সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে বাণভট্টের অবদান আলোচনা কর।
গদ্য-কাব্যকার বাণভট্ট
গদ্যকাব্য রচয়িতা সুবন্ধুর অল্পকাল পরেই অসামান্য প্রতিভা নিয়ে সাহিত্য ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হন হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্ট। তাঁর আলোকসামান্য সৃষ্টি নৈপুণ্যে সংস্কৃত গদ্যকাব্য মহনীয় গুণ গরিমায় ও চমকপ্রদ উৎকর্ষে মহিমান্বিত হয়ে ওঠে। তাঁর গদ্যকাব্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘হর্ষচরিত’ ও ‘কাদম্বরী’। বাণের আবির্ভাবকাল ৬০৬-৬৪৭ খ্রিস্টাব্দ। কারণ তিনি হর্ষবর্ধনের সভাকবি ও বাল্যবন্ধু ছিলেন।
‘হর্ষচরিত’-এর প্রারম্ভে বাণভট্ট কিছু শ্লোকে আত্মকথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বাৎস্যায়ন বংশ-সম্ভব ব্রাহ্মণ। তাঁর পিতার নাম চিত্রভানু, মাতার নাম রাজদেবী ও পুত্রের নাম ভূষণভট্ট বা পুলিন্দ। যৌবনে পদার্পণ করার পূর্বে তাঁর পিতা মাতা মারা যায়। কুসঙ্গে পড়ে বাণভট্ট গৃহত্যাগ করেন এবং দেশভ্রমণ করে বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এই বালকই পরে রাজা শ্রীহর্ষের সভাপণ্ডিতের পদ অলঙ্কৃত করেন। বাণভট্টের দুটি উল্লেখযোগ্য রচনা হল—হর্ষচরিত এবং কাদম্বরী।
হর্ষচরিত
‘হর্ষচরিত’ ঐতিহাসিক গদ্য রচনা। এতে হর্ষবর্ধনের রাজবংশের জন্ম বৃত্তান্ত, রাজনৈতিক অভিযান, যুদ্ধযাত্রা ও বীরত্বব্যঞ্জক নানা ঘটনার অবতারণা করে লেখক হর্ষবর্ধনের মহিমা বর্ণনা করেছেন। আটটি উচ্ছ্বাসে বিভক্ত আখ্যায়িকাধর্মী এই রচনাটি হর্ষবর্ধন ও মরণোন্মুখী ভগিনী রাজ্যশ্রীর কাহিনী বর্ণনা করে অপ্রত্যাশিতভাবে সমাপ্ত হয়েছে। তাই এই কাব্য অসমাপ্ত।
হর্ষচরিত মহারাজ হর্ষবর্ধনের কাহিনী হলেও এতে হর্ষবর্ধনের সমগ্র জীবনের কাহিনী চিত্রিত হয়নি। বরং এতে হর্ষবর্ধনের ভগিনী রাজ্যশ্রীর কাহিনী বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ভগিনী রাজ্যশ্রীকে উদ্ধারের জন্য হর্ষবর্ধনের উদ্যোগ ও বর্ণিত হয়েছে ‘হর্ষচরিত’-এ। এই আখ্যায়িকায় বাণভট্টের বর্ণননৈপুণ্য চমৎকার। প্রভাকর-বর্ধনের মৃত্যুতে প্রিয়জনের শোক, রাজ্যশ্রীর বিয়ে উপলক্ষ্যে উৎসবের আতিশয্য, দিবাকর মিত্রের আশ্রমে সবধর্ম সমন্বয়ের বর্ণনা, বিন্ধ্যগিরির বর্ণনা প্রভৃতি বর্ণনার বৈচিত্র্যে, মণ্ডননৈপুণ্যে ও শব্দের ওজস্বিতায় কাব্যধর্মী হয়ে উঠেছে।
