//
//

ট্রাজেডি রচনায় শেক্সপীয়ারের কৃতিত্ব আলোচনা কর।

শেক্সপীয়ার (১৫৬৪-১৬১৬)

নাট্যকার হিসেবে শেক্সপীয়ারের (১৫৬৪-১৬১৬) খ্যাতি বিশ্বব্যাপী। চরিত্র চিত্রণে শেক্সপীয়ার অতুলনীয়। মানবমনের অনুভূতির বৈচিত্র্যতায়, জীবনসত্যের রূপায়ণে, জীবনের সুগভীর রহস্যের সন্ধানে শেক্সপীয়ার অনবদ্য। চরিত্রস্রষ্টা হিসেবে শেক্সপীয়ারের প্রধান বিশেষত্ব হল ঐকান্তিক নির্লিপ্ততা। মানবচেতনার সুগভীর বিস্তৃতি ও অতলান্ত গভীরতার প্রকাশ তাঁর নাটকগুলিকে শাশ্বত সাহিত্যমূল্যে অভিসিক্ত করেছে।

শেক্সপীয়ারের নাটক রেনেঁসাসের লক্ষণে চিহ্নিত। তাই মানবিকতাবোধ বা মানবিক সংবেদনা তাঁর চরিত্রায়ণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নিপীড়িত মানবতার মহিমাকে তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। নীচতার দুঃসহতাকে বিস্ফোরিত করে তিনি তার নাটকে গড়ে তুলেছেন মানুষের উজ্জ্বল মহিমাকে। ব্যক্তিত্বের মর্মমূল শিল্পীর সহৃদয় চিন্তের অনুভূতির স্পর্শে দিব্যরূপে আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

শেক্সপীয়ার ৩৭টি নাটক রচনা করেছিলেন। এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ ১৮টি নাটককে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়— (ক) ট্র্যাজেডি: ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ (১৫৯৪), ‘হ্যামলেট’ (১৬০১), ‘ওথেলো’ (১৬০৪), ‘কিং লিয়ার’ (১৬০৫), ‘ম্যাকবেথ’ (১৬০৬), ‘অ্যান্টনি এন্ড ক্লিওপেট্রা’ (১৬০৬-০৭) প্রভৃতি। (খ)কমেডি: ‘দি কমেডি অব এররস’ (১৫৯৩), ‘এ মিড সামার নাইটস ড্রিম’ (১৫৯৬), ‘দি মারচেন্ট অব্‌ ভেনিস’ (১৫৯৬), ‘আ্যাজ ইউ লাইক ইট’ (১৬০০), ‘টুয়েলফথ নাইট’ (১৬০১), ট্রয়লাস অ্যান্ড ক্রেসিডা’ (১৬০২), ‘উইন্টার্স টেল’ (১৬১০), ‘দি টেম্পেস্ট’ (১৬১১) ইত্যাদি। (গ)ঐতিহাসিক নাটক: ‘ষষ্ঠ হেনরী’ (৩ খণ্ড, ১৫৯১-৯২), ‘রিচার্ড দি থার্ড’ (১৫৯২-৯৩), ‘জুলিয়াস সিজার’ (১৫৯৯), ‘টিমন অব এথেন্স’ (১৬০৮) ইত্যাদি।

শেক্সপীয়ারের ট্র্যাজেডি

সমস্ত বিশ্বের বিষ্ময় শেক্সপীয়ার এলিজাবেথীয় যুগের নাট্যকারদের মধ্যমণি। আকাশের অসীম শূন্যতার রহস্য, পাতালস্পর্শী সাগরের অতল গভীরতা, দিগন্তের সীমাহীন ব্যপ্তির উদারতা, তমালতাজিবনরাজি নীলার চিরায়ত মর্মরবাণী, উত্তুঙ্গ দেবাতাত্মা শৈলমালার অচঞ্চল স্তব্ধতা যেমন মানব জিজ্ঞাসার ঊর্ধ্বে মহাকাশের অনন্তবাণীকে প্রকাশ করেছে শেক্সপীয়ারও তাই। পৃথিবীর ইতিহাসে এত বড় কবিপ্রতিভা ও নাট্যপ্রতিভা বিরল।

