প্রত্যয় কাকে বলে? প্রত্যয়ের শ্রেণিবিভাগ উদাহরণসহ আলোচনা কর।
প্রত্যয়
শব্দই ভাষার সমৃদ্ধির অন্যতম উপকরণ। যে ভাষায় যত বেশী শব্দ আছে, সেই ভাষা তত বেশী সমৃদ্ধ। শব্দ বা ধাতুর উত্তর প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন নতুন শব্দ গঠিত হয়। বাংলা ভাষা। সংস্কৃত ভাষা থেকে প্রচুর প্রত্যয় উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হয়েছে। তাছাড়া আছে তার নিজস্ব কিছু প্রত্যয় এবং বিদেশী প্রত্যয়।
শব্দ বা ধাতুর উত্তর যে-সমস্ত বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ যুক্ত হয়ে প্রাতিপদিক (বিভক্তিহীন সার্থকশব্দ) গঠিত হয়, তাদের প্রত্যয় বলা হয়। যেমন: অক্, আলু, শানচ্, শতৃ, তৃচ্, ইষ্ণু, ষ্ণি, ষ্ণিক, আই, আলি ইত্যাদি। শব্দ বা ধাতুর উত্তর বিভিন্ন প্রত্যয়যোগে নতুন নতুন শব্দ গঠিত হয়।
প্রত্যয়ের শ্রেণিবিভাগ
প্রত্যয় দু’প্রকার— কৃৎ-প্রত্যয় ও তদ্ধিত-প্রত্যয়।
কৃৎ-প্রত্যয়
ধাতু-প্রকৃতির সঙ্গে যে-সব প্রত্যয় যুক্ত হয়ে প্রাতিপদিক গঠিত হয়, তাদের কৃৎ প্রত্যয় বলা হয়। যেমন: অক্, আলু, শানচ, শতৃ, তৃচ, ইষ্ণু ইত্যাদি কৃৎ-প্রত্যয়! গায়ক [গৈ+অক], দয়ালু [দয়্+আলু], বর্তমান [বৃৎ+শানচ্], দাতা [দা+তৃচ্], চলিষ্ণু [চল+ইষ্ণু]— এই কৃৎ-প্রত্যয়-নিষ্পন্ন শব্দগুলি কৃদন্ত শব্দ। কোন ধাতুর উত্তর কোন বিশেষ প্রত্যয়যোগে বিশেষ্য পদ গঠিত হয়; আবার, একই ধাতুর উত্তর ভিন্ন প্রত্যয়যোগে বিশেষণ পদও গঠিত হয়। যেমন: উৎ-কৃষ্+ঘঞ=উৎকর্ষ [বি]; উৎ-কৃষ্+ক্ত=উৎকৃষ্ট [বিণ]। কৃদন্ত বিশেষ্য—‘উৎকর্ষ’; কৃদন্ত বিশেষণ—উৎকৃষ্ট।
তদ্ধিত-প্রত্যয়
শব্দ বা নাম-প্রকৃতির সঙ্গে যে-সব প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন নতুন প্রাতিপদিক গঠিত হয়, তাদের তদ্ধিত-প্রত্যয় বলা হয়। যেমন: ষ্ণি, ষ্ণিক্, আই, আলি ইত্যাদি তদ্ধিত-প্রত্যয়। দাশরথি [দশরথ+ষ্ণি], মাঙ্গলিক (মঙ্গল+ষ্ণিক], বড়াই (বড়+আই), ঠাকুরালি (ঠাকুর+আলি]—এগুলি তদ্ধিত প্রত্যয়-নিষ্পন্ন শব্দ। তদ্ধিত প্রত্যয়-নিষ্পন্ন শব্দকে তদ্ধিতান্ত শব্দ বলা হয়।
যে-সব প্রত্যয়যোগে পুংলিঙ্গ শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ শব্দে রূপান্তরিত হয়, তাদের স্ত্রী-প্রত্যয় বলা হয়। যেমন: ঈ (পাত্র—পাত্রী], আনী [শিব—শিবানী] ইত্যাদি। স্ত্রী-প্রত্যয়, প্রকৃতপক্ষে, তদ্ধিত-প্রত্যয়েরই অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু আচার্য সুনীতিকুমার ভিন্ন মত পোষণ করেন। তাঁর মতে শব্দের উত্তর প্রযুক্ত হইলেও, এই স্ত্রী-প্রত্যয় ব্যাকরণের বিচারে তদ্ধিত-প্রত্যয়ের পর্যায়ে পড়ে না। ইহাকে বিশেষভাবে স্ত্রী-প্রত্যয় নামেই অভিহিত করা হয়।
ধাত্ববয়ব
ধাতু বা শব্দের উত্তর যে বর্ণ বা বণ-সমষ্টি-যোগে নতুন নতুন ধাতু গঠিত হয় তাকে ধাত্ববয়ব প্রত্যয় বলা হয়। যেমন: বল্ ধাতু+‘আ’ [ধাত্ববয়ব]=বলা [বলানো অর্থে] নতুন ধাতু: শ্রু (ধাতু]+সন্ (ধাত্ববয়ব] = শুশ্রষ্ [শোনার ইচ্ছা অর্থে]—নতুন ধাতু।
এখন, কৃৎ-প্রত্যয়, ধাত্ববয়ব প্রত্যয় ও ধাতু-বিভক্তি— এই তিনটির মধ্যে পার্থক্যটি সুস্পষ্টরূপে উপলব্ধি করা প্রয়োজন।
কৃৎ-প্রত্যয় ধাতুর উত্তর যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে। যেমন: ‘কৃ’ [ধাতু]+‘অক’ = কারক। ধাত্ববয়ব প্রত্যয় ধাতুর উত্তর যুক্ত হয়ে নতুন ধাতু গঠন করে। যেমন: ‘পড়্’ (ধাতু)+আ = পড়া [পড়ানো অর্থে]। ধাতু-বিভক্তি ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ধাতুকে ক্রিয়াপদে পরিণত করে তাকে বাক্যে ব্যবহৃত হবার যোগ্যতা দান করে। যেমন: ‘কর্’ (ধাতু]+‘ই’ [ধাতু-বিভক্তি]= করি [উত্তম পুরুষের সাধারণ বর্তমানের ক্রিয়াপদ]।
প্রত্যয় ও বিভক্তির পার্থক্য
এবার, প্রত্যয় ও বিভক্তির মধ্যে পার্থক্যটি জানা প্রয়োজন। প্রত্যয় ধাতু ও শব্দের উত্তর প্রযুক্ত হয়; তার ফলে নতুন শব্দ গঠিত হয়। এই শব্দ কেবলমাত্র বিভক্তি-যুক্ত হলে তবেই বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে। প্রত্যয়ের মতো বিভক্তিও দু’প্রকার— শব্দ-বিভক্তি ও ধাতু-বিভক্তি। শব্দ-বিভক্তি বা ধাতু-বিভক্তি যুক্ত হবার পূর্বে শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে এক বা একাধিক প্রত্যয় যুক্ত হতে পারে। কিন্তু শব্দ-বিভক্তি বা ধাতু-বিভক্তি যুক্ত হবার পর আর কোন প্রত্যয় যুক্ত হতে পারে না।
কৃৎ-প্রত্যয় ও তদ্ধিত প্রত্যয়-যোগের বিধি
ধাতু ও শব্দের উত্তর প্রত্যয় যুক্ত হয়। কিন্তু লক্ষণীয়, প্রত্যয়-যোগের সময় প্রত্যয়ের কিয়দংশ ধাতু বা শব্দের উত্তর যুক্ত হয়, অবশিষ্টাংশ লুপ্ত হয়। ‘গ’ [ধাতু]+‘অনট’ [প্রত্যয়]= গমন [লক্ষণীয়, ‘ট’ লুপ্ত]; সুন্দর [শব্দ]+ষ্ণ্য [প্রত্যয়]= সৌন্দর্য [লক্ষণীয় ‘ষ্ণ’ লুপ্ত]।
উপধা
শব্দ বা ধাতুর অন্ত্য (সর্বশেষ] বর্ণের অব্যবহিত পূর্ববর্তী বর্ণকে উপধা বলা হয়। যেমন: ‘দেবতা’ শব্দের ‘ত্’ বর্ণ। ‘দেবতা’ শব্দটি বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায়—দ+এ+ব্+অ+ত্+আ। ‘আ’ অন্ত্য বর্ণ, এর অব্যবহিত পূর্ববর্তী বর্ণ ‘ত্’ হল উপধা।
সংস্কৃত ধাতু-প্রত্যয় বা কৃৎ-প্রত্যয়
সংস্কৃত ধাতু-প্রত্যয় বা কৃৎ-প্রত্যয় যোগে তৎসম শব্দ গঠিত হয়। দৃষ্টান্তগুলিতে প্রত্যয়সমূহের যে-অংশটুকু শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়, তা বন্ধনী-চিহ্নের মধ্যে প্রদত্ত হল:
১. অঙ্, অচ্, অপ্, ক, খ, ড [অ] ও অঙ্ [পুংলিঙ্গে অ্যা, স্ত্রীলিঙ্গে আ]
অঙ্
এই প্রত্যয় কেবলমাত্র ভাববাচ্যেই প্রযুক্ত হয়। নিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্য রূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন: শ্রদ্ধ্+অঙ্+আ=শ্রদ্ধা; ভিক্ষ+অঙ্+আ=ভিক্ষা; চিন্ত্+অঙ্+আ=চিন্তা; পূজ্+অঙ্+আ=পূজা; কৃপ্+অঙ্+আ=কৃপা; নিন্দ্+অঙ্+আ=নিন্দা। তেমনি শিক্ষা, দীক্ষা, হিংসা, আজ্ঞা, অবজ্ঞা, প্রজ্ঞা, শঙ্কা, ত্বরা, চর্চা, প্রশংসা, প্রতিমা, উপমা, রেখা, লেখা, তৃষা, প্রার্থনা, প্রতিভা, আভা, ক্ষমা, প্রভা, শোভা, পরীক্ষা, বাঞ্ছা ইত্যাদি।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘দাও মোরর শ্রদ্ধা ভক্তি।’ ‘রামদাস গুরু তার ভিক্ষা মাগি’ দ্বার দ্বার ফিরিছেন যেন অন্নহীন।’ “পুরবাসীগণে সবে ডাকি কয়—‘হয়েছে প্রভুর পূজার সময়।” “হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব।’
অচ্ [অ]
ভাববাচ্য ও কর্তৃবাচ্যে এই প্রত্যয় হয়; নিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন: কর্তৃবাচ্যে—ধৃ+অচ্=ধর, চর্+অচ্=চর; বৃষ+অচ্=বর্ষ; কৃ+অচ্=কর ; হৃ+অচ্=হর। তেমনি—গ্রহ, সর্প, দেব, নর, ভূধর, দিবাকর, নিশাচর, প্রভাকর, মনোহর। ভী+অচ্=ভয়; জী+অচ্=জয়; হৃষ+অচ্=হর্ষ; স্পৃশ+অচ্=স্পর্শ। তেমনি রোষ, ক্ষয়, লয়, ভেদ, ক্রোধ, বোধ, রোধ, পরিশোধ, প্রতিশোধ, প্রতিবাদ, বিকার, প্রতিকার, অনুরোধ ইত্যাদি।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘যাহার প্রভায় প্রভা পায় প্রভাকর।’ ‘স্পর্শে তব হর্ষে আহা আজি সে গো বাসন্ত-দুকুলা।
অপ্ [অ]
ভাববাচ্যে এই প্রত্যয় প্রযুক্ত হয়। নিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্য রূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন: জপ্+অপ্=জপ; যম্+অপ্=যম; ভূ+অপ্=ভব; লু+অপ্=লব; কৃ+অপ্=কর; বৃ+অপ্=বর; ভৃ+অপ্=ভর; স্তু+অপ্=স্তব; রু+অপ্=রব; আ-দৃ+ অপ্=আদর; বি-স্তৃ+অপ্=বিস্তর।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘সারাদিন তার কাটে জপে তপে।’ ‘যম সম শীত তাহে নিরমিল বিধি।’ ‘সে’ কহে বিস্তর মিছা যে কহে বিস্তর।
ক [অ]
কর্মবাচ্যে শব্দের পরস্থিত আকারান্ত, ধাতুর উত্তর এই প্রত্যয় প্রযুক্ত হয় এবং আ লুপ্ত হয়। নিম্পন্ন পদটি বিশেষ্য [কখনও কখনও বিশেষণ] রূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন: নৃ-পা+ক=নৃপ; মধু-পা+ক=মধুপ; গো-পা+ক=গোপ; সু-স্থা+ক=সুস্থ; জল-দা+ক=জলদ; বর-দা+ক=বরদ; তেমনি—ভূপ, করদ, তটস্থ, প্রস্থ, মধ্যস্থ, কণ্ঠস্থ, দুঃস্থ, গৃহস্থ, নিঠ, বিজ্ঞ, রসজ্ঞ, সর্বজ্ঞ, ভূমিষ্ঠ, পাদপ ইত্যাদি। তাছাড়া, অন্যত্র প্রী+ক=প্রিয়; মিল্+ক=মিল।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘দেবতারে প্রিয় করি, প্রিয়েরে দেবতা।’ ‘নৃপে হেরি ছেলে-মেয়ে ভয়ে ঘরে যায় ধেয়ে।’ ‘জলদ জলের ভারে আরো নত হয়।’ ‘তারি মধু কেন মন-মধুপে খাওয়াও না?’
