বাংলা সাহিত্যে কালিদাসের প্রভাব আলোচনা কর।
কালিদাস ও বাংলা সাহিত্য
বাংলা সাহিত্যে কালিদাসের প্রভাব যথেষ্ট। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য, বৈষ্ণব পদাবলী, চণ্ডীমঙ্গল, কৃত্তিবাসী রামায়ণ প্রভৃতি গ্রন্থে কালিদাসের প্রভাব লক্ষণীয়। গোবিন্দদাসের পদে, বৈষ্ণব পদের বিরহ বর্ণনায় কালিদাসের প্রভাব যত্রতত্র। মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গল-এ, ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল-এ, রামেশ্বরের শিবায়নে হিমালয় বর্ণনা, শিবের তপস্যা, গৌরীর তপস্যা, মদন ভস্ম প্রভৃতি ক্ষেত্রে কালিদাসের প্রভাব লক্ষ করা যায়।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যেও কালিদাসের প্রভাব যথেষ্ট। মধুসূদন কালিদাসকে শ্রেষ্ঠ কবির আসন দিয়েছেন। মধুসূদন কালিদাসকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন—কবিতা নিকুঞ্জে তুমি পিককুলপতি। মধুসূদনের চারটি নাটকে পাত্রপাত্রীর সংলাপে কালিদাসের প্রভাব লক্ষ করা যায়। মধুসূদনের তিলোত্তমাসম্ভব, ব্রজাঙ্গনা, বীরাঙ্গনা এবং চতুর্দশপদী কবিতাবলীতে কালিদাসের বিভিন্ন ঘটনা ও চরিত্রের প্রভাব লক্ষ করা যায়। এমনকি উপমা সৃষ্টিতে মধুসূদন কালিদাসের দ্বারা প্রবাবিত হয়েছেন। রাজনারায়ণ বসুকে লেখা এক পত্রে তিনি জানিয়েছেন—মেঘনাদবধ কাব্যের অনেক উপমা তিনি কালিদাস থেকে সংগ্রহ করেছেন।
বিহারীলালের প্রকৃতিদৃষ্টি কালিদাসের সমগোত্রীয়। বিহারীলাল তাঁর কাব্যে প্রকৃতির যে প্রসঙ্গ আলোচনা করেছেন সেকানে কুমারসম্ভব ও রঘুবংশ কাব্যের প্রভাব লক্ষ করা যায়।
কালিদাসের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যোগসূত্র সবচেয়ে বেশি। কালিদাসের চিন্তা, চেতনা, আদর্শ রবীন্দ্রনাথকে খুব মুগ্ধ করেছিল। বিশেষকরে কালিদাসের প্রেম ও সৌন্দর্যচেতনায় রবীন্দ্রনাথ প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাই তাঁর আক্ষেপোক্তি— ‘আমি যদি জন্ম নিতেম কালিদাসের কালে’। শৈশবে রবীন্দ্রনাথ কালিদাসের ছন্দ এবং শব্দঝংকারে মুগ্ধ হয়েছিলেন। কুমারসম্ভব, শকুন্তলা এবং মেঘদূত কাব্যের প্রকৃতি-চেতনা রবীন্দ্রনাথকে আপ্লুত করেছিল। তাই কুমারসম্ভব কাব্যের মদ্নভস্ম-রতিবিলাপ অবলম্বনে তিনি লিখলেন—
পঞ্চস্বরে দগ্ধ করে করেছ একী সন্ন্যাসী
বিশ্বময় দিয়েছ তারে ছড়ায়ে।
কালিদাস এবং রবীন্দ্রনাথ দুজনেই ভোগ বিরহিত বিদেহী প্রেমের স্বরূপকে তাঁদের কাব্যে তুলে ধরেছেন।
Leave a Reply