শেক্সপীয়ারের ট্র্যাজেডিগুলি বিশ্বের সর্বাধিক পরিচিত এবং সেগুলিতে তাঁর নাট্যপ্রতিভার চূড়ান্ত শক্তির প্রতিফলন ঘটেছে। তার ট্র্যাজেডি নাটকগুলিতে সংঘাত ও দ্বন্দ্বঘটিত নাটকীয়তা তীব্র আকার ধারণ করেছে। বহির্দ্বন্দ্ব ও অন্তর্দ্বন্দ্ব—দুই ধারায় শেক্সপীয়ারের ট্র্যাজেডি অবিশ্রান্ত গতিতে প্রবহমান।

শেক্সপীয়ারের ট্র্যাজেডিতে শেষ পর্যন্ত একটা বিষাদময়ত, এক প্রচণ্ড হাহাকারের মধ্যে নাটকের পরিসমাপ্তি ঘটায়। বিরুদ্ধ শক্তির পরাজয় ঘটে, কল্যাণবোধ, শুভসততা শেষ পর্যস্ত জয়লাভ করে। এই অন্তিম পরিণতির জন্য দায়ী কে? তিনটি উপাদানের সমন্বয়ে এই পতন সংঘটিত হয়; নায়কের অন্তর্নিহিত দুর্বলতা, নিয়তি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা। যেমন—ম্যাকবেথ নাটকে ম্যাকবেথের উচ্চাকাঙ্ক্ষা, লেডি ম্যাকবেথ ও উইচদের প্রভাব, নিয়তির অমোঘ নির্দেশের ফলে ডানকানের আগমন, ম্যাকবেথের অপচ্ছায়া দর্শন প্রভৃতি সবকিছুর সমন্বয়ে ট্র্যাজেডি গড়ে উঠেছে। তাই বলা যায় নিয়তি ও চরিত্রের অন্তর্নিহিত দুর্বলতা—এই দু’য়ের সমন্বয়ে শেক্সপীয়ারের ট্র্যাজেডি গঠিত। যেমন ওথেলো সর্বনাশের চরম মুহূর্তে বলেছিল—“We can control fate.”

রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট

গ্রন্থটি রোমান্টিক ট্র্যাজেডি হিসাবে খ্যাত। রোমিও এবং জুলিয়েট দুজনে প্রেমে আবদ্ধ কিন্তু দুই পরিবারের রক্তাক্ত শক্রতা ও বিরোধের মাঝখানে তাদের প্রণয় বাধাপেতে থাকে। শেষে ভাগ্য বিড়ম্বিত প্রেমিক-প্রেমিকা দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করেছিল তাদের বুকের রক্ত। এই ট্র্যাজেডির মধ্যে যে সূক্ষ্মতা ও স্বাভাবিকতা তা ছিল সে যুগে অদৃষ্টপূর্ব। চরিত্র-চিত্রণ, গ্রন্থন ও অক্তিম পরিণতির বিচারে নাটকটি উৎকৃষ্ট।

হ্যামলেট

হ্যামলেট শেক্সপীয়ারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাটক। হত্যা, বিশ্বাস, প্রতিহিংসা, উন্মাদনা প্রভৃতি অতিনাটকীয় বৈশিষ্ট্য নাটকটির মধ্যে সৃষ্টি করেছে রুদ্ধশ্বাস উৎসুক্য। এই নাটকের ঘটনাস্থল ডেনমার্ক । আদর্শবাদী দার্শনিক সংবেদনশীল পিতার মৃত্যুর পর যখন হ্যামলেট বিহ্বল ও বেদনার্ত এবং পিতার মৃত্যু তার কাছে যখন সন্দেহজনক হয়ে উঠেছে ঠিক সেই সময় তার মা বিবাহ করেন তার কাকাকে। এক আশ্চর্য রাত্রিতে হ্যামলেটের পিতার প্রেতমূর্তি আবির্ভূত হয়ে সব ব্যক্ত করেন। তারপরে হ্যামলেট দ্বিধাগ্রস্ত, বিচলিত। তিনি পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে তীব্র ব্যাকুল হলেও সে ব্যাপারে অসমর্থ। রাজাকে পরীক্ষার্থে তিনি উন্মন্তত্তার ভান করেন। ঘটনা পরম্পরায় হ্যামলেট রাজাকে হ্যত্যা করেন এবং নিজেও আত্মহত্যা করেন। নাটকটিতে যে সংঘাত দেখানো হয়েছে তা মূলত ইংলন্ডের সামন্ত যুগের সঙ্গে এলিজাবেথীয় যুগের মানসিকতার সংঘাত। নাটকটি মনস্তত্ত্বপ্রধান। হামলেটের অন্তর্দ্বন্দ্ব, তার সত্তার বিক্ষুব্ধ অসহ্য দহন জ্বালা কর্তব্য চেতনার দ্বন্দ্ব ট্রাজেডিকে গভীর করেছে।

