//
//

বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ আলোচনা কর।

বাংলাদেশের শিশুসাহিত্য

আমাদের সাহিত্যে শিশুসাহিত্যের ক্ষেত্র বড়ই অনুর্বর। অথচ, জগৎ-জীবন-দর্শনে এটি অনিবার্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমনটায় প্রমাণিত হয় আমাদের একদিকে রসবোধশূন্যতা অন্যদিকে রুচির দুর্বলতায় হাপিত্যেস দশার চিত্র। চলমান জীবনের বাস্তবতা, ব্যক্তি-বিচ্ছিন্নতা, মূল্যবোধের অসারত্ব সবকিছু মিলে জাতীয় জীবনের নানা পর্বে আমরা বেরসিক রূপেই প্রতিপন্ন হয়ে চলেছি। তবে এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। ত্রৈলোক্যনাথ-রাজশেখর আর সবার ঊর্ধ্বে রবীন্দ্রনাথ কেমন উন্নত হাস্যরসের ব্যক্তিত্ব ছিলেন তা কার না অজানা? জীবনের বিচিত্র অভীপ্সায় এর যৌক্তিকতা কেমন কীভাবে এর চর্চা হয়—এর ঔচিত্য বা অনৌচিত্য বীক্ষণ যা-ই হোক আমাদের সাহিত্যে তা কেন অনিরাপত্তায় সে প্রশ্ন এখানে অবান্তর। আর এসব রসবোধ বা রসজ্ঞ হওয়া না-হওয়ার প্রশ্নটি এখানে উঠেছে শিশুসাহিত্যের ইতিকথা জানতে গিয়ে। শীর্ণ এ ধারা বিভাগ-পরবর্তী সময়ে আরও আড়ষ্ট, দুর্বলতর। তবুও নিমোক্তা চর্চা করেছেন-তা যে কোনো মানে, অন্তত কিছুটা হলেও।

অনামিকা হক লিলি

অনামিকা হক লিলির রচনা ‘এসো গল্পের দেশে’ (১৯৭৪), ‘সাহসী ইঞ্জিন’ (১৯৮০), ‘ছড়ার ছন্দে দুলি’ (১৯৮২), ‘ছুটির দুপুরে’ (১৯৮০)। গল্পভঙ্গি শিশুমনস্কতায় জারিত। আনন্দময় বৈচিত্র্য রচনার প্রয়াস আছে।

আখতার হুসেন

‘সমুদ্র অনেক বড়’, ‘রামধনুর সাঁকো’, ‘দি টাইগার ও অন্যান্য গল্প’, ‘হৈ হৈ রৈ রৈ’, ‘প্রজাপতি ও প্রজাপতি’, ‘খেলাঘরের পুতুল গুলো’, ‘চাপাপড়া মানুষ’, ‘আয় আয়’, ‘ফ্রিডম ফাইটার’ ইত্যাদি আখতার হুসেনের শিশুসাহিত্য। এসব গ্রন্থে শিশুমনস্তত্ত্ব গৃহীত। কখনো তা নীতিমূলক, কখনো নিছক রঙ্গরসে আপ্লুত। কথনভঙ্গি রোম্যান্সসুলভ, আকর্ষণীয়।

আতোয়ার রহমান

বিচিত্র বিষয়ে অবলম্বন আছে। নীতিশিক্ষার প্রশ্রয় আছে রচনায়। অত্যন্ত যত্নশীল। ঐতিহ্যিক আনুগত্য অনস্বীকার্য, সেটি গল্পের পরিবেশষ তৈরি করে। শিশু-মনস্তত্ত্বের পরিবৃত্তে আতোয়ার রহমান লেখেন—‘ঝিলিমিলি: সাঁঝের বেলার রূপকথা’ (১৯৫৮), ‘মহাবিপ্লবের বীর সিপাহী’ (১৯৬২), ‘রাজকন্যে কঙ্কাবতী’, ‘আজব প্রাণী আজব গাছ’ (প্রথম খণ্ড] (১৯৬৭) ও [দ্বিতীয় খণ্ড] (১৯৬৮), ‘টুনটুনের বাঁশি’ (১৯৬৭), ‘বিলেতী ছড়া’ (১৯৬৮), ‘ঝর্নামালা’ (১৯৬৯), ‘রঙে রঙে বোনা’ (১৯৭২), ‘কাচের পাহাড়’ (১৯৭৪), ‘সোনার পাখি’ (১৯৭৫), ‘তেরো নদীর পাড়ে’, ‘তিন পুণ্যির ঘাট’ প্রভৃতি।

আনজীর লিটন

আনজীর লিটনের লেখায় ব্যঙ্গ আছে। ছড়া শিশু উপযোগী। তবে মাঝে মাঝে পরিপক্ব বুদ্ধিতে তা স্থূল হয়ে পড়েছে। ছড়া: ‘খাড়া দুটো শিং’ (১৯৮৭), ‘আগে গেলে বাঘে খায়’ (১৯৯৫), ‘আমাদের রাজনীতি চলে বাঁকে বাঁকে’ (১৯৯৬)। কিশোর উপন্যাস: ‘ছদ্মবেশী রোবট’ (১৯৯৩), ‘ডুডুল রাজার পাহাড়ে’ (১৯৯৪)

