//
//

চর্যাপদের সমাজচিত্র সম্পর্কে আলোচনা কর।

চর্যাপদের সমাজচিত্র

বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হলো চর্যাপদ। দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে সিদ্ধাচার্যদের রচিত এইসমস্ত গানগুলির মূল উদ্দেশ্য ছিল দেহসাধনার দ্বারা মোক্ষ লাভ করা। চর্যাগানগুলি সবই প্রায় তন্ত্রের গুহ্য সাধনপদ্ধতি। গানগুলির অন্তর্নিহিত অর্থ সাধনত্ত্বের গুহ্য অর্থ প্রকাশ করলেও বহিরাঙ্গে পদগুলি রসবাদী পাঠকের কাছে সাহিত্যের সামগ্রী হিসাবে ধরা দিয়েছে।

যদিও সমাজ জীবনের প্রতিচ্ছবি চিত্রাঙ্কন করাই সিদ্ধাচার্যদের প্রধান লক্ষ্য ছিল না, সহজিয়া বৌদ্ধ ধর্মের গুহ্য সাধন পদ্ধতির কথা রূপকের মাধ্যমে প্রকাশ করাই ছিল সিদ্ধাচার্যদের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও চর্যার পদগুলিতে সমকালীন সমাজ জীবনের তুচ্ছাতিচুচ্ছ বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। এদিক থেকে বিচার করলে নিঃসংশয়ে বলা যায় চর্যাগীতিকোষবৃত্তি বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন।

সাহিত্য যেহেতু সমাজের দর্পণ সে-কারণে কম-বেশি সব ধরনের সাহিত্যেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক গাত-প্রতিঘাতের প্রতিফলন ঘটে। চর্যাপদের মতো তন্ত্রসাধনার পদ রচনাই যেখানে পদকর্তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, সেখানে দাঁড়িয়ে সমকালীন সমাজ জীবনের খুঁটিনাটি চিত্রকে রূপকের আকারে ব্যবহার করার মধ্যে দিয়ে সিদ্ধাচার্যদের সমাজ-সচেতনতার পরিচয় ফুটে উঠেছে।

মানুষ সমাজবদ্ধ জটিল জীব। ব্যক্তি ভেদে তার আচার-আচরণ, রীতি-নীতি, খাদ্যাভাস, সংস্কৃতি নিমেষেই বদলে যায়। সেকারণে এক সমাজে বাস করলেও মানুষের সঙ্গে মানুষের গডে ওঠে অনিবার্য প্রবেদ। এখান থেকে জন্ম নেয় শ্রেণিবিভক্ত সমাজ। যারা ক্ষমতার বৃত্তে বা কাছাকাছি থাকে, তারা স্বাভাবিকভাবেই প্রান্তিক মানুষদের তুলনায় অধিক অর্থনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক স্বাচ্ছন্দ্য লাভ করে। ফলে অচিরেই সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য তৈরি হয়। দশম শতাব্দীর বাংলাদেশের সমাজেও শ্রেণিভেদ প্রবল ছিল। কারণ সে যুগ ব্রাহ্মণ্যবাদের আধিপত্যের যুগ। সেইযুগে নিম্নবর্ণের এবং নিম্নবৃত্তের মানুষদের সামাজিক অবস্থান ঠিক কতটা খারাপ ছিল, চর্যাগীতিগুলি তার জ্বলন্ত নিদর্শন। সমকালীন দরিদ্র বাঙালির নিত্যদিনের অভাব, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, আক্ষেপ, বেদনা-পীড়িত জীবনের করুণ বাস্তব চিত্রের নিদর্শন হিসেবে চর্যাপদ যথেষ্ট। চর্যার বিভিন্ন পংক্তিতে করুণ বেদনার আর্তি, দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ের, নিরানন্দের ব্যথাময় সুর অনুরণিত। তখনকার সমাজ ছিল দরিদ্রের প্রতি সহানুভূতিহীন, অসাম্য, অনিয়ম, অত্যাচার ও অনাচারে জরাজীর্ণ।

চর্যাপদে গানগুলোতে আছে সেকালের নিম্নবর্ণের প্রান্তিক মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সরল সহজ বর্ণনা। এই বর্ণনায় লোকের জীবন, জীবিকা, শ্রম ও বিশ্রাম, সঙ্গীত উপকরণের শিল্পসম্মত বিবরণ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের যে সময় আর্যজাতির শাসন ছিল, সেইসময় বর্ণাশ্রম প্রথার জন্ম হয়। এই বর্ণাশ্রম প্রথার ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীকালে গড়ে ওঠে জাতপাতভিত্তিক বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা। যা আজকের ভারতেও এক মহামারীর আকার দারণ করেছে। আমরা চর্যাপদের মধ্যে সমকালীন সমাজজীবনের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তার চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