ওথেলো

ওথেলো বোধ করি শেক্সপীয়ারের শ্রেষ্ঠ ট্র্যাজেডি। কবি কল্পনার অধিকারী কৃষ্ণকায় ওথেলোর জীবন যুক্ত হয়েছিল মাধুর্য্য ও সরলতার প্রতীক শ্বেতাঙ্গিনী ডেসদিমোনার সঙ্গে। উভয়ের দাম্পত্য জীবন ছিল বিশ্বাস ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। কিন্তু ইয়াগোর ক্রুর ষড়যন্ত্রে ক্যাসিওর প্রতি আসক্ত এই সন্দেহের পরিণামে ওথেলো নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে ডেসদিমোনাকে এবং নিজে আত্মঘাতী হয়। মৃত্যুর পূর্বে অনুশোচনায় দগ্ধ ওথেলোর হাহাকার নাটকটির ট্রাজিক মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে।  নাটকটি গার্হস্থ্য পটভূমিকায় রচিত হলেও এ নাটকে বৃহৎ জীবনদর্শন ও আধ্যাত্মিকতার সুর ধ্বনিত হয়েছে।

কিং লীয়ার

কিং লীয়ার নাটক অন্যতম ট্র্যাজেডি। সমগ্র বিশ্বপ্রকৃতি এই নাটকের পটভূমিকা। যে ঝড়ের পটভূমকায় নাটকটি রচিত তা মূলত বৃদ্ধ রাজা লীয়ারের বিক্ষুব্ধ মানসিকতার প্রতীক। বৃদ্ধ রাজা তার তিন কন্যার মধ্যে রাজ্য ভাগ করে দিতে চেয়েছিলেন। জ্যেষ্ঠা গনেরিল ও মধ্যমা রেগনকে দিলেন নির্বাসনে। রাজার ভুল ভাঙল। সম্পদ ও ক্ষমতার লোভে প্রথম দুই কন্যা তাকে হত্যা পর্যন্ত করতে কুণ্ঠিত হল না। নিরাশ্রয় রাজা ঝড়ের রাতে যখন পাগলের মতো ঘুরছেন তখন বনের মধ্যে সাক্ষাৎ পেলেন কর্ডেলিয়াকে। কর্ডেলিয়ারের সঙ্গে সাক্ষ্যতে তিনি জীবনের সার খুঁজে পেলেন। কিন্তু শীঘ্রই কর্ডেলীয়া বন্দি হলেন এবং মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে শোচনীয় শাস্তি বরণ করে নিল। লীয়ারের মধ্যে তখন প্রদীপ জ্বলে উঠল মনুষ্যত্বের শেষ শিখাটি। লীয়ারের অসহ্য বেদনাময়তা, রাজশক্তির দম্ভ, অথচ স্নেহ, প্রেম, করুণার আশ্চর্য মাধুর্য তার মনে তীব্র হাহাকারের সৃষ্টি করেছিল।

ম্যাকবেথ

নাটকটিতে বীরশ্রেষ্ঠ ম্যাকবেথ উচ্চাভিলাষের তাড়নায় ও স্ত্রী লেডি ম্যাকবেথের প্ররোচনায় নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করলেন প্রজাবৎসল রাজা ডানকানকে। তাঁর বীরত্ব, কবিত্ব, কল্পনা প্রকাশ এ সমস্ত গুণই উচ্চাভিলাষের জন্য ব্যর্থ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত তার স্ত্রী উন্মাদ হয়ে মৃত্যু বরণ করে। ম্যাকবেথ তার ভুলের শাস্তি পায়নি। অমিত পুরুষকারের অধিকারী হয়েও তাকে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। তার এই চরিত্রের ক্রটি তার পরিণতির জন্য দায়ী। তাই এই নাটককে ট্র্যাজেডি অব ক্যারেক্টার বলা হয়।