আনোয়ারা সৈয়দ হক

কিশোর মনস্কতায় লিখেছেন ‘ছানার নানাবাড়ি’ (১৯৭৭), ‘বাবার সঙ্গে ছানা’ (১৯৮৬), ‘ছানা ও মুক্তিযুদ্ধ’ (১৯৮৭), ‘মুক্তিযোদ্ধার মা’, ‘মুক্তিযোদ্ধার ছেলে’ প্রভৃতি। এগুলো সুন্দর রচনা কিন্তু আপাত বুদ্ধির ক্ষেত্রটি অপরিপকৃ, নিয়ন্ত্রণহীনও বটে। তবে রসবোধ আছে।

আবদুর রহমান

গল্প লিখলেও শিশুসাহিত্য রচনা করেছেন। তবে তার পরিধি বেশি সম্প্রসারিত নয়। নিছক ছড়ার ছন্দে তিনি শিশুদের আনন্দ দিয়েছেন। তাঁর গ্রন্থ ‘ঝড়ের দেশ’ (১৯৬৩), ‘টুটুর হাওয়াই সফর’ (১৯৬৭), ‘রাত নিঝঝুম’ (১৯৬৩)। সূক্ষ্মতর রসসঞ্চারী এসব রচনার গুরুত্ব পূর্ব-পাকিস্তানে কম ছিল না। বিশেষ করে এ প্রসঙ্গে তাঁর মননধর্মটিও বুঝে নেওয়া যায়।

আমীরুল ইসলাম

আমীরুল ইসলামের ছড়া কিশোর উপযোগী। ‘খামখেয়ালী’ (১৯৮৪), ‘যাচ্ছেতাই’ (১৯৮৭), ‘রাজাকারের ছড়া’ (১৯৯০), ‘আমার ছড়া’ (১৯৯২), ‘বিলাই’ (১৯৯৭), ‘বীর বাঙালীর ছড়া’ (১৯৯৭), ‘চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে’ (১৯৯৭), ‘ছড়ার তেলে ছড়া ভাজা’ (১৯৯৭) প্রভৃতি। একটু বুদ্ধিমনস্ক। মধ্যমানের এসব ছড়ায় রাজনীতিও তিরোহিত নয়। এ পর্যায়ের মনস্তত্ত্বটিতে আমীরুল ইসলাম তেমন উন্নত নন। ছোটদের গল্প: ‘আমি সাতটা’ (১৯৮৫), ‘এক যে ছিল’ (১৯৮৬), ‘দশ রকম দশটা’ (১৯৮৯), ‘সার্কাসের বাঘ’ (১৯৮৯), ‘ভূত এলো শহরে’ (১৯৯২), ‘আমি ওয়ান আমি টু’ (১৯৯২), ‘রোবট রহস্য’ (১৯৯২), ‘আমি মুক্তিযোদ্ধা হতে চাই’ (১৯৯৩), ‘লুথাদ্বীপের রহস্য’ (১৯৯৪), ‘সাদা ভূত কালো ভূত’ (১৯৯৬) প্রভৃতি। কিশোর উপন্যাস: ‘অচিন যাদুকর’ (১৯৮৫), ‘আমাদের গোয়েন্দাগিরি’ (১৯৯২), ‘রুমঝুমপুর’ (১৯৯২) প্রভৃতি।

আল কামাল আবদুল ওহাব

কিশোর উপযোগী রচনা। অ্যাডভেঞ্চার আছে। রোমাঞ্চও আছে। কিন্তু পরিবেশ ও ভাষাবুনন উইট পায়নি। ‘নিরুদ্দেশের পথে’ (১৯৬৩), ‘মুখোশ’ (১৯৭৯), ‘গহন বনের পথে’ (১৯৭৯), ‘বিনাটিকেটের যাত্রী’ (১৯৬২), ‘মেঘবৃষ্টি’ (১৯৬৮), ‘বিজয় অভিযান’ (১৯৬৪), ‘সাতরঙ’ (১৯৫৮), ‘তারার আকাশ’ (১৯৭৫), ‘গহন বনের শিকারী’ (১৯৮২) প্রভৃতি আল কামাল আবদুল ওহাবের রচনা।

আলমগীর জলিল

আলমগীর জলিলের ভালো রচনা ‘হট্টমালার দেশে’। অন্যান্য রচনাও মনোগ্রাহী। এই কিশোর রচনাগুলো পেয়েছে তাঁর অনবদ্য ভাষাভঙ্গি। তাঁর রসবোধ উচ্চমানের। পরিবেশ দুর্বল নয়। ‘জুতো পায়ে পুষি বেড়াল’ (১৯৬৩), ‘তাকডুমাডুম’ (১৯৬৩), ‘এক যে ছিল পুতুল’ (১৯৬৯), ‘হট্টমালার দেশে’ (১৯৭৫) প্রভৃতি। এগুলোতে এক ধরনের ঐতিহ্য-সমর্থনও আছে।