খল্ [অ]
সু বা দুর্ উপসর্গের পর ধাতুর উত্তর কর্মবাচ্যে বা ভাববাচ্যে খল্ প্রত্যয় হয়। নিষ্পন্ন পদটি বিশেষণ [কখনও কখনও বিশেষ্য] রূপে ব্যবহৃত হয়। সু-লভ্+খল্=সুলভ; দুর্-গম্+খল্=দুর্গম; দুস-তৃ+খল্=দুস্তর; দুর্-লভ্+খল্=দুর্লভ; সু-গম্+খল্=সুগম; সু-কৃ+খল্=সুর। তেমনি—সুজয়, বিজয়, দুর্জয়, দুর্বহ, দুষ্প্রাপ্য, গন্ধবহ।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার।’
ড [অ]
জাত অর্থে কর্তৃবাচ্যে এই প্রত্যয় হয়। নিষ্পন্ন পদটি বিশেষণ [কখনও কখনও বিশেষ্য] রূপে ব্যবহৃত হয়। সহ-জন্+ড=সহজ; সর-জন্+ড=সরোজ; পঞ্চ-জন্-ড=পঙ্কজ; অগ্র-জন্+ড=অগ্রজ; জল+জন্+ড =জলজ; অপ্–জন্+ড=অব্জ; বন-জন্+ড=বনজ; মন-জ+ড=মনোজ। তেমনি—পুত্র [পুৎ-ত্রৈ+ড], আতপত্র [আতপ-ত্রৈ+ড], অন্ত্যজ, খনিজ, উদ্ভিজ্জ, আত্মজ, কৃষিজ, অগ্রজ, দ্বিজ। অন্যান্য অর্থে—গিরি-শী+ড=গিরিশ; ভু-গম্+ড=ভুজঙ্গ [ভুজঙ্গম]; দুর-গম্+ড=দুর্গম; বিহায়স্-গম্+ড=বিহগ। তেমনি-তুরঙ্গ [তুরঙ্গম], বিহঙ্গ [বিহঙ্গম], সঙ্গ [সঙ্গম]।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘লঙ্কার পঙ্কজ রবি গেলা অস্তাচলে।’ ‘কি করিব কোথা যাব অনুজ লক্ষণ।’ ‘অভাগী বিহগী আজিকে আহত মরণশ্যেনের পক্ষে।’ ‘দংশনক্ষত শ্যেন বিহঙ্গ যুঝে ভুজঙ্গ সনে।’
২. ণক [অক]
কর্তৃবাচ্যে ‘করেন যিনি’ অর্থে এই প্রত্যয় হয়। নিষ্পন্ন শব্দটি প্রধানত বিশেষ্য পদরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন কৃষ্+ণক=কৃষক; গৈ+ণক=গায়ক; দৃশ্+ণক=দর্শক; লিখ্+ণক=লেখক; পাচ্+ণক=পাচক; শাস্+ণক=শাসক; হন্+ণক=ঘাতক; দা+ণক=দায়ক; কৃ+ণক=কারক; ধৃ+ণক=ধারক; নশ্+ণক=নাশক; পঠ্+ণক=পাঠক; চালি+ণক=চালক; পালি+ণক=পাক; প্র-তৃ+ণক=প্রতারক সম্-পাদি+ণক=সম্পাদক; পরি-ব্ৰজ্+ণক=পরিব্রাজক। তেমনি—শোষক, পাবক [পু+ণক], সেচক, শিক্ষক, পরীক্ষক (পরি-ঈক্ষ্+ণক), জনক [জন্+ণিচ্+ণক), অধ্যাপক অধি-ই+ণিচ্+ণক]।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘অন্ধ গায়ক পথের ধারে গান শুনিয়ে ভিক্ষা করে।’ ‘আমরা ঘাতক সন্নিধানে পশুর ন্যায় ভরতের নিকট নিবদ্ধ হইলাম।’
৩. আলু
শীলাৰ্থে কর্তৃবাচ্যে কয়েকটি ধাতুর উত্তর এই প্রত্যয় হয়। নিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত হয়। দয়্+আলু=দয়ালু; নি-দ্রা+আলু=নিদ্রালু; কৃপ্+আলু=কৃপালু। তেমনি তন্দ্রালু [তন্দ্র্ বা তন-দ্রা+আলু]।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ন্যায় দয়াল ব্যক্তি বিরল।’ ‘সে তার নিদ্রালু এই চোখে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইলো।’
৪. তব্য [তব্য]
উচিত অর্থে অথবা যোগ্য বা ভবিষ্যৎ অর্থে কর্মবাচ্যে ও ভাববাচ্যে এই প্রত্যয় হয়। নিষ্পন্ন পদগুলি বিশেষণ [কদাচিৎ বিশেষ্য] রূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন: কৃ+তব্য=কর্তব্য; দা+তব্য=দাতব্য; বচ্+তব্য=বক্তব্য; গম্+ তব্য=গন্তব্য; দৃষ্+তব্য=দ্রষ্টব্য মন্+তব্য=মন্তব্য; স্মৃ+তব্য=স্মর্তব্য; হন্+তব্য=হন্তব্য; শ্রু+তব্য=শ্রোতব্য। তেমনি—জ্ঞাতব্য, পঠিতব্য, ভবিতব্য [ভূ+তব্য], ধর্তব্য, ভক্ষিতব্য, গ্রহীতব্য, প্রেরিতব্য, সেবিতব্য, কহতব্য [বাংলা—কহ্+তব্য)।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘দিল্লী ছিল তার গন্তব্য স্থল।’ ‘গ্রামে তিনি একটি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেছিলেন।’ ‘ভারতের দ্রষ্টব্য স্থানের অভাব নেই।’ ‘এ বিষয়ে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।’
৫. অনীয়
উচিত অর্থে অথবা যোগ্য বা ভবিষ্যৎ অর্থে কর্মবাচ্যে ও ভাববাচ্যে এই প্রত্যয় হয়। নিম্পন্ন পদগুলি বিশেষ্য। যেমন: পা+অনীয়=পানীয়; পূজ্+অনীয়=পূজনীয়; পাল্+অনীয়=পালনীয়, দৃশ্+অনীয়=দর্শনীয়; কৃ+অনীয়=করণীয়; বৃ+অনীয়=বরণীয়; গ্রহ্+অনীয়=গ্রহণীয়; রম্+অনীয়= রমণীয়; স্মৃ+অনীয়=স্মরণীয়; আচর+অনীয়=আচরণীয়; লুভ্+অনীয়= লোভনীয়; শুচ+অনীয়=শোচনীয়। তেমনি— শিক্ষণীয়, লক্ষণীয়, প্রেক্ষণীয়, রক্ষণীয়, ভক্ষণীয়, বর্ণনীয়, দানীয়, পালনীয় [পা+ ণিচ্+অনীয়], গোপনীয়, নমনীয়, মাননীয় [মন্+ণিচ্+অনীয়], অর্চনীয়, অবর্ণনীয়, বর্জনীয়, চিরস্মরণীয়, প্রশংসনীয় [প্র-শনস্+অনীয়], শোভনীয়, শ্রবণীয়, অভাবনীয় [ন-ভূ+ ণিচ+অনীয়], চিন্তনীয়, আকর্ষণীয়, আদরণীয়, অবিস্মরণীয়, বন্দনীয়, নিন্দনীয়, স্পৃহনীয়, অকল্পনীয়, প্রয়োজনীয়।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘গ্রামে পানীয় জলের বড় অভাব।’ ‘স্মরণীয় তারা, বরণীয় তারা, তবুও বাহির দ্বারে, আজি দুর্দিনে ফেরানু তাদের ব্যর্থ নমস্কারে।’ ‘অধিত্যকা প্রদেশ ঘনসন্নিবিষ্ট পাদপসমূহে স্নিগ্ধ, শীতল ও রমণীয়।’
৬. ঘঞ্ [অ]
ভাববাচ্য ও কর্তৃবাচ্য ছাড়া সকল কারক বাচ্যেই এই প্রত্যয় হয়। নিষ্পন্ন পদগুলি বিশেষ্য। যেমন ভূজ+ঘঞ্=ভোজ; বস্+ঘঞ্=বাস; অদ্+ঘঞ্=ঘাস; পচ্+ঘঞ্=পাক; হৃ+ঘঞ্=হার; আবিস্-কৃ+ঘঞ্=আবিষ্কার; ত্যজ্+ঘঞ=ত্যাগ; ভূ+ঘঞ্=ভাব; যুজ্+ঘঞ্=যোগ; শুচ্+ঘঞ্=শোক; উৎকৃষ+ঘঞ্=উৎকর্ষ; অপ-কৃষ+ঘঞ্=অপকর্ষ; পঠ্+ঘঞ্=পাঠ; শপ্+ঘঞ্ =শাপ; তপ্+ঘঞ্=তাপ; ভুজ্+ঘঞ্=ভোগ; *চি+ঘঞ্=কায়; রনজ্+ঘঞ্= রঙ্গ; অভি-সিচ্+ঘঞ্=অভিষেক; প্র-সদ্+ঘঞ্=প্রসাদ; বি-সদ্+ঘঞ্=বিষাদ। তেমনি— নিবাস, প্রবাস, প্রহার, বিহার, ব্যবহার, সংসার, উপসংহার, অভিশাপ [অভি-শপ্+ঘঞ্], প্রদাহ, তিরস্কার, বিশ্রাম, অবসাদ, বিক, প্রক, বিশাল, ব্যবহার, প্রকার, অনুরাগ [অনু-রনজ্+ঘঞ্], সঙ্গ, ভঙ্গ [কিন্তু, ভগ্ন=ভনজ্+ক্ত—বিশেষণ)।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘জীবনে জীবন যোগ করা না হলে কৃত্রিম পণ্যে ব্যর্থ হয় গানের পসরা।’ ‘এত ভঙ্গ বঙ্গদেশে তবু রঙ্গভরা।’ ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয় ঘাসে ঘাসে।’ ‘কাজ কি বাসে কাজ কি বাসে?’ ‘অরিন্দম কহিলা বিষাদে।’
৭. অনট্ [অন]
ভাববাচ্য ও কর্তৃবাচ্য ছাড়া সকল কারক-বাচ্যেই এই প্রত্যয় হয়। নিষ্পন্ন পদগুলি বিশেষ্য পদ হয়ে থাকে। যেমন: গম্+অনট্=গমন; দা+অনট্ =দান; পা+অনট্=পান; দৃশ+অনট=দর্শন; ভূ+অনট্=ভবন; গ্রহ্+অনট্=গ্রহণ; বস্+অনট্=বসন; স্মৃ+অনট্=স্মরণ; শ্রু+অনট্=শ্রবণ; নী+অনট্=নয়ন, গুপ+অনট্=গোপন, শী+অনট্=শয়ন, জীব্+অনট্=জীবন, আ-হ্বে+অনট্= আহ্বান, রুদ্+অনট্=রোদন। তেমনি— কারণ, করণ, বয়ন, বরণ, [বৃ+অনট], হরণ, মরণ, [শম্+অনট=] শমন, স্থান, ঘ্রাণ, পঠন, পাঠন, অধ্যয়ন, ভ্রমণ, বর্জন, জ্ঞান, স্নান, চরণ, ভরণ, লোচন, তরণ, পবন, ভূষণ, বহন, উচ্চারণ [উৎ-চর+ণিচ্+অনট্], আরোহণ, অণুবীক্ষণ [অণু-বি-ঈক্ষ+অনট্], সাধন, ক্রন্দন, বন্ধন, গর্জন, স্নান, সেচন, চেতনা [চিত্+অনট্+আ], কর্ষণ, আকর্ষণ, উৎপীড়ন, মন্থন, দোহন, অবস্থান, বিসর্জন, সঞ্চয়ন, অনুষ্ঠান, সম্প্রসারণ [সম-প্র-সৃ+ণিচ্+অনট], অলংকরণ, সংকলন [সঙ্কলন]।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘এক-অতি অল্প বয়স্ক শিশু সিংহশিশুর কেশর আকর্ষণ করিয়া অতিশয় উৎপীড়ন করিতেছে।’ ‘নয়নে আমার সজল মেঘের নীল অঞ্জন লেগেছে।’ ‘কে বসে অমল বসনে শ্যামল বসনে।’ ‘শিকড়ে আমার তাই অরণ্যের বিশাল চেতনা।’ ‘মোদের চক্ষে জ্বলে জ্ঞানের মশাল।’ ‘মোদের মৃত্যু লেখে মোদের জীবন ইতিহাস।’ ‘পাঠাইব রামানুজে শমন ভবনে।’
৮. ক্ত [ত]
অতীতকালে ‘কার্য” সম্পন্ন হয়েছে’— এই অর্থের দ্যোতক। নিষ্পন্ন পদগুলি কর্তৃবাচ্যে কর্তার এবং কর্মবাচ্যে কর্মের বিশেষণ-রূপে প্রযুক্ত হয়। এগুলি সেদিক থেকে কৃদন্ত বিশেষণ (Verbal Adjective]। যেমন: কৃ+ক্ত=কৃত; গম্+ক্ত=গত; খ্যা+ক্ত=খ্যাত; ম্লৈ+ক্ত=ম্লান; লভ্+ক্ত= লব্ধ; দৃশ্+ক্ত=দৃষ্ট; শ্রু+ক্ত= শ্রুত; নশ্+ক্ত=নষ্ট; হৃষ্+ক্ত-হৃষ্ট; বপ্+ক্ত=উপ্ত; ভী+ক্ত=ভীত; শম্+ক্ত=শান্ত; ক্লম্+ক্ত=ক্লান্ত; বচ+ক্ত=উক্ত; শ্রম্+ক্ত= শ্রান্ত; মুহ্+ক্ত=মুগ্ধ, মৃঢ়; মুচ+ক্ত=মুক্ত; কৃ+ক্ত=কীর্ণ; দৃ+ক্ত=দীর্ণ; বৃ+ক্ত=বৃত; রম্+ক্ত=রত; হৃ+ক্ত=হৃত; অদ্+ক্ত=অন্ন; রুজ+ক্ত=রুণ; রনজ্+ক্ত=রক্ত, রঞ্জিত; নম্+ক্ত=নত; আ-হ্বে+ক্ত=আহূত; দন্শ+ক্ত=দষ্ট; স্নিহ+ক্ত=স্নিগ্ধ; সিচ্+ক্ত=সিক্ত; সৃজ+ক্ত =সৃষ্ট; যজ্+ক্ত=ইষ্ট; অনুবদ্+ক্ত=অনূদিত; পিশ্+ক্ত= পিষ্ট; স্পৃশ্+ক্ত=স্পৃষ্ট; বি-অঞ্জ্+ক্ত=ব্যক্ত; মসজ্+ক্ত=মগ্ন; ভনজ্+ক্ত=ভগ্ন; উৎ-বিজ্+ক্ত=উদ্বিগ্ন; সম্-চি+ক্ত=সঞ্চিত। তেমনি— পক্ব [পচ্+ক্ত], রিক্ত, ছিন্ন, নীত, গীত [গৈ+ক্ত], ক্রীত, ধৃত, জাত, জ্ঞাত, স্নাত, হত, স্থিত, বুদ্ধ, শুদ্ধ, স্তব্ধ, বদ্ধ, দগ্ধ, দুগ্ধ, গুপ্ত, লিপ্ত, গ্রস্ত, ত্রস্ত, অস্ত, পরাস্ত, ন্যস্ত, দৃপ্ত, উত্তীর্ণ, ভিন্ন, চূর্ণ, রুদ্ধ, ক্ষুব্ধ, অভ্যস্ত, কান্ত [কম্+ক্ত], বিদ্ধ [ব্যধ্+ক্ত), গৃহীত [গ্ৰহ্+ক্ত], স্পষ্ট, মথিত, কথিত, গ্রথিত, লিখিত, রক্ষিত, ভক্ষিত, নিন্দিত, কুণ্ঠিত, বন্দিত, পৃজিত, বঞ্চিত, রচিত, সঞ্চিত, নন্দিত, শিক্ষিত, মিলিত, জাগরিত ইত্যাদি।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘এই সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে দিতে হবে ভাষা, এই সব শ্রান্ত, শুষ্ক, ভগ্ন বুকে ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা।’ ‘কভু ভগ্ন অসি, ছিন্ন চর্ম, ভিন্ন বর্ম, যা পাইলা হাতে।’ ‘অশ্বথ-বিদীর্ণ জীর্ণ মন্দির প্রাঙ্গণে।’
৯. ক্তিন্ [তি]
