায়ের ব্যথাটা আবার টনটনায় । চড়‌্চড়‌্ + আ = চড়চড়া: মাঠ ফাটছে চড়চড়িয়ে। মচ্‌মচ্‌ + আ = মচমচা: বাবু যান জুতো পায়ে মচমচিয়ে। হক্‌চক্ + আ = হকচকা: আমি তো ভয়ে হকচকিয়ে গেলাম। ভন্‌ভন্ + আ = ভনভনা: ‘উড়ছে মাছি ভনভনিয়ে।’

৩. ণিজন্ত ধাতু বা প্রেরণার্থক ধাতু বা প্রযোজক ধাতু

কর্তার প্রেরণায় [প্রবর্তনায় বা চালনায়] অন্য কেউ ধাতু নিষ্পন্ন করলে সেই ধাতুকে ণিজন্ত ধাতু বা প্রেরণার্থক ধাতু বা প্রযোজক ধাতু বলা হয়। সিদ্ধ বা মৌলিক ধাতুর সঙ্গে ণিচ্ প্রত্যয় [প্রেরণার্থে] যুক্ত হয়ে ণিজন্ত বা প্রেরণার্থক বা প্রযোজক ধাতু গঠিত হয়। বাংলায় ‘আ’ বা ‘ওয়া’ হল ‘ণিচ্’ প্রত্যয়। যেমন: কর‌্+আ = করা, খা + আ = খাওয়া, বল্ + আ = বলা, পড়্ + পড়া, খেপ+আ = খেপা। মৌলিক ক্রিয়ায়: কর্ + ই = করি। আমি স্নান করি ; খা+ই = খাই: আমি মিষ্টি খাই; বল্ + ব = বলব: আমি তোমাকে বলব; পড়্ + ছি = পড়ছি: আমি বাংলা পড়ছি; খেপ্ + ছ= খেপছ: তুমি খেপছ কেন? এই ধাতুগুলি ‘ণিচ্’ প্রত্যয় যোগে ণিজন্ত ক্রিয়ার রূপ লাভ করলে দাঁড়ায়: কর্ + আ + ই =করাই: আমি তাকে স্নান করাই; খা + আ + ই = খাওয়াই: আমি সবাইকে মিষ্টি খাওয়াই। বল + আ + ব = বলাব: আমি তোমাকে সব বলাব। পড় + আ + ছি = পড়াচ্ছি: আমি বাংলা পড়াচ্ছি; খেপ + আ + ছ = খেপাচ্ছ: পাগলটাকে তোমরা খেপাচ্ছ কেন?

৪. কর্মবাচ্যের ধাতু

কর্মবাচ্যের ক্রিয়া কর্ম-অনুসারে গঠিত হয়। সিদ্ধ বা মৌলিক ধাতুর সঙ্গে কর্মবাচ্যের আ-প্রত্যয় যুক্ত হয়ে কর্মবাচ্যের ধাতু গঠিত হয়ে থাকে। পরে কর্মবাচ্যের ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়ে কর্মবাচ্যের ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন : শুন্ + [কর্মবাচ্যের] আ = শোনা: কথাটা ভালো শোনায় না। দেখ + [কর্মবাচ্যের] আ = দেখা: কাজটা খারাপ দেখায়। মান্ + [কর্মবাচ্যের] আ = মানা: এ পোশাক তোমাকে মানায় না। বিকা + [কর্মবাচ্যের] আ = বিকা: ‘বাজারে বিকায় ফল-তণ্ডুল।’

ক্রিয়া-বিভক্তি

ধাতুর সঙ্গে যে সকল বিভক্তি যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ গঠন করে তাকে রূপময় করে তোলে এবং বাক্যে ব্যবহারের যোগ্যতা দান করে, তাকে বলা হয় ধাতু-বিভক্তি বা ক্রিয়া-বিভক্তি। যেমন: দুল্+ইতেছে [= দুলিতেছে), ফুল+ইতেছে [=ফুলিতেছে), ভুল+ইতেছে [=ভুলিতেছে]।

যৌগিক ধাতু ও যৌগিক ক্রিয়া

অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে কোনও মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতুর যোগে যে ধাতু গঠিত হয়, তাকে যৌগিক ধাতু বলে। তাতে অসমাপিকা ক্রিয়াটির অর্থই প্রাধান্য লাভ করে। সমাপিকা ক্রিয়াটি সেই অথকে সম্পূর্ণতা দানে সাহায্য করে মাত্র। সেজন্যে সমাপিকা [Auxiliary] ক্রিয়া বলা যেতে পারে। সাধারণত ‘ইয়া’>এ’ এবং ‘ইতে’>তে প্রত্যয়ান্ত অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে নে, দে, পা, যা, পড়্, থাক্‌, লাগ‌্, উঠ‌্, রাখ‌্, বস্, আ, চল‌্ ইত্যাদি মৌলিক ধাতু এবং পুরুষানুসারী ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়ে যৌগিক ক্রিয়া গঠিত হয়।

যৌগিক ক্রিয়ার দৃষ্টান্তগুলি লক্ষ্য কর: বসিয়া [অস. ক্রি]+পড়্ [সিদ্ধ ধাতু]= বসিয়া পড়: সে মাথায় হাত দিয়া বসিয়া পড়িল। খাইতে [অস. ক্রি]+বস্ [সিদ্ধ ধাতু]= খাইতে বস্: সে খাইতে বসিয়াছিল। খাইয়া [অস. ক্রি]+ নে [সিদ্ধ ধাতু]= খাইয়া নে: দিদি আমাকে এক মুঠো কুল দিয়ে বলল, ‘শীগ্‌গীর খেয়ে নে।’ দেখাইয়া [অস. ক্রি]+ দে [সিদ্ধ ধাতু]= দেখাইয়া দে। আমাকে তুমি অন্ধকারে পথ দেখিয়ে দাও। দেখিতে [অস. ক্রি.]+পা [সিদ্ধ ধাতু]= দেখিতে পা: অন্ধ অবাক হইয়া বলিল, “আবার আমি পৃথিবীর মুখ দেখিতে পাইব?’ বলিয়া [অস: ক্রি]+যা [সিদ্ধ ধাতু=বলিয়া যা: ‘অনেক কথা যাও যে বলে কোন কথা না বলি।’ ঝরিয়া [অস. ক্রি]+পড় [সিদ্ধ ধাতু]= ঝরিয়া পড়: শিশুর হাসিতে যেন মুক্তো ঝরে পড়ে। বসিয়া [অস. ক্রি]+থা [সিদ্ধ ধাতু]= বসিয়া থাক্: ‘আমি তরী নিয়ে বসে আছি নদী কিনারে। চলিতে (অস. ক্রি]+লাগ [সিদ্ধ ধাতু)= চলিতে লাগ: পথিক আবার পথ চলিতে লাগিল। হইয়া [অস. ক্রি]+উঠ [সিদ্ধ ধাতু]= হইয়া উঠ: ছেলেটি দেখিতে দেখিতে বড় হইয়া উঠিল। খুলিয়া [অস. ক্রি.]+রা [সিদ্ধ ধাতু]= খুলিয়া রাখ্: ‘রাখো, রাখো, খুলে রাখো শিয়রের ঐ জানালা দুটো। উঠিয়া [অস. ক্রি.]+বস্= উঠিয়া বস্: তাহার আহ্বানে রুণরাও যেন উঠিয়া বসিল। চলিয়া [অস. ক্রি.]+আস্ [সিদ্ধ ধাতু]= চলিয়া আস্: ‘চলে এসো ঘরে পরবাসী। আগাইয়া [অস. ক্রি.]+চ [সিদ্ধ ধাতু]= আগাইয়া চল: এগিয়ে চলো তোমরা।