আলাউদ্দিন আল আজাদ

আলাউদ্দিন আল আজাদের শিশুতোষ উপন্যাস ‘জলহস্তী’ (১৯৮২)। শিশুকবিতা ‘সারকাস’ (১৯৮৩)। ‘জন্মভূমি’ (১৯৯৯), ‘কিশোর সমগ্র’ (২০০০) তাঁর অন্যান্য রচনা।

আলী ইমাম

আলী ইমাম আমাদের গুরুত্বপূর্ণ শিশুসাহিত্যিক। দীর্ঘদিন তিনি কাজ করে চলেছেন। তাঁর গ্রন্থ—‘দ্বীপের নাম মধুবুনিয়া’ (১৯৭৫), ‘অপারেশন কাঁকনপুর’ (১৯৭৮), ‘চারজনে’ (১৯৭৯), ‘তিতির মুখীর চৈতা’ (১৯৭৯), ‘সাদা পরী’ (১৯৭৯), ‘পাখিদের নিয়ে’ (১৯৭৯), ‘রূপালী ফিতে’ (১৯৭৯), ‘সোনার তরী’ (১৯৮১) প্রভৃতি। একটু উচ্চগ্রেডের রচনা, ভাষা যথোচিত কিন্তু পরিবেশবর্ণনে একটু অযত্নের ছাপ লক্ষ করা যায়।

শরাফ সিদ্দিকী

আশরাফ সিদ্দিকীর লোককাহিনিভিত্তিক, রূপকাথার আঁচড় আদৃত রচনা ‘সিংহের মামা ভোম্বল দাস’ (১৯৬৩), ‘আমার দেশের রূপকাহিনী’ (১৯৬৪), ‘বাণিজ্যেতে যাবো আমি’ (১৯৭৮), ‘বাংলাদেশের রূপকথা’ (১৯৯১), ‘আমি বাজি ঝনঝন’ (১৯৭৯), ‘রূপকথা রাজ্যে’ (১৯৯৩) প্রভৃতি তাঁর রচনা। এসব রচনায় রসবোধের পরিসর কম।

আসাদ চৌধুরী

কবি আসাদ চৌধুরী শিশুতোষ রচনায় পারদর্শী। ‘রাজা বাদশার গল্প’, ‘গ্রাম বাংলার গল্প’ ছাড়াও বেশকিছু শিশুতোষ রচনার অনুবাদ করেছেন। তাঁর অনূদিত রচনা: ‘রাজার নতুন জামা’ (১৯৭৯), ‘ছয়টি রূপকথা’ (১৯৭৯), ‘এশিয়ার গল্প’, ‘ছোট রাজপুত্র’ (১৯৮২) প্রভৃতি। এসব রচনা বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যে অনবদ্য সংযোজন।

ইব্রাহীম খা

ইব্রাহীম খাঁর রচনা ‘ব্যাঘ্র মামা’ (১৯৫১), ‘শিয়াল পণ্ডিত’ (১৯৫২), ‘নিযাম ডাকাত’ (১৯৫০), ‘বেদুইনদের দেশে’ (১৯৫৬), ‘ছোটদের মহানবী’ (১৯৬১), ‘ইতিহাসের আগে মানুষ’ (১৯৬১), ‘গল্পে ফজলুল হক’ (১৯৭৭), ‘ছোটদের নজরুল’ ইত্যাদি। রূপকথামূলক, অভিযাত্রাধর্মী, রোম্যাঞ্চমূলক গ্রন্থগুলো বেশ জনপ্রিয়। নীতিশিক্ষার প্রচেষ্টা আছে। বুদ্ধিবৃত্তিক এ রচনাগুলো একই সঙ্গে উইট ও হিউমারে সমৃদ্ধ।

এখলাসউদ্দিন আহমদ

এখলাসউদ্দিন আহমেদ এই ধারার গুরুত্বপূর্ণ লেখক। তাঁর গল্প-উপন্যাস—‘এক যে নেংটি’ (১৯৬৫), ‘বেলুন বেলুন’ (১৯৬৯), ‘মাঠ পারের গল্প’ (১৯৭০), ‘হঠাৎ রাজার খামখেয়ালী’ (১৩৮৭), ‘তুমুর দুপুর’ (১৯৮২), ‘অন্য মনে দেখা’ (১৩৯৭), ‘টাটুঘাোড়া টাটুঘোড়া’ (১৯৮৭), ‘রাজ রাজড়ার গপ্পো’ (১৯৮৯), ‘তুনতু ও কেঁদো বাঘের গপ্পো’ (১৯৭৯), ‘তুনতু বুড়ির আজব সফর’ (১৯৯০), ‘কেঁদোর কাণ্ডকারখানা’, ‘তুনুকে নিয়ে গপ্পো’, ‘তুতুর গপ্পো’ প্রভৃতি। লোককথা, ব্রতকথা, হেঁয়ালী, ধাঁধার আশ্রয় আছে। সারপ্রাইজিং কিছু ব্যাপারও আছে। উন্নতমানের এ রচনাগুলোতে লেখক বেশ সৃজনশীল এবং বুদ্ধিবৃত্তিক। তুনতুর গল্প ও পরিবেশ, রসবোধ চমৎকার। গল্পভাষাতেও লেখকের আছে আধিপত্য। যেটি এ পর্যায়ের সৃজনশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ। ‘হাসির ছড়া মজার ছড়া’ (১৯৬২), ‘তুনতুবুড়ির ছড়া’ (১৯৬৬), ‘টুকরো ছড়ার ঝাঁপি’ (১৯৬৬), ‘বাজাও ঝাঁঝর বাদ্যি’ (১৯৭০), ‘ইকরি মিকড়ি’ (১৯৭৫), ‘বৈঠকী ছড়া’ (১৯৭৫), ‘কাটুম কুটুম’ (১৯৭৭), ‘ছোট রঙিন পাখি’ (১৯৮১), ‘প্রতিরোধের ছড়া’ (১৯৮৬), ‘অষ্টাশির ছড়া’ (১৯৯২) প্রভৃতি। ছড়াতে তিনি সমানভাবে প্রসাদগুণ লাভ করেছেন।