ভাব অর্থে ভাববাচ্যে এই প্রত্যয় হয়। নিষ্পন্ন পদগুলি বিশেষ্য। যেমন: গম্+ক্তিন্=গতি; প্রগ্+ক্তিন্=প্রগতি; ভী+ক্তিন্=ভীতি; ভজ্+ক্তিন্=ভক্তি; শম্+ক্তিন্=শান্তি; শক্+ক্তিন্=শক্তি; শ্রম্+ক্তিন=শ্রান্তি; স্থা+ক্তিন্=স্থিতি; বচ্+ক্তিন্=উক্তি; মন্+ক্তিন্=মতি; বুধ্+ক্তিন্=বুদ্ধি; নী+ক্তিন্=নীতি; ক্রম্+ক্তিন্=ক্রান্তি; সম্-ক্রম্+ক্তিন্=সংক্রান্তি; ভ্রমন+ক্তিন্=ভ্রান্তি; খ্যা+ক্তিন্= খ্যাতি; দৃশ্+ক্তিন্=দৃষ্টি; কৃৎ+ক্তিন্=কীর্তি; কৃ+ক্তিন্=কৃতি; সম-কৃ+ক্তিন্= সংস্কৃতি; স্মৃ+ক্তিন্=স্মৃতি; দীপ্+ক্তিন্=দীপ্তি; বৃষ্+ক্তিন্=বৃষ্টি; কৃষ্+ক্তিন্= কৃষ্টি; সৃজ্+ক্তিন্=সৃষ্টি। তেমনি— শ্রুতি, প্রীতি, ধৃতি, গীতি, প্রতীতি, স্তুতি, আকৃতি, প্রকৃতি, অনুভূতি, প্রণতি, উন্নতি, অবনতি, বিরতি, ক্ষতি, সুপ্তি, আরতি, যুক্তি, মুক্তি, বিপত্তি, সম্পত্তি, সমৃদ্ধি, উৎপত্তি, ব্যুৎপত্তি, ব্যক্তি, বৃদ্ধি, তৃপ্তি, পরিতৃপ্তি [পরি-তৃপ্+ক্তি], আসক্তি, পরিশুদ্ধি ইত্যাদি।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘গতি যার নীচ সহ নীচ সে দুর্মতি।’ ‘শক্তি মরে ভীতির কবলে।’ ‘তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি যে মহৎ।’ ‘তোমার গীতি জাগালো স্মৃতি।’ ‘আকুল শান্তি সেথায় বিপুল বিরতি।’ ‘সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে।’ ‘আমরা শক্তি আমরা বল।’
১০. তৃচ্ [তা]
শীলার্থে, সম্যগর্থে বা জীবিকাৰ্থে কর্তৃবাচ্যে এই প্রত্যয় হয়। নিষ্পন্ন শব্দগুলি বিশেষ্য। যেমন: দা+তৃচ্=দাতা, নী+তৃচ্=নেতা; যুধ+তৃচ্=যোদ্ধা; বুধ্+তৃচ্=বোদ্ধা; পা+তৃচ্=পিতা; মা+তৃচ্=মাতা; বি-ধা+তৃচ্=বিধাতা; সূ+ তৃচ্=সবিতা; হৃ+তৃচ্=হর্তা; কৃ+তৃচ্=কর্তা; শ্রু+তৃচ্=শ্রোতা; দৃশ্+তৃচ্=দ্রষ্টা; সৃজ্+তৃচ্=স্রষ্টা; বচ্+তৃচ্=বক্তা; রচ্+তৃচ্=রচয়িতা; প্র-নী+তৃচ্=প্রণেতা; ত্রৈ+তৃচ্=ত্রাতা; গ্রহ্+তৃচ্=গ্রহীতা। তেমনি—হন্তা, বেত্তা, ক্রেতা, বিক্রেতা, বিজেতা, স্থাপয়িতা, দুহিতা [দুহ্+তৃচ্+আ], জামাতা [জায়া-মা+তৃচ্] ইত্যাদি।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘কি কি লইয়া গিয়াছে?’ ‘নিজের কন্যার উপর পিতার যে স্বাভাবিক অধিকার আছে, তাহা যেন পণের টাকার পরিবর্তে বন্ধক রাখিতে হইয়াছে।’ ‘মৃত মাতার শব স্কন্ধে করে আমি তোমায় দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান করছি।’ ‘বিধাতা পুরুষ মুখ টিপিয়া হাসিতেছেন।’
১১. ণিন্ [ইন্>ঈ]
কর্তৃবাচ্যে এই প্রত্যয় হয়। নিম্পন্ন পদগুলি বিশেষ্য ও বিশেষণ দুইই হয়। যেমন: গম্+ইন্=গামী; আ-গম্+ইন্=আগামী; ভূ+ইন্=ভাবী; বস্+ইন্=বাসী [বনবাসী]; জি+ইন্=জয়ী; রুজ্+ইন্=রোগী; যুজ্+ইন্=যোগী; ভূজ্+ইন্=ভোগী; ধৃ+ইন্=ধারী [অস্ত্রধারী]; ব্যথ+ইন্=ব্যথী; বদ্+ইন্=বাদী; দ্বন্দ্ব+ইন্=দ্বন্দ্বী [প্রতিদ্বন্দ্বী]; মন্ত্র+ইন্=মন্ত্রী; হন+ইন=ঘাতী। হৃ+ইন্=হারী; পা+ইন্=পায়ী; স্থা+ইন্=স্থায়ী, দা+ইন্=দায়ী। তেমনি— যমী [সংযমী]; দমী, দর্পী, দর্শী [দূরদর্শী]; স্পর্শী [মর্মস্পর্শী]; কারী [কৃ+ইন]; গ্রাহী [গ্রহ+ইন্]; নাশী, সারী [অপসারী—অপ-সৃ+ইন]; দম্ভী, কর্ষী, চারী, বষী, বিদ্রোহী, বিপ্লবী [সব্যসাচী—সব্য-সচ্+ইন্]; ত্যাগী [পরিত্যাগী]; রোহী [রুহ+ইন]—আরোহী; অপরাধী ইত্যাদি।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘কে সেই ধর্মপত্নী পরিত্যাগী পাপাত্মার নাম কীর্তন করিবেক?’ ‘অশ্বারোহী পর্বতের উপর হইতে দেখিল।’ ‘অন্তরের পাকযন্ত্রটাও রহিল উপবাসী।’ ‘মেয়ের কাছে যখন বাপ অপরাধী, তখন সে অপরাধের অনুতাপ কি আর গোপন রাখা যায়?’ ‘যে মোগলের উচ্ছিষ্টভোজী, তার পক্ষে এ কাজ অনুচিত হয়নি।’ ‘মহাবৎ খাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতে যদি কেউ, থাকে ত তুমি।’ ‘ইনি হচ্ছেন রাজবিদ্রোহী।’ ‘এই ছেলেটির নাম রেখেছিলেন সব্যসাচী।’ ‘ভ্রাতৃপুত্র বাসব-বিজয়ী।’ ‘তব জন্মপুরে, তাত, পদার্পণ করে বনবাসী।’ ‘ধর্মপথগামী হে রাক্ষসরাজানুজ।’ ‘হাসির দেশে আমরা আনি সর্বনাশী চোখের জল।
১২. শতৃ [অ]
বর্তমানকালে কর্তৃবাচ্যে এই প্রত্যয় হয়। নিষ্পন্ন পদগুলি বিশেষণ হয়ে থাকে। যেমন: ধাব্+শতৃ=ধাবৎ; চল্+শতৃ=চলৎ; পঠ্+শত্ব=পঠৎ; জীব+শতৃ=জীবৎ, অস্+শতৃ=সৎ; মহ্+শতৃ=মহৎ; জাগৃ+শতৃ=জাগ্রৎ; ভূ+শতৃ=ভবৎ।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘মহৎ যে হয় তার সাধু ব্যবহার।’ ‘তিনি আজ বৃদ্ধ, চলচ্ছক্তিহীন।’ ‘বৎসরের শেষে হিসাব মিলাতে গিয়ে সরকারী অফিসের কমরচারীরা গলদ্ঘর্ম হতে লাগলো।’ ‘জীবদ্দশায় সেখানে যাব না।’
১৩. শানচ্ [মান]
‘ক্রিয়ার কাজটি চলছে’ অর্থে— আত্মনেপদী ধাতুর উত্তর কর্তৃ ও কর্মবাচ্যে এবং পরস্মৈপদী ধাতুর উত্তর কেবল কর্মবাচ্যে এই প্রত্যয় হয়; নিষ্পন্ন পদগুলি বিশেষণ পদ হয়ে থাকে। যেমন: চল্+শানচ্=চলমান; মৃ+শানচ্=ম্রিয়মাণ; বৃৎ+শানচ্=বর্তমান; বৃৎ+শানচ্=বর্তমান; বৃধ+শানচ্= বর্ধমান; দীপ+শানচ্=দীপ্যমান, শী+শানচ্=শয়ান; আস্+শানচ্=আসীন; শুভ্+শানচ্=শোভমান; মুহ্+শানচ্=মুহ্যমান [মোহ্যমান]; উৎ-ই+শানচ্= উদীয়মান; বি-রাজ+শানচ্=বিরাজমান।
শানচ্ প্রত্যয়ের অতিরিক্ত দৃষ্টান্ত: কম্পমান, বিদ্যমান, সেবমান, ধাবমান, প্রতীক্ষমাণ [যে প্রতীক্ষা করছে], প্রতীক্ষ্যমাণ [যার প্রতীক্ষা করা হচ্ছে।] নির্মীয়মাণ, বিলীয়মান, অপসৃয়মাণ, আবহমান, দৃশ্যমান, আলোচ্যমান, প্রতীয়মান।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘এইখানে মোগলের মুকুট-রতন শয়ান শান্তির মাঝে।’ ‘বিধাতা দেছেন প্রাণ থাকি সদা ম্রিয়মাণ।’ ‘আমানি খাবার গর্ত দেখ বিদ্যমান।’ ‘উদীয়মান সূর্যের আলোকে ধান্যক্ষেত্র যেন লক্ষ্মীর ন্যায় বিরাজমান।’
১৪. ইষ্ণু
শীলার্থে এই প্রত্যয় হয়। নিষ্পন্ন শব্দগুলি বিশেষণ পদ। যেমন: জি+ইষ্ণু=জিষ্ণু; চল্+ইষ্ণু=চলিষ্ণু; সহ্+ইষ্ণু=সহিষ্ণু; বৃধ্+ইষ্ণু=বর্ধিষ্ণু, ক্ষি+ ইষ্ণ=ক্ষয়িষ্ণু। তেমনি—চরিষ্ণু।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘তরু হতে যেবা হয় সহিষ্ণু, তৃণ হতে দীনতর সেই বৈষ্ণব।’ ‘গ্রামটি এককালে বর্ধিষ্ণু ছিল, তাই তার ক্ষয়িষ্ণু রূপ আজ সহজেই চোখে পড়ে।’
১৫. যৎ, ক্যপ, ণ্যৎ [য]
যৎ [য]
ঔচিত্য ও যোগ্যতা বোঝাতে কর্ম ও ভাববাচ্যে এই প্রত্যয় হয়। নিষ্পন্ন শব্দগুলি প্রধানত বিশেষণ শব্দরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন: দা+যৎ=দেয়; পা+যৎ=পেয়; জ্ঞা+যৎ=জ্ঞেয়; গম্+য=গম্য; বন্দ্+যৎ-বন্দ্য; নম্+যৎ=নম্য; পুণ্+যৎ=পুণ্য; রম্+যৎ=রম্য; লভ্+যৎ=লভ্য; কথ্য+যৎ=কথ্য; সহ্+যৎ=সহ্য; গ্রহ্+যৎ=গ্রাহ্য; যুজ্+যৎ=যোগ্য; জন্+যৎ=জন্য; গণ্+যৎ=গণ্য; হন্+যৎ= বধ্য।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘হৃদয় আমার যোগ্য কর তোমার বাণী বহিবারে।’ ‘রক্তমাখা অস্ত্রহাতে যত রক্ত-আঁখি শিশুপাঠ্য কাহিনীতে থাকে মুখ ঢাকি।’ ‘নিরপরাধের লাঞ্ছনা সহ্য করা যায় না।’ ‘তার পাপ নেই পুণ্য নেই।’ ‘গোত্রের প্রধান পিতা বন্দ্য বংশজাত।’
ক্যপ [য]
ভাববাচ্যে ও কর্মবাচ্যে ধাতুর উত্তর এই প্রত্যয় হয়। নিষ্পন্ন শব্দগুলি প্রধানত বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত হয়। ভৃ+ক্যপ্=ভৃত্য; কৃ+ক্যপ্=কৃত্য; শাস্+ক্যপ্=শিষ্য; দৃশ+ক্যপ্=দৃশ্য; বিদ্+ক্যপ্+আ [স্ত্রী]=বিদ্যা; হন্+ক্যপ্+আ =হত্যা; সূ+ক্যপ্=সূর্য; শী+ক্যপ্+আ=শয্যা।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘একদিন না একদিন এ ক্ষুদ্র ভৃত্য হইতে উপকার হইবে।’ ‘রাণা শীঘ্রই বন হইতে বেগবতী ক্ষীণা তটিনীতীরে এক সুরম্য নিভৃত স্থানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন।’ ‘বিদ্যা বাহির হইতেই কেবল জমা করিলাম।’ ‘সূর্য কোনদিকে ওঠে।’
ণ্যৎ [য]
উচিত বা যোগ্য অর্থে ঋকারান্ত ও ব্যঞ্জনান্ত ধাতুর উত্তর এই প্রত্যয় হয়। নিম্পন্ন পদগুলি বিশেষণ [কখনও কখনও বিশেষ্য] হয়। যেমন: কৃ+ণ্যৎ=কার্য; ধৃ+ণৎ=ধার্য; ঋ+ণ্যৎ=আর্য; ভৃ+ণ্যৎ+আ=ভার্যা; বচ্+ণ্যৎ=বাক্য; পদ্+ণ্যৎ=পদ্য; গদ্+ণ্যৎ=গদ্য; বুধ্+ণ্যৎ=বোধ্য; শ্রু+ণ্যৎ=শ্রাব্য; দ্রু+ণ্যৎ=দ্রব্য; সম্-ভৃ+ণ্যৎ=সম্ভাব্য; ভক্ষ+ণ্যৎ=ভক্ষ্য; লক্ষ+ণ্যৎ=লক্ষ্য; ভিদ্+ণ্য=ভেদ্য; বচ্+ণ্যৎ=বাচ্য [বাক্য]; দৃশ্+ণৎ=দৃশ্য; দিব্+ণ্যৎ=দিব্য; ত্যজ্+ণ্যৎ=ত্যাজ্য; ভজ্+ণ্যৎ=ভাগ্য; ভুজ্+ণ্যৎ=ভোজ্য [ভোগ্য]। তেমনি—লভ্য, গ্রাহ্য, দাহ্য, বাহ্য, প্রযোজ্য, (হস্+ণ্যৎ=] হাস্য, উপহাস্য, পরিত্যাজ্য, বিচার্য, অবাধ্য, অবশ্য, আচার্য [আশ্চর্য=আ-চর্+ণ্যৎ], আহার্য, পরিহার্য, ব্যবহার্য।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘সন্ধ্যাবেলায় ঠাকুরকে ভোজ্য করেন নিবেদন।’ ‘মৃত্যুভয়ে রাজপুত কোন কার্য হইতে বিরত হয় না।’ ‘তাহার হস্তে দুই একজন অবশ্য মরিবে।’
১৬. সন
ইচ্ছার্থে কতকগুলি ধাতুর উত্তর এই প্রত্যয় হয়। এর সঙ্গে আ বা উ প্রত্যয় যুক্ত হয়। আ-প্রত্যয়ান্ত শব্দগুলি বিশেষ্য এবং উ-প্রত্যয়ান্ত শব্দগুলি বিশেষণ। যেমন: জ্ঞা+সন্+আ=জিজ্ঞাসা,মা: শ্রূ+সন্+আ=শুশ্রূষা; পা+সন্+আ=পিপাসা; লভ্+স+আ=লিপ্সা [+উ=লিপ্সু]; মৃ+সন্+উ=মুমূর্ষু; ভুজ্+সন্+আ=বুভুক্ষা [+উ=বুভুক্ষু]; মুচ্+সন্+আ=মুমুক্ষা; দৃশ্+সন্+আ= দিদৃক্ষা; জি+সন্+আ=জিগীষা; কৃ+সন্+আ=চিকীর্ষা; কিত্+সন্+আ= চিকিৎসা; মান্+সন্+আ=মীমাংসা; হন্+সন্+আ=জিঘাংসা। তেমনি—বিজিগীষা, উপচিকীর্ষা, অপচিকীর্ষা, অনুচিকীর্ষা, জুগুপ্সা [গুপ+সন্+আ], দিৎসা [=দা+সন্+আ], বিবিক্ষা [=বিশ্+সন্+আ]। এগুলি সনন্ত শব্দ।
বাংলা ধাতু-প্রত্যয় বা বাংলা কৃৎ-প্রত্যয়
১৭. ইয়ে
দক্ষতা বোঝাতে এই প্রত্যয় হয়। নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। যেমন: কর্+ইয়ে=করিয়ে; গা+ইয়ে=গাইয়ে; বাজ+ইয়ে=বাজিয়ে। বল্+ইয়ে= বলিয়ে; খেল্+ইয়ে=খেলিয়ে; লিখ্+ইয়ে=লিখিয়ে; কহ্+ইয়ে= কহিয়ে; খা+ইয়ে=খাইয়ে; খাট্+ইয়ে=খাটিয়ে; নাচ্+ইয়ে=নাচিয়ে; লড়+ইয়ে=লড়িয়ে।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘পাড়ায় এখন গাইয়ে বাজিয়ে লোকের অভাব নেই।’ ‘রায়বাবু খুব খাইয়ে লোক ছিলেন।’ ‘লোকটি যেমন খাটিয়ে লোক ছিলেন, তেমনি বলিয়ে কইয়ে।’ ‘কণার মতো নাচিয়ে মেয়ে ইস্কুলে নেই।’