একাধিক অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গেও সিদ্ধ ধাতু ও ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়ে যৌগিক ক্রিয়া গঠিত হতে পারে। যেমন: শিউলিগুলি ‘ঝরিয়া পড়িতে লাগিল।’ আকাশের মেঘগুলি যেন ‘গলিয়া গলিয়া ঝরিয়া পড়িতেছে।’ “কী কথা কানে ‘বলিয়া যাও চলে’?”।

সংযোগমূলক ধাতু ও সংযোগমূলক ক্রিয়া

বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয় পদের সঙ্গে সিদ্ধ বা মৌলিক ধাতু যুক্ত হয়ে যে নতুন ধাতু গঠিত হয়, তাকে সংযোগমূলক ধাতু বলে। ইংরেজিতে এগুলিকে ‘Group Verb’ বলা হয়।

বাংলায় কর্, থাক্‌, হ্, দে, পা, খা, যা, বাস‌্, উঠ‌্, বস‌্, মার‌্ প্রভৃতি মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু যোগে অজস্র প্রকার সংযোগমূলক ধাতু সংগঠিত হয়ে থাকে। বিশেষ্য, বিশেষণ, ধ্বন্যাত্মক অব্যয়— এই সব পদ সংযোগমূলক ধাতুর পূর্বপদ হয়ে বসে। যেমন: কষ্ট [বি]+পা [সিদ্ধধাতু]= কষ্ট পাওয়া: “দূরদেশে গিয়ে কেষ্টারে লয়ে ‘কষ্ট’ অনেক ‘পাবে।” মুখস্থ [বিণ]+কর [সিদ্ধ ধাতু] = মুখস্থ কর: ‘কবিতাটি মুখস্থ কর।’ বন্দী [বিণ]+থাক্ [সিদ্ধ ধাতু]=বন্দী থাক্: আমাদের ছেলেরা ব্রিটিশের কারাগারে বছরের পর বছর ‘বন্দী থেকেছে’। শান্তি [বি]+পা [সিদ্ধ ধাতু]= শান্তি পাওয়া: কোথায় গেলে শান্তি পাবো’ বলতে পারো? মানুষ [বি]+হ [সিদ্ধ ধাতু] = মানুষ হওয়া: “আবার তোরা মানুষ হ।” মন [বি]+ দে [সিদ্ধ ধাতু] = মন দেওয়া: ‘এবার লেখাপড়ায় মন দাও।’ ডিগবাজি [বি]+খা [সিদ্ধ ধাতু] = ডিগবাজি খাওয়া ও পরীক্ষায় সে দু’বার ‘ডিগবাজি’ খেয়েছে। কাজেই, দেখা গেল, বিশেষ্য, বিশেষণ ও অব্যয়ের সঙ্গে মৌলিক ধাতু ও ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়ে সংযোগমূলক ক্রিয়া গঠিত হয়।

যৌগিক ক্রিয়া ও সংযোগমূলক ক্রিয়ার পার্থক্য

যৌগিক ক্রিয়া ও সংযোগমূলক ক্রিয়া, উভয়েই সাধিত ক্রিয়ার অন্তর্গত। উভয় ক্ষেত্রেই মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু ও ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়ে ক্রিয়া গঠন করে। কাজেই, উভয়ের মধ্যে পার্থক্যটি না জানলে ভ্রান্তি ঘটা স্বাভাবিক। সেজন্যে পার্থক্যের দিক্-চিহ্নটি জেনে নিতে হবে। পার্থক্যের সেই দিক্-চিহ্নটি নিহিত কেবল একটি বিষয়ে। তা হল যৌগিক ক্রিয়ায় মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতুটি অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং সংযোগমূলক ক্রিয়ায় মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতুটি যুক্ত হয় বিশেষ্য বা বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয় পদের সঙ্গে। উভয় ক্ষেত্রেই মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু সহযোগী মাত্র। উভয় ক্ষেত্রেই অপরাংশেরই অর্থের প্রাধান্য। অর্থাৎ, যৌগিক ক্রিয়ার অসমাপিকা ক্রিয়াপদটির এবং সংযোগমূলক ক্রিয়ায় বিশেষ্য বা বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের অর্থের প্রাধান্য লক্ষণীয়। উভয়ক্ষেত্রেই মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়ে তাদের রূপময় করে তোলে।

সংযোগমূলক ক্রিয়া সকর্মক হতে পারে, আবার অকর্মকও হতে পারে। যেমন: পাখিটাকে শিক্ষা দাও (সকর্মক]। শতাব্দীর সূর্য অস্ত গেল [অকর্মক]।

সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া

বাক্যের যে ক্রিয়ার দ্বারা কার্যের সম্পূর্ণতা বোঝায়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন: ‘জন্মিলে মরিতে হবে।’ বাক্যটিতে ‘হবে’ হল সমাপিকা ক্রিয়া। কারণ, তার দ্বারা কার্যের সমাপ্তি বোঝাচ্ছে। তাছাড়া, বাকি দুটি ক্রিয়াপদের [‘জন্মিলে’ ও ‘মরিতে’] দ্বারা কার্যের সমাপ্তি বোঝায় না; ফলে, বাক্যও সম্পূর্ণ হয় না। কাজেই, এ দুটি ক্রিয়াপদ অসমাপিকা ক্রিয়া।

বাক্যের যে ক্রিয়ার দ্বারা কার্যের সম্পূর্ণতা বোঝায় না, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। বাংলায় ‘ইয়া’, ‘ইতে’ ও ‘ইলে’ প্রত্যয়-যোগে অসমাপিকা ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। যেমন: ‘ময়লা ছুঁইলে শাস্তি পাইবে।’ ‘তোমরা সকলে হাসিয়া চলিয়া যাও।’ ‘উঠিতে বসিতে করি বাপান্ত।’ দৃষ্টান্তগুলিতে যথাক্রমে ‘ইলে’, ‘ইয়া’ ও ‘ইতে’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে অসমাপিকা ক্রিয়া গঠন করেছে।

অসমাপিকা ক্রিয়ার প্রকারভেদ

নিমিত্তার্থক অসমাপিকা ক্রিয়া: নিমিত্ত বোঝাতে ধাতুর উত্তর ‘ইতে’ প্রত্যয় যোগ করে নিমিত্তার্থক অসমাপিকা ক্রিয়া গঠন করা হয়ে থাকে। যেমন: আমরা পড়িতে ইস্কুলে যাই। সে মাছ কিনিতে বাজারে গিয়াছে। ওরা যাবে মন্দিরে পূজো দিতে। ফুলের মালাগাছি বিকাতে আসিয়াছি। আমি ফুল তুলিতে এলেম বনে।

অনুসৰ্গরূপে অসমাপিকা ক্রিয়া: সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু। পালকি করে বৌ আনবে খোকন পরিপাটি। যে পথ দিয়ে পাঠান এসেছিল, সে পথ দিয়ে ফিরলো নাকো তারা। বায়ু দূর হতে আসিয়াছে। কিছু বলব বলে এসেছিলেম।

ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যরূপে অসমাপিকা ক্রিয়া: মরিয়া হবে জয়ী আমার ’পরে এমনি করিয়াছ ফন্দি। আর বাঁচিয়া কি হইবে?