হর্ষচরিত ঐতিহাসিক কাহিনী অবলম্বনে রচিত হলেও ইতিহাস নয়। রচনাটি থেকে তৎকালীন ভারতবর্ষের রাষ্ট্র ও সমাজ সম্পর্কের অনেক কথা জানা যায় বটে, তবুও এটি প্রধানত কাব্য। সমালোচক কিথ (A.B. Kieth) হর্ষচরিতের আলোচনা প্রসঙ্গে এই গ্রন্থের গুরুত্ব সম্পর্কে লিখেছেন— ‘‘What he does supply to history is the vivid Pictures of the army, of the life of the court, of the secretaries and their relations to the Buddhists, and the avocations of a Brahmin and his friends.’’ একথা ঠিকই হর্ষচরিত-এ ঐতিহাসিক তথ্য কম হলেও গুপ্তযুগের শেষের দিকে ভারতবর্ষের আর্থসামাজিক কাঠামোর বর্ণনা বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে। যেমন, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্রদের সামাজিক অবস্থান, তাদের ধর্মীয় আচরণ, জীবনবোধ, অর্থনীতি প্রভৃতির পরিচয় এই গ্রন্থে পাই। বিশেষ করে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ যে, সে সময়ে একত্র বসবাস করত, বৌদ্ধ হয়েও শিব ও বিষ্ণুর উপাসনা করত, বৈশ্যরা যে ক্ষত্রিয়ের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে আপত্তি করত না তার প্রমাণ পাই এই গ্রন্থে। যেমন, হর্ষবর্ধন বৈশ্য জাতির হয়েও তার মেয়ের বিয়ে ক্ষত্রিয়ের সঙ্গে দিয়েছিলেন। তাছাড়া সমকালীন লোকজীবনের সংস্কার, বিশ্বাসকেও বাণভট্ট তাঁর এই গ্রন্থে চিত্রিত করেছেন। যেমন, সহমরণ প্রথা (প্রভাকরের স্ত্রীর সহমরণ), যাত্রাবিধান-এর বর্ণনা রয়েছে গ্রন্থে। সুদীর্ঘ সমাসবদ্ধ পদ ও অলঙ্করণের বন্ধনকে অতিক্রম করে এর যে আস্বাদ, তা কাব্যরসের আস্বাদ।
বর্ণননৈপুণ্যে বাণভট্ট হর্ষচরিত-এ ঔপন্যাসিকের স্বরূপকে প্রকাশ করেছেন। পরিবেশ চিত্রণে, বর্ণনায় বাস্তবতা আনয়নে, ইতিহাসের নীরস বর্ণনার মধ্যে কাব্যিক গুণ সঞ্চারে তার কৃতিত্ব ঔপন্যাসিক প্রতিভার পরিচয়কে প্রমাণ করে।
সংস্কৃত গদ্যকাব্যের একটি বিভাগ হল আখ্যায়িকা। বিভিন্ন কাহিনী অবলম্বনে এই আখ্যায়িকা রচিত হত। বাণভট্ট আটটি উচ্ছ্বাসে হর্ষচরিতকে আখ্যায়িকাধর্মী রচনা হিসেবে রূপ দিয়েছেন। কেননা এতে হর্ষবর্ধনের রাজবংশের বৃত্তান্ত, রাজনৈতিক অভিযান, যুদ্ধযাত্রা ও নানা বীরত্বব্যঞ্জক কাহিনীর অবতারণা আছে।
কাদম্বরী