কাজী মোহাম্মদ ইদরিস

কাজী মোহাম্মদ ইদরিস-এর শিশুতোষ গ্রন্থ ‘জানোয়ারও যাদু জানে’ (২০০২)। চীনা লোকগাথার অংশবিশেষ থেকে এর উৎপত্তি হলেও বাংলাদেশের প্রকৃতি-পরিবেশকে অক্ষুণ্ন রেখেছেন তিনি এই গ্রন্থে। তাঁর শিশু উপযোগী ভাষা বেশ আকর্ষণীয়। সরল কৌতুকে এটি হয়ে উঠেছে মনোগ্রাহী।

জুবাইদা গুলশান আরা

জুবাইদা গুলশান আরা ‘মজার ছড়া’ (১৯৭০), ‘ছানাপোনাদের ছড়া’ (১৯৭৮), ‘নিঝুম দ্বীপের গল্পকথা’ (১৯৭৯), ‘কলকাকলীর গান’ (১৯৮৪), ‘ঘুম ভাঙানো নদী’ (১৯৮৮), ‘ফুল ফোটানোর জন্য’ (১৯৯১) লিখেছেন। ছড়া এবং কথক উভয়ক্ষেত্রেই তিনি সব্যসাচী। তবে রসবোধের প্রাচুর্য কম।

জোবেদা খানম

কিশোর গল্পই লিখেছেন। পরিবেশ ও ঘটনা বর্ণনে এক ধরনের মুন্সীয়ানা আছে। তার গ্রন্থ—‘ছোটদের একাঙ্কিকা’ (১৯৬৩), ‘গল্প বলি শোন’ (১৯৬৬), ‘মহাসমুদ্র’ (১৯৭৭), ‘সাবাস সুলতানা’ (১৯৮২), ‘শাহরিয়ারের অ্যাডভেঞ্চার’ (১৯৮৪) প্রভৃতি।

নাজমা জেসমিন চৌধুরী

শিশুদের জন্য নাটক লিখেছেন— ‘ঘুম নেই’ (১৯৭৯), ‘অন্যরকম অভিযান’ (১৯৮১), ‘ওরা ছিল বাগানে’ (১৯৮৯), ‘যেমন খুশী সাজো’ (১৯৯১)। এসব নাটকে তেমন পূর্ণতা পরিলক্ষিত হয় না। অযত্নেরও আছে অভাব। শিশুতােষ নাটক লেখা দুরূহ ব্যাপার। সেটির জন্য উচ্চমাত্রার রসবোধ দরকার। নাজমা জেসমিন চৌধুরী সেক্ষেত্রে তেমন সফল হননি।

ফয়েজ আহমদ

ফয়েজ আহমদ লিখেছেন— ‘হাতে খড়ি’ (১৯৫৪), ‘জোনাকী’ (১৯৫৬), ‘তা ধিনতা’ (১৯৬৩), ‘পুতলী’ (১৯৬৪), ‘রিম ঝিম’ (১৯৬৫), ‘তা তা থৈ থৈ’ (১৯৭৫), ‘বোকা আইভান’ (১৯৭৬), ‘হে কিশোর’ (১৯৮২), ‘ছোট ছেলে জামানের’ (১৯৮২), ‘টুকটাক’ (১৯৯৫), ‘টুঙ’ (১৯৯৫) প্রভৃতি। বিভাগোত্তর সময় থেকে কয়েক দশক চর্চায় তিনি উত্তরিত। সবগুলো রচনাই সমান মনোগ্রাহী নয় কিন্তু পরিবেশের আলোছায়া, অভিযাত্রা, রঙ্গবুদ্ধি তেমন দুর্বল নয়। শিশুবৃত্তানের জন্য যে বিচিত্রমুখি কল্পনার প্রয়োজন সেটি সর্বাংশে প্রতিষ্টিত নয় তার রচনায়।

বন্দে আলী মিয়া

শিশুসাহিত্যিক হিসেবে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ। ‘বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা’ (১৯৪০), ‘বোকা জামাই’ (১৯৪১), ‘ছোটদের নজরুল’ (১৯৬১), ‘শিয়াল পণ্ডিতের পাঠশালা’ (১৩৬৩ ব.), ‘ছোটদের বিষাদ-সিন্ধু’ (১৯৩৯) দুর্দান্ত রচনা। শিয়াল পণ্ডিতের পাঠশালা দারুণ, জীবনবোধ অনেক উচ্চে, সেখানে অবশ্যই নীতিশিক্ষাও তিরোহিত নয়। ‘বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা’ নিয়েও বন্দে আলী মিয়া প্রশংসিত। কিশোর উপযোগী রচনাগুলোতেও আত্ম-পরিচর্যায় লিখেছেন, দান করেছেন অনুভবেদ্য সহানুভূতি।