ক্রিয়াবাচক বিশেষণরূপে অসমাপিকা ক্রিয়া: হেরো ঐ ধনীর দুয়ারে দাঁড়াইয়া কাঙালিনী মেয়ে।

পূর্বকালীনতা বোঝাতে অসমাপিকা ক্রিয়া: সূর্য উঠিলে আমরা বাড়ি ফিরিলাম। চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে।

কর্মরূপে অসমাপিকা ক্রিয়া: সে বই পড়তে ভালোবাসে। তুমি অঙ্ক কষতে চাও না। যেতে দাও গেল যারা।

সম্ভাবনা অর্থে অসমাপিকা ক্রিয়া: আজ বিকেলে ঝড়জল হতে পারে। সে ভবিষ্যতেও একজন বড় লেখক হতে পারে।

বাধ্যবাধকতা অর্থে অসমাপিকা ক্রিয়া: আমার যে সব দিতে হবে। নূতন সমুদ্রতীর পানে দিতে হবে পাড়ি।

ধারাবাহিকতা অর্থে অসমাপিকা ক্রিয়া: হাসিতে হাসিতে খেলিতে খেলিতে নামিয়া এসেছি শেষ। খালি বই পড়ে পড়ে ছেলেটা পাগল হয়ে গেল। ক্রিয়াবিশেষণরূপে অসমাপিকা ক্রিয়া: সে গান গাইতে গাইতে হঠাৎ এসে হাজির। সে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লো।

অসমাপিকা ক্রিয়ার বীপ্সা বা দ্বিত্ব প্রয়োগ: হিন্দি গান শুনে শুনে কান পচে গেল। দেখিতে দেখিতে গুরুর মন্ত্রে জাগিয়া উঠিল শিখ।

সকর্মক ও অকর্মক ক্রিয়া

কর্মের ভিত্তিতে ক্রিয়াকে আবার তিন শ্রেণীতে বিন্যস্ত করা যায়: এক. সকর্মক ক্রিয়া, দুই. দ্বিকর্মক ক্রিয়া এবং তিন. অকর্মক ক্রিয়া।

যে সকল ক্রিয়ার কর্ম থাকে, তাদের বলা হয় সকর্মক ক্রিয়া। যেমন: ‘কোথা গেলে সীতা পাব?’ ‘কি ফল লভিনু হায়।’

এখানে প্রথম বাক্যে ‘পাব’ ক্রিয়ার একটি কর্ম ‘সীতা’ এবং দ্বিতীয় বাক্যে ‘লভিনু’ ক্রিয়ারও একটি কর্ম ফল। কাজেই, এরা সকর্মক ক্রিয়া। তেমনি— খাওয়া, লেখা, পড়া, করা, ধরা, মারা, বলা, বাজান, কাটা, ভাঙা, দেখা ইত্যাদি সকর্মক ক্রিয়া।

আবার; কোন কোন সকর্মক ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে, তাদের বলা হয় দ্বিকর্মক ক্রিয়া। যেমন: তিনি আমাকে চিঠি লিখবেন। আমি তোমাকে একটি গল্প বলব। অপু, ভালো হয়ে উঠলে তুই আমাকে রেলগাড়ি দেখাবি?

এই তিনটি বাক্যের প্রথমটিতে ‘লিখবেন’ ক্রিয়ার ‘আমাকে’ ও ‘চিঠি’ দুটি কর্ম আছে, দ্বিতীয়টিতে ‘বলব’ ক্রিয়ার ‘তোমাকে’ ও ‘গল্প’ দুটি কর্ম এবং তৃতীয়টিতে দেখাবি ক্রিয়ার ‘আমাকে’ ও ‘রেলগাড়ী’ দুটি কর্ম আছে। কাজেই, এই ক্রিয়াগুলি দ্বিকর্মক।

আর, যে ক্রিয়ার কর্ম থাকে না, তাকে বলে অকর্মক ক্রিয়া। যেমন: এ পৃথিবীতে কেউ হাসে, কেউ কাঁদে। সে নাচে। শকুন্তলা ভাবে। এই বাক্যগুলিতে ‘হাঁসে’, ‘কাঁদে’, ‘নাচে’, ‘ভাবে’— এই ক্রিয়াগুলির কর্ম নেই। এরা অকর্মক ক্রিয়া। তেমনি— চলা, হাঁটা, বেড়ান, ঘুমান, মরা, ডোবা ইত্যাদি অকর্মক ক্রিয়া।

অকর্মক ক্রিয়ার সকর্মক ক্রিয়ায় রূপান্তর

সমধাতুজ কর্ম-যোগে অকর্মক ক্রিয়া সকর্মক ক্রিয়ায় রূপান্তরিত হয়। যেমন: কহিলেন শেষে ক্রুর হাসি হেসে। আর মায়া কান্না কাঁদতে হবে না। সে মণিপুরী নাচ নাচবে। তাছাড়া, অতিরিক্ত কর্ম যোগ করেও অকর্মক ক্রিয়াকে সকর্মক করা হয়। যেমন— শকুন্তলা রাজা দুষ্মন্তের কথা ভাবছিলেন।

সকর্মক ক্রিয়ার অকর্মক ক্রিয়ায় রূপান্তর

বইটি পড় [সকর্মক]; মন দিয়ে পড় [অকর্মক]; ভাত খাও [সকর্মক]; তুমি একবেলা খাও [অকর্মক]।

মৌলিক ক্রিয়া, যৌগিক ক্রিয়া ও সংযোগমূলক ক্রিয়া

সিদ্ধ ধাতু বা মৌলিক ধাতুর উত্তর ক্রিয়া-বিভক্তি যোগ করে যে ক্রিয়া গঠিত হয়, তাকে বলে মৌলিক ক্রিয়া। যেমন: ‘দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ। অন্যদিকে অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে কোন মৌলিক ক্রিয়া যোগ করে যে ক্রিয়া গঠিত হয়, তাকে বলে যৌগিক ক্রিয়া। কাজেই, মৌলিক ক্রিয়া ছাড়া যৌগিক ক্রিয়া গঠিত হতে পারে না। যৌগিক ক্রিয়ার দৃষ্টান্ত: মেয়েটি অজ্ঞান হইয়া পড়িয়াছে। ধানের ক্ষেতে বাতাস নেচে যায় চপল ছেলের মতো। শিলা রাশি রাশি পড়িছে খসে। আবার, বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে মৌলিক ক্রিয়া যুক্ত হয়ে যে ক্রিয়া গঠিত হয়, তাকে বলে সংযোগমূলক ক্রিয়া। যেমন: পরে মাস দেড়ে ভিটেমাটি ছেড়ে বাহির [বিশেষ্য] হইনু পথে। রামকানাই কাগজ কলম লইয়া প্রস্তুত [বিশেষণ] হইলেন। পুঁথির শুকনো পাতা খস্ খস্ গজ গজ ধ্বন্যাত্মক অব্যয় করিতে লাগিল।