বাণভট্টের শ্রেষ্ঠ কাব্য ‘কাদম্বরী’। ভাব কল্পনা ও বর্ণনা সৌন্দর্যের বিপুল সমারোহে বাণভট্টের ‘কাদম্বরী’ কাব্য নিঃসন্দেহে তাঁকে সংস্কৃত গদ্য রচয়িতাদের শিরোমণি করে তুলেছে। এ. বি. কিথ কাদম্বরী’র আলোচনায় যথার্থই বলেছেন— “The Kadambari, on the otherhand, is a Katha, and it lacks the distinctive marks of the Akhyā yika.” কথাজাতীয় গদ্যকাব্য হিসেবে কাদম্বরী সংস্কৃত সাহিত্যে অনবদ্য গদ্যকাব্য। কেননা এটি একটি রোমান্টিক স্বভাবের অমর প্রেমকাহিনী।
এই গদ্যকাব্যের নামকরণও তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা, কাদম্বরী শব্দের অর্থ হল সুরা। সুরার নেশায় যেমন মানুষ নেশাগ্রস্ত হয় তেমনি কাদম্বরী পাঠেও পাঠক নেশাগ্রস্ত হয়। তাই বলা হয়—
কাদম্বরীরসাজ্ঞানামাহারোহপি ন রোচতে।
কাদম্বরীরসজ্ঞানানামাহারোহপি ন রোচতে।।
কল্পনার মৌলিকতায়, বর্ণনার অনায়াস বিচ্ছুরণে ও কাব্যধর্মিতায় ‘কাদম্বরী’ অসামান্য গ্রন্থ। এটি পূর্বভাগ ও উত্তরভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগ বাণের রচনা, দ্বিতীয় ভাগ তার পুত্র ভূষণভট্ট বা পুলিন্দের রচনা। কাদম্বরী’ কথাজাতীয় গদ্যকাব্য। তাই এতে কথার মধ্যে কথার অবতারণা করা হয়েছে। প্রথম কথা আরম্ভ হয়েছে রাজা শুদ্রকের ও শুকবৈশম্পায়নের কাহিনী নিয়ে। দ্বিতীয় কথা চন্দ্ৰাপীড়-বৈশম্পায়ন-মহাশ্বেতা কাদম্বরীর কাহিনী। গদ্যকাব্য রচয়িতা বাণভট্ট চন্দ্ৰাপীড় ও কাদম্বরীর বিভিন্ন জন্মের চিত্তাকর্ষক প্রেমের কাহিনী কাব্যের প্রধান উপজীব্য। মূল কাহিনীর সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে পুণ্ডরীক ও মহাশ্বেতার কাহিনী মূল কাহিনীর মধ্যে বৈচিত্র্য এনেছে।
খ্রিস্ট্রীয় ষষ্ঠ শতকের শেষভাগ কিম্বা সপ্তম শতক থেকে দণ্ডী, সুবন্ধু ও বাণের রচনায় এই ধরনের কথাকাব্য বা গদ্যকাব্যের একটি সুষ্ঠু পরিণত রূপ লক্ষ করা যায়— (১) রচনার চাতুর্য তাদের কথাকাব্যের অন্যতম বিশিষ্ট লক্ষণ। নিরাভরণ প্রচলিত কথা তাদের প্রতিভাস্পর্শে সালঙ্করা ও বর্ণাঢ্য হয়ে উঠেছে—যেন বনলতাকে তারা উদ্যানলতায় পরিণত করেছেন। (২) পদ্যকাব্যের আকর্ষণ হল কাহিনীকারকথা, যুদ্ধকথা, প্রেমকথা, চোরকথা—যেন কথার বিচিত্র মালা। (৩) বর্ণনার ঐশ্বর্য—এই গদ্যকাব্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এই বর্ণনার বাহুল্যে কাহিনীর গতি ব্যাহত হলেও এ যেন মন্থর গতি মেঘের জলস্তম্ভ রচনার মত। মেঘের থামা ও চলা—দুইই উপভোগ্য। বাণভট্টের কথায়—‘কথা জনস্যাভিনব বধূরিব।’ সত্যিই ‘কাদম্বরী’ একটি উৎকৃষ্ট কথা। কালের বুকে কথার উজ্জ্বল লক্ষণসহ এই কাব্য নিজ মহিমায় বিরাজমান।
