ঝাড়খণ্ডী উপভাষার ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা কর।
ঝাড়খণ্ডী উপভাষার ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
(ক) অনুনাসিক স্বরধ্বনির বহুল ব্যবহার ঝাড়খণ্ডীর প্রধান বৈশিষ্ট্য। যেমন— চা, হইছে, উট, আঁটা।
(খ) ‘ও’-কারের ‘অ’-কার প্রবণতাও ব্যাপক। যেমন— লোক > লক, চোর > চর।
(গ) অপিনিহিত ও বিপর্যাসের ফলে শব্দের মধ্যে আগত বা বিপর্যস্ত স্বরধ্বনির ক্ষীণ উচ্চারণ থেকে যায়, তার লোপ বা অভিশ্রুতিজনিত পরিবর্তন হয় না। যেমন— সন্ধ্যা > সাঁইঝ > সাঁঝ, কালি > কাইল > কাল, রাতি > রাইত > রাত।
(ঘ) অল্পপ্রাণ ধ্বনিকে মহাপ্রাণ উচ্চারণের প্রবণতা দেখা যায়। যেমন— দূর > ধূর, পতাকা > ফত্কা।
রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
(ক) নিমিত্তার্থে চতুর্থী বিভক্তি ব্যবহারের রীতি সংস্কৃতে ছিল। এই রীতি অনুসারে বাংলাতেও নিমিত্তার্থে ব্যবহৃত বিভক্তিকে যদি চতুর্থী বিভক্তি বলি তবে বলতে পারি এই বিভক্তি ‘কে’ ঝাড়খণ্ডীতে ব্যবহৃত হয়। যেমন— বেলা যে পড়ে এল জলকে (জলের নিমিত্ত = জল আনতে) চল।
(খ) নামধাতুর বহুল ব্যবহার ঝাড়খণ্ডীর আরো একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। যেমন—এবার শীতে ভারি জাড়াবে (নামধাতু ‘জাড়’)। ‘হমর ঘরে চর সাঁদাইছিল’ (সিঁধিয়েছিল)।
(গ) ক্রিয়াপদে স্বার্থিক ‘ক’ প্রত্যয়ের ব্যবহার হয়। যেমন—যাবেক নাই?
(ঘ) যৌগিক ক্রিয়াপদে ‘আছ’ ধাতুর বদলে ‘বট’ ধাতুর ব্যবহা র কোথাও কোথাও দেখা যায়। যেমন—করি বটে।
(ঙ) সম্বন্ধপদে ও অধিকরণে শূন্যবিভক্তি অর্থাৎ বিভক্তিহীনতা দেখা যায়। যেমন সম্বন্ধ— ঘাটশিলা (ঘাটশিলার) শাড়ী কুনি (কুনির) মনে নাই লাগে। অধিকরণ—রাইত (রাতে) ছিলি ঘাটশিলা টাইড়ে।
(চ) অপাদানে পঞ্চমী বিভক্তির চিহ্ন হল নু, লে, রু। মায়ের লে মাউসীর দরদ (মায়ের চেয়ে মাসির দরদ)।
(ছ) অধিকরণের বিভক্তি হল ‘কে’। আইজ রাতকে ভারি জাড়াবে।
ভৌগোলিক অবস্থান
দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তবঙ্গ ও বিহারের কিছু অংশ (মানভূম, সিংভূম, ধলবূম, দক্ষিণ-পশ্চিম বাঁকুড়া, দক্ষিণ-পশ্চিম মেদিনীপুর)।
Leave a Reply