পঙ্গু ক্রিয়া বা অসম্পূর্ণ রূপ ক্রিয়া

এমন কতকগুলি ধাতু আছে, যাদের সকল ভাবের [mood] ও সকল কালের [tense] রূপ পাওয়া যায় না; অন্য ধাতুর সেই ভাবের ও সেই কালের রূপ ধার করে তাদের জায়গায় ব্যবহার করে কাজ চালিয়ে নিতে হয়। এদের বলা হয় পঙ্গু ক্রিয়া বা অসম্পূর্ণ ক্রিয়া। যেমন: ‘যা’ ধাতুর পুরাঘটিত বর্তমানে গিয়াছে [>চলিত—‘গেছে’], পুরাঘটিত অতীতে ‘গিয়াছিল’ [>চলিত—গেছিল’ বা গিয়েছিল] সংস্কৃত ‘গম’ ধাতুরই বিবর্তিত বাংলা রূপ ‘গ’ ধাতু থেকে জাত। ‘আছ’ ধাতুর ভবিষ্যৎ কালে ‘থাকিবে’ [>চলিত—‘থাকবে’] থাক্ ধাতুরই রূপ। ‘বট্’ ধাতুর অতীতও নেই, ভবিষ্যৎও নেই। এরা পঙ্গু ক্রিয়া।

দৃষ্টান্ত: আমার যে দিন ভেসে ‘গেছে’ চোখের জলে। আর সব’ই গেছে ঋণে। রাধারানী মাহেশের রথের মেলায় ফুলের বালা বেচিতে গিয়াছিল। তাহার ধন-ঐশ্বর্য সব গিয়াছে বটে, কিন্তু এখনও তাহার ঐশ্বর্যের অহংকার যায় নাই। তুমি কে ‘বট’ হে?

নঞর্থক ধাতু

‘ন’ এই অব্যয়ের সঙ্গে ‘হ’ ধাতুর যোগে ‘নহ’ ধাতু গঠিত হয়। এই ‘নহ’ ধাতুও সংযোগমূলক ক্রিয়া। কিন্তু নেতিবাচক অর্থদ্যোতক বলে একে নঞর্থক ধাতুর পর্যায়ে ফেলা হয়। ‘নহ’ ধাতু থেকে উত্তম পুরুষে নহি>নই, মধ্যম পুরুষে নহ>নও, নহেন>নন, [সম্ভ্রমার্থে], নহিস্>নস্ [তুচ্ছার্থে] এবং প্রথম পুরুষে নহে>নয়, নহেন>নন [সম্রমার্থে]— এই নঞর্থক ক্রিয়াপদগুলি গঠিত হয়। ‘নহ্’ ধাতু থেকে জাত অসমাপিকা ক্রিয়ার সাধু বাংলার রূপ— ‘নহিলে’>চলিত বাংলায় হয় ‘নইলে’।

দৃষ্টান্ত: ‘নহ’ মাতা ‘নহ’ কন্যা। তুমি নও তো সূর্য নও তো চন্দ্র। সে তো আজকে নয়’। নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?

আবার ‘না’ এই অব্যয়ের সঙ্গে ‘ই’ ধাতুর যোগে ‘নাহি’>নাই>নি ক্রিয়াপদ গঠিত। সকল পুরুষে ও সকল বচনে এর একই রূপ—‘নেই’>‘নি’। যেমন: আমিও ‘নেই’, দিদিও ‘নেই’, কেমন মজা হবে। আমিও আসি ‘নি’, তুমিও আসো ‘নি’, সেও আসে ‘নি’। এটি মূলত সংযোগমূলক ক্রিয়াপদ; কিন্তু ব্যবহৃত হয় অব্যয় রূপে।

ক্রিয়ার কাল ও ক্রিয়ার ভাব

কাল অনন্ত, নিরবধি। কাজের সুবিধার জন্যে সময়কে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়— অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। অতীত ও ভবিষ্যতের মিলন-রেখায় বর্তমানের অবস্থিতি। বর্তমান কাল তাই সংক্ষিপ্ত। ভবিষ্যৎ অতীতের মতোই বহু-বিস্তৃত। কাজেই, ক্রিয়ার কাল তিন প্রকার— ক. বর্তমান, খ. অতীত ও গ. ভবিষ্যৎ।

এই প্রধান তিন প্রকার কালের আবার নানাপ্রকার রূপবিভাগ আছে। ক্রিয়ার ওপরেই কালের প্রভাব পড়ে এবং সেই হেতু বিভিন্ন কালে ক্রিয়ার বিভিন্ন রূপ দেখা যায়। আবার, কালের সূক্ষ্মতার বিচারে একই কালের ক্রিয়ারও রূপভেদ পরিলক্ষিত হয়।

ক. বর্তমান কাল (Present Tense)

যে ক্রিয়ার সংঘটনকাল বর্তমান কাল— অর্থাৎ, যে ক্রিয়া এখন সংঘটিত হচ্ছে, তার কালকে বলা হয় বর্তমান কাল। বর্তমান কালের আবার নানা প্রকারের রূপভেদ আছে এবং সেই রূপভেদ অনুসারে একই কালে বিভিন্ন রূপের ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন: ‘জল পড়ে পাতা নড়ে।’ ‘দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ।’ ‘ছিঁড়িয়াছে পাল।’ ‘কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান।’

দৃষ্টান্তগুলিতে ‘পড়ে’, ‘নড়ে’, ‘দুলিতেছে’, ‘ফুলিতেছে’, ‘ভুলিতেছে’, ‘ছিড়িয়াছে’, ‘আছ’ এবং ‘হও’— এই ক্রিয়াপদগুলি একই বর্তমান কালের; কিন্তু এদের রূপ ভিন্ন ভিন্ন প্রকার।

এই প্রসঙ্গে স্মরণীয় যে, বাক্যের কর্তার পুরুষ-অনুসারে ক্রিয়ারও পুরুষ নির্ধারিত হয়। আবার, পুরুষ-ভেদে ক্রিয়ার মূল ধাতুর সঙ্গে পৃথক পৃথক পুরুষবাচক বিভক্তি যুক্ত হয়। তার পূর্বে মূল ধাতুর সঙ্গে প্রয়োজনবোধে কালবাচক প্রত্যয় যুক্ত হয়।

ক্রিয়া-সংঘটনকালের সূক্ষ্মতার বিচারে ক্রিয়ার বর্তমান কালকে চার প্রকারে ভাগ করা হয়ে থাকে— ১. সাধারণ বা নিত্য বর্তমান, ২. ঘটমান বর্তমান, ৩. পুরাঘটিত বর্তমান ও ৪. বর্তমান কালের অনুজ্ঞা।

১.ক. সাধারণ বা নিত্য বর্তমান (Present Indefinite)

যেখানে ক্রিয়াটি স্বভাবত ঘটে বা বরাবর ঘটে থাকে, তার কালকে সাধারণ বর্তমান বা নিত্য বর্তমান বলে। সাধারণ বা নিত্য বর্তমানে মূল ধাতুর সঙ্গে কোনও কালবাচক প্রত্যয় যুক্ত হয় না। উত্তম, মধ্যম ও প্রথম পুরুষে যথাক্রমে পুরুষবাচক বিভক্তি ‘ই’, ‘অ’ এবং ‘এ’ যুক্ত হয়। মধ্যম পুরুষে সম্ভ্রমার্থে ‘এন’ এবং তুচ্ছার্থে ‘ইস’ যুক্ত হয়ে থাকে। এইভাবে ‘কর্’ ধাতুর উত্তম পুরুষে ‘কর‌্’+ই=করি, মধ্যম পুরুষে ‘কর্’+অ=কর, ‘কর্’+এন=করেন, [সম্ভ্রমার্থে]‘কর্’+ই=করিস [তুচ্ছার্থে] এবং প্রথম পুরুষে ‘কর্’+এ=করে, ‘কর্’+এন=করেন [সম্ভ্রমার্থে] হয়। যেমন: ‘মন্ত্রশক্তিতে তোমরা বিশ্বাস কর না, কারণ আজকাল কেউ করে না; কিন্তু আমি করি।’