১৮. উক
স্বভাব-অর্থে এই প্রত্যয় হয়। নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। যেমন: ভাব্+উক=ভাবুক; হিনস্+উক=হিংসুক; নিন্দ্+উক=নিন্দুক; মিশ্+উক= মিশুক।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘সংসারে অন্য অভাব অনেক আছে, কেবল নিন্দুক আছে যথেষ্ট।’ ‘হিংসুকেরা জীবনে সুখী হতে পারে না।’ ‘ছেলেটা খুব মিশুক।’
১৯. আন
এই প্রত্যয়-যোগে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য ও ক্রিয়াবাচক বিশেষণ পদ গঠিত হয়। কাজেই, নিষ্পন্ন শব্দগুলি বিশেষ্য ও বিশেষণ দুই-ই হয়। এগুলি বাংলা ণিজন্ত ক্রিয়া। যেমন: জ্বাল্+আন=জ্বালান; বাঁধ্+আন=বাঁধান; শান্+আন=শানান; শুন্+আন=শোনান; পাঠ্+আন=পাঠান; কামড়্+আন= কামড়ান; পাল্+আন=পালান; দেখ্+আন=দেখায়; হাস্+আন= হাসান; ঠক্+আন=ঠকান; কম্+আন=কমান; বাড়্+আন= বাড়ান; কুড়+আন=কুড়ান; পুড়্+আন=পোড়ান; আন্+আন=আনান; হার্+আন=হারান; জান্+আন= জানান; বান্+আন=বানান; কাঁদ্+আন=কাঁদান।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘তলাটা মজবুত ও টিকসই করতে আগাগোড়া লোহার নাল-বাঁধানো [বাঁধা]। ‘ঘুটে কুড়োনোর [কুড়ান] কোন গল্পটা বলত—ও সেই হরিহহাড়ের।’ ‘মা চিবানো [চিবান] পান নিজের মুখ হইতে ছেলের প্রসারিত হাতের উপর রাখিয়া বলিত— এ, বড্ড তেতো।’ ‘পুরানো [পুরান] বইখানার ছেঁড়া পাতার ভরপুর গন্ধে তাহার শিশু দৃষ্টি অস্পষ্টভাবে সে পথের সন্ধান পাইত।’
২০. আই
ভাববাচক বিশেষ্য বোঝাতে এই প্রত্যয় হয়। নিষ্পন্ন শব্দ কৃদন্ত বিশেষ্য [Verbal Noun)। যেমন: বাছ্+আই=বাছাই; যাচ্+আই=যাচাই; বাঁধ্+আই=বাঁধাই; ঝাড়্+আই=ঝাড়াই; খোদ্+আই=খোদাই; ঢাল্+আই= ঢালাই; ঝাল্+আই=ঝালাই; লড়্+আই=লড়াই; মাড়্+আই=মাড়াই; ভান্+আই=ভানাই; চড়া+আই=চড়াই; উতর্+আই=উৎরাই; ধু+আই= ধোলাই।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘ততক্ষণে চড়াই আরম্ভ হয়ে গিয়েছে।’ ‘কী ভয়ানক লড়াই হল মা যে!’ ‘তাই নতুনের ঢালাই করিতেছি সেই পুরাতনের ছাঁচে।’ ‘কারখানায় এখন শুরু হয়েছে ছাঁটাইর পালা।’ ‘গণ-ধোলাইয়ে তিনটে চোর মরেছে।’
সংস্কৃত শব্দ-প্রত্যয় বা তদ্ধিত-প্রত্যয়
কৃদন্ত প্রাতিপদিক, তদ্ধিতান্ত প্রাতিপদিক ও অব্যুৎপন্ন প্রাতিপদিকের উত্তর শব্দ-প্রত্যয় বা তদ্ধিত-প্রত্যয় যুক্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে তদ্ধিতান্ত প্রাতিপদিকের উত্তর আবার শব্দ-প্রত্যয় বা তদ্ধিত-প্রত্যয় যুক্ত হয়েও নতুন প্রাতিপদিক গঠিত হয়।
বাংলা ভাষায় প্রচলিত কয়েকটি সংস্কৃত বা তৎসম তদ্ধিত-প্রত্যয়ের উদাহরণ—
১.ক. ষ্ণ [অ]
অপত্য অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ প্রধানত বিশেষ্য। যেমন: কশ্যপ+ষ্ণ=কাশ্যপ; যদু+ষ্ণ=যাদব; ভৃগু+ষ্ণ=ভার্গব; সুমিত্রা+ষ্ণ=সৌমিত্র; পৃথা+ষ্ণ=পার্থ; মনু+ষ্ণ=মানব; দনু+ষ্ণ=দানব; কুরু+ষ্ণ=কৌরব; পাণ্ডু+ষ্ণ=পাণ্ডব; ধৃতরাষ্ট্র+ষ্ণ=ধার্তরাষ্ট্র; রঘু+ষ্ণ=রাঘব; পরাশর+ষ্ণ=পারাশর; কুশিক+ষ্ণ= কৌশিক; শুনক+ষ্ণ=শৌনক; বসিষ্ঠ+ষ্ণ=বাসিষ্ঠ; জনক+ষ্ণ+ঈ [স্ত্রী]= জানকী; বসুদেব+ষ্ণ=বাসুদেব; দ্রুপদ+ষ্ণ= দ্রৌপদ [স্ত্রী] দ্রৌপদী; পুরু+ষ্ণ=পৌরব; মেনকা+ষ্ণ=মৈনাক; বিদেহ+ষ্ণ [স্ত্রী]=বৈদেহী; ভরত+ষ্ণ= ভারত; মিথিলা+ষ্ণ [স্ত্রী]=মৈথিলী; নিষাদ+ষ্ণ=নৈষাদ; নিষধ+ষ্ণ=নৈষধ; পুত্র+ষ্ণ=পৌত্র; দুহিতা+ষ্ণ=দৌহিত্র ; সুগত+ষ্ণ=সৌগত ইত্যাদি।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘এমন মানব-জমিন রইল পতিত, আবাদ করলে ফলতো সোনা।’ ‘ডাক দিয়ে যাই দানবের সাথে যারা সংগ্রামের তরে প্রস্তুত হতেছে ঘরে ঘরে।’ ‘আমি কি ডরাই, সখি, ভিখারি রাঘবে?’ ‘পাণ্ডব পাণ্ডব থাক, কৌরব কৌরব, হিংসা নাহি করি কারে।’ ‘ভারত ভারত-খ্যাত আপনার গুণে।’
১.খ. ষ্ণ [অ]
‘সম্বন্ধ’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশ্লেষণ। যেমন: পৃথিবী+ষ্ণ=পার্থিব; হেম+ষ্ণ=হৈম; মিত্র+ষ্ণ=মৈত্র; বন্ধু+ষ্ণ=বান্ধব; মরুৎ+ষ্ণ=মারুত; বস্তু+ষ্ণ= বাস্তব; সিন্ধু+ষ্ণ=সৈন্ধব; ধাতু+ষ্ণ=ধাতব; শরীর+ষ্ণ=শারীর; সূর্য+ষ্ণ=সৌর; চন্দ্র+ষ্ণ=চান্দ্র; ইন্দ্র+ষ্ণ=ঐন্দ্র; ভগবৎ+ষ্ণ=ভাগবত; পতঞ্জল+ষ্ণ=পাতঞ্জল; গুড়+ষ্ণ=গৌড়; ছত্র+ষ্ণ=ছাত্র; চক্ষু+ষ্ণ=চাক্ষুষ; বিধি+ষ্ণ=বৈধ; তণ্ডু+ষ্ণ= তাণ্ডব; তপঃ+ষ্ণ=তাপস; পরিৎ+ষ্ণ=পারিষদ; গন্ধর্ব+ষ্ণ=গান্ধর্ব; নিশা+ষ্ণ= নৈশ; অরণ্য+ষ্ণ=আরণ্য; সগর+ষ্ণ=সাগর; পিশাচ+ষ্ণ=পৈশাচ; জন্তু+ষ্ণ= জান্তব; পশু+ষ্ণ=পাশব; অণু+ষ্ণ=আণব; দেব+ষ্ণ=দৈব; প্রকৃতি+ষ্ণ=প্রাকৃত; অসুর+ষ্ণ=আসুর; পশুপতি+ষ্ণ=পাশুপত; সন্ধ্যা+ষ্ণ=সান্ধ্য।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘মহাপুরুষগণের পার্থিব বস্তুর প্রতি কোন আকর্ষণ থাকে না।’ ‘মৈত্র মহাশয় যাবে সাগর-সঙ্গমে।’ ‘ওটা গল্প নয়, একেবারে বাস্তব ঘটনা।’ ‘সৈন্ধব লবণ স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো।’ ‘পৃথিবী সৌর জগতের একটি গ্রহ।’ ‘বাবু যত বলে পারিষদ-দলে বলে তার শতগুণ।’
১.গ. ষ্ণ [অ]
‘উপাসনা’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ প্রধানত বিশেষণ। যেমন: শিব+ষ্ণ=শৈব; বিষ্ণু+ষ্ণ=বৈষ্ণব; সুগত+ষ্ণ=সৌগত; শক্তি+ষ্ণ=শাক্ত; ব্রহ্ম+ষ্ণ=ব্রাহ্ম; বুদ্ধ+ষ্ণ=বৌদ্ধ; পশুপতি+ষ্ণ=পাশুপত; সরস্বতী+ষ্ণ=সারস্বত।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘চন্দ্রধর ছিলেন পরম শৈব।’ ‘সেই অভিমান থাকে যদি মনে, বৈষ্ণব মোরা নই।’ ‘মধ্যযুগে ভাগীরথীর উভয় তীরেই ছিল শাক্তধর্মের প্রাধান্য।’ ‘দলে দলে বৌদ্ধগণ দেশত্যাগ করিতে লাগিলেন।’
১.ঘ. ষ্ণ [অ]
‘জাত’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ প্রধানত বিশেষ্য। পঞ্চাল+ষ্ণ=পাঞ্চাল; মথুরা+ষ্ণ=মাথুর; মগধ+ষ্ণ=মাগধ; মিথিলা+ষ্ণ=মৈথিল; ভূমি+ষ্ণ=ভৌম; বসন্ত+ষ্ণ=বাসন্ত; বিশাখা+ষ্ণ=বৈশাখ; নিশা+ষ্ণ=নৈশ; শরৎ+ষ্ণ=শারদ; কৃত্তিকা+ষ্ণ=কার্তিক; মৃগশিরা+ষ্ণ=মার্গশীর্ষ; চিত্রা+ষ্ণ=চৈত্র; মধু+ষ্ণ=মাধব; বিশ্বনর+ষ্ণ=বৈশ্বানর; পয়স+ষ্ণ=পায়স; মনস+ষ্ণ=মানস; জ্যেষ্ঠা+ষ্ণ=জ্যৈষ্ঠ; শ্রবণা+ষ্ণ=শ্রাবণ; বৃষ+ষ্ণ=বর্ষ।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘অসহায় মানুষের আর্ত চিৎকারে নৈশ আকাশ বিদীর্ণ হইতে লাগিল।’ ‘শারদ নিশির স্বচ্ছ তিমিরে তারা অগণ্য জ্বলে।’ ‘স্পর্শে তব হর্ষে, আহা, আজি সে গো বাসন্ত-দুলা।’ ‘বৈশাখে ওই ভোরের হাওয়া বহে কিসের হর্ষ।’ ‘কার্তিক মাসেতে হৈল হিমের জনম।’
১.ঙ. ষ্ণ [অ]
‘নৈপুণ্য’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ প্রধানত বিশেষণ; তবে বিশেষ্য রূপেও ব্যবহৃত হয়। ব্যাকরণ+ষ্ণ=বৈয়াকরণ; স্মৃতি+ষ্ণ=স্মার্ত।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘ভট্টিকার বৈয়াকরণ বলিয়া গ্রাহ্য হইতে পারেন।’
১.চ. ষ্ণ [অ]
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য রূপে ব্যবহৃত হয়। [বিকারার্থে] তিল+ষ্ণ=তৈল।
১.ছ. ষ্ণ [অ]
ভাব অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। শিশু+ষ্ণ=শৈশব; বন্ধু+ষ্ণ=বান্ধব; মুনি+ষ্ণ=মৌন ; যুব+ষ্ণ=যৌবন; চরিত্র+ষ্ণ=চারিত্র; পুরুষ+ষ্ণ=পৌরুষ; দেব+ষ্ণ=দৈব; চোর+ষ্ণ=চৌর; কুতূহল+ষ্ণ=কৌতুহল; কিশোর+ষ্ণ =কৈশোর; সুষ্ঠু+ষ্ণ=সৌষ্ঠব; সুহৃদ্+ষ্ণ=সৌহার্দ; সুভ্রাতৃ+ষ্ণ=সৌভ্রাত্র; শুচি+ষ্ণ=শৌচ; বীর+ষ্ণ=বৈর; ভীরু+ষ্ণ=ভৈরব; ভ্রমর+ষ্ণ=ভ্রমর; ভূমি+ষ্ণ= ভৌম; সর্বভূমি+ষ্ণ [অধীশ্বর অর্থে]=সার্বভৌম; কুশল+ষ্ণ=কৌশল; লঘু+ষ্ণ=লাঘব; মৃদু+ষ্ণ=মার্দব; ঋষি+ষ্ণ=আর্ষ; অর্থ+ষ্ণ=আর্থ; মূল+ষ্ণ=মৌল; তুলা+ষ্ণ=তৌল; সুরভি+ষ্ণ=সৌরভ; গুরু+ষ্ণ=গৌরব; ঋজু+ষ্ণ=আর্জব; বিভব+ষ্ণ=বৈভব; ভূত+ষ্ণ=ভৌত; ঈশ্বর+ষ্ণ=ঐশ্বর্য; কুমার+ষ্ণ=কৌমার; পুর+ষ্ণ=পৌর।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘শৈশবে কাহার সাথে জলে স্থলে ভ্রমি’ শিকার-সন্ধান?’ ‘হোথা স্তব্ধ মহামৌন ব্রাহ্মণ-মহিমা।’ ‘যৌবনেরি পরশমণি করাও দেহে স্পর্শ।’ ‘আকাশ বাতাস গেল মরে একী রে দুর্দৈব।’ ‘অজানাকে জানিবার কৌতূহল সকল মানুষেরই আছে।’ ‘যখন জ্বলিবে তব পৌরুষ-পাবক, উৎপাত-পতঙ্গ পুড়ে হবে ছারখার।’ ‘ভুলি দ্বারাবতীর ঘটা, কংসবধের গৌরবও।’ ‘ভুলায় কুরুক্ষেত্র গোটা বিদুর ক্ষুদের সৌরভও।’
২.ক. ষ্ণ্য [য]
অপত্য অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ প্রধানত বিশেষ্য। দিতি+ষ্ণ্য=দৈত্য, অদিতি+ষ্ণ্য=আদিত্য; চণক+ষ্ণ=চাণক্য; গর্গ+ষ্ণ্য=গার্গ; বৎস+ষ্ণ্য=বাস্য; শণ্ডিল+ষ্য=শাণ্ডিল্য; মুগল+ষ্ণ্য=মৌগল্য; পুলস্ত্য+ষ্ণ=পৌলস্ত্য; যজ্ঞবৰু +ষ্ণ= যাজ্ঞবল্ক্য; জমদগ্নি+ষ্ণ্য=জামদগ্ন্য; মনু [+ষ]+ষ্ণ=মনুষ্য।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘ভেদি দৈত্য-কারা আয় সর্বহারা।’ ‘চাণক্য ছিলেন কুটকুশলী ব্রাহ্মণ।’ ‘সভামধ্যে যাজ্ঞব ধীরে ধীরে দণ্ডায়মান হইলেন।’
২.খ. ষ্ণ্য [য]