বিপ্রদাশ বড়ুয়া

তাঁর শিশুতোষ গল্প—‘সূর্য লুঠের গান’ (১৯৮০), ‘তাঁতি ও ঘোড়ার ডিম’ (১৯৮৫), ‘আরব্য রজনী’ (১৯৮৯), ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প’ (১৯৯১), ‘সোহরাব রুস্তম’ (১৯৮৯), ‘বাঘের উপর টাগ’ (১৯৯৩), ‘অজগর রাজা’ (১৯৯৪), ‘গ্রাম বাংলার সেরা হাসির গল্প’ (১৯৯৫), ‘ডাকাত ডাকাত’ (১৯৯৬), ‘রক্তঝরা রণ’ (১৯৯৭), ‘জাদুর বাঁশি’ (১৯৯৭)। কিশোর গ্রন্থের এ পাঠ রোম্যান্সরস ও বৈজ্ঞানিকবুদ্ধিপ্রসূত। বিপ্রদাস বড়ুয়ার রূপকথাভিত্তিক প্রয়াসটি উচ্চমান অর্জিত। পরিবেশ বয়ানেও তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। উপন্যাস—‘রোবট ও ফুল ফুটানোর রহস্য’ (১৯৮৮), ‘জাদুমানিক স্বাধীনতা’ (১৯৯২), ‘নোভায়া জেমলায়ার বিভীষিকা’ (১৯৯৬), ‘দৈত্য পাহাড়ের ক্ষুদে মানুষ’ (১৯৯৬) এসব উপন্যাসে শিল্পমান তেমন সবল নয়। অনেকক্ষেত্রেই তা স্থূলমাত্রায় পর্যবসিত।

বুলবন ওসমান

বুলবন ওসমানের কিশোর গ্রন্থ ‘কানা মামা’ (১৯৬৮), ‘অপয়া’ (১৯৭৭), ‘ঐরাবত’ (১৯৭৫), ‘অমিতের কথা’ (১৯৭৮), ‘উটকো’ (১৯৭৯), ‘মেঘ মোষ এক সমান’ (১৯৭৯) প্রভৃতি। সুন্দর ও সাবলীল তাঁর কথাভাষ্য। জীবনরসিক এ লেখক গ্রন্থের কাহিনিতে একটু অসংবদ্ধ মনে হয়। তবুও পরিবেশ-পরিস্থিতি ও চরিত্রবর্ণনায় মুন্সীয়ানা পরিলক্ষিত।

মোবারক হোসেন খান

‘রিমির কথাবলা’ (১৯৮২), ‘দিল্লীর তিন সম্রাট’ (১৯৮২), ‘তিন মোঘল সম্রাট’ (১৯৮২), ‘হাদিসের কাহিনী’ (১৯৮১), ‘মুসলিম বিশেসর কেচ্ছা’ (১৯৯৩), ‘শক্তির রাজা সূর্য’ (১৯৮৭), ‘সম্রাট আকবর’ (১৯৮৫), ‘রাজিতের চন্দ্রাভিযান’ (১৯৮৬), ‘রূপকের রূপকথা’ (১৯৮৮), ‘বিজ্ঞানের রহস্য’ (১৯৯০), ‘মহাকাশের গোয়েন্দা’ (১৯৯১) প্রভৃতি মোবারক হোসেন খানের রচনা। এগুলো কিশোর পাঠ্য, শিশুতোষ বলা চলে না। তাছাড়া কাহিনিবুদ্ধিতেও যে প্রজ্ঞাঋদ্ধি তা কাঙ্ক্ষিত নয়।

মোহাম্মদ নাসির আলী

খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিক। প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সাহিত্যচর্চায় ব্রতী। ১৩৫৬-তে প্রথম প্রকাশিত বই ‘মনিকণিকা’। এছাড়া শিশুতোষ গ্রন্থ ‘লেবু মামার সপ্তকাণ্ড’ (১৯৬৮), ‘ভিনদেশী এক বীরবল’ (১৯৭৯), ‘আকাশ যারা করলো জয়’ (১৯৫৭), ‘আলিফ লাইলার গল্প’, ‘একটি কুকুরের কাহিনী’, ‘ভিনদেশী গল্প’, ‘মত্যুর সাথে পাঞ্জা’, ‘তিমির পেটে কয়েক ঘণ্টা’, ‘বোকা বকা’, ‘ইবনে বতুতার সফরনামা’ (১৩৭৫ ব.), ‘ইতালীর জনক গরিবন্ডি’ (১৯৬৩), ‘ছোটদের ওমর ফারুক’, ‘অ্যালবার্ট আইনস্টাইন’, ‘ছোটদের আলমগীর’ (১৩৭৭ ব.), ‘আমাদের কয়েদে আযম মুহম্মদ আলী জিন্নাহ’ (১৩৫৫ ব.), ‘মোহাম্মদ বিন কাসেম’ (১৩৭০ ব.), ‘বীরবলের খোশগল্প’ (১৯৬৪), ‘সাতপাচ গল্প’ (১৯৬৫), ‘টলস্টয়ের সেরা গল্প’ (১৯৬২), ‘যোগাযোগ’ (১৯৬৮), ‘শাহী দিনের কাহিনী’ (১৩৫৯ ব.)। বিচিত্র বিষয়ে তিনি পরিচয় করিয়েছেন, সরল ও বুদ্ধিদীপ্ত ভাষাভঙ্গিতে। তাঁর জীবনীভিত্তিক কাহিনির পরিচর্যাটি বেশি।