সংস্কৃত সাহিত্যের বংশ-ভাণ্ডারে ‘কাদম্বরী’ অত্যুজ্জ্বল রত্ন। ভাষার বিপুল বিস্তার এবং ভাবের রাজকীয় অজস্রতায় পরিপূর্ণ এই কথাকাব্য বাণভট্টকে শ্রেষ্ঠ গদ্য রচয়িতার স্বীকৃতি দান করেছে সংস্কৃত গদ্যসাহিত্যে যদি এই একটি গ্রন্থ থাকত তাহলেও ভারতবর্ষ গদ্য রচনায় গর্ব প্রকাশ করতে পারত। ধ্বনি গাম্ভীর্য, দীর্ঘায়ত ছন্দস্পন্দ, স্বর-বৈচিত্র্য, অলঙ্করণ, মণ্ডন-চাতুর্য, বৰ্ণন সৌকুমার্য ও চিত্র সৌন্দর্য কাব্যের অন্তর্নিহিত অনির্বচনীয়তাকে অপূর্ব শিল্প সুষমায় মণ্ডিত করে তুলেছে।
বাণভট্টের অন্যতম শক্তি চিত্রাঙ্কন দক্ষতা। রবীন্দ্রনাথ ‘কাদম্বরী’ গ্রন্থকে একটি ‘চিত্রশালা’ বলে বর্ণিত করেছেন। একদিকে অর্থালঙ্কারের প্রয়োগে কতকগুলি ছবি ফুটে উঠেছে তেমনি শব্দের রঙে-রেখায় চিত্রগুলি জীবন্ত হয়ে উঠেছে। কল্পনার বিচিত্র রঙে প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীর মনোজ্ঞ বর্ণনায় লেখক অপ্রতিদ্বন্দ্বী। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন— “এমন বর্ণ সৌন্দর্য বিকাশের ক্ষমতা সংস্কৃতে কোন কবি দেখাতে পারেন নি।” সংস্কৃত কবিগণ লাল রঙকে লাল রঙ বলেই ক্ষান্ত হয়েছেন। কিন্তু ‘কাদম্বরী’ কাব্যের লাল রঙ কত রকমের তার সীমা নেই। কোনো লাল লাক্ষালোহিত, কোনো লাল পারাবতের পদতলের মততা, আবার কোনো লাল রক্তাক্ত সিংহের নখের মতো।
সংস্কৃত কাব্য-নাটকে নরনারীর প্রেমবর্ণনা একটি বিশিষ্ট পর্যায়। এখানে প্রেম দেহানুগ লালসার রূপায়ণ, সম্ভোগ-শৃঙ্গার নগ্নতার প্রতিরূপ। পেটারসন সাহেব সমগ্ৰ সংস্কৃত সাহিত্যকে এই দোষে দুষ্ট বলেছেন। কিন্তু বাণভট্টের শৃঙ্গার বর্ণনা অদ্ভুত সংযমের পরিচয় বহন করে। সংস্কৃত কাব্য-নাটকে ‘কাদম্বরী’ অপূর্ব প্রেমকাব্য। দণ্ডী ও সুবন্ধুর রচনায় কামকলা-বিলাসের চরম দিক প্রদর্শিত হয়েছে। কিন্তু ‘কাদম্বরী’ প্রেমকাব্য হলেও কোথাও তির্যক কামনা প্রশ্রয় পায়নি। প্রেমের সূক্ষ্ম সৌকুমাৰ্যে ‘কাদম্বরী’ কমনীয়; এখানে প্রেমের সৌরভ মনকে মুগ্ধ করে।
কাদম্বরী’ কাব্যের চরিত্রগুলিও মহিমোজ্জ্বল। চন্দ্রাপীড়, বৈশম্পায়ন মহাশ্বেতা ও কাদম্বরী প্রধান চরিত্র। কর্তব্যে, বন্ধু বাৎসল্যে, প্রেমের দৃঢ়তায় প্রত্যেকটি চরিত্র আদর্শস্থানীয়। রবীন্দ্রনাথ এই কাব্যের ‘পত্ৰলেখা’কে কাব্যের ‘উপেক্ষিতা’ বলেছেন। তিনি চন্দ্ৰাপীড়ের সহচরী, প্রেম-ব্যাপারের দূতী। চরিত্রটি গৌণ। কিন্তু পত্ৰলেখার স্মৃতি পাঠকদের মনে রেখাপাত করে। বাণভট্টের কৃতিত্ব বর্ণনার আভিজাত্যে, তাঁর ত্রুটি সেই আভিজাত্যের আতিশয্যে। সমস্ত ত্রুটি সত্ত্বেও ‘কাদম্বরী’ পাঠ করে স্বীকার করতে হয় ‘কাদম্বরী’ কাব্যের আস্বাদ সুরার মতোই মোহকর।
বর্ণননৈপুণ্যে, বিশেষ করে প্রকৃতি বর্ণনায় বাণভট্টের প্রতিভার স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে ‘কাদম্বরী’-তে। যেমন, কাদম্বরীর কথারম্ভে শুকের উক্তিতে প্রভাতের বর্ণনায়—“একদা তু প্রভাতসন্ধ্যারাগলোহিতে গগনতলে গগনকমলিনী মধুরক্ত পক্ষসংপুটে বৃদ্ধ হংস ইব” বাক্যটি।
সপ্তম শতকের কাব্যরসিকেরা বাণের কাদম্বরীকে প্রকৃষ্টতম গদ্যশৈলীর আদর্শরূপে হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন। দণ্ডীর মতে—দীর্ঘ সমাসবদ্ধ বাক্যবিন্যাস উৎকৃষ্ট গদ্যকাব্যের প্রয়োজনীয় উপাদান। সে বিচারে বাণভট্ট প্রশংসনীয়। সমাসবদ্ধ পদের ব্যবহারে, উপমার মালা গঠনে, গল্পের কৌতূহল অনেক সময় বাধাপ্রাপ্ত হলেও তাঁর কাব্য সযত্নে গঠিত শব্দাবলীর সাহায্যে কাহিনি বয়ন ও বাক্য যযাজনার অনবদ্য কৌশল আমাদের বিস্মিত করে। প্রাচীন ভারতীয় আলঙ্কারিকের মতে গদ্যরচনায় কবিকূলের আসল শক্তির পরীক্ষা হয়। সেই পরীক্ষায় বাণভট্ট কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
উপমা প্রয়োগে বাণের কৃতিত্ব প্রশংসনীয়। যেমন— ‘‘গর্দভের কেশের মত ধূসর বৃক্ষচূড়া’’ কিংবা নূতন পদ্মের পাপড়ির মত পক্ষীশাবকদের ডানা’, ‘গোষ্ঠ প্রত্যাবর্তনরত তপোবনধেনুর মত আগত কপিলবর্ণা সন্ধ্যা’ প্রভৃতি।
কাদম্বরী গদ্যকাব্যে বাণের প্রতিভার বৈচিত্র্য আলোচনা প্রসঙ্গে ‘বিদগ্ধমুখমণ্ডন’-এ ধর্মদাস লিখেছেন—
রুচিরস্বরবর্ণপদা রসভাববতী জগন্মনো হরতি।
তৎ কিং তরুণী ন হি ন হি বাণী বাণস্য মধুরশীলস্য।
ওয়েবার বাণভট্টের গদ্যকে মহারণ্যের সঙ্গে তুলনা করলেও রবীন্দ্রনাথ কাদম্বরীকে কুঞ্জবনের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন— “কাদম্বরীর মধ্যে প্রলোভন রাশি রাশি। এই কুঞ্জবনের গলিতে গলিতে নানাবর্ণের পুষ্পিত লতাবিতান।’’ বাগাড়ম্বর ও অতিরঞ্জনের বেড়া অতিক্রম করে বাণভট্টের গদ্যকাব্যে উপনীত হলে আমরা এমন একটা সযত্নরোপিত ভাষাবৃক্ষের সন্ধান পাই যার নানাবর্ণের পুষ্পের সৌন্দর্য, অলংকারের ঔজ্জ্বল্যে চিত্ত উতলা হয়ে ওঠে এবং অসামান্য সৃষ্টি নৈপুণ্যের অধিকারী সেই উদ্যান রচয়িতার উদ্দেশ্যে আমাদের মুগ্ধ হৃদয় ভক্তি শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করে।
Leave a Reply