১.খ. ঐতিহাসিক বর্তমান

সাধারণ বর্তমান বা নিত্য বর্তমান কালের ক্রিয়াকে অতীত কালে সংঘটিত কোন ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনায় ব্যবহার করলে তার কালকে ঐতিহাসিক বর্তমান বলে। যেমন: সম্রাট হইয়া অশোক কলিঙ্গ দেশ আক্রমণ করেন।

১.গ. অতীত কালের অর্থে বর্তমান কালের ক্রিয়ার ব্যবহার

সে বছর আমরা ভাগলপুরে চলে যাই এবং এক বছর পরে আবার কলকাতায় ফিরে আসি।

২. ঘটমান বর্তমান (Present Continuous)

যে ক্রিয়ার কার্য এখনও সংঘটিত হচ্ছে, তার কালকে বলা হয় ঘটমান বর্তমান। ঘটমান বর্তমানে মূল ধাতুর সঙ্গে ‘ইতে’ অসমাপিকা ক্রিয়া-প্রত্যয়, ‘আছ’ ধাতু এবং পুরুষবাচক ক্রিয়া-বিভক্তি (অর্থাৎ ‘ই’, ‘অ’ এবং ‘এ’] যোগ করে ক্রিয়া-রূপ গঠিত হয়। উত্তম পুরুষে ‘কর্’ ধাতু + ‘ইতে’ + ‘আছ’ ধাতু + ই = করিতেছি, মধ্যম পুরুষে ‘কর্‌’ ধাতু + ‘ইতে’+ ‘আছ’ ধাতু + অ [এন, ইস] = করিতেছ, [করিতেছেন, করিতেছিস] এবং প্রথম পুরুষে ‘কর্’ ধাতু + ‘ইতে’ + ‘আছ’ ধাতু + এ [এন] = করিতেছে [করিতেছেন] হয়। এগুলি হল সাধু ভাষার রূপ। চলিত ভাষার রূপ হল— করছি, করছ (করছেন, করছিস), করছে [করছেন]। যেমন: ‘হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি। পৃথিবীর পথে।’ ‘দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ।’ ‘আমি দেখছি, তুমি হাস্‌ছ, কিন্তু সে কাঁদছে।

৩. পুরাঘটিত বর্তমান (Present Perfect)

যে-ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয়ে গেছে, কিন্তু তার ফল এখনও বর্তমান, তার কালকে বলা হয় পুরাঘটিত বর্তমান। পুরাঘটিত বর্তমানে মূল ধাতুর সঙ্গে ‘ইয়া’ অসমাপিকা ক্রিয়া-প্রত্যয়, ‘আছ্’ ধাতু এবং ক্রিয়া-বিভক্তি [‘ই’, ‘অ’ এবং ‘এ’] যুক্ত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন ক্রিয়ারূপ গঠিত হয়। যেমন: ‘কর্’ ধাতুর উত্তম পুরুষে ‘কর্’ ধাতু + ‘ইয়া’ + ‘আছ’ + ই = করিয়াছি[>চলিত বাংলায়— করেছি], মধ্যম পুরুষে ‘কর্’ ধাতু + ‘ইয়া’ + ‘আছ্’ + অ [এন, ইস] = করিয়াছ [>চলিত বাংলায় করেছ], করিয়াছেন [>চলিত বাংলায় করেছেন], করিয়াছি [>চলিত বাংলায়— করেছি এবং প্রথম পুরুষে ‘কর্’ ধাতু + ‘ইয়া’ + ‘আছ্’ + এ [এন] = করিয়াছে [>চলিত বাংলায়— করেছে], করিয়াছেন। [>চলিত বাংলায় করেছেন] হয়। যেমন: ‘দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা, দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু।’ ‘তুমি ব্রাহ্মণের ব্রহ্মস্ব হরণ করিয়াছ।’ ‘বুলবুলিতে বোল ধরেছে।’

৪. বর্তমান কালের অনুজ্ঞা (Present Imperative Mood)

বর্তমান কালে প্রার্থনা, উপদেশ, অনুরোধ, অনুমতি ইত্যাদি বোঝাতে বর্তমান কালের অনুজ্ঞা হয়। এটি কেবলমাত্র মধ্যম পুরুষের এবং প্রথম পুরুষের ক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হয়। বর্তমান কালের অনুজ্ঞায় মূল ধাতুর সঙ্গে ‘অ’, ‘উন’, ‘ই’, ‘উক’— এই প্রত্যয়গুলি যুক্ত হয়ে, আবার কখনও বা কোনও প্রত্যয় যুক্ত না হয়েই, ক্রিয়ারূপ গঠিত হয়ে থাকে। ‘কর্’ ধাতুর বর্তমান কালের অনুজ্ঞায় মধ্যম পুরুষে ‘কর্’ + অ = কর, সন্ত্রমার্থে ‘কর্’ + উন = করুন। যেমন: ‘অন্তর মম বিকশিত কর, অন্তরতর হে।’ ‘ওঠো, প্রতিজ্ঞা পালন করো।’ ‘উনি বলুন, সে শুনুক।’

খ. অতীত কাল (Past Tense)

যে-ক্রিয়ার সংঘটনকাল অতীত কালে— অর্থাৎ, যে-ক্রিয়া অতীত কালে সংঘটিত হয়ে গেছে এবং তার ফল বর্তমান নেই, তার কালকে অতীত কাল বলা হয়। যেমন: আমি একবার তোমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলাম।

ক্রিয়া-সংঘটনকালের সূক্ষ্মতার বিচারে অতীত কালকে চার ভাগে ভাগ করা হয়— ১. সাধারণ বা নিত্য অতীত, ২. ঘটমান অতীত, ৩. পুরাঘটিত অতীত ও ৪. নিত্যবৃত্ত অতীত। উল্লিখিত কাল-বিভাগ অনুসারে অতীত কালের ক্রিয়ার ভিন্ন ভিন্ন রূপ হয়।

১. সাধারণ বা নিত্য অতীত (Past Indefinite)

যে ক্রিয়া অতীত কালে সম্পন্ন হয়ে গেছে এবং তার ফল বর্তমান নেই, তার কালকে সাধারণ অতীত বা নিত্য অতীত বলা হয়। সাধারণ বা নিত্য অতীতে মূল ধাতুর সঙ্গে অতীতকালবাচক ‘ইল’ প্রত্যয় এবং পুরুষানুযায়ী ক্রিয়া-বিভক্তি (আম, এ, অ, এন, ই] যুক্ত হয়ে ক্রিয়া-রূপ গঠিত হয়। ‘কর্’ ধাতুর উত্তম পুরুষে ‘কর্’ + ই + আম = করিলাম [>চলিত বাংলায় করলাম, করলুম, করলেম], মধ্যম পুরুষে ‘কর্’ + ই + এ [এন, ই] = করিলে [>চলিত বাংলায়— করলে], সম্ভ্রমার্থে— করিলেন।