মোহাম্মদ মোদাব্বের

‘হীরের ফুল’ (১৯৩০), ‘তাকডুমাডুম’ (১৯৩০), ‘মিসেস লতা সান্যাল ও আরও অনেকে’ (১৯৩৩), ‘কিস্সা শোন’ (১৯৫০), ‘জাপান ঘুরে এলাম’ (১৯৫৯), ‘ডানপিটে দল’ (১৯৬৩), ‘গল্প শোন’ (১৩৭১), ‘এক থলি নাটক’ (১৯৭৮), ‘বউ হারালো হলো বিড়াল’ (১৯৭৯) ‘বাঘা সিদ্দিকী’ এ সব গ্রন্থের ভেতর দিয়ে তিনি নিজেকে শিশুসাহিত্যিক হিসেবে বহাল রেখেছেন। নীতিশিক্ষা বা জীবনের বয়ান দেওয়ার চেয়ে তাঁর গ্রন্থে রসবোধের ভেতর দিয়ে হস্যকলরোলের সৃষ্টি প্রয়াস অনবদ্য। মোহাম্মদ মোদাব্বের শিশু-মনস্তত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাই

‘হাট্টিমাটিম’ (১৯৬২) দারুণ জনপ্রিয় পংক্তিমালা। অনবদ্য এ শিশুসাহিত্যিক বাংলাদেশের শিশুদের পিতা, অদম্য এই সংগঠকের কীর্তি আকাশচুম্বী। ‘হাট্টিমাটিম’ একদিকে যেমন রসবোধে জারিত অন্যদিকে তেমনি উদ্ভট রস-উত্তাপে চাঞ্চল্যকর। খুব অল্পকথায় শিশুর বোধের জগতে পৌঁছতে সক্ষম হন তিনি। ছন্দবিরচন ও মাত্ৰাজ্ঞানেও তাঁর দক্ষতা শিশু অনুগামী।

লুৎফর রহমান রিটন

‘ধুতুরি’ (১৯৮২), ‘ঢাকা আমার ঢাকা’ (১৯৮৪), ‘উপস্থিত সুধীবৃন্দ’ (১৯৮৪), ‘হিজিবিজি’ (১৯৮৭), ‘তোমার জন্য’ (১৯৮৯), ‘ছড়া ও ছবিতে মুক্তিযুদ্ধ’ (১৯৮৯), ‘রাজাকারের ছড়া’ (১৯৯০), ‘শেয়ালের পাঠশালা’ (১৯৯২), ‘হামটি ডামটি’ (১৯৯২), ‘১০০ রিটন: নির্বাচিত ছড়ার সংকলন’ (১৯৯৩), ‘নাই মামা কানা মামা’ (১৯৯৩), ‘বাঘের বাচ্চা’ (১৯৯৪), ‘ভূতের যাদু’ (১৯৯৪), ‘এক যে ছিল টুই’ (১৯৯৪), ‘ফর আ্যডাল্টস ওনলি’ (১৯৯৪), ‘শেখ মুজিবের ছড়া’ (১৯৯৪), ‘হবুচন্দ্র রাজার দেশে’ (১৯৯৪), ‘পান্তাবুড়ি’ (১৯৯৫), ‘ভালো কোচিং সেন্টার’ (১৯৯৬), ‘মুক্তিযুদ্ধের ছড়া’ (১৯৯৭), ‘সূর্যমামা ভীষণ রাগী চাদমামী খুব ভালো’ (১৯৯৭), ‘ঘোড়ার ডিম’ (১৯৯৮), ‘টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার’ (১৯৯৮), ‘ছড়াসমস্ত’ (১ম খণ্ড ১৯৯৮) এরকম অনেক ছড়া লিখেছে খ্যাতিমান। মধ্যমমানের ছড়াকার, পুনরাবৃত্তি ও অযত্ন আছে। অনেক বেশি লেখা ফলে তাঁর বোধের স্তরচ্যুতি ঘটেছে। হয়ে পড়েছেন স্থূল। বিষয়-নির্বাচনেও তাঁর সতর্ক হওয়া জরুরি।