ভাব অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ প্রধানত বিশেষ্য। গ্রাম+ষ্ণ্য=গ্রাম্য; সুন্দর+ষ্ণ্য=সৌন্দর্য; মধুর+ষ্ণ্য=মাধুর্য; উদার+ষ্ণ্য=ঔদার্য; বীর+ষ্ণ্য=বীর্য, ধীর+ষ্ণ্য=ধৈর্য ; স্থির+ষ্ণ্য=স্থৈর্য ; দরিদ্র+ষ্ণ্য=দারিদ্র্য; বিশিষ্ট+ষ্ণ্য=বৈশিষ্ট্য; স্বতন্ত্র্য+ষ্ণ্য=স্বাতন্ত্র্য; মহাত্মা+ষ্ণ্য=মাহাত্ম্য; গৃহস্থ+ষ্ণ্য=গার্হস্থ্য; সহিত+ষ্ণ্য= সাহিত্য; সহায়+ষ্ণ্য=সাহায্য; দূত+ষ্ণ্য=দৌত্য; সুজন+ষ্ণ=সৌজন্য; উদ্ধত+ষ্ণ্য=ঔদ্ধত্য; দুরাত্মা+ষ্ণ্য=দৌরাত্ম; সভা+ষ্ণ্য=সভ্য; সম+ষ্ণ্য=সাম্য; বিষম+ষ্ণ্য=বৈষম্য; শীত+ষ্ণ্য=শৈত্য; জড়+ষ্ণ্য=জাড্য; বণিজ+ষ্ণ্য=বাণিজ্য; সহচর+ষ্ণ্য=সাহচর্য; সুকর+ষ্ণ্য=সৌকর্য; কুমার+ষ্ণ্য=কৌমার্য; সুকুমার+ষ্ণ্য= সৌকুমার্য; একমত+ষ্ণ্য=ঐকমত্য; অতিথি+ষ্ণ্য=আতিথ্য; তরুণ+ষ্ণ্য= তারুণ্য; যুবরাজ+ষ্ণ্য=যৌবরাজ্য; বৃদ্ধ+ষ্ণ্য=বার্ধক্য; পণ্ডিত+ষ্ণ্য=পাণ্ডিত্য; নিপুণ+ষ্ণ্য=নৈপুণ্য; বিরাগ+ষ্ণ্য=বৈরাগ্য; চতুর+ষ্ণ্য=চাতুর্য; সুস্থ+ষ্ণ্য=স্বাস্থ্য; অলস+ষ্ণ্য=আলস্য; বিকল+ষ্ণ্য=বৈকল্য; বিচিত্র+ষ্ণ্য=বৈচিত্র্য; করুণা +ষ্ণ্য=কারুণ্য; সমান+ষ্ণ্য=সামান্য; অধিক+ষ্ণ্য=আধিক্য; উদাসীন+ষ্ণ্য= ঔদাসীন্য; কৃপণ+ষ্ণ্য=কার্পণ্য; সুভগ+ষ্ণ্য=সৌভাগ্য; কেবল+ষ্ণ্য=কৈবল্য; চপল+ষ্ণ্য=চাপল্য; সমীপ+ষ্ণ্য=সামীপ্য; কুলীন+ষ্ণ্য=কৌলীন্য; মলিন+ষ্ণ্য =মালিন্য; অতিশয়+ষ্ণ্য=আতিশয্য; পুরোহিত+ষ্ণ্য=পৌরোহিত্য; কর্কশ+ষ্ণ্য= কার্কশ্য; পরবশ+ষ্ণ=পারবশ্য; দাস+ষ্ণ=দাস্য; উদাস+ষ্ণ্য= ঔদাস্য; বিপরীত+ষ্ণ্য=বৈপরীত্য; এক+ষ্ণ্য=ঐক্য; পঞ্চজন+ষ্ণ্য=পাঞ্চজন্য; পৃথক্+ষ্ণ্য=পার্থক্য; দীর্ঘ+ষ্ণ=দৈর্ঘ্য; দীন+ষ্ণ=দৈন্য; দৃঢ়+ষ্ণ্য=দার্চ; যথার্থ+ষ্ণ্য=যাথার্থ্য; চঞ্চল+ষ্ণ্য=চাঞ্চল্য; বিদগ্ধ+ষ্ণ্য=বৈদগ্ধ্য; বিলক্ষণ+ষ্ণ্য= বৈলক্ষণ্য; দুর্বল+ষ্ণ্য=দৌর্বল্য; সফল+ষ্ণ্য=সাফল্য; পর্বত+ষ্ণ্য=পার্বত্য; উজ্জ্বল+ষ্ণ্য=ঔজ্জ্বল্য; সদৃশ+ষ্ণ্য=সাদৃশ্য; সরল+ষ্ণ্য=সারল্য; লবণ+ষ্ণ্য= লাবণ্য; প্রখর+ষ্ণ্য=প্রাখর্য; নৌ+ষ্ণ্য=নাব্য; চোর+ষ্ণ্য=চোর্য; গম্ভীর+ষ্ণ্য=গাম্ভীর্য; অধিপতি+ষ্ণ=আধিপত্য; ব্রত+ষ্ণ=ব্রাত্য; সম্রাজ্+ষ্ণ্য= সাম্রাজ্য; অনুকূল+ষ্ণ্য=আনুকূল্য; সন্নিধি+ষ্ণ্য=সান্নিধ্য; দক্ষিণ+ষ্ণ্য=দাক্ষিণ্য; প্রবল+ষ্ণ্য=প্রাবল্য; মাণিক+ষ্ণ্য=মাণিক্য; ব্রহ্মচারী+ষ্ণ্য=ব্রহ্মচর্য; সেনাপতি+ষ্ণ্য=সৈনাপত্য; সোম+ষ্ণ্য=সৌম্য; সুগন্ধ+ষ্ণ্য=সৌগন্ধ্য [সৌগন্ধ]; স্থপতি+ষ্ণ্য=স্থাপত্য; ভাস্কর+ষ্ণ্য=ভাস্কর্য; কঠিন+ষ্ণ্য=কাঠিন্য।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: “কিছুতে নাহি তোষ, এ তো বিষম দোষ, গ্রাম্য বালিকার স্বভাব ও যে।’ ‘হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান্।’ ‘দুর্যোধনের স্পর্ধায় শ্রীকৃষ্ণের দৌত্য ব্যর্থ হইল।’ ‘ঋষি দুর্বাসা যুধিষ্ঠিরের আতিথ্য গ্রহণ করিলেন।’ ‘আমি সাম্যের গান গাহি।’ ‘ধন-বৈষম্যই বিশ্বের সকল অশান্তির মূল।’
২.গ. ষ্ণ্য [য]
উপাসক অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। গণপতি+ষ্ণ্য=গাণপত্য; বৃহস্পতি+ষ্ণ্য =বার্হস্পত্য।
৩. ষ্ণি [ই]
অপত্য অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। দশরথ+ষ্ণি=দাশরথি; রাবণ+ ষ্ণি=রাবণি; অর্জুন+ষ্ণি=আর্জুনি; সুমিত্রা+ষ্ণি=সৌমিত্রি; ভগীরথ+ষ্ণি +ঈ[স্ত্রী]=ভাগীরথী [ভগীরথ-আনীত নদী]; সত্যক+ষ্ণি=সাত্যকি; অরুণ+ষ্ণি =আরুণি; দ্রোণ+ষ্ণি=দ্রৌণি।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘উত্তরিলা কাতরে রাবণি।’ ‘দিব্যরথে দাশরথি পশিলা সংগ্রামে।’ ‘নাদিলা সৌমিত্রি শূর নির্ভয় হৃদয়ে।’ ‘ভাগীরথীর উভয় তীরে পঞ্চবটী ছায়াচ্ছন্ন গ্রামগুলি দাড়াইয়া আছে।’
৪. ষ্ণেয় [এয়]
অপত্য অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ প্রধানত বিশেষ্য। কুন্তী+ষ্ণেয়=কৌন্তেয়; গঙ্গা+ষ্ণেয়=গাঙ্গেয়; নিকষা+ষ্ণেয়=নৈকষেয়: বিমাত+ষ্ণেয়=বৈমাত্রেয়; ভগিনী+ষ্ণেয়=ভাগিনেয়; কৃত্তিকা+ষ্ণেয়=কার্তিকেয়; রাধা+ফেয়=রাধেয়; আত্র+ষ্ণেয়=আত্রেয়; ইতরা+ষ্ণেয়=ঐতরেয়; অম্বিকা+ষ্ণেয়=আম্বিকেয়; সরমা+ষ্ণেয়=সারমেয়; বিনতা+ষ্ণেয়=বৈনতেয়। [ভাব অর্থে] অগ্নি+ষ্ণেয়= আগ্নেয়; পুরুষ+ষ্ণেয়=পৌরুষেয়; অতিথি+ষ্ণেয়=আতিথেয়; পথ+ষ্ণেয়= পাথেয় [রাস্তা খরচঢ।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: বিসুবিয়াস এক জীবন্ত আগ্নেয় পর্বত। বেদ হিন্দুগণের নিকট অপৌরুষেয়। মহাপুরুষগণের আদর্শই আমাদের জীবন-যাত্রার পাথেয়।
৫. ষ্ণায়ণ [আয়ন]
অপত্য অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। নর+ষ্ণায়ণ=নারায়ণ; দক্ষ+ষ্ণায়ণ=দাক্ষায়ণ; বাৎস্য+ষ্ণায়ণ=বাৎস্যায়ন; [অন্যান্য অর্থে]: রামায়ণ ষ্ণায়ণ=রামায়ণ; দ্বীপ+ষ্ণায়ণ=দ্বৈপায়ন।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘এশিয়া যে নয় কুলিরই আলয় প্রমাণ করিল যেবা, কুলিতে জাগায়ে মহামানবতা নর-নারায়ণ সেবা।’ ‘রামায়ণের তুমিই মোদের বাল্মীকি আশ্রম।’
৬. ষ্ণিক [ইক]
সম্বন্ধ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। নীতি+ষ্ণিক=নৈতিক; রাষ্ট্র+ষ্ণিক=রাষ্ট্রিক; জগৎ+ষ্ণিক=জাগতিক; ন্যায়+ষ্ণিক=নৈয়ায়িক; লোক+ ষ্ণিক=লৌকিক; ভূগোল+ষ্ণিক=ভৌগোলিক; ভূমি+ষ্ণিক=ভৌমিক; শরীর+ষ্ণিক=শারীরিক; পুরাণ+ষ্ণিক=পৌরাণিক; পরলোক+ষ্ণিক= পারলৌকিক; সমাজ+ষ্ণিক=সামাজিক; ইতিহাস+ষ্ণিক=ঐতিহাসিক; পরমাণু+ষ্ণিক=পারমাণবিক; মূল+ষ্ণিক= মৌলিক; নগর+ষ্ণিক=নাগরিক; দেহ+ষ্ণিক=দৈহিক; অণু+ষ্ণিক=আণবিক; চরিত্র+ষ্ণিক=চারিত্রিক; পরত্র+ষ্ণিক=পারত্রিক; বিদ্যুৎ+ষ্ণিক=বৈদ্যুতিক; অন্তর+ষ্ণিক=আন্তরিক; বিজ্ঞান+ষ্ণিক=বৈজ্ঞানিক; দ্বার+ষ্ণিক=দৌবারিক; যোগ+ষ্ণিক=যৌগিক; গিরি+ষ্ণিক=গৈরিক; রসায়ন+ফিক=রাসায়নিক; পথ+ষ্ণিক=পথিক; অধুনা+ষ্ণিক=আধুনিক; সম্প্রতি+ষ্ণিক=সাম্প্রতিক; অত্যন্ত+ষ্ণিক= আত্যন্তিক; প্রত্যহ+ষ্ণিক=প্রাত্যহিক; বিষয়+ষ্ণিক=বৈষয়িক; রাজনীতি+ষ্ণিক=রাজনৈতিক [রাজনীতিক]; অর্থনীতি+ষ্ণিক=অর্থনৈতিক [আর্থনীতিক]; অহন্+ষ্ণিক=আহ্নিক; দিন+ষ্ণিক=দৈনিক; মাস+ষ্ণিক= মাসিক; নির্ব্যক্তি+ষ্ণিক=নৈর্ব্যক্তিক; পঞ্চবর্ষ+ষ্ণিক=পঞ্চবার্ষিক; সম্প্রদায়+ষ্ণিক=সাম্প্রদায়িক; বিদেশী+ষ্ণিক=বৈদেশিক; উপনিবেশ+ ষ্ণিক=ঔপনিবেশিক; সাম্রাজ্য+ষ্ণিক=সাম্রাজ্যিক; প্রদেশ+ষ্ণিক=প্রাদেশিক; বর্ষ+ষ্ণিক=বার্ষিক; বৎসর+ষ্ণিক=বাৎসরিক; অনুপূর্ব+ষ্ণিক=আনুপূর্বিক; পরম্পর+ষ্ণিক=পারস্পরিক; পরলোক+ষ্ণিক=পারলৌকিক; ভূত+ষ্ণিক= ভৌতিক; পঞ্চভূত+ষ্ণিক=পঞ্চভৌতিক; অধিদেব+ষ্ণিক=আধিদৈবিক; জীব+ষ্ণিক=জৈবিক; জীবন+ষ্ণিক=জৈবনিক; অধ্যাত্ম+ষ্ণিক=আধ্যাত্মিক; সত্ত+ষ্ণিক=সাত্তিক; রজঃ+ষ্ণিক=রাজসিক, তমঃ+ষ্ণিক=তামোসিক; অঙ্গ+ষ্ণিক=আঙ্গিক; অকস্মাৎ+ষ্ণিক=আকস্মিক; গ্রন্থাগার +ষ্ণিক= গ্রন্থাগারিক; অভ্যন্তর+ষ্ণিক=আভ্যন্তরিক; বেতাল+ষ্ণিক=বৈতালিক; বিতান+ষ্ণিক=বৈতনিক; বিকাল+ষ্ণিক=বৈকালিক; বেদ+ষ্ণিক=বৈদিক; উপনিষদ+ষ্ণিক=ঔপনিষদিক; মনস্+ষ্ণিক=মানসিক; ছন্দ+ষ্ণিক= ছান্দসিক; বেদান্ত+ষ্ণিক=বৈদান্তিক; শিল্প+ষ্ণিক=শৈল্পিক; সাহিত্য+ষ্ণিক= সাহিত্যিক; সংকেত+ষ্ণিক=সাংকেতিক; কাব্য+ষ্ণিক= কাব্যিক; প্রশাসন+ষ্ণিক=প্রশাসনিক; পিতৃ+ষ্ণিক=পৈতৃক [পৈত্রিক—অশুদ্ধ]; অলংকার+ষ্ণিক=আলংকারিক; মুখ+ষ্ণিক=মৌখিক; গণতন্ত্র+ষ্ণিক= গণতান্ত্রিক; সমাজতন্ত্র+ষ্ণিক=সমাজতান্ত্রিক; দ্বিপ্রহর+ষ্ণিক= দ্বিপ্রহরিক; ইহ+ষ্ণিক=ঐহিক; তত্ত্ব+ষ্ণিক; পরমার্থ+ষ্ণিক=পারমার্থিক; কায়+ষ্ণিক= কায়িক; তর্ক+ষ্ণিক=তার্কিক; মন+ষ্ণিক=মানবিক; দানব+ষ্ণিক=দানবিক; উপকূল+ষ্ণিক=ঔপকূলিক; সংঘাত+ষ্ণিক= সাংঘাতিক; প্রকৃত+ষ্ণিক= প্রাকৃতিক; পরিপার্শ্ব+ষ্ণিক=পারিপার্শ্বিক; ব্যবসায়+ষ্ণিক=ব্যবসায়িক; ধর্ম+ফিক=ধার্মিক; সংবাদ+ষ্ণিক=সাংবাদিক।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘ফেরে দ্বারে দৌবারিক।’ ‘পৌরাণিক যুগ হইতে আধুনিক কাল পর্যন্ত নানা অর্থহীন লৌকিক ক্রিয়াকাণ্ড আমাদের সামাজিক অগ্রগতিকে ব্যাহত করিয়া আসিতেছে।’ ‘বৈদেশিক শাসনমুক্ত হইয়া ভারত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পথে যাত্রা করিয়াছে।’ ‘যে বিচারক বা নৈয়ায়িক, কস্মিনকালে কেহ তাহাকে কিছু বুঝাইতে পারে না।’
৭. মতুপ, বতুপ [মান্, বান্]
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। বুদ্ধি+মতুপ=বুদ্ধিমান; আয়ুঃ+মতুপ=আয়ুষ্মান; চক্ষুঃ+মতুপ=চক্ষুষ্মান্; ধী+মতুপ=ধীমান; বিদ্যা+বতুপ=বিদ্যাবান্; রূপ+বতুপ=রূপবান; গুণ্+বতুপ=গুণবান্; শ্রী+মৎ=শ্রীমান্; বল্+বতুপ =বলবান্; শ্রদ্ধা+বতুপ=শ্রদ্ধাবান্; জ্ঞান্+বতুপ=জ্ঞানবান্; চরিত্র+বতুপ= চরিত্রবান্; পুণ্য+বতুপ=পুণ্যবান্; স্বাস্থ্য+বতুপ=স্বাস্থ্যবান্; ধন+বতুপ= ধনবান্; ভাগ্য+বতুপ=ভাগ্যবান; সার+বতুপ=সারবা; প্রজ্ঞা+বতুপ=প্রজ্ঞাবান্; সৌভাগ্য+বতুপ=সৌভাগ্যবান্; লক্ষ্মী+মতুপ=লক্ষ্মীবান্। [মূল শব্দে ‘ম’ আছে বলে মতুপ স্থানে বতুপ হয়েছে]।
বি:দ্র: মান্ ও বান্ স্থানে স্ত্রীলিঙ্গে যথাক্রমে ‘মতী’ ও ‘বতী’ হয়। যেমন: বুদ্ধিমান্—বুদ্ধিমতী স্ত্রীলিঙ্গ], গুণবান্—গুণবতী [স্ত্রীলিঙ্গ]।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘বৃথা এ সাধনা ধীমান্।’ ‘কতিপয় বুদ্ধিমান্ ও ধনবান্ ব্যক্তিই সমগ্র সমাজটাকে শাসন করিতেছে।’ ‘তাহার ন্যায় জ্ঞানবান্ এবং চরিত্রবান্ ব্যক্তি এতদঞ্চলে দুর্লভ।’ ‘আমার এ জীবনের সন্ধ্যায় প্রভাতে কাছে থাক সর্বশক্তিমান্।’
৮. ইন্ [ঈ]
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। গুণ+ইন্[ঈ]=গুণী; ধন+ইন্ [ঈ]=ধনী; প্রাণ+ইন্=প্রাণী; জ্ঞান+ইন্=জ্ঞানী; মান+ইন্=মানী; শিখা+ইন্=শিখী; ফণা+ইন্=ফণী; যোগ+ইন্=যোগী; তাম্বুল+ইন্=তাম্বুলী। তেমনি— অর্থী, দন্তী, শূলী, বলী, সঙ্গী, রোগী, ভোগী, সুখী, পক্ষী, প্রতিযোগী, অনুরাগী ইত্যাদি।
বিশিষ্ট প্রয়োগ ‘ওগো গুণী, কাছে থেকে দূরে যারা তাহাদের বাণী যেন শুনি।’ ‘যে জ্ঞানে হইয়া জ্ঞানী, মানীরে না মান মানী তাহারি খানিক।’ ‘সমাজের ধনবৃদ্ধির অর্থ ধনীর ধনবৃদ্ধি।’ ‘সীতা বিনা আমি যেন মণিহারা ফণী।’
৯. ময়ট্ [মেয়]