ট্যাজেডি রচনার ক্ষেত্রে প্রথমের দিকে তিনি মার্লোর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। গ্রীক ট্রাজেডিতে মানুষ ছিল ভাগ্যের হাতের পুতুল। কিন্তু শেক্সপীয়ারের ট্র্যাজেডিতে নায়ক মহৎ গুণের অধিকারী হলেও চরিত্রের কোন না কোন রন্ধ পথ দিয়ে তাদের জীবনে সর্বনাশ ঘনিয়ে এসেছে। নাটকগুলিতে বহির্দ্বন্দ্বও অন্তর্দ্বন্দ্ব উভয়ই বর্তমান। বলিষ্ঠ নৈতিক আদর্শ এ জাতীয় নাটকগুলিতে উজ্জ্বল। মহৎ চরিত্রের পরিণতি আমাদের মনে করুণা ও সহানুভূতি উদ্রেক করে। তাঁর ট্র্যাজেডিগুলির কাব্যধর্মী আর গতিময়তার মধ্যে দিয়ে বেড়ে ওঠে একটি আধ্যাত্মিক সুর যদিও তাতে নাটকীয়তা ক্ষুণ্ন হয় না। অতি নাটকীয় বৈশিষ্ট্য, রুদ্ধশ্বাস উৎসুক্য—ট্র্যাজেডি নাটকগুলির মধ্যে বর্তমান।

শেক্সপীয়ারের ট্র্যাজেডি ও বাংলা নাটক

১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর বাংলায় শেক্সপীয়ার চর্চার যে সূচনা হয়েছিল তারই ধারাবাহিকতায় বাঙালীর প্রতিষ্ঠিত প্রথম রঙ্গশালা প্রসন্ন কুমার ঠাকুরের হিন্দু থিয়েটারে ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে শেক্সপীয়ারের ‘জুলিয়াস সীজার’ নাটকের অভিনয় হয়েছিল।

উনিশ শতকের নাট্যচর্চায় শেক্সপীয়ার ছিলেন প্রধান নাটাপ্রেরণাস্বরূপ। গিরিশচন্দ্র ঘোষ ‘ম্যাকবেথ’ এবং দেবেন্দ্রনাথ বসু ‘ওথেলো’ অনুবাদ করেছিলেন। এইসব অনুবাদ নাটক ও বাংলা নট্যশালার উন্মেষপর্বে শেক্সপীয়ারের মূল নাটকগুলির উপাদান তারই অকাট্য প্রমাণ। যোগেশচন্দ্র গুপ্তের ‘কীর্তিবিলাস’ নাটকে শেক্সপীয়ারের হ্যামলেট নাটকের প্রভাব লক্ষ করা যায়।

বাংলা ভাষায় প্রথম সার্থক নাট্যকার মধুসূদনের উপর শেক্সপীয়ারের প্রভাব অনেকখানি। পদ্মাবতী নাটকের আঙ্গিকে শেক্সপীয়রীয় প্রভাব যথেষ্ট। তবে কৃষ্ণকুমারী নাটকের অন্তর্দ্বন্দ্বে তীব্র ও ট্রাজিক বেদনায় শেক্সপীয়ারের নাটকের সত্তাটি প্রকাশিত। শেক্সপীয়ারের মতোই মধুসূদন রোমান্টিক ট্র্যাজেডি লিখতে চেয়েছিলেন। কৃষ্ণকুমারী নাটকের নায়ক ভীমসিংহের মধ্যে রাজা লিয়ারের উন্মাদনা ও আর্তি লক্ষ করা যায়।