শওকত ওসমান

শওকত ওসমান খ্যাতিমান লেখক। কিশোরতোষ বিষয়ে লিখে কীর্তিমান, স্মরণীয়। তবে এগুলো তাঁর কিশোর গ্রন্থ। ‘ওটেন সাহেবের বাংলো’ কিংবা ‘পঞ্চসঙ্গি’ মজার উপাখ্যান। বস্তুত নীতিশিক্ষার জন্যই তিনি এ কাজটি সম্পন্ন করেছেন। তাঁর গ্রন্থ—‘ওটেন সাহেবের বাংলো’ (১৯৪৪), ‘এতিমখানা’ (১৯৫৫), ‘ছোটদের নানা গল্প’ (১৯৬৯), ‘ডিগবাজী’ (১৯৬৪), ‘প্রাইজ ও অন্যান্য গল্প’ (১৯৬৯), ‘তারা দুই জন’ (১৯৪৪), ‘ক্ষুদে সোশ্যালিস্ট’ (১৯৭৩), ‘কথা রচনার কথা’ (১৩৮৯), ‘পঞ্চসঙ্গী’ (১৯৭৫), ‘ইতিহাস বিস্তারিত’ (১৯৮৫) প্রভৃতি তাঁর উপাদান।

শহীদ সাবের

ছোটদের জন্যে লেখা ‘ক্ষুদে গোয়েন্দার অভিযান’ (১৯৫৮); এই প্রতিভাবানের গল্প কিশোর উপযোগী, অনেকটা রোম্যান্স আধিক্য আছে। তাছাড়া ভাষায় আড়ষ্টতাও আছে বলে মনে হয়। তবু শহীদ সাবের বিভাগ-পরবর্তী সময়ের সময়ের অন্যতম কথাকার।

শাহজাহান কিবরিয়া

‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’ (১৯৭৪), ‘বেড়ালের গলায় ঘন্টা’ (১৯৭৭), ‘চার বুড়ির কাণ্ড’ (১৯৮৬), ‘উল্টোবুড়ি’ (১৯৮৮), ‘আহাম্মকের দেশে’ (১৯৮৬), ‘ইরানের মজার গল্প’ (১৯৮৩), ‘প্রাচ্যের রূপকথা’ (১৯৮০), ‘বাঘা’ (১৯৮০), ‘সুজন আজো ভোলেনি’ (১৯৯০) প্রভৃতি কিশোর গল্পে নীতিশিক্ষা কখনো বা ব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিচেতনার পরিবেশনা চলে। এ পর্যায়ে তেমনটা তেমনটা উন্নত নন।

শাহাদাৎ হোসেন

‘মোহনভোগ’, ‘ছেলেদের গল্প’, ‘বালিকা জীবন’, ‘গুলবদন’, ‘জাহানারা’, ‘সুরুচি পাঠ’ প্রভৃতি কিশোরদের ব্যঙ্গাত্মক গল্প। উন্নত বোধে জীবনসত্যেরই চর্চা করেছেন কবি। তাঁর রচনা তেমন পঠনযোগ্য হয়ে ওঠেনি।

সুকুমার বড়ুয়া

‘পাগলা ঘোড়া’ (১৯৭০), ‘ভিজে বেড়াল’ (১৯৭৬), ‘চন্দনা রঞ্জনার ছড়া’ (১৯৭৯), ‘এলোপাতাড়ি’ (১৯৮০), ‘নানা রঙের দিন’ (১৯৮১), ‘সুকুমার বড়ুয়ার ১০১টি ছড়া’ (১৯৯১), ‘চিচিং ফাক’ (১৯৯২), ‘কিছু না কিছু’ (১৯৯৫), ‘সুকুমার বড়ুয়ার কিছু ছড়া শতক’ (১৯৯৭)-এ বেরিয়েছে। ছড়ার ভেতর দিয়ে তিনি বাস্তবতাক অতিক্রম করতে চেয়েছেন। প্রকৃত অর্থে বাস্তবতার বাইরে জীবনের স্বীকৃতিই তো উপভোগ্য সাহিত্য, যেটি শিশুতোষ হলে তো আরও উন্নত হওয়া উচিৎ। সুকুমার বড়ুয়া প্ররম্বিত সময়ে সে চেষ্টাটিই করেছেন। অনেকটা সফলও হয়েছেন।

হাবীবুর রহমান

কবি, সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। শিশু সাহিত্যিক হিসেবে সর্বাধিক খ্যাতি। শিশু সংগঠনের জন্যও নিবেদিত। ‘দৈনিক সংবাদ’ এবং ‘দৈনিক আজাদে’র শিশু বিভাগের স্রষ্টা এবং এ বিষয়ে যথেষ্ট সাংগঠনিক খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর জনপ্রিয় শিশুতোষ গ্রন্থ ‘আগডুম বাগডুম’ (১ম ও ২য় খণ্ড ১৯৬২)। শিশু মনস্তত্ত্ব, শিশুমনের বিকাশ, জীবনবাদী চেতনার স্ফূরণ এসব নিয়ে নানাকৌণিক নিরীক্ষা আছে। বাংলাদেশের সাহিত্যে বিরল এ ধারাটি তাঁর হতে পেয়েছে গুরুত্বপূর্ণ মাত্র। তার অন্যান্য গ্রন্থ ‘সাগর পারের রূপকথা’ (১৯৬২), ‘বিজন বনের রাজকন্যা’ (১৯৬১), ‘লেজ দিয়ে যায় চেনা’ (১৯৬৩), ‘বনে বাদাড়ে’ (১৯৬৩), ‘পুতুলের মিউজিয়াম’ (১৯৬৩), ‘গল্পের ফুলঝুরি’ (১৯৬২), ‘হীরা মতি পান্না’ (১৯৬৭), ‘মন চলে মোর তেপান্তরে’ (১৯৬৭), ‘বনমোরগের বাসা’ (১৯৭৫) প্রভৃতি।