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। গুণ+ময়ট্=গুণময়; কৃপা+ময়ট্=কৃপাময়; মৎ+ময়ট=মন্ময়; হিরণ্য [‘য’ লুপ্তা]+ময়ট্=হিরন্ময়; চিৎ+ময়ট্=চিন্ময়; স্বর্ণ+ময়ট্=স্বর্ণময়; আলোক+ময়ট্=আলোকময়; জ্যোতিঃ+ময়ট্=জ্যোতির্ময়। তেমনি— মধুময়, ধূলিময়, জলময়, মেঘময়, হেমমম গুণময়, প্রাণময়, স্নেহময়, ছন্দোময়, শোভাময়, স্বপ্নময়, বাণীময়, মণিময়, তৃণময়, মায়াময় প্রেমময়, দুঃখময়, করুণাময়, দয়াময়, আনন্দময়, মহিমময়, মনোময়, পৃথিবীময়, বিশ্বময়, মম, অরণ্যময়, শিলাময়, প্রস্তরময় ইত্যাদি।
বিশিষ্ট প্রয়োগ ‘ওগো দয়াময়, তুমি থাক সাথে সাথে প্রাণে বল করহ বিধান।’ ‘সকলি কি স্বপ্নময় মায়াময় ছায়া দিয়ে লেখা?’ ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়।’ ‘এ দ্যুলোক মধুময়, মধুময় পৃথিবীর ধূলি।’ ‘অপরা তাপসী কুটীর হইতে মৃন্ময় ময়ূর আনয়ন করিলেন।’
১০. বিন্ [বী]
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। যশস্+বিন্=যশস্বী; মায়া+বিন্=মায়াবী; তেজস্+বিন্=তেজস্বী। তেমনি— মেধাবী, তপস্বী, ওজস্বিনী [ভাষা], স্রোতস্বিনী (নদী)।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘মায়াবী মারীচ সোনার হরিণের বেশ ধারণ করিয়া কুটিরের সম্মুখে খেলা করিতে লাগিল।’ ‘তিনি ওজস্বিনী ভাষায় বক্তৃতা করিতে লাগিলেন।’
১১. তা
‘গুণ, বৃত্তি, কার্য’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। মানব+তা=মানবতা; শিক্ষক+তা=শিক্ষকতা; মৃদু+তা=মৃদুতা; কোমল+তা=কোমলতা; দুর্বল+তা= দুর্বলতা; সৎ+তা=সত্তা; সাধু+তা=সাধুতা; কঠোর+তা=কঠোরতা; কুটিল+তা=কুটিলতা; জটিল+তা=জটিলতা; বাচাল+তা=বাচালতা; ফেনিল+তা=ফেনিলতা; মলিন+তা=মলিনতা; প্রবীণ+তা=প্রবীণতা; নবীন+তা=নবীনতা; শ্যামল+তা=শ্যামলতা; নমনীয়তা=নমনীয়তা; কমনীয়তা=কমীয়তা; ন+তা=নম্রতা ; ভদ্র+ত=ভদ্রতা ;, সভ্যতা=সভ্যতা ; মধুর+তা=মধুরতা; সরল+তা=সরলতা; গভীর+তা=গভীরতা; সম+তা= সমতা; চঞ্চল+তা=চঞ্চলতা; মম+তা=মমতা; জন+তা=জনতা; বন্য+তা=বন্যতা; উদাসীন+তা=উদাসীনতা; বিবর্ণ+তা=বিবর্ণতা; কদর্য+তা= কদর্যতা; সম্পূর্ণ+তা=সম্পূর্ণতা; ক্ষুদ্র+তা=ক্ষুদ্রতা; সাম্প্রদায়িক+তা= সাম্প্রদায়িকতা; বদান্য+তা=বদান্যতা; উজ্জ্বল+তা=উজ্জ্বলতা; প্রসন্ন+তা= প্রসন্নতা; আধ্যাত্মিক+তা=আধ্যাত্মিকতা; পৈশাচিক+তা=পৈশাচিকতা; সাংবাদিক+তা=সাংবাদিকতা; আধুনিক+তা=আধুনিকতা; আন্তরিক+তা= আন্তরিকতা; পাশবিক+তা=পাশবিকতা; অনিত্য+তা=অনিত্যতা; অনির্বচনীয় +তা=অনির্বচনীয়তা; বিভিন্ন+তা=বিভিন্নতা; বিশিষ্ট+তা=বিশিষ্টতা; দরিদ্রতা দরিদ্রতা; বিষণ্ন+তা=বিষণ্নতা; জাতীয়+তা=জাতীয়তা; আত্মীয়+তা= আত্মীয়তা; অক্ষম+তা=অক্ষমতা; অপদার্থ+তা=অপদার্থতা; রমণীয়+তা= রমণীয়তা; ধর্মান্ধ+তা=ধর্মান্ধতা; বৈষয়িক+তা=বৈষয়িকতা; চরিতার্থ+তা= চরিতার্থতা, সার্থক+তা=সার্থকতা; সফল+তা=সফলতা; বিফল+ত= বিফলতা; প্রসার+তা=প্রসারতা; অসার+তা=অসারতা; পবিত্র+তা=পবিত্রতা; স্বাদু+তা=স্বাদুতা; মুখর+তা=মুখরতা; বিস্তীর্ণ+তা=বিস্তীর্ণতা, রুক্ষ+তা= রুক্ষতা; শুষ্ক+তা=শুষ্কতা; বিশাল+তা=বিশালতা; স্বাধীন+তা=স্বাধীনতা; চতুর+তা=চতুরতা; স্বাধীন+তা=স্বাধীনতা; পরাধীন+তা=পরাধীনতা; সাহসিক+তা=সাহসিকতা; দুর্গম+তা=দুর্গমতা; বন্ধুর+তা=বন্ধুরতা; দুর্বল+তা=দুর্বলতা; প্রতিযোগী+তা=প্রতিযোগিতা; সহযোগী+তা =সহযোগিতা। [বানান লক্ষ করো]।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা, হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা।’ ‘জ্ঞানের দীনতা এই আপনার মনে পূরণ করিয়া লই যত পারি ভিক্ষা-লব্ধ ধনে।’ ‘ফেনিলতা উচ্ছলতা হয়ে যায় তুচ্ছ কথা, কলরব সকলি মিলায়।’ ‘কঠোরতা ও কোমলতা উভয় গুণের আধাররূপে তিনি লোকসমক্ষে প্রতীয়মান হয়েন।’
১২. ত্ব
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। কবি+ত্ব=কবিত্ব; গুরু+ত্ব=গুরুত্ব; লঘু+ত্ব=লঘুত্ব; প্রভু+ত্ব=প্রভুত্ব; পশু+ত্ব=পশুত্ব; দেব+ত্ব=দেবত্ব; রাজা+ত্ব=রাজত্ব; ব্যক্তি+ত্ব=ব্যক্তিত্ব; মম+ত্ব=মমত্ব; কর্তৃ+ত্ব=কর্তৃত্ব; মনুষ্য+ত্ব=মনুষ্যত্ব; মহৎ+ ত্ব=মহত্ত্ব; কৃতি+ত্ব=কৃতিত্ব; স্ব+ত্ব=স্বত্ব; সৎ+ত্ব=সত্ত্ব; তৎ+ত্ব=তত্ত্ব; সাধু+ত্ব =সাধুত্ব; অমর+ত্ব=অমরত্ব; বন্ধু+ত্ব=বন্ধুত্ব; অন্ধ+ত্ব=অন্ধত্ব; নেতৃ+ত্ব=নেতৃত্ব; পিতৃ+ত্ব=পিতৃত্ব; মাতৃ+ত্ব=মাতৃত্ব; ভ্রাতৃ+ত্ব=ভ্রাতৃত্ব; স্বামী+ত্ব=স্বামিত্ব [বানান লক্ষ কর]; আমি+ত্ব=আমিত্ব; সতী+ত্ব=সতীত্ব; বিশাল+ত্ব=বিশালত্ব; বিপুল+ত্ব=বিপুলত্ব; দূর+ত্ব=দূরত্ব; বীর+ত্ব=বীরত্ব; ভীরু+ত্ব=ভীরুত্ব; নিজ+ত্ব=নিজত্ব ; নারী+ত্ব=নারীত্ব; নূতন+ত্ব=নূতনত্ব; অভিনব+ত্ব=অভিনবত্ব; হিন্দু+ত্ব=হিন্দুত্ব; জাতি+ত্ব=জাতিত্ব; জ্ঞাতি+ত্ব= জ্ঞাতিত্ব।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘দুঃখের সম্মুখে আসিবামাত্র তাঁহার ব্যক্তিত্ব একেবারে অভিভূত হইয়া পড়িত।’ ‘দুঃখের অস্তিত্ব দেখিলেই বিদ্যাসাগর তাহার কারণানুসন্ধানের অবসর পাইতেন না।’ ‘নাহি বর্ণনার ছটা, ঘটনার ঘনঘটা, নাহি তত্ত্ব, নাহি উপদেশ।’ ‘রাজত্বের অর্থ মহৎ প্রভুত্ব।’ ‘গ্রন্থটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।’ ‘ঈশ্বর সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ— এই তিনগুণের অতীত।’
১৩. ঈয়
‘সম্বন্ধ’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। জল+ঈয়=জলীয়; বাষ্প+ঈয়=বাষ্পীয়; বায়ু+ঈয়=বায়বীয়; দেশ+ঈয়=দেশীয়; জাতি+ঈয়=জাতীয়; স্ব+ঈয়=স্বীয়; তৎ+ঈয়=তদীয় [তাহার]; ত্বৎ+ঈয়=ত্বদীয় [তোমার]; মৎ+ঈয়=মদীয়; ভবৎ+ঈয়=ভবদীয়; আত্ম+ঈয়=আত্মীয়; পর [+ক]+ঈয়=পরকীয়; স্বর্গ+ঈয়= স্বর্গীয়; বঙ্গ+ঈয়=বঙ্গীয়; শরৎ+ঈয়=শারদীয়; রাষ্ট্র+ঈয়=রাষ্ট্রীয়; বর্গ+ঈয় =বগীয়; পর্ব+ঈয়=পর্বীয়; ভারত+ঈয়=ভারতীয়; য়ুরোপ+ঈয়=য়ুরোপীয়; স্ব [ক]+ঈয়=স্বকীয়; দেশ+ঈয়=দেশীয়; উচ্চবর্ণ+ঈয়=উচ্চবর্ণীয়; ভারতবর্ষ+ঈয়=ভারতবর্ষীয়; কাকতাল+ঈয়=কাকতালীয়; রাজ [ক]+ঈয়= রাজকীয়; ধর্ম+ঈয়=ধর্মীয়; মানব+ঈয়=মানবীয়; দানব+ঈয়=দানবীয়; বর্ষ+ঈয়=বর্ষীয়; দল+ঈয়=দলীয়; স্থান+ঈয়=স্থানীয়; নাটক+ঈয়=নাটকীয়; রবিবাসর+ঈয়=রবিবাসরীয়; শত্রুপক্ষ+ঈয়=শত্রুপক্ষীয়; নরক+ঈ=নারকীয়; মূল+ঈয়=মূলীয়; সম্বন্ধ+ঈয়= সম্বন্ধীয়; সম্পর্ক+ঈয়=সম্পর্কীয়; গৌড়+ঈয়= গৌড়ীয়।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘সুপবন বহিতেছে দেখিয়া জাতীয় পতাকা উড়াইয়া দাও।’ ‘সেই পথ লক্ষ করে স্বীয় কীর্তিধ্বজা ধরে আমরাও হব বরুণীয়।’ ‘একত্বে বরেণ্য তুমি, শরণ্য এককে— আত্মার আত্মীয়।’ ‘বঙ্গীয় ১৩০০ সনের ২৬শে চৈত্র সাহিত্য-সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র পরলােক গমন করেন।’
১৪. ঈন
‘ভাব’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। গ্রাম+ঈন=গ্রামীণ; কুল+ঈন=কুলীন; প্রাচ্+ঈন=প্রাচীন; সর্বাঙ্গ+ঈন=সর্বাঙ্গীণ, সর্বজন+ঈন=সার্বজনীন বা সর্বজনীন; কাল+ঈন=কালীন; কন্যা+ঈন=কানীন, শালা [আলয়া] +ঈন=শালীন; তৎকাল+ঈন=তৎকালীন; অর্বাচ+ঈন=অর্বাচীন; সম্মুখ+ঈন= সম্মুখীন; অভ্যন্তর+ঈন=অভ্যন্তরীণ [আভ্যন্তরীণ—অশুদ্ধ]; নব+ঈন=নবীন; বিশ্বজন+ঈন=বিশ্বজনীন।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘এখন পল্লীতে পল্লীতে সর্বজনীন পূজার প্রচলন দেখা যায়।’ ‘প্রাচীন ভারতে সার্বজনীন শিক্ষার ছিল অবারিত দ্বার।’ ‘গ্রামীণ শিল্পের উন্নতি ব্যতীত গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নতি সম্ভব নয়।’ ‘পরম কুলীন স্বামী ব্যবংশখ্যাত।’ ‘কর্ণ ছিলেন কুন্তীর কানীন পুত্র।’
১৫. ঈয়স্, -ইষ্ঠ
‘তারতম্য’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। লঘু+ঈয়স্=লঘীয়স্, লঘীয়ান্। গুরু+ঈয়স্=গরীয়স্, গরীয়ান্ [গরীয়সী]; গুরু+ইষ্ঠ=গরিষ্ঠ; লঘু+ইষ্ঠ=লঘিষ্ঠ; বৃদ্ধ+ইষ্ঠ=জ্যেষ্ঠ; যুবা+ইষ্ঠ=কনিষ্ঠ; মহৎ+ঈয়স্=মহীয়স্, মহীয়ান [মহীয়সী]; বলবৎ+ঈয়স্=বলীয়স্, বলীয়ান্; বল+ইষ্ঠ=বলিষ্ঠ; বহু+ঈয়স্=ভূয়স্ [ভূয়সী]; প্রিয়+ঈয়স্=প্রেয়ান; প্রেয়স্ [প্রেয়সী]; প্রশস্য+ঈয়স=শ্রেয়ান [শ্রেয়সী]; প্রশস্য+ইষ্ঠ=শ্রেষ্ঠ [শ্রেষ্ঠা]; বৃদ্ধ+ঈয়স=বর্ষীয়ান্ [বর্ষীয়সী]।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘জননী ও জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও গরীয়সী।’ ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ দলই সরকার গঠন করিবে।’ ‘মৃত্যুকালে তাহার জ্যেষ্ঠ কিংবা কনিষ্ঠ পুত্র কেহই কাছে ছিল না।’ ‘তিনি তোমার আচরণের ভূয়সী প্রশংসা করিয়াছেন।’
১৬. তর, -তম
‘তারতম্য’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। লঘু+তর=লঘুতর; লঘু+তম=লঘুতম; বৃহৎ+তর=বৃহত্তর; বৃহৎ+তম=বৃহত্তম; মহৎ+তর=মহত্তর; মহৎ+তম=মহত্তম; গুরু+তর=গুরুতর; গুরু+তম=গুরুতম; প্রিয়+তর= প্রিয়তর; প্রিয়+তম=প্রিয়তম। তেমনি দীর্ঘতর, দীর্ঘতম; ক্ষুদ্রতর, ক্ষুদ্রতম; দ্রুততর, দ্রুততম; উজ্জ্বলতর, উজ্জ্বলতম; প্রাচীনতর, প্রাচীনতম; নূতনতর, নূতনতম; উন্নততর, উন্নততম; উচ্চতর, উচ্চতম; বলবত্তর, বলবত্তম।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘আমি তো দেখি না এর বেশী কিছু গুরুতর অপরাধ।’ ‘তাহার কর্মক্ষেত্র তোমার কর্মক্ষেত্রের চেয়েও বৃহত্তর।’ ‘যে শয্যায় শুয়েছ কুমার, প্রিয়তম, বীরকুলসাধ এ শয়নে সদা।’
১৭. ডামহ [মহ]
‘জাত’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। পিতা+ডামহ=পিতামহ; মাতা+ডামহ=মাতামহ।
বিশিষ্ট প্রয়োগ : ‘মোদের পিতৃ-পিতামহের চরণধূলি কোথায় রে?’