>চলিত বাংলায়— করলেন], তুচ্ছার্থে— করিলি [>চলিত বাংলায় করলি], এবং প্রথম পুরুষে ‘কর্’ + ই + অ [এন] = করিল [>চলিত বাংলায়—করল) সম্ভ্রমার্থে— করিলেন [চলিত বাংলায় করলেন ক্রিয়ারূপ হয়।] যেমন: আনিলাম অপরিচিতের নাম ধরণীতে। ‘বাবা, আমাদের তবে এবার পথে ভাসালে?’ ‘রামানন্দ পেলেন গুরুর পদ।’

২. ঘটমান অতীত (Past Continuous)

যে-ক্রিয়া অতীত কালে সংঘটিত হচ্ছিল, অর্থাৎ অতীতে যে ক্রিয়ার কাজ চলছিল, তার কালকে ঘটমান অতীত বলা হয়। ঘটমান অতীতে মূল ধাতুর সঙ্গে ‘ইতে’ প্রত্যয়, ‘আছ্’ ধাতু, অতীতকালবাচক ‘ইল’ প্রত্যয় এবং পুরুষানুসারী ক্রিয়া-বিভক্তি [আম, এ, অ, এন, ই] যুক্ত হয়ে ক্রিয়ারূপ গঠিত হয়। ‘কর্’ ধাতুর উত্তম পুরুষে ‘কর্’ + ইতে’ + ‘আছ’+ ই + আম = করিতেছিলাম। [>চলিত বাংলায় করেছিলাম, করেছিলুম, করেছিলেম, করতেছিলেম], মধ্যম পুরুষে ‘কর্’ + ‘ইতে’ + ‘আছ’ + ই + এ [এন, ই] = করিতেছিলে [>চলিত বাংলায়—করছিলে], তুচ্ছার্থে— করিতেছিলি [>চলিত বাংলায়—করছিলি; কোথাও কোথাও— করছিলিস) এবং প্রথম পুরুষে ‘কর্’ + ‘ইতে’ + ‘আছ’ + ‘ইল’ + অ = করিতেছিল (>চলিত বাংলায়— করছিল], সম্ভ্রমার্থে করিতেছিলেন [>চলিত বাংলায়—করছিলেন)— এই ক্রিয়া-রূপগুলি হয়। যেমন: ‘বলিতেছিলাম বসি একধারে।’ ‘বাঁধিতেছিল সে দীর্ঘ চিকুর।’ ‘ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই।’ তুমি গান করছিলে। তারা বসে গল্প করছিল।

৩. পুরাঘটিত অতীত (Past Perfect)

অতীত কালে সংঘটিত হয়েছিল, এমন ক্রিয়ার কালকে পুরাঘটিত অতীত বলা হয়। পুরাঘটিত অতীতে মূল ধাতুর সঙ্গে ‘ইয়া’ প্রত্যয়, ‘আছ্’ ধাতু + অতীতকালবাচক ‘ইল’ প্রত্যয় এবং সর্বশেষে পুরুষানুযায়ী ক্রিয়া-বিভক্তি (আম, এ, অ, এন, ই] যুক্ত হয়ে ক্রিয়া-রূপ গঠিত হয়। ‘কর্’ ধাতুর উত্তম পুরুষে ‘কর্’ + ‘ইয়া’ + ‘আছ’ + ই + আম = করিয়াছিলাম (>চলিত বাংলায়— করেছিলাম, করেছিলুম, করেছিলেম], মধ্যম পুরুষে ‘কর্’ + ‘ইয়া’ + ‘আছ’ + ‘ইল’ + এ = করিয়াছিলে (>চলিত বাংলায়—করেছিলে], [>চলিত বাংলায়— করেছিলি; কোথাও কোথাও—করেছিলিস], প্রথম পুরুষে ‘কর্’ + ‘ইয়া’ + ‘আছ’ + ‘ইল’ + অ = করিয়াছিল। [>চলিত বাংলায়—করেছিল, সম্ভ্রমার্থে— করিয়াছিলেন [>চলিত বাংলায়— করেছিলেন।] এই ক্রিয়া-রূপগুলি হয়। যেমন: চোখের আলোয় দেখেছিলেম।’ ‘দাঁড়িয়েছিলুম চণ্ডীমণ্ডপের বারাণ্ডায়।’ ‘তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে।’ ‘লোক জুটেছিল কম নয়।’

৪. নিত্যবৃত্ত অতীত (Habitual Past)

অতীতে প্রায়ই ঘটতো— এরূপ অর্থে ক্রিয়ার যে কাল হয়, তাকে নিত্যবৃত্ত অতীত বলা হয়। নিত্যবৃত্ত অতীতে মূল ধাতুর সঙ্গে অতীত কালবাচক ‘ইত্’ প্রত্যয় এবং পুরুষানুসারী ক্রিয়া-বিভক্তি (আম, এ, অ, এন, ই] যুক্ত হয়ে ক্রিয়া-রূপ গঠিত হয়। ‘কর্’ ধাতুর উত্তম পুরুষে ‘কর্’ + ‘ইত’ + আম = করিতাম [>চলিত বাংলায়— করতাম, করতুম, করতেম], মধ্যম পুরুষে ‘কর্’ + ‘ইত্’ + এ = করিতে (চলিত বাংলায়—করতে], সম্ভ্রমার্থে— করিতেন [>চলিত বাংলায়— করতেন], তুচ্ছার্থে—করিতিস [>চলিত বাংলায় করতিস।] প্রথম পুরুষে ‘কর্’ + ‘ইত্’ + অ [এন] করিত [>চলিত বাংলায়— করত], সম্ভ্রমার্থে করিতেন [>চলিত বাংলায়— করতেন] এই ক্রিয়া-রূপগুলি হয়। যেমন: ‘কুরঙ্গিণী সঙ্গে রঙ্গে নাচিতাম বনে, গাইতাম গীত শুনি কোকিলের ধ্বনি।’ ‘সেখানে ছুটিতাম সকালে উঠি।’

গ. ভবিষ্যৎকাল (Future Tense)

যে-ক্রিয়ার সংঘটনকাল ভবিষ্যৎ কালে— অর্থাৎ, যে ক্রিয়া ভবিষ্যৎ কালে সংঘটিত হবে, তার কালকে ভবিষ্যৎ কাল বলা হয়। যেমন: ‘প্রভাতেই যাব এই সীমা ছেড়ে, দেব আমার অহংকার দূর করে তোমার বিশ্বলোকে। ভবিষ্যৎ কালকে চার ভাগে বিভক্ত করা হয়— ১. সাধারণ ভবিষ্যৎ ২. ঘটমান ভবিষ্যৎ, ৩. পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ ও ৪ ভবিষ্যৎকালের অনুজ্ঞা।

এই কাল-বিভাগ অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন ক্রিয়া-রূপ গঠিত হয়ে থাকে।

১. সাধারণ ভবিষ্যৎ (Future Indefinite)

