মনসামঙ্গল কাব্য রচনায় জগজ্জীবন ঘোষালের কৃতিত্ব আলোচনা কর।

জগজ্জীবন ঘোষাল

উত্তরবঙ্গের আর এক কবি জগজ্জীবন ঘোষাল। আশুতোষ দাস ও সুরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগজ্জীবন ঘোষালের পুঁথি প্রকাশ করেন (১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে)। তাঁর দেওয়া আত্মপরিচয় থেকে জানা যায়, তিনি দিনাজপুর জেলার কুচিয়ামোড়া গ্রামে ব্রাহ্মণ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে তাঁর কাব্য রচিত হয় বলে অনুমান করা হয়।

জগজ্জীবনের কাব্য দেবখণ্ড ও বাণিয়াখণ্ড এই দুভাগে বিভক্ত। দেবখণ্ডের প্রথমে কবি ধর্মমঙ্গল ধরনের সৃষ্টিলীলা ব্যাখ্যা করেছেন। কবি মনসার তিন জন্মের কথা বিবৃত করেছেন। যেমন, প্রথমে ধর্মের কন্যা ও পত্নী, পরের জন্মে ধর্মের পুত্র, পরে শিবের কন্যা। হরগৌরীর বিবাহ, গঙ্গা-গৌরীর কোন্দল, শিবের রাগ করে পুষ্পবনে যাত্রা প্রভৃতি ঘটনা গতানুগতিক।

অন্যদিকে বাণিয়াখণ্ডে বেহুলার একনিষ্ঠ পাতিব্ৰত্য, চাদের প্রচণ্ড বিরোধী মনোভাব পরে আবার ভক্তির আতিশয্য, সনকার স্নেহবাৎসল্যের বর্ণনা অন্যান্য মনসামঙ্গল কাব্যের মতোই। উত্তরবঙ্গের স্থানীয় জীবনচিত্র ও পরিবেশ, সামাজিক রীতিনীতি ও মুখের ভাষা এই কাব্যে উপস্থাপিত হয়েছে। সমালোচক অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন— “জগজ্জীবনের কাব্যে কলুষিত বর্ণনা থাকিলেও রচনাকৌশল বিচার করিলে এই কবি প্রশংসা দাবি করিতে পারেন। সংস্কৃত সাহিত্য, পুরাণ, অলংকার শাস্ত্র প্রভৃতিতে তাঁহার বিশেষ অধিকার ছিল, তাঁহার প্রমাণ তাঁহার কাব্যের মধ্যেই আছে। ছন্দ, শব্দপ্রয়োগ এবং উপমাদি অলঙ্কার প্রয়োগেও তাঁহার সূক্ষ্মদৃষ্টি, বুদ্ধি ও মনন বিশেষ প্রশংসার যোগ্য।”

১. বাংলা মঙ্গলকাব্যের ইতিহাস: আশুতোষ ভট্টাচার্য

২. বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত: অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

৩. বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস: সুকুমার সেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!