১৮. ইতচ্ [ইত]
‘জাত’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। ত্বরা+ইতচ্=ত্বরিত; লজ্জা+ইতচ্=লজ্জিত; মূর্ছা+ইতচ্=মূৰ্ছিত; পুষ্প+ইতচ্=পুষ্পিত। তেমনি—ফলিত, তরঙ্গিত, কল্লোলিত, পুঞ্জিত, মন্দ্রিত, মুকুলিত, কুসুমিত, বিকশিত, হিল্লোলিত, পিপাসিত, পণ্ডিত [পণ্ডা+ইতচ্] ইত্যাদি।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘বর্ষণ-গীত হল মুখরিত মেঘমন্দ্রিত ছন্দে।’ ‘ত্বরিতে নামায় পাল নদীপথে ত্রস্ত তরী যত।’ ‘মুকুলিত জীবনের রেণুগুলি রয়েছে ছড়ানো ও-পথের ধূলি ’পরে।’ ‘তারুণ্যের সোনার স্বপন কর্ণিকার শাখে শাখে হয়ে আছে পুষ্পিত কাঞ্চন।’ ‘ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান।’ ‘বিকশিত বিশ্ববাসনার অরবিন্দ-মাঝখানে পাদপদ্ম রেখেছ তোমার।’ ‘যার লাগি ফিরি একা একা আঁখি পিপাসিত নাহি দেখা।’
১৯. ইমন্ [ইম]
‘ভাব’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। লঘু+ইমন্=লঘিমা; চন্দ্র+ইমন্=চন্দ্রিমা; নীল+ইমন্=নীলিমা; রক্ত+ইমন্=রক্তিমা; শ্যামল+ইমন্=শ্যামলিমা; গুরু +ইমন্=গরিমা; মধুর+ইমন্=মধুরিমা; অণু+ইমন্=অণিমা; দীর্ঘ+ইমন্= দ্রাঘিমা; মহৎ+ইমন্=মহিমা; তনু+ইমন্=তনিমা; কালি+ইমন্=কালিমা; জড়+ইমন্=জড়িমা; শোণ্+ইমন্=শোণিমা। [স্বার্থে] : বহু+ইমন্=ভূমা। কিন্তু রক্ত+ইমন্=রক্তিম [বিশেষণ], রক্তিমা [বিশেষ্য]।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘শ্যামলে শ্যামল তুমি নীলিমায় নীল।’ ‘শোকের কালিমা যুগ যুগ ধরি তোমার আঁধার দিয়াছে যে গড়ি।’ ‘হেথা মত্ত স্ফীতস্ফূর্ত ক্ষত্রিয়-গরিমা, হোথা স্তব্ধ মহামৌন ব্রাহ্মণ-মহিমা।’ ‘জগতের অশ্রুধারে ধৌত তব তনুর তনিমা, ত্রিলোকের হৃদি-রক্তে আঁকা তব চরণ-শোণিমা।
২০. আল, -ল
‘আছে’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। রস+আল=রসাল; পাংশু+ল= পাংশুল; মাংস+ল=মাংসল; শ্যাম+ল=শ্যামল; শীত+ল=শীতল; ধূম+ল=ধূমল; বহু+ল=বহুল; পিঙ্গ+ল=পিঙ্গল; শ্রী+ল=শ্রীল; কুশ+ল=কুশল; বৎস+ল= বৎসল; পেশ+ল=পেশল; মঞ্জু+ল=মঞ্জুল; মৃদু+ল=মৃদুল; উর্মি+ল=উর্মিল।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘রসাল ভূতলে পড়ি, হায়, বায়ুবলে হারাইলা আয়ুসহ দর্প বন-স্থলে।’ ‘শ্যামল সঘন নববরষার কিশোর দূত কি এলে?’ ‘ধূসর পাংশুল মাঠ, ধেনুগণ ধায় ঊর্ধ্বমুখে।’ ‘পশ্চিমে বিচ্ছিন্ন মেঘে সায়াহ্নের পিঙ্গল আভাস রাঙাইছে আঁখি।’
২১. ইল
‘অস্ত্যর্থে’ নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। পিচ্ছা+ইল=পিচ্ছিল; ফেন+ইল=ফেনিল; সর্প+ইল=সর্পিল; জটা+ইল=জটিল; পঙ্ক+ইল=পঙ্কিল; কুট+ইল=কুটিল; শঙ্কা+ইল=শঙ্কিল।
বিশিষ্ট প্রয়োগ ‘তোমার মোহন এল ভীষণ বেশে, আকাশ-ঢাকা জটিল কেশে।’ ‘ঘোর কুটিল পন্থ তার, লোভ-জটিল বন্ধ।’ ‘তহি অতি শঙ্কিল, পঙ্কিল বাট।’ ‘মন্ত্রমুগ্ধ চরণে ফেনিল জলধি গরজে জলদমন্দ্র।’
২২. র
‘অন্ত্যর্থে’ নিষ্পন্ন শব্দ প্রধানত বিশেষণ। মধু+র=মধুর; মুখ+র=মুখর; নখ+র=নখর; পাণ্ডু+র=পাণ্ডুর; উষ+র=উষর; নগ+র=নগর; ধূম+র=ধূম্র।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘আজি কী তোমার মধুর মুরতি হেরিনু শারদ প্রভাতে!’ ‘এবার নীরব করে দাও হে তোমার মুখর কবিরে।’ ‘যৌবনে সাহায্যে কার নগর পত্তন?’
২৩. তন
‘ভাব’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। পুরা+তন=পুরাতন; সনা+তন=সনাতন; চিরম্+তন=চিরন্তন; নব+তন=নবতন>নূতন; সায়ম্+তন=সায়ন্তন তদানীম+তন=তদানীন্তন; অদ্য+তন=অদ্যতন; পূর্ব+তন=পূর্বতন; ইদানীম+তন=ইদানীন্তন; নক্তম+তন=নক্তন্তন; অধঃ+তন=অধস্তন, ঊর্ধ্ব+তন=ঊর্ধ্বতন; প্রাক্+তন=প্রাক্তন।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘নূতন করিয়া লহ আর বার চিরপুরাতন মোরে।’ ‘সায়ন্তনের ক্লান্ত ফুলের গন্ধ হাওয়ার পরে অঙ্গবিহীন আলিঙ্গনে সকল অঙ্গ ভরে।’ ‘বাংলায় কৃষক-সমাজের দাবি চিরন্তন।’ ‘সনাতন ভারতীয় রীতিতে তাহারা আমাদিগকে সংবর্ধনা জানাইলেন।’
স্বার্থিক প্রত্যয়
যে শব্দ-প্রত্যয় প্রকৃতি বা প্রাতিপদিকের অর্থের কোনরূপ পরিবর্তন সাধন করে না, তাকে স্বার্থিক প্রত্যয় বলে। যেমন: দেব+তা [স্বাৰ্থিক]= দেবতা।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘দেবতারে প্রিয় করি প্রিয়েরে দেবতা।’
বাংলা শব্দ-প্রত্যয় বা তদ্ধিত-প্রত্যয়
২৪. ঈ
‘আছে’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। দাম+ঈ=দামী; ভার+ঈ=ভারী, দরদ+ঈ=দরদী; মরম+ঈ=মরমী; গরম+ঈ=গরমী [গর্মি]। ‘উৎপন্ন’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ: দেশ+ঈ=দেশী; বিলাত+ঈ=বিলাতী; বিহার+ঈ=বিহারী; জাপান+ঈ=জাপানী; বৃন্দাবন+ঈ=বৃন্দাবনী; কামরূপ+ঈ= কামরূপী; কটক+ঈ=কটকী; পঞ্জাব+ঈ=পাঞ্জাবী; গুজরাট+ঈ=গুজরাটী; মাদ্রাজ+ঈ=মাদ্রাজী; শান্তিপুর+ঈ=শান্তিপুরী; কাশ্মীর+ঈ=কাশ্মীরী; জৌনপুর+ঈ=জৌনপুরী; বেনারস+ঈ=বেনারসী। ‘নিপুণ’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ: সেতার+ঈ=সেতারী; শিকার+ঈ=শিকারী; ধ্রুপদ+ঈ=ধুপদী; হিসাব+ঈ=হিসাবী; মজলিস+ঈ=মজলিসী। ‘জীবিকা’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য: চাষ+ঈ=চাষী; ঢাক+ঈ=ঢাকী; ঢোল+ঈ=ঢুলী; তেল+ঈ=তেলী; করাত+ঈ=করাতী। ‘উপাদান’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ: রেশম+ঈ=রেশমী; সূতা+ই=সূতী। ‘সম্বন্ধ’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য: পসার+ঈ=পসারী; দোকান+ঈ=দোকানী; কয়েদ+ঈ==কয়েদী; ভাড়ার+ঈ= ভাড়ারী। [বিশেষণ অর্থে] বাদাম+ঈ=বাদামী; আসমান+ঈ= আসমানী; জাফরান+ঈ=জাফরানী; প্রণাম+ঈ=প্রণামী; নমস্কার+ঈ=নমস্কারী; আশীর্বাদ+ঈ=আশীর্বাদী; সেলাম+ঈ=সেলামী; দর্শন+ঈ=দর্শনী।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘বাদল করেছে, গর্মি আর নেই।’ ‘চাষী উপবাসী থাকিতে না দেয়, নট তারে তোষে নৃত্যে গানে।’ ‘তাঁতী, তিলি, মালী সমান ভালো।’ ‘জাপানীরা ফুল খুব ভালোবাসে।’ ‘দোকানী পসারীরা আজ হাটে যায় নাই।’ ‘শালওয়ালারা ভাল ভাল কাশ্মীরী ‘শাল ও রুমাল লইয়া আসিত।’ ‘পশ্চিমী ক্ষেত্রীরা বেনারসী ও চেলীর জোড় লইয়া উপস্থিত হইত।’
২৫. আই
‘উৎপন্ন’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। ঢাকা+আই=ঢাকাই; খাগড়া+আই খাগড়াই, পাটনা+আই=পাটনাই; মোগল+আই=মোগলাই। ‘আদরার্থে’ নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ [কৃষ্ণ>] কান+আই=কানাই; বল+আই=বলাই; নিম+আই=নিমাই; নিত+আই=নিতাই। তেমনি—জগাই, মাধাই। ‘ভাব’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য: জেঠ+আই=জেঠাই; বড়+আই=বড়াই; খাড়া+আই=খাড়াই, উতর+আই=উতরাই; ‘সম্বন্ধ’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য: বোন+আই=বোনাই; ননদ+আই=নন্দাই; বোঝা+আই=বোঝাই। ‘কর্ম’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য বা বিশেষণ দুই-ই হয়: চোর+আই= চোরাই; সাফ+আই=সাফাই; কাম+আই=কামাই; বাধ+আই=বাধাই। বাছ+আই=বাছাই।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘পরনে ঢাকাই শাড়ি কপালে সিঁদুর।’ ‘আঙিনায় কানাই বলাই রাশি করে সরিষা কলাই।’ ‘বাঙালীর হিয়া অমিয় মথিয়া নিমাই ধরেছে কায়া।’ ‘কুঁড়েঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই।’ ‘কুমোর-পাড়ার গোরুর গাড়ি বোঝাই করা কলসী হাড়ি।’ ‘অত কামাই করলে ওপরওয়ালারা তোমাকে কিন্তু ছাঁটাই করে দিতে পারে।’
২৬. আমি [আমো]
‘ভাব’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। পাকা+আমি [আমো]=পাকামি [পাকামো]; পাগল+আমি [আমো]=পাগলামি [পাগলামো], জেঠা+আমি [আমো]=জেঠামি [জেঠামো], ভণ্ড+আমি [আমো]=ভণ্ডামি [ভণ্ডামো], ধূর্ত+আমি [আমো]=ধূর্তামি [ধূর্তামো], বোকা+আমি [আমো]=বোকামি [বোকামো], ন্যাকা+আমি [আমো]=ন্যাকামি [ন্যাকামো], ভাড়+আমি [আমো]=ভাড়ামি [ভাড়ামো], বাদর+আমি [আমো]=বাদরামি [বাদরামো]। তেমনি, দুষ্টামি [দুষ্টুমি=দুষ্ট+উমি), নষ্টামি, ফাজলামি ইত্যাদি।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘থাক, তোমাকে আর পাকামো করতে হবে না।’ শিকলদেবীর এই যে পূজাবেদী—চিরকাল কি রইবে খাড়া? —পাগলামি, তুই আয়রে দুয়ার ভেদি।’ ‘বক-ধার্মিকদের ভণ্ডামি সহ্য করা যায় না।’ ‘তুমি আর জেঠামি করো না।’
২৭. আরি, আরী
আরি
‘প্রকার’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য ও বিশেষণ দুই-ই হয়। মাঝ+আরি=মাঝারি; কাট+আরি=কাটারি; ভুখ+আরি=ভুখারি; রকম+আরি=রকমারি।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘ভুখারি ফিরিয়া চলে।’ ‘কাল রাতে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হয়েছে।’
আরী
‘কর্ম’ অর্থে নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। ভিখ+আরী=ভিখারী; কাঁসা+আরী=কাঁসারী; পূজা+আরী=পূজারী; শাঁখা+আরী=শাঁখারী; ঝি+আরী= ঝিয়ারী; দিশ+আরী=দিশারী।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘তুমি মোরে, হে ভিখারী, মার কাছ হতে কাড়ি করেছ আপন অনুচর।’ ‘শাঁখারী ‘শাখা চাই’ ‘শাখা চাই’ বলিয়া ডাকিয়া গেল।’ ‘পূজারী পূজায় বসিলেন।’
২৮. উয়া [>ও]
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। ভাত+উয়া=ভাতুয়া>ভেতো; মাঠ+উয়া=মাঠুয়া>মেঠো; মাছ+উয়া=মাছুয়া>মেছো; গাছ+উয়া=গাছুয়া>গেছো; পট+উয়া=পটুয়া>পটো; কাঠ+উয়া=কাঠুয়া>কেঠো; ঝড়+উয়া=ঝড়ুয়া>ঝড়ো; জল+উয়া= জলুয়া>জলো; গোফ+উয়া=গোফুয়া>গুফো।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘সকাল থেকে ঝড়ো হাওয়া বইছে।’ ‘মেঠো সুরে গান গেয়ে ধান কাটছে চাষী।’ ‘ঘরের খড়ো চাল কততক্ষণ আর ঝড়ের দাপট সইতে পারে?’ ‘বেতো ঘোড়াটাকে গাড়ীতে জুড়ে দিয়ে ভূতপূর্ব জমিদারবাবু মাঝে মাঝে হাওয়া খেতে বেরোন।’ ‘আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনেক বেনো জল ঢুকে পড়েছে।’