ব্রাহ্মণ আধিপত্যবাদ

সেনযুগে ব্রাহ্মণ্যবাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়। কথিত হয় যে, কর্ণাট থেকে পঞ্চ ব্রাহ্মণ এনে সেন রাজারা যজ্ঞক্রিয়া সম্পন্ন করেন। লক্ষমণসেনের রাজসভায় ‘পঞ্চরত্ন’ নামে পরিচিত পঞ্চ ব্রাহ্মণ  সংস্কৃত কবি ছিলেন। সেযুগের কবি-শাস্ত্রকারদের অধিকাংশই ছিলেন ব্রাহ্মণ; রাজপদোপজীবী ব্রাহ্মণ কর্মচারীর সংখ্যাও কম ছিল না। এ সময় সমাজে ব্রাহ্মণদের আধিপত্য বিস্তৃত হয়। স্মৃতিশাস্ত্রের বিধি অনুযায়ী ব্রাহ্মণরা সমাজের বিধান দিতে থাকে।  মধ্যযুগীয় সমাজে ব্রাহ্মণরা সকল বর্ণ বা সম্প্রদায়ের মানুষের হাতে জল গ্রহণ করত না। তিলি, তাঁতি, মালাকার প্রভৃতি মাত্র নয়টি সম্প্রদায়ের হাত থেকে জলগ্রহণের রীতি চালু ছিল। ধর্মশাস্ত্রে ব্রাহ্মণদের অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে: ১. ব্রাহ্মণ গুরু এবং সকলের কাছে শ্রদ্ধেয় ও প্রণম্য, ২. তারা অপর জাতির কর্তব্য নির্ধারণ করবে, ৩. রাজা সকলের প্রভু কিন্তু ব্রাহ্মণের প্রভু নয়, ৪. বেত্রাঘাত, বন্ধন, অর্থদন্ড, নির্বাসন, বাকদন্ড এবং পরিত্যাগ এই ছয় প্রকারের সাজা ব্রাহ্মণকে দেওয়া যাবে না, ৫. শ্রোত্রিয় ব্রাহ্মণরা করমুক্ত, ৬. তাদের ঘরে গুপ্তধন পাওয়া গেলেও রাজা তার সবটাই গ্রহণ করতে পারবে না, ৭. আগে যাওয়ার জন্য তাকে পথ ছেড়ে দিতে হবে, ৮. অন্য বর্ণের তুলনায় ব্রাহ্মণরা লঘুদন্ড পাবে, ৯. তাকে সাক্ষ্য দিতে ডাকা যাবে না, ১০. তারা মৃতাশৌচ পালন করবে দশদিন, ১১. তারা সুদ গ্রহণ করতে পারবে না, ১২. আপদকালে তারা বৈশ্যদের বৃত্তি গ্রহণ করতে পারবে, প্রভৃতি। পূজার্চনাসহ হিন্দুদের যে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করা ব্রাহ্মণদের একটি সাধারণ পেশা। সবমিলিয়ে সমাজের অবিসংবাদিত উচ্চশ্রেণি হিসাবেই ব্রাহ্মণ্য আধিপত্য শুরু হয় এই সময়ে।

চর্যাপদের যুগেও নিম্নশ্রেণীর সমাজ তথা কোটির শ্রমিক লোকেরাই সমাজে ছিল অবহেলিত। আর্থিক দিকেও তারা ছিল রীতিমত বিপর্যস্ত। অন্ত্যজ অস্পৃশ্য হিসেবে তাদের বাসস্থান পর্যন্ত সমাজে উচ্চ শ্রেণীর লোকদের বসতির আশ-পাশে হতে পারতো না। দূরে নগরের বাইরে নির্জন অরণ্যে কিংবা পর্বতের গাত্রে কিংবা বস্তিতে ছিল তাদের বসবাস। বেশ কয়েকটি চর্যায় এর প্রমাণ পাওয়া যায়। ১০ নং চর্যায় পদকার কৃষ্ণপাদানাম (কাহ্নপাদানাম) লিখেছেন—