যে-ক্রিয়া এখনও সংঘটিত হয়নি, কিন্তু পরে সংঘটিত হবে, তার কালকে সাধারণ ভবিষ্যৎ বলে। সাধারণ ভবিষ্যতে মূল ধাতুর সঙ্গে ভবিষ্যৎ কালবাচক ‘ইব্’ প্রত্যয় এবং পুরুষানুসারী ক্রিয়া-বিভক্তি [অ, এ এন, ই] যুক্ত হয়ে ক্রিয়ারূপ গঠিত হয়। ‘কর্’ ধাতুর উত্তম পুরুষে ‘কর্’ + ‘ইব’ + অ = করিব [>চলিত বাংলায়— করব], মধ্যম পুরুষে ‘কর্’ + ই + এ [এন, ই] = করিবে (>চলিত বাংলায়—করবে], সম্ভ্রমার্থে করিবেন [>চলিত বাংলায়— করবেন], তুচ্ছার্থে— করিবি। [>চলিত বাংলায় করবি), প্রথম পুরুষে ‘কর্’ + ই + এ (এন) = করিবে [>চলিত বাংলায়— করবে], সম্ভ্রমাৰ্থে— করিবেন [>করবেন] এই ক্রিয়া-রূপগুলি হয়। যেমন: ‘আমি ঢালিব করুণাধারা, আমি ভাঙিব পাষাণকারা।’ ‘পশিবে সে দেশে রাজরোষ।’ ‘উদিবে সে রবি আমাদেরই খুনে রাঙিয়া পুনর্বার।’

২. ঘটমান ভবিষ্যৎ (Future Continuous)

যে ক্রিয়া ভবিষ্যতে সংঘটিত হতে থাকবে— অর্থাৎ, যে ক্রিয়ার কাজ ভবিষ্যতে চলতে থাকবে, তার কালকে ঘটমান ভবিষ্যৎ বলা হয়। ঘটমান ভবিষ্যতে মূল ধাতুর সঙ্গে ‘ইতে’ প্রত্যয় [অসমাপিকা ক্রিয়া-প্রত্যয় যুক্ত হয় এবং তার পরে ‘আছ্’ [<‘থাক’ আদেশ] ধাতুর সঙ্গে ভবিষ্যৎ কালবাচক ‘ইব্’ প্রত্যয় ও পুরুষানুসারী ক্রিয়া-বিভক্তি [অ, এ, এন, ই] যুক্ত হয়ে বসে। ‘কর্’ ধাতুর উত্তম পুরুষে ‘কর‌্’ + ইতে + ‘থাক্’ + ‘ইব্’ + অ = করিতে থাকিব [>চলিত বাংলায়—করতে থাকব), মধ্যম পুরুষে ‘কর্’ + ‘ইতে’ + ‘থাক্’ + ‘ইব্’ + এ =করিতে থাকিবে (>চলিত বাংলায় করতে থাকবে, সম্ভ্রমার্থে— করিতে থাকিবেন (>চলিত বাংলায়— করতে থাকবেন], তুচ্ছার্থে— করিতে থাকিবি (>চলিত বাংলায়— করতে থাকবি], প্রথম পুরুষে ‘কর্’+ ‘ইতে’ + ‘থাক’ + ই + এ = করিতে থাকিবে। [>চলিত বাংলায়— করতে থাকবে), সম্ভ্রমার্থে—করিতে থাকিবেন [>চলিত বাংলায়—করতে থাকবেন] এই ক্রিয়া-রূপগুলি। হয়। যেমন: ‘তুমি যখন পড়িতে থাকিবে, তখন আমি ঘুমাইতে থাকিব।’ ‘পৃথিবী তখনও সূর্য-পরিক্রমার পথে চলিতে থাকিবে।’

৩. পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ বা পুরাঘটিত সম্ভাব্য (সম্ভাব্য অতীত) Future Perfect

ভবিষ্যৎকালে কোন ক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকবে— অর্থাৎ, ভবিষ্যৎকালে কোন ক্রিয়ার কাজ সমাপ্ত হয়ে থাকবে, এরূপ অর্থে ক্রিয়ার কালকে পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ বলে। পুরাঘটিত ভবিষ্যতে মূল ধাতুর সঙ্গে ‘ইয়া’ প্রত্যয় [অসমাপিকা ক্রিয়া-প্রত্যয়] যুক্ত হয় এবং তার পরে ‘আছ্’ [>‘থাক্’ আদেশ] ধাতুর সঙ্গে ভবিষ্যৎ কালবাচক ‘ই‌ব্’ প্রত্যয় ও পুরুষানুসারী ক্রিয়া-বিভক্তি [অ, এ, এন, ই] যুক্ত হয়ে বসে। ‘কর্’ ধাতুর উত্তম পুরুষে ‘কর্’ + ‘ইয়া’ + ‘থাক্’ + ‘ইব’ + অ = করিয়া থাকিব (>চলিত বাংলায়— করে থাকব, মধ্যম পুরুষে ‘কর্’ + ‘ইয়া’ + ‘থাক্’ + ই + এ = করিয়া থাকিবে [>চলিত বাংলায়— করে থাকবে, সম্ভ্রমার্থে করিয়া থাকিবেন [>চলিত বাংলায়—করে থাকবেন], তুচ্ছার্থে করিয়া থাকিবি [>চলিত বাংলায়— করে থাকবি], প্রথম পুরুষে ‘কর্’ + ‘ইয়া’ + ‘থাক্’ + ‘ই’ + এ = করিয়া থাকিবে [>চলিত বাংলায়—করে থাকবে], সম্ভ্রমার্থে— করিয়া থাকিবেন [>চলিত বাংলায়—করে থাকবেন] এই ক্রিয়া রূপগুলি হয়। যেমন: কেহ জানিবে না, কোন দিন সে হয়তো মরিয়া পড়িয়া থাকিবে। তুমি যখন আসিবে, তখন সে খাইয়া থাকিবে।

৪. ভবিষ্যৎ কালের অনুজ্ঞা

প্রার্থনা, আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ ইত্যাদির কার্যকাল ভবিষ্যতে বোঝালে যে অনুজ্ঞা হয়, তাকে ভবিষ্যৎ কালের অনুজ্ঞা বলে। মূল ক্রিয়ার সঙ্গে ভবিষ্যৎ কালবাচক ‘ইব্’ এবং মধ্যম ও প্রথম পুরুষের ‘এ’ অথবা ‘ইও’ ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়। ‘কর্’ ধাতুর ভবিষ্যৎ কালের অনুজ্ঞায় ‘কর্’ + ‘ইব্’ + এ = করিবে অথবা ‘কর্’ + ‘ইও’ = করিও হয়। মধ্যম পুরুষে তুচ্ছার্থে ‘ইস্’ ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন: ‘কর্’ + ‘ই‌স্’ = করিস্ । যেমন: ‘যেও না, রজনি, তুমি লয়ে তারাদলে।’ ‘যাহা নিত্য পড়িবে, নিত্য তাহা অভ্যাস করিবে।’ ‘কদাচ মিথ্যা কথা বলিবে না।’

কিন্তু স্মরণীয়, ‘অনুজ্ঞা ক্রিয়ার স্বতন্ত্র কোনও কালরূপ নহে, ক্রিয়ার বিশিষ্ট এক ভাব।’— আচার্য সুনীতিকুমার।

মৌলিক কাল ও যৌগিক কাল

‘রূপ ও অর্থ অনুসারে’ ক্রিয়ার কালকে দু ভাগে বিভক্ত করা যায়— ১. মৌলিক বা সরল কাল ও ২. মিশ্র বা যৌগিক কাল।

১. মৌলিক বা সরল কাল (Primary or Simple Tense)