২৯. টিয়া [>টে]
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। তুলা+ট=তুলট; ধুলা+ট=ধুলট; দাপট=দাপট; ঝাপ+ট=ঝাপট; তামা+টিয়া=তামাটিয়া>তামাটে; সাদা+টিয়া= সাদাটিয়া>সাদাটে; পাগলা+টিয়া=পাগলাটিয়া>পাগলাটে, ঝগড়া+টিয়া ঝগড়াটিয়া>ঝগড়াটে; ঘোলা+টিয়া=ঘোলাটিয়া>ঘোলাটে; ধোঁয়া+টিয়া= ধোঁয়াটিয়া; ভাড়া+টিয়া=ভাড়াটিয়া>ভাড়াটে; রোগা+টিয়া=রোগাটিয়া> রোগাটে। ‘ট’-প্রত্যয় যোগে নিষ্পন্ন শব্দ কিন্তু বিশেষ্য।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘তিনি ছিলেন ডাকসাইটে জমিদার; তার দাপটে বাঘে-গোরুতে একঘাটে জল খেত।’ ‘পাখি যেন মারিতেছে ডানার ঝাপট।’ ‘রোদ্দুরে পুড়ে পুড়ে তার গায়ের রং তামাটে হয়ে গেছে।’ ‘ভাড়াটে কুঠি! নদীর স্রোতের জঞ্জাল সম আসিয়া জুটি।’
৩০. পনা
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। গুণ+পনা=গুণপনা; গৃহিণী+পনা=গৃহিণীপনা; গিন্নী+পনা=গিন্নীপনা; দুরন্ত+পনা=দুরন্তপনা; বীর+পনা=বীরপনা; বেহায়া+পনা=বেহায়াপনা; হ্যাংলা+পনা=হ্যাংলাপনা।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘নিমাইর দুরন্তপনায় সারা নবদ্বীপ তখন অস্থির।’ ‘মুখে যা নয় তাই বলা— ওটা ওর গুণপনা নয়, বেহায়াপনা।’ ‘এতটুকু মেয়ে ঝর্ণার গিন্নিপনা দেখে বাবা তো অবাক।’
বিদেশী তদ্ধিত-প্রত্যয়
কতকগুলি বিদেশী শব্দ [বিশেষত ফারসী] তদ্ধিতরূপে বাংলায় ব্যবহৃত হয়। তাদের বিদেশী তদ্ধিত-প্রত্যয় বলা হয়। যেমন:
ওয়ান: নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। কোচ+ওয়ান=কোচোয়ান; গাড়ী+ওয়ান=গাড়োয়ান; দ্বার [>দার]+ওয়ান=দারোয়ান; পাল+ওয়ান= পালোয়ান।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘কোচোয়ান গাড়িতে উঠিয়া মনের আনন্দে গান গাহিতে লাগিল।’ ‘গাড়োয়ান তাহার লাইসেন্সের পদক গলায় ঝুলাইয়া মালখানার দ্বারে চোখ মুছিতেছে।’
আনি
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। তল+আনি=তলানি; [অম্ল>] আম+আনি=আমানি; বাবু+আনি=বাবুয়ানি; হিদু+আনি=হিদুয়ানি; কাতর+আনি=কাতরানি; নাক+আনি=নাকানি।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘তারা নিজে নিজেই আগেকার দিনের তলানি নিয়ে কোনোমতে একটু সান্ত্বনা পাবার চেষ্টা করে।’ ‘আমানি খাবার গর্ত দেখ বিদ্যমান।’ ‘আজ মহরম, নিখিল মুসলিম-জগতের ক্রন্দন-কাতরানির দিন।
আনা
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। বাবু+আনা=বাবুয়ানা; গরিব+আনা=গরিবানা। [চাল]; মুনশী+আনা=মুন্শীয়ানা; মালিক+আনা=মালিকানা; মুরুব্বি+আনা= মুরুব্বিয়ানা; ঘর+আনা=ঘরানা; সাল+আনা=সালিয়ানা; সাহেব+আনা= সাহেবিয়ানা।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: কাহিনী বর্ণনায় তার মুনশীয়ানা সত্যি প্রশংসনীয়।’ ‘বড়ে গোলাম আলি লক্ষ্ণেী-ঘরানার গায়ক।’ জমির মালিকানা কৃষকদেরই থাকবে।
ন্দাজ
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। তীর+ন্দাজ=তীরন্দাজ; বরক+ন্দাজ=বরকন্দাজ; গোলা+ন্দাজ=গোলন্দাজ।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘বর আর বরকন্দাজ কি এক হলো?’ ‘তারপর গোলন্দাজ বাহিনী অগ্রসর হইতে লাগিল।’
খানা
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। ডাক্তার+খানা=ডাক্তারখানা; পিল+খানা=পিলখানা; তোশা+খানা=তোশাখানা; বৈঠক+খানা=বৈঠকখানা; চিড়িয়া+খানা= চিড়িয়াখানা; জেল+খানা=জেলখানা; কয়েদখানা=কয়েদখানা; কবর+খানা= কবরখানা; কার+খানা=কারখানা; ছাপা+খানা=ছাপাখানা; মুদি+খানা= মুদিখানা; মাল+খানা=মালখানা।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘ভিড় এখন সবখানেই; ডাক্তারখানায় ভিড়, বৈঠকখানায় ভিড়, চিড়িয়াখানায় ভিড়, মালখানার দরজায় ভিড়, এমনকি কয়েদখানায়ও ভিড়।’
খোর
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। সুদ+খোর=সুদখোর; মুনাফা+খোর=মুনাফাখোর; নেশা+খোর=নেশাখোর; গাঁজা+খোর=গাঁজাখোর; ঘুষ+খোর=ঘুষখোর; চশম+খোর=চশমখোর; গুলি+খোর=গুলিখোর; আফিম+খোর=আফিমখোর।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘সুদখোর মহাজনেরা দীর্ঘকাল কৃষকদের শোষণ করেছে।’ ‘এখন চারদিকে মুনাফাখোর আর ঘুষখোরদেরই তো রাজত্ব।’
ওয়ালা
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। কাবুলি+ওয়ালা=কাবুলিওয়ালা; রিকশা+ওয়ালা =রিকশাওয়ালা; ফুল+ওয়ালা=ফুলওয়ালা; ফেরি+ওয়ালা=ফেরিওয়ালা; বাড়ি+ওয়ালা=বাড়িওয়ালা; ঘড়ি+ওয়ালা=ঘড়িওয়ালা; বাসন+ওয়ালা= বাসনওয়ালা; বাঁশি+ওয়ালা=বাঁশিওয়ালা; দই+ওয়ালা=দইওয়ালা; ফুল+ওয়ালা [স্ত্রী]=ফুলওয়ালী; চুড়ি+ওয়ালী [স্ত্রী]=চুড়িওয়ালী।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘এমন-কি বেদানার বস্তা লইয়া বিদেশী কাবুলিওয়ালা পর্যন্ত বাদ যাইত না।’ ‘ফেরিওয়ালা যাচ্ছে ফেরি নিয়ে।’
সই
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। গলা+সই=গলাসই [জল]; মাপ+সই=মাপসই; টেক+সই=টেকসই; চলন+সই=চলনসই; পছন্দ+সই=পছন্দসই; যুত+সই= যুতসই; মানানসই=মানানসই; দশা+সই=দশাসই।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘কলমটা মোটামুটি চলনসই হয়েছে।’ ‘সে বেশ পছন্দসই কাপড় কিনেছে।’ ‘কাপড়খানা মনে হয় বেশ টেকসই হবে।’ ‘রায়বাবু ছিলেন দশাসই চেহারার মানুষ।’
বাজ [দক্ষ]
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ; বাজি [দক্ষতা] ও নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। বক্তৃতা+বাজ=বক্তৃতাবাজ; চাল+বাজ=চালবাজ; মামলা+বাজ=মামলাবাজ; ফন্দী+বাজ=ফন্দীবাজ; ফাঁকি+বাজ=ফাঁকিবাজ; দাঙ্গা+বাজ=দাঙ্গাবাজ; গল্প+বাজ=গল্পবাজ; মতলব+বাজ=মতলববাজ; দাও+বাজ=দাওবাজ; গলা+বাজি=গলাবাজি; গুণ্ডা+বাজি=গুণ্ডাবাজি; ধাপ্পা+বাজি=ধাপ্পাবাজি; ফাঁকি+বাজি=ফাঁকিবাজি; ফেরেব+বাজি=ফেরেববাজি।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘লোকটা যেমনি চালবাজ, মামলাবাজিতেও তেমনি ওস্তাদ।’ ‘এ পৃথিবীতে গ্লাডস্টোন ডিম্রেলি প্রভৃতির ন্যায় তুমি কেবল গলাবাজিতে জিতিয়া গেলে।’ ‘চাকরটা হয়েছে ভীষণ ফাঁকিবাজ।’
গর
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। কারি+গর=কারিগর; সওদা+গর=সওদাগর; বাজি+গর=বাজিগর>বাজিকর; হালুই+গর=হালুইগর>হালুইকর।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘কে বেঁধেছে এমন ঘর ধন্য কারিগর।’ ‘মধ্যযুগে বাঙালী সমাজে সওদাগরের স্থান ছিল অতি উচ্চে।’ ‘বাজিকরের মেয়ে তারে যেমন নাচায় তেমনি নাচে।’
গিরি
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। বাবু+গিরি=বাবুগিরি; কেরানী+গিরি=কেরানীগিরি; গোয়েন্দাগিরি=গোয়েন্দাগিরি।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘এখন না হয় তোমার পিতা বর্তমান; কিন্তু এভাবে বাবুগিরি করিয়া আর কতদিন কাটিবে?’ ‘কেরানীগিরি করে সারা জাতটা আজ কেরানীর জাতে পরিণত হয়েছে।’
দানি
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। পিক+দানি=পিকদানি; নস্য+দানি=নস্যদানি, ছাই+দানি=ছাইদানি; ফুল+দানি=ফুলদানি; ধূপ+দানি=ধূপদানি।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘ফুলদানিতে ফুল আর ধূপদানিতে ধূপ দিও।’
দান
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। বাতি+দান=বাতিদান; কলম+দান=কলমদান; আতর+দান=আতরদান।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: মাথার ওপরে ঝুলছিল উজ্জ্বল বাতিদান।
দার
নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য [কখনও কখনও বিশেষণ]। চৌকি+দার=চৌকিদার;
দাবী+দার=দাবীদার; দোকান+দার=দোকানদার; খরিদ+দার=খরিদ্দার; মজুত+দার=মজুতদার; ব্যবসা+দার=ব্যবসাদার; পাওনা+দার=পাওনাদার; হাবিল+দার=হাবিলদার; ফৌজ+দার=ফৌজদার; হুকুম+দার=হুকুমদার; তালুক+দার=তালুকদার; অংশী+দার=অংশীদার; বর্গা+দার=বর্গাদার; জমি+দার=জমিদার; জোত+দার=জোতদার; পোত+দার=পোতদার>পোদ্দার; দানা+দার=দানাদার; মজা+দার=মজাদার; রঙ+দার=রঙদার; বুটি+দার= বুটিদার; চটক+দার=চটকদার; পেশা+দার=পেশাদার; সমঝ+দার= সমঝদার; দেনা+দার=দেনাদার; বাজন+দার=বাজনদার; চুড়ি+দার= চুড়িদার।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘শোন্রে মালিক, শোন্রে মজুতদার, তোদের প্রাসাদে জমা হলো কতো মৃত মানুষের হাড়।’ ‘যুদ্ধান্তে হাবিলদার কবি স্বদেশে ফিরিয়া আসিলেন।’ ‘সন্তানসম পালে যারা জমি, তারা জমিদার নয়।’
নবিশ, নামা
বিশেষ্য। পত্র+নবিশ=পত্ৰনবিশ; শিক্ষা+নবিশ=শিক্ষানবিশ; হিসাব+নবিশ=হিসাবনবিশ; জমা+নবিশ=জমানবিশ; নকল+নবিশ= নকলনবিশ; হুকুম+নামা=হুকুমনামা; বয় [বিক্রয়]+নামা=বয়নামা।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘সে এখন একটি বিখ্যাত শিল্প-প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশ আছে।’ ‘এদিকে সমস্তই প্রস্তুত; এখন শুধু হুকুমনামা পেলেই হয়।’
চী, চি [তুর্কী]
নিম্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। তবলা+চী=তবলচী; মশাল+চি=মশালচি; ধুনা+চি=ধুনাচি, ধুনুচি। তেমনি— খাজাঞ্চি, বেঙাচি।
বিশিষ্ট প্রয়োগ: ‘সে এই রাত দুপুরে গান গাইবে; আমি এখন তবলচী কোথায় পাই?’ ‘বেঙাচিতে ভরে গেল দেশ।’
Leave a Reply