নগর বাহিরি রে ডোম্বি তোহোরি কুড়ি আ।

ছোই ছোই জাসি বামহণ নাড়ি আ।।

আলো ডোম্বি তোএসম করিব মই সাঙ্গ।

নিঘিণ কাহ্ন কাপালি জোই লাঙ্গ।।

ওগো ডোম্বি নগরের বাইরে তোমার কুড়েখানি। তুমি সে ব্রাহ্মণ নেড়েকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাও। ওগো ডোম্বি আমি তোমাকে সাঙ্গা করব। আমি কাহ্ন কাপালিক, নির্ঘৃণ এবং উলঙ্গ যোগী। ২৮ নং চর্যায় পদকার শবরপাদানাম লিখেছেন—

উঞ্চা উঞ্চা পাবত তহিঁ বসই সবরী বালী।

মোরাঙ্গ পীচ্ছ পরিহাণ সবরী গীবত গুঞ্জরী মালী।।

উচুঁ উচুঁ পর্বত, সেখানে বাস করে সবরী বালিকা। ময়ূরের পুচ্ছ পরিধান করে সবরী, গলায় গুঞ্জার মালা। ৩৩ নং চর্যায় পদকার ঢেণ্টণ পাদানাম লিখেছেন—

টালত মোর ঘর নাহি পড়বেসী।

হাড়ীত ভাত নাহি নিতি আবেশী।।

বেঙ্গসঁ সাপ চঢ়িল জাই।

দুহিল দুধু কি বেণ্টে সামাই।।

বলদ বিআএল গবি আ বাঁঝে।

পীঢ়া দুহিঅই এ তীনি সাঝে।।

জো সো বুধী সোহি নিবুধী।

জো সো চোর সোহি সাধী।।

নিতি নিতি সিআলা সিহে সম জুঝই।

ঢেণ্টণ পাএর গীত বিরলে বুঝই।।

বস্তিতে আমার ঘর, প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতে ভাত নেই, (অথচ) প্রেমিক (ভিড় করে। ব্যাঙ কর্তৃক সাপ আক্রান্ত হয়। দোয়ানো দুধ কি বাঁটে প্রবেশ করে? বলদ প্রসব করল, গাই বন্ধ্যা, পাত্র ভরে তাকে দোয়ানো হল এ তিন সন্ধ্যা। যে বুদ্ধিমান, সেই নির্বোধ, যে চোর সেই সাধু। নিত্য নিত্য শৃগাল যুদ্ধ করে সিংহের সঙ্গে। ঢেণ্টণপাদের গীত অল্পলোকেই বুঝে।

উপরে উল্লিখিত পদগুলোর বর্ণনা থেকে এ কথা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, তখনকার দিনে দরিদ্র ডোম, সবর প্রভৃতি নীচ সম্প্রদায়ের অবস্থান ছিল নগরের বাইরে, সভ্য সমাজের স্পর্শাতীত পর্বতগাত্রে কিংবা পাহাড়ের টিলায়। তবে উচ্চশ্রেণীর লোকদের সাথে তাদের একেবারেই সম্পর্ক ছিলনা এমনটি নয়। অনেক সময় উচ্চবর্ণের পুরুষদের সঙ্গে নিম্নবর্ণের মহিলাদের সম্পর্কের কথাও পাওয়া যায়।

জীবন-জীবিকা

এই সমাজ-বহির্ভূত ডোম, সবর প্রভৃতি নীচ জাতের লোকদের জীবিকা নির্বাহের উপায়গুলোও ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের এবং চরম অসম্মানজনক। অন্ত্যজ শ্রেণীর এসব লোকের দৈনন্দিন কাজকর্মও ছিল হীন ও নিম্নমানের। তাদের প্রাত্যহিক কর্মের মধ্যে ছিল জুয়াখেলা, শিকার করা, মাছ ধরা, নৌকা বাওয়া, চাঙ্গারি বোনা, বনে বনে আহার্য গ্রহণ করা, মদ পান করে মাতাল হওয়া ইত্যাদি। ২৬ নং চর্যায় বাঙালি তাঁতীদের শিল্পচাতুর্যের কথা এবং ডোম জাতির নারীদের তাঁত বুনন ও তুলো ধুনার কথা বর্ণিত হয়েছে একাধিক চর্যাপদে। ২১ নং চর্যায় ইঁদুরের উপদ্রবে কৃষি বিপর্যস্ত হওয়া এবং ৪৫ নং চর্যায় কুঠারের সাহায্যে গাছ কাটার কথা বর্ণিত হয়েছে।