হাবীবুর রহমান সিদ্দিকী

‘পাখির ছড়া’ (১৯৫০), ‘ফুলের নামে ছড়া’ (১৯৫১), ‘ভালোবাসি পোষাজীব’ (১৯৫২), ‘হাসিখুশি’ (১৯৫২), ‘ছড়ার খনি’ (১৯৯৩), ‘কিশোর কবিতা ও ছড়া’ (১৯৯৩) প্রভৃতি শিশুবান্ধব রচনা। শিশু-কিশোর প্রবন্ধ—‘ছোটদের হযরত মোহাম্মদ’ (১৯৭৩), ‘ছোটদের নজরুল’ (১৯৭৫), ‘ছোটদের রবীন্দ্রনাথ’ (১৯৭৫), ‘ছোটদের শেখ মুজিব’ (১৯৭৫) প্রভৃতি।

হালিমা খাতুন (জ. ১৯৩৩)

‘সোনা পুতুলের বিয়ে’ (১৯৬৪), ‘হরিণের চশমা’ (১৯৭০), ‘কুমিরের বাপের শ্রাদ্ধ’ (১৯৭৪), ‘পাখির ছানা’ (১৯৭৬), ‘পশু ও পাখির ছড়া’ (১৯৭৬), ‘কাঠাল খাবো’ (১৯৭৬), ‘বাঘ ও গরু’ (১৯৮০), ‘বাচ্চা হাতির কাণ্ড’ (১৯৮০), ‘ছবি ও পড়া’ (১৯৮০), ‘বেবী ফ্রক গায়’ (১৯৮৯), ‘মজার পড়া’ (১৯৮৪), ‘মস্তবড় জিনিস’ (১৯৮৫), ‘যুক্তবর্ণের সেপাই শাস্ত্রী’ (১৯৮৭), ‘সবচেয়ে সুন্দর’ (১৯৯০), ‘রসকদম্ব’ (১৯৮৮), ‘বনের ধারে আমরা সবাই’ (১৯৯৩), ‘পঞ্চমালার বনে’ (১৯৯৩) প্রভৃতি গ্রন্থ রচয়িতার হলেও তাঁর রসবোধ আকর্ষণীয় নয়।

হাসান জান

শিশু সাহিত্যিক ও সংগঠক। বেশ কটি জাতীয় দৈনিকে শিশু বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘নরম গরম’ (১৯৭২), ‘লাল নীল ছড়া’ (১৯৭৪) তাঁর শিশুতোষ গ্রন্থ।

হেদায়েত হোসাইন মোরশেদ

‘হীরে মুক্তো পান্না’ (১৯৬১), ‘দেশে দেশে জয়ীর বেশে’ (১৯৬২), ‘সৃষ্টি শুরুর কাহিনী’ (১৯৬২), ‘সূর্যি জাগে জিলান দেশে’ (১৯৬২), ‘নয়া জীবনের দিশারী’ (১৯৬২), ‘সাত সমুদ্র তেরো নদী’ (১৯৬২), ‘চুনী মোতির মালা’ (১৯৬২) প্রভৃতি ষাটের গল্প। এক ধরনের নীতিকথ্যমূল কাহিনি তাঁর রচনার গুরুত্বকে দিয়েছে বাড়িয়ে।

হেলেনা খান

‘রোদ ঝকঝক’ (১৯৭৫), ‘সব ভালো যার শেষ ভালো’ (১৯৭৯), ‘চারটি বেলুন’ (১৯৮০), ‘গল্পই শুধু নয়’ (১৯৮৩), ‘সিন্ধুর টিপ সিংহল দ্বীপ’ (১৯৮৪), ‘ডালমুট’ (১৯৮৫), ‘ফুল পাখি সৌরভ’ (১৯৮৬), ‘নীল পাহাড়ের হাতছানি’ (১৯৮৮), ‘গৌতমবুদ্ধের দেশে’ (১৯৯০), ‘নতুন দেশ নতুন মানুষ’ (১৯৯০), ‘রূপকথার রাজ্যে’ (১৯৯২), ‘ব্যাংককের সেই মেয়েটি’ (১৯৯২), ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প’ (১৯৯৪), ‘ভূতের খপ্পরে’ (১৯৯৬), ‘মঞ্চে এর মজার গল্প’ (১৯৯৫), ‘শাবল বাহাদুর’ (১৯৯৫), ‘তুলতুলের দান’ (১৯৯৬) প্রভৃতি গ্রন্থ লিখেছেন।

এস. ওয়াজেদ আলী

তাঁর শিশুসাহিত্য ‘বাদশাহী গল্প’ (১৯৪৪), ‘গল্পের মজলিশ’ (১৯৪৪)। বিভাগ-পূর্বকালের এগুলো গুরুত্বপূর্ণ রচনা। উন্নত চিন্তা ও রুচির পরিচয় দিয়েছেন এসব গ্রন্থে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!