শেক্সপীয়ারের নাটক ও নাট্যরীতি সর্বাধিক প্রভাবিত করেছিল দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকগুলিকে। দ্বিজেন্দ্রলালের তারাবাঈ নাটকের সূর্যমল ও তার স্ত্রী তমসা শেক্সপীয়ারের ম্যাকবেথ ও লেডি ম্যাকবেথের মতো রাজ্যলাভের উচ্চাকাঙ্ক্ষায় তাড়িত। দ্বিজেন্দ্রলালের অপর ঐতিহাসিক ট্র্যাজেডি নাটকের এক অসামান্য সংঘাতজর্জর চরিত্র নূরজাহানের মধ্যে লেডি ম্যাকবেথের প্রতিচ্ছবি লক্ষ করা যায়। ঘটনার তীব্র গতিবেগ, নাট্যোত্কণ্ঠা, চরিত্রের অন্তর্দ্বন্দ্ব, সংলাপ ও পরিস্থিতি নির্মাণে দ্বিজেন্দ্রলাল বাংলা নাট্য সাহিত্যে শেক্সপীয়ারের সার্থকতম উত্তরাধিকারী।

শেক্সপীয়ারের নাট্যশৈলীর বৈশিষ্ট্য

  • শেক্সপীয়ারের কাহিনীগ্রন্থন নৈপুণ্য অসাধারণ। তার নাটকের কাহিনী প্রধানত ইতিহাস ও লোককথা থেকে গৃহীত।
  • চরিত্রস্রষ্টা হিসাবে শেক্সপীয়ারের প্রধান বিশেষত্ব হল তার ঐকান্তিক নির্লিপ্ততা। মানবচেতনার সুগভীর বিস্তৃতি ও অতলান্ত গভীরতার প্রকাশ তার নাটকগুলিকে শাশ্বত সাহিত্যমূল্যে অভিষিক্ত করেছে।
  • শেক্সপীয়ারের নাটকে দুটি কেন্দ্রীয় প্রতীকের কথা বলা হয়েছে। একটি ঝড় অপরটি সংগীত। প্রথমটি ছন্দ এবং দ্বিতীয়টি সামঞ্জস্যের ইঙ্গিতবহ। টি. এস. এলিয়ট তার নাটকে কাব্য, নাটক ও সংগীতের সমন্বয় লক্ষ করেছেন।
  • স্থান, কাল ও কার্যসংক্রান্ত ক্লাসিক্যাল নাট্যরীতি প্রায় ক্ষেত্রেই তিনি লঙ্ঘন করেছেন। সমালোচক জনসনের ভাষায় শেক্সপীয়ার নাট্যরচনা করেছেন মানবজীবনের মিশ্রসূত্রে।
  • বিভিন্ন শ্রেণির চরিত্র সৃষ্টিতে বিশেষ করে খল চরিত্র সৃষ্টিতে শেক্সপীয়ারের কৃতিত্ব যথেষ্ট। এছাড়া বিদূষক বা ফুল জাতীয় চরিত্রগুলিও অনবদ্য।
  • ট্র্যাজেডি নাটকে ছন্দ সৃষ্টিতে শেক্সপীয়ারের কৃতিত্ব স্মরণীয়। এদিক দিয়ে তিনি যথার্থ জীবনশিল্পী। সেজন্য তিনি মানবহাদয়ের বিষ্ময় ও রহস্যকে উন্মোচিত করেছেন।
  • শেক্সপীয়ারের নাটকের ভাষাশৈলী, কল্পনার অপরূপ লাবণ্য যে কোনো পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শব্দচয়ন, চিত্রকলা সৃষ্টিতে বিশ্বসাহিত্যে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। রবীন্দ্রনাথ তাই বলেছেন— “শেক্সপীয়ারে আমরা চিরকালের মানুষ এবং আসল মানুষটিকেই পাই, কেবল মুখের মানুষটি নয়”

তথ্যসূত্র:

ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসDownload
ইংরাজী সাহিত্যের ইতিহাস – শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়Download
ইংরেজি সাহিত্য পরিচয় – অরবিন্দ পোদ্দারDownload
ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস – কুন্তল চট্টোপাধ্যায়Download
ইংরেজি সাহিত্যের ইতিবৃত্ত ও মূল্যায়ন – বিমলকৃষ্ণ সরকারDownload
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস – অরুণ ভট্টাচার্যDownload

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!