সমাজের এই অসংগতি, অসম বিধি ব্যবস্থা এবং অনাচার-অত্যাচার, দুঃখবোধ এর স্বরূপ অনুধাবন করেই সিদ্ধাচার্যগণ সহজ সাধনায় সমতার ক্ষেত্রে মানবতাকে আহবান করেছিলেন। সামাজিক অবক্ষয়, অবিচার, সংঘাত ও সম্প্রীতির প্রত্যক্ষ অভাব বোধই তাদের কাব্যে মনোময় শূন্যতাবোধ সৃষ্টি করেছে। চর্যাগীতি অনুসারে তাদের জীবিকার যে কয়টি উপায় ছিল প্রধানতম, তা হলো তাত বুনা, তুলো ধুনা, চাঙ্গারি তৈরি করা। যেমন, ১০ নং চর্যার শেষাংশে বর্ণিত হয়েছে—

তান্তি বিকণহ ডোম্বি অবর মো চাঙ্গিড়া।

তোহোর অন্তরে ছাড়ি নড়-পেড়া।।

‘ডোম্বি তুমি তন্ত্রী বিক্রয় কর, আর আমাকে (বিক্রয় কর) চাঙ্গারি। তোমার জন্যই নলের পেটরা পরিত্যাগ করলাম।’

সম্ভবত এই নীচ শ্রেণীর লোকদের অন্যতম জাতীয় বৃত্তি ছিল নৌকা বাওয়া বা মাছ ধরা। তাই অনেকগুলো চর্যাতেই ব্যবহৃত হয়েছে নৌকার উৎপ্রেক্ষা। বিভিন্ন পদে বার বার এই নৌকার ব্যবহার, খেয়া পারাপার, বাঁশের সাকোর ব্যবহার ও গুণ টানার ভেতর দিয়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশের ছবি চর্যায় চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। পারাপারের মাশুল ছিল কড়ি, চর্যায় তারও উল্লেখ আছে। তাছাড়া বেশ ক’টি পদে আছে কিভাবে নৌকা চালাতে হবে, খুঁটি উপড়ে ফেলে কাছি মেলে ধরে নৌকার গুণ টানতে হবে কিভাবে তারও উল্লেখ আছে, কিভাবে নৌকার জল সেচ করতে হবে তারও নির্দেশ করা অছে। যেমন, ৮ নং চর্যায় পদকার ‘কম্বলাম্বরপাদানাম লিখেছেন—

খুণ্টি উপাড়ী মেলিলি কাছি।

বাহ তু কামলি সদগুরু পূছি।।

অর্থাৎ খুঁটি উপড়িয়ে কাছি মেলে দিয়ে হে কামলি তুমি সদগুরুকে জিজ্ঞেস করে বেয়ে চল। ১৩ নং চর্যায় কৃষ্ণাচার্য্যপাদানাম (কাহ্নপাদানাম) লিখেছেন—

তিশরণ ণাবী কিঅ আঠক মারী।

নিঅ দেহ করুণা শূন মেহেরী।।

তরিত্তা ভবজলধি জিম করি মাঅ সুইণা।

মাঝ বেণী তরঙ্গ মই মুনি আ।।

পাঞ্চ তথাগত কিঅ কেড় আল।

বাহহ কাঅ কাহ্নিল মাআজাল।।

১৪নং চর্যায় পদকার ডোম্বীপাদানাম লিখেছেন—

গঙ্গা জউনা মাঝে রে বহই নাঈ।

তহিঁ চড়িলী মাতঙ্গি পোইআ লীলে পার করেই।।

বাহ তু ডোম্বী বাহ লো ডোম্বী বাটত ভইল উছারা।

সদগুরু পাঅ-পসাএ জাইব পুণু জিণউরা।।

পাঞ্চ কেড়– আল পড়ন্তে মাঙ্গে পীঠত কাছী বান্ধী।

গঅণ দুখোলে সিঞ্চহু-পাণী ন পইসই সান্ধি।।

অথবা ১৫ নং চর্যায় শান্তিপাদানাম লিখেছেন—

মা আমোহ সমুদারে অন্ত ন বুঝসি থাহা।

আগে নাবণ ভেলা দীসই ভান্তি ন পূছসি নাহা।।

ইত্যাদি পদে কাছি টানার যে বর্ণনা আছে তাতে পূর্ববঙ্গীয় দড়াজালের কথা মনে করিয়ে দেয়। পূর্ববঙ্গে তখনও দড়াজাল টেনে মাছ ধরার প্রচলন ছিল। এ অবস্থায় যাদের দিয়ে দড়াজাল টানানো হতো তাদেরকে বলা হতো কামলা। এছাড়া দু’টি চর্যায় ব্যাধ বৃত্তির উল্লেখ আছে, যার একটিতে শিকার ধরার রীতির দীর্ঘ বর্ণনা রয়েছে। চার দিক থেকে জাল পেতে হাক ছেড়ে হরিণ শিকারের বর্ণনা আছে ৬ নং চর্যায়। এ শ্রেণীর শিকারীদের অন্যতম বৃত্তি ছিল মদ চোয়ান। পদকার বিরুবাপাদানাম রচিত ৩ নং চর্যায় তার স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। যেমন—

