//
//

বিশেষণের সংজ্ঞাসহ বিভিন্ন ভাগের পরিচয় দাও।

বিশেষণ

যে পদের দ্বারা কোন বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয় ও ক্রিয়াপদের গুণ, অবস্থা ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়, তাকে বলা হয় বিশেষণ পদ। যেমন— ‘দুঃসহ নিশা’, ‘অন্ধকার রাত্রি, ‘বিশাল প্রাণ’, ‘নব’ অরুণোদয়, ‘স্বাধীন দেশ’ ইত্যাদি।

বিশেষণের প্রকারভেদ

বিশেষণ পদ মূলতঃ দ্বিবিধ— নাম-বিশেষণ ও ক্রিয়া-বিশেষণ।

১. নাম-বিশেষণ

যে বিশেষণ পদে কোন নামপদের গুণ, প্রকৃতি বা অবস্থা বোঝায়, তাকে নাম-বিশেষণ বলে। যেমন— ‘প