ধাতুর সঙ্গে অন্য কোন ধাতু। যুক্ত না হয়ে কেবল ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়ে যে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়, তার কালকে বলা হয় মৌলিক কাল বা সরল কাল। সাধারণ বর্তমান বা নিত্য বর্তমান, সাধারণ অতীত বা নিত্য অতীত, নিত্যবত্ত অতীত ও সাধারণ ভবিষ্যৎ— এই চারটি মৌলিক কাল বা সরল কালের অন্তর্ভুক্ত।

২. মিশ্র কাল বা যৌগিক কাল (Compound Tense)

মূল ধাতুর সঙ্গে অন্য কোন ধাতু ও ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়ে যে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়, তার কালকে মিশ্র কাল বা যৌগিক কাল বলে। বাংলায় যৌগিক কাল রূপ দশটি— ঘটমান বর্তমান, পুরাঘটিত বর্তমান, ঘটমান অতীত, পুরাঘটিত অতীত, ঘটমান ভবিষ্যৎ, পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ বা পুরাঘটিত সম্ভাব্য বা সম্ভাব্য অতীত, নিত্যবৃত্ত বর্তমান, নিত্যবৃত্ত ঘটমান বর্তমান, ঘটমান পুরানিত্যবৃত্ত এবং পুরাঘটিত নিত্যবৃত্ত বা পুরাসম্ভাব্য নিত্যবৃত্ত।

এদের মধ্যে শেষ চারটির আলোচনা করা হচ্ছে। অবশিষ্টগুলি আলোচিত হয়েছে।

নিত্যবৃত্ত বর্তমান

বর্তমানকালে যে ক্রিয়া ব্যাপার নিত্য অর্থাৎ সর্বদা নিয়মিত ঘটে থাকে তাকে নিত্যবৃত্ত বর্তমান বলা হয়। যেমন: তিনি প্রত্যহ পার্কে বেড়াইয়া থাকেন। আমি রোজ একসের দুধ খেয়ে থাকি।

নিত্যবৃত্ত ঘটমান বর্তমান

যে ক্রিয়া ব্যাপার নিয়মিতভাবে যেমন ঘটে, তেমনি ঘটতে থাকে, তাকে নিত্যবৃত্ত ঘটমান বর্তমান বলে। যেমন: বাড়ি ফিরিয়া তাহাকে না দেখিলে আমার বুকের ভিতরে কে যেন ডুকরাইয়া কাঁদিতে থাকে। আমাকে দেখে তুমি হাসতে থাক কেন?

ঘটমান পুরানিত্যবৃত্ত

যে ক্রিয়া ব্যাপার অতীতে সংঘটিত হতে থাকতো, তাকে ঘটমান পুরানিত্যবৃত্ত বলা হয়। যেমন: আমরা প্রত্যহ সন্ধ্যায় তেলের সেজ জ্বালাইয়া পড়া মুখস্থ করিতে থাকিতাম। কৃষ্ণচন্দ্র কাছে বসিয়া ঢুলিতে থাকিত।

পুরাঘটিত নিত্যবৃত্ত

যে ক্রিয়া ব্যাপার অতীতে সংঘটিত হয়ে থাকতো, এখন আর হয় না, তাকে পুরাঘটিত নিত্যবৃত্ত বলে। যেমন: তাঁহার আসিবার পথের দিকে চাহিয়া আমরা বসিয়া থাকিতাম। কৃষ্ণচন্দ্র দরজার একপাশে দাঁড়িয়ে থাকত।

বিভিন্ন কালে বিভিন্ন কালের ক্রিয়ার প্রয়োগ

১. বর্তমান কালে অতীত কালের প্রয়োগ: এখন জানলাম, তুমি আমাকে সন্দেহ কর।

২. বর্তমান কালে ভবিষ্যৎ কালের প্রয়োগ: এতক্ষণে সে হয়তো পৌঁছিয়া থাকিবে।

৩. অতীত কালে বর্তমান কালের প্রয়োগ: আমি আজ বিকালেই আসছি। ৪. অতীত কালে ভবিষ্যৎ কালের প্রয়োগ: আসবেই যদি, তবে কাল এলে না কেন? ৫. ভবিষ্যৎ কালে বর্তমান কালের প্রয়োগ: কাল ভোরে আমি দিল্লী যাচ্ছি। ৬. ভবিষ্যৎ কালে অতীত কালের প্রয়োগ: সে এখনও এলো না, আমাদের ডোবালো, দেখছি।

ক্রিয়ার ভাব

বাক্যে ক্রিয়া নিষ্পন্ন হবার রীতিকে বলা হয় ক্রিয়ার ভাব বা প্রকার [Mood]। ক্রিয়ার ভাব বা প্রকারকে তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়— ১. নির্দেশক ভাব [Indicative Mood), ২. অনুজ্ঞা ভাব [Imperative Mood] ও ৩. আপেক্ষিক ভাব বা ঘটনান্তরাপেক্ষিত ভাব [Subjunctive Mood]।

১. নির্দেশক ভাব [Indicative Mood]

যখন কোন ক্রিয়ার দ্বারা কোন কাজ হওয়া বা না-হওয়া বোঝায় কিংবা কোন প্রশ্ন বা বিস্ময়ের দ্বারা কাজটি নির্দেশিত হয়, তখন তাকে নির্দেশক বা নির্ধারক বা অবধারক ভাব বলা হয়। যেমন: ‘রায়বাহাদুর অট্টহাস্য করিয়া উঠিলেন।’ ‘এঁকে কি আজ আপনি অ্যারেস্ট করবেন? ‘আহা, কী দেখিলাম!

২. অনুজ্ঞা ভাব Imperative Mood]

কিছু করবার আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ, অনুমতি, আশীর্বাদ কামনা বা প্রার্থনা ইত্যাদি বোঝালে ক্রিয়ার যে বিশেষ রীতি প্রযুক্ত হয়, তাকে বলে অনুজ্ঞা ভাব। ‘সিংহ-শিশুটিকে ছাড়িয়া দাও [উপদেশ]।’, ‘যাত্রা করো যাত্রীদল।’ [আদেশ], ‘সদা সত্য কথা বলিও [উপদেশ]।’ বৈরাগীর উত্তরীয় পতাকা করিয়া নিয়ো [উপদেশ]!’ ‘তোমাদের কল্যাণ হোক।’ [আশীর্বাদ]। ‘বল দাও, মোরে বল দাও [প্রার্থনা]।’ ‘তোমারি হউক জয়।’ [কামনা]

৩. আপেক্ষিক ভাব বা ঘটনান্তরাপেক্ষিত ভাব [Subjunctive Mood]

কোন মিত্র বা জটিল বাক্যে যদি একটি বাক্যের অর্থ অন্য একটি বাক্যের অপেক্ষায় থাকে, তবে তা যে বাক্যের অর্থের অপেক্ষায় থাকে, তার ক্রিয়ার ভাবকে আপেক্ষিক ভাব বা ঘটনান্তরাপেক্ষিত ভাব বলা হয়। যেমন: ‘যদি তুমি উহারে ছাড়িয়া না দাও সিংহী তোমায় জব্দ করিবেক।’ ‘টাকা যদি দাও তবেই অপমান।’ ‘যদি মন দিয়া লেখাপড়া কর, তবে জীবনে উন্নতি করিবে।’ ‘যদি বারণ করো তবে গাহিব না।’ ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলোরে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!