বক্রোক্তি কাকে বলে? এর সংজ্ঞাসহ শ্রেণিবিভাগ কর।
বক্রোক্তি
কোনো কথা সোজাভাবে না বলে যদি বাঁকাভাবে বলা হয় তখন বক্রোক্তি অলংকার হয়।
উদাহরণ:
মাছের মায়ের কি পোয়ের দুখ?
ব্যাখ্যা: এখানে সোজা কথা ছিল মাছের মায়ের পোয়ের জন্য দুঃখ হয় না। কারণ মাছ একসঙ্গে সহস্রাধিক ডিম পাড়ে এবং সহস্রাধিক মাছের পোনা হয়। সুতরাং কিছু পোনা মারা গেলেও তার কোনো দুঃখ হয় না। কিন্তু এই কথাটিকে সোজাভাবে না বলে বক্তা একটু বেঁকিয়ে বলেছে যাতে আমরা বুঝতে পারি যে মাছের পোনা মারা গেলেও মাছের মায়ের পোয়ের জন্য কোনো দুঃখ হয় না। সুতরাং এটি বক্রোক্তি অলংকার।
বক্রোক্তির শ্রেণিবিভাগ
বক্রোক্তি অলংকার দুই প্রকার— ১) কাকু বক্রোক্তি, ২) শ্লেষ বক্রোক্তি।
কাকু বক্রোক্তি
বক্তার কণ্ঠস্বরের বিশেষ ভঙ্গির জন্য যখন ‘না’-বাচক কথার ‘হ্যাঁ’-বাচক অর্থ হয় এবং ‘হ্যাঁ’-বাচক কথার ‘না’-বাচক অর্থ হয় তখন তাকে কাকু বক্রোক্তি অলংকার বলে।
উদাহরণ:
স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,
কে বাঁচিতে চায়?
ব্যাখ্যা: এখানে বক্তার কণ্ঠস্বরের বিশেষ ভঙ্গির মধ্যেই উত্তরটি নিহিত আছে। স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়? বললেই আমরা বুঝতে পারি কেউ পরাধীন থাকতে চায় না। বক্তার কণ্ঠস্বরের বিশেষ ভঙ্গির জন্যই প্রশ্নবোধক বাক্যটির উত্তর ‘না’-বাচক অর্থে পরিণত হয়েছে। এজন্য এটি কাকু বক্রোক্তি।
শ্লেষ বক্রোক্তি
বক্তার বক্তব্যের অভিপ্রেত অর্থ গ্রহণ না করে শ্রোতা যদি অন্য অর্থ গ্রহণ করে তখন তাকে শ্লেষ বক্রোক্তি বলে।
উদাহরণ:
প্রশ্ন—বিপ্র হয়ে সুরাসক্ত কেন মহাশয়?
উত্তর—সুর না সেবিলে তার কিসে মুক্তি হয়।
ব্যাখ্যা: বক্তা এখানে ‘সুরা’ অর্থাৎ মদে আসক্তির কথা বলতে চেয়েছেন। কিন্তু উত্তর দাতা ‘সুরা’ মানে মদ না ধরে ‘সুরা’ মানে দেবতা ধরে উত্তর দিয়েছেন। অর্থাৎ বক্তা যে অর্থে কথাটি বললেন শ্রোতা সেই অর্থ না ধরে অন্য অর্থ গ্রহণ করে উত্তর দিলেন। সুতরাং এটি শ্লেষ বক্রোক্তি।
Leave a Reply