বাইশা (বাইশ কবির মনসামঙ্গল) সম্পর্কে আলোচনা কর।

বাইশা (বাইশ কবির মনসামঙ্গল)

‘বাইশা’ হল মনসামঙ্গল কাব্যের সংকলন গ্রন্থ। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আশুতোষ ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘বাইশ কবির মনসামঙ্গল’ বা ‘বাইশা’।

পূর্ববঙ্গে মনসামঙ্গলের জনপ্রিয়তার কারণে মিশ্র ধরনের সংকলন গ্রন্থ প্রকাশের গুরুত্ব। বাইশার তিনটি মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে— (১) বাইশ কবি মনসা (২য় সং, চট্টগ্রামে মুদ্রিত), (২) বাইশ কবি মনসা (৩য় সং, কলিকাতা), (৩) শ্রীশ্রী পদ্মপুরাণ বাইশ কবি মনসামঙ্গল (৩য় সং, ঢাকায় মুদ্রিত)। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ২য় সংস্করণে (১৩০১) ভূমিকায় সম্পাদক লিখেছেন— “শ্রীশ্রী পদ্মাপুরাণ অনুসারে অতিপূর্বকালে বাইশজন কবি মিলিত হইয়া শ্ৰীশ্ৰী মনসাদেবীর পূজা প্রকাশ উপলক্ষ্যে চন্দ্র সদাগরের দি ইত্যাদি যে ঘটনা হইয়াছিল তাহা রচনা করিয়াছিলেন, এই জন্য এই পুস্তকের নাম বাইশ করি মনসা।”

‘বাইশা’ অর্থে বাইশজন কবি নয়, বরং এই শব্দটি বহুত্ববোধক। আসলে গায়েনগণ গান করবার জন্য বিভিন্ন প্রসিদ্ধ কবির নির্বাচিত অংশগুলি নির্বাচন করেছিলেন বলেই এ ধরনের সংকলন গ্রন্থের উদ্ভব। আশুতোষ ভট্টাচার্যের ‘বাইশা’ সংকলন গ্রন্থ হিসাবে উল্লেখযোগ্য এই কারণে যে এই গ্রন্থে আঞ্চলিকতা দোষ নেই বরং সমগ্র বাংলাদেশের কবিরা স্থান পেয়েছেন।

চট্টগ্রাম থেকে ১৩০১ সালে প্রকাশিত ‘বাইশা’তে বাইশ কবির নাম পাওয়া যায়। যেমন— বিশ্বেশ্বর আকিঞ্চন দাস, রঘুনাথ দ্বিজ, রমাকান্ত, জগন্নাথ মিশ্র, বংশীদাস দ্বিজ, সীতাপতি, রাধাকৃষ্ণ, বল্লভ ঘোষ, নারায়ণদেব, গোপিচন্দ্র, জানকীনাথ, কমলনয়ন, যদুনাথ, বলরাম, হরিদাস ভট্ট, রামনিধি, পাণ্ডুয়া, অনুপচন্দ্র ভট্ট, রামকান্ত, মহিদাস দ্বিজ, দ্বিজ হরিদাস। আবার চন্দ্রকান্ত চক্রবর্তী কর্তৃক সংগৃহীত ও তাঁর ভ্রাতুস্পুত্র তরলকুমার চক্রবর্তী দ্বারা প্রকাশিত ‘বাইশ কবি মনসা’ সংকলনে একুশজন কবির তালিকা পাওয়া যায়। যেমন— নারায়ণ দেব, রামকান্ত (দেব), সীতাপতি (দেব), রমাকান্ত (দেব), রাধাকৃষ্ণ (দেব), যদুনাথ পণ্ডিত, বিপ্র জগন্নাথ, বলরাম, রামনিধি (দেব), জানকী, দ্বিজ বংশীদাস, দ্বিজ রঘুনাথ, কবিবল্লভ, কেতকাদাস, হরিদাস (দেব), গোবিন্দ রাম, কমলনয়ন, বিজয়গুপ্ত, অনুপচন্দ্র ভট্ট, হৃদয় ব্রাহ্মণ, গোপীচন্দ্র।

বাইশ কবির সম্পাদকগণ সকলেই ‘ষট্‌ কবি’ মনসামঙ্গলের নিন্দা করেছে। যেমন— “বাইশ কবির রচনা যেমন অতিশয় মধুর ও সর্বজনাদৃত, ষট্‌কবির রচনা তেমনি অশ্লীল ও ঘৃণিত। …অশিক্ষিত লোক ষট্‌কবি রচনা করিয়া তাহা সর্বসাধারণের নিকট আদৃত হইবার জন্য পূর্ব প্রণীত বাইশ কবি হইতে গ্রন্থকারের নাম ভণিতা স্থলে স্থলে যোজনা করিয়া দিয়াছেন।”

এ থেকে অনুমান করা যায়, ষট্‌কবির মনসামঙ্গল অপেক্ষা বাইশা জনসমাজে বেশি প্রচলিত ছিল। যেহেতু গায়েনদের রুচি ও দর্শকদের মনোরঞ্জনের দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন কবির বিশেষ বিশেষ অংশগুলি থেকে এই ‘বাইশা’ সংকলিত হয়েছিল তাই এক্ষেত্রে পৃথক পৃথক কবির কবিত্বশক্তির আলোচনা গুরুত্বহীন।

১. বাংলা মঙ্গলকাব্যের ইতিহাস: আশুতোষ ভট্টাচার্য

২. বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত: অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

৩. বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস: সুকুমার সেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!