এক সে শুণ্ডিনী দুই ঘরে সান্ধই।

চীঅণ বাকলত বারুণী বান্ধই।।

এছাড়া তাদের জীবিকার আরও বিভিন্ন ধরণের অতি নিম্নমানের উপায় বিভিন্ন পদে বর্ণিত হয়েছে। পদকার শান্তিপাদানাম এর ২৬ নং চর্যায় তুলা ধুনাই করে জীবিকা নির্বাহের কথা রয়েছে। যেমন—

তুলা ধুণি ধুণি আঁসুরে আঁসু।

আঁসু ধুণি ধুণি নিরবব সেসু।।

এছাড়া পদকার চাটিল্লপাদানাম রচিত ৫ ও ভুসুকূপাদানাম ৪৯ নং চর্যায় রয়েছে কুঠার দিয়ে বৃক্ষচ্ছেদনের বর্ণনা।

কৃষ্টি ও কালচার

১০ নং চর্যায় বর্ণিত হয়েছে নট বৃত্তির কথা। যেমন—

ক সো পদমা চউসটঠী পাখুড়ি।

তহিঁ চড়ি নাচই ডোম্বি বাপুড়ি।।

বিনোদনের পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহের অন্যতম উপায় হিসেবে তাদের নৃত্যগীতের কলাকৌশল ছিল বিচিত্রমুখী। ১০ নং চর্যার উল্লিখিত লাইন দুটি পাঠে চৌষট্টি দলযুক্ত পদ্মের উপর ডোম্বির নৃত্যের কল্পনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় তৎকালে বিচিত্রমুখী নৃত্যগীত প্রচলিত ছিল। ১৭ নং চর্যায়ও সেকালের নাচ গান-বাদ্য অভিনয় কলার কথা জানা যায়। বাঙালি সমাজের নিম্নস্তরের রমনীরা ছিল নৃত্যগীতিপরায়ণা। নাচ গান করে এরা জীবিকা নির্বাহ করতো। দৈনন্দিন জীবনের দুঃখ, কষ্ট, সামাজিক অশান্তি, মানসিক দুর্দশা, অভাব, অন্নাভাবও কতগুলো চর্যায় উল্লেখ রয়েছে। কাপালিদের সর্বত্র উলঙ্গ অবস্থায় বিচরণের কথা বিধৃত হয়েছে ১১ নং চর্যায়। ৫০ নং চর্যায় রয়েছে মদে মাতাল হওয়ার বর্ণনা। পূর্বেই উদ্ধৃত করা হয়েছে ৩৩ নং পদটি, যার প্রথমাংশে আর্থিক বিপর্যয়ের কারণে বস্তিতে বসবাসরত দরিদ্র জনগোষ্ঠির দুঃখ দুর্দশার করুণ চিত্র এবং শেষাংশর অর্ন্তনিহিত ভাব আধ্যাত্মবোধক হলেও বাইরে যে অসংগতি ফুটে উঠেছে তা মনে হয় সামাজিক অসংগতিরই প্রতিফলন।

সামাজিক অশান্তি ও বিপর্যয়ের সুণিপুণ চিত্র ফুটে উঠেছে কয়েকটি চর্যায়। যেমন ৬ নং চর্যায় ভুসুকুপাদানাম লিখেছেন—

কাহেরে ঘিনি মেলি অছহু কীস।

বেঢ়িল হাক পড়ই চৌদীস।।

অপণা মাংসে হরিণা বৈরী।

খনহ ন ছাড়ই ভুসুক অহেরী।।

তিন ন ছুবই হরিণা পিবই ন পাণী।।

পদকর্তা এখানে হরিণের রূপকে ধর্মকথা ব্যক্ত করেছেন। এখানে হরিণ বলতে চিত্তকে বোঝানো হয়েছে। চিত্ত হরিণের কি অসহায় অবস্থা, নিজের জন্যেই সে নিজের শত্র। এই ভয়ে সে তৃণও স্পর্শ করেনা জলও পান করেনা। এটিও ভয় কিংবা দুঃখের চিত্র। সে সময়েও চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ব্যভিচার ইত্যাদি ছিল তার দৃষ্টান্ত।

২ নং চর্যায় লিখেছেন—

কানেট চোরে নিল অধরাতী।।

আবার চোরের বিরুদ্ধে সতর্কতার বাণীও রয়েছে কয়েকটি পদে। এছাড়া কতগুলো পদে রয়েছে নারী জীবনের দুঃখ ও কষ্টের বর্ণনা। সমাজে যেমন উচ্চ শ্রেণীর দ্বারা নির্যাতিত, নিঃগৃহিত হতো নিম্ন শ্রেণীর লোক, তেমনি আবার লোভ লালসা চরিতার্থ করতে নিম্ন শ্রেণীর লোকেরাও লিপ্ত হতো পাপাচার ও ব্যাভিচারে। এমনি এক গৃহবধুর ব্যাভিচারের ইঙ্গিত দিয়েছেন লেখক কুক্কুরীপাদানাম ২ নং চর্যায়। যেমন—

দিবসহি বহুড়ী কাউহি ডর ভাই।

রাতি ভইলে কামরু জাই।।

অর্থাৎ যে বধুটি দিনের বেলায় কাকের ভয়ে ভীতু ভাণ করে, রাতের বেলায় সবার অগোচরে সে কামরূপ চলে যায়।

বিবাহ

বিয়ের ব্যাপারে ছিল নানা রকম বিধি নিষেধ। ব্রাহ্মণরা নিম্নবর্ণের যে কোন রমনীকে বিয়ে করতে পারত। কিন্তু নিম্নবংশের কোন পুরুষ উচ্চ বংশের কোন রমনীকে বিয়ে করতে পারত না। যৌতুকের লোভে ছোট ঘরে বিয়ে করার কথা বিধৃত হয়েছে ১৯ নং চর্যায়। তবে তাদের ধন উপার্জন ও বণ্টনের প্রধান অবলম্বন ছিল ব্যবসা বাণিজ্য।

চর্যাপদের সময়ে বাংলাদেশ অসহ্য আত্মসন্তুষ্টি, দুর্বল আত্মশক্তি এবং চারিত্রিক কলংকের ক্রমবর্ধমান অভিশাপে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। সমগ্র বাংলাদেশই যেন সেই অন্ধকারের প্রেষণে মৃত্যু যন্ত্রণায়, অভাব দৈন্যপীড়িত পার্বতীর মতো করুণ কণ্ঠে ক্রন্দন করছিল।

নৈতিক অধঃপতন

তৎকালীন সমাজের নৈতিক অধপতনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত চর্যাপদে বিধৃত হয়েছে। বাৎস্যায়নের কামশাস্ত্রে সেকালের যৌন আচারের উল্লেখ পাওয়া যায়। কামনা বাসনা চরিতার্থের ব্যাপারে কোন বর্ণের লোকদের মধ্যেই সংযমের আভাস পাওয়া যায়না। ধর্মের নামে যৌনাচার উৎসাহ পেতে থাকে অষ্টম শতক থেকে। দেবতার নামে উৎসর্গীকৃত দেবদাসীদের সমাজের উচ্চস্তরের লোকেরা কামনা বাসনা পূরণে ব্যবহার করতো। চরিত্রহীনতা, স্তুতিবাদপূর্ণ আত্মপ্রশংসা শুনা, আর সভা নন্দিনীদের নিয়ে ভোগ বিলাসের পরিবেশে রাজসভা থাকতো মুখরিত। ৩৩ সংখ্যক চর্যায় দরিদ্র অস্পৃশ্যের বাড়িতে উচ্চস্তরের যুবকের আনাগোনার চিত্র বর্ণিত হয়েছে।

দারিদ্র্য

উচ্চস্তরের লোকদের ভোগবিলাসী জীবন-যাপনের ঠিক বিপরীত অবস্থা ছিল সমাজের নিম্নস্তরের লোকদের। সেখানে বিরাজ করতো অবিচ্ছিন্ন অভাব, দারিদ্র্য, শোষণ ও অত্যাচার-অবিচার। অন্ত্যজরা শহরের প্রান্তে টিলায় ঘর বেঁধে বসবাস করত। ব্রাহ্মণদের দৃষ্টিতে এরা ছিল অস্পৃশ্য। ব্রাহ্মণরা এদের ছায়া পর্যন্ত মাড়াতো না।

নৈরাজ্য

সপ্তম শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে অষ্টম শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে এক নৈরাজ্য ও স্বেচ্ছাচারী সামন্ত গোষ্ঠীর স্বৈরাচরণ জনজীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবন বিষিয়ে তুলেছিল। ৪, ৩৩, ৩৮, ৪৯ নং চর্যায় চোরের উপদ্রবের কথা জানা গেছে। ধূর্তবাজ, ঠগ, লম্পট, জোচ্চর সমাজে তখনও কম ছিলনা। ইতিহাসের জন্মলগ্ন থেকেই ভাত এদেশবাসীর প্রধান খাদ্য। প্রাকৃত পৈঙ্গলেও বাঙালির ভাতপ্রীতির কথা উল্লেখ রয়েছে। ভাত না থাকলে সংসারে যে কি চরম অবস্থার সৃষ্টি হয় তা কম মর্মন্তুদ নয়।

সমাজে এ ধরনের অশান্তির মধ্যেও সুস্থ শান্তিময় জীবনের আকাঙ্ক্ষা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি, সে সময়েও তার চিত্র বিদ্যমান। চর্যার বেশ কয়েকটি পদে তার সুন্দর বর্ণনা রয়েছে। পার্থিব ধন সম্পদ নেই, অভাবের তাড়না আছে তার মধ্যেও আত্মিক দিক থেকে সুখে থাকার অদম্য চেষ্টার অন্ত ছিল না। সরহ পাদানাম রচিত ৩৮ নং চর্যা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত—

কাঅ ণাবড়ি খাণ্টি মণ কেড়–আল।

সদগুরু বঅণে ধর পতবাল।।

চীঅ থির করি ধরহু রে নাঈ।

আন উপাএ পার ণ জাই।।

আনন্দ উপভোগের জন্যে ছিল দাবা খেলার প্রচলন। ১২ নং চর্যায় তার উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন চর্যায় সে সময়ের দৈনন্দিন জীবনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমনঃ বাসন, পেয়ালা, হাড়ি, ঘড়ি, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র যেমন—পড়হ, মাদল, কর (ঢোল), কাঁসি, বীণা, বাঁশি এবং অলংকারের মধ্যে কানেট (কর্ণভূষণ), ঘণ্টা নেউর (নুপুর), কাঙ্কণ (কাঁকণ), মুত্তিহার (মুক্তাহার), কুণ্ডল ইত্যাদির উল্লেখ রয়েছে। ব্যবহারি অন্যান্য জিনিসপত্রের মধ্যে কুঠার, কোঞ্চাতাল (তালাচাবি), টাঙ্গি, পীড়ি, চীরা (পতাকা), সোনা, রূপা এবং থানা কাচারী ইত্যাদির উল্লেখ আছে বিভিন্ন চর্যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে চর্যায় সাধন সঙ্গিনী হিসেবে নারীর প্রয়োজনের কথা উল্লেখ থাকলেও তৎকালীন সমাজে নারীর জীবন ছিল সবচেয়ে অবহেলিত এবং অভিশপ্ত। তাদের জীবনে দুঃখ ছাড়া প্রাপ্তি বলতে কিছুই ছিলনা। অধিকাংশ সময়ে কেবল ভোগের সামগ্রী হিসেবেই তাদের প্রয়োজন হতো।

সে সময়কার সামাজিক জীবনে বাঙালির আচার ব্যবহার ও রীতি নীতি কেমন ছিল তার বিবরণ একাধিক চর্যায় পাওয়া যায়। বাঙালির বিবাহের সুন্দর সুন্দর বর্ণনা রয়েছে চর্যায়। এসব দেখে অনুমিত হয় তখন থেকেই বাঙালির সংসার গড়ে উঠতো শ্বশুর-শাশুড়ী, জা, ননদ-শালী নিয়ে। ১৯ নং চর্যায় পদকার কৃষ্ণপাদানাম (কাহ্নপাদানাম) লিখেছেন—

ভব নিব্বাণে পড়হ মাদলা।

মণ পবণ বেণি করণ্ড কশলা।।

জঅ জঅ দুন্দুহি সাদ উছলি আঁ।

কাহ্ন ডোম্বি বিবাহে চলি আ।।

ডোম্বি বিবাহিআ আহারিউ জাম।

জউতুকে কিঅ অণুত্তর ধাম।।

অহণিসি সুরঅ পসঙ্গে জাই।

জোইণি জালে রঅণি পোহাই।।

ডোম্বি এর সঙ্গে জো জোই রত্ত।

খণহ ন ছাড়ই সহজ উম্মত্ত।।

পটহ ও মাদল জোড়া ঢোল কাঁসি ইত্যাদির জয় জয় দুন্দুভির শব্দ উচ্ছলিত হল, কাহ্ন ডোমনীকে বিয়ে করতে চললো। বিয়েতে তার জন্ম সার্থক হবে-বিয়ের যৌতুক অণুত্তর ধর্ম। অহর্নিশি সুরত প্রসঙ্গে যায়, রমণী পরিবৃত হয়ে বাসর রজণী পোহায়।

তৎকালীন সমাজের একটি নিখুঁত চিত্র পদটিতে প্রত্যক্ষ করা যায়। সমাজে তখন বহু বিবাহ প্রথা প্রচলিত ছিল। চর্যাকারদের রচনায় তৎকালীন সমাজের খুঁটি-নাটি প্রায় সকল বিষয়ই উঠে এসেছে। বিভিন্ন পদে আমরা পাই গো-পালন, বলদের ব্যবহার, দুগ্ধ দোহনের কথা, হাতির ব্যবহারও অজানা ছিলনা তাদের। নৌবাণিজ্য, জলদস্যুদের হানা, এমনকি কর্পূর দিয়ে স্বাদ করে পান খাওয়ার কথাও লিখতে ভুলেননি চর্যাকাররা। সমাজে তখন ছিল যোগী, কাপালিক, ক্ষপণক, রসসিদ্ধা প্রভৃতি শ্রেণীর ধর্মীয় সাধক। নারীরাও ছিল অনেকের সাধন সঙ্গিণী।

মূলত তন্ত্রের গুহ্য ব্যাখ্যা চর্যার গানগুলোর মূল অর্থ হলেও, গীতিকাররা এইসমস্ত পদের বিষয় গ্রহণ করেছেন পারিপার্শ্বিক সমাজ পরিবেশ থেকে। সেকারণে পদগুলিতে ফুটে উঠেছে তৎকালীন সমাজ-জীবনের নানা চিত্র। চর্যাকারদের অনেকেই সমাজ জীবনে উচ্চ পর্যায়ের লোক হলেও তাদের লেখায় যে জীবন চিত্র ফুটে উঠেছে তাতে উচ্চ জীবন ধারার প্রতিফলন নেই বললেই চলে। বরং অধিকাংশ পদেই অন্ত্যজ শ্রেণীর দৈনন্দিন জীবন যাত্রার বেদনা বিধূর বাস্তব চিত্র রূপায়িত হয়েছে। এসব পদে তত্ত্বকথায় যাই থাকুক না কেন সেখানে ফুটে উঠেছে সাধারণ মানুষের বাস্তব জীবনচিত্র।

পূর্বেই উল্লেখ করেছি চর্যাগীতিগুলো আধ্যাত্মিক সাধন সঙ্গীত। সুতরাং সমাজের বাস্তব চিত্র অংকন করা তার উদ্দেশ্য হতে পারেনা। যেহেতু সাহিত্য মাত্রই সমাজ নিরপেক্ষ হয়না সেহেতু উপমা, উৎপ্রেক্ষা, বিষয়বস্তু, রূপকল্প ইত্যাদি ব্যবহারে যুগও জীবনের বাস্তব চিত্রের স্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়। এমন কি কোন বিশেষ যুগের সাহিত্যে বা সাধন প্রণালীতেও সমাজ ও পরিবেশগত কারণ থাকা অস্বাভাবিক নয়। সুতরাং চর্যাগীতিগুলোর মধ্যেও তৎকালীন সমাজ জীবনের যে বাস্তব চিত্র পাওয়া যায় তা ইতিহাস বিরোধী নয় বরং এর মধ্যেই নিহিত আছে ধর্মীয় জীবনের অভিপ্রেত। একারণে তৎকালীন সমাজ চিত্র হিসেবেও চর্যাপদগুলো বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

এই খণ্ডচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে তৎকালীন দেশ কাল ও সমাজ জীবনের যে চিত্র আমাদের সামনে ধীরে ধীরে ফুটে উঠেছে তা কৌতূহলপ্রদ এবং নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক চিত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। তাই এ কথা অকপটে বলা যায় যে চর্যাপদ বাংলা কাব্যের জন্মলগ্নে সবচেয়ে উজ্জ্বলবর্তিকা, সে বর্তিকার আলো আজও নিভে যায়নি। বরং আপন গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে আপন মহিমা প্রচার তথা সে সময়কার বাংলাদেশের বিভিন্ন অবস্থার কথা জানিয়ে দিতে অনাগতদের। সবশেষে বলা যায় বাংলা কাব্যের বিশাল অঙ্গনে তার আপাত শান্ত মাধুর্য্যে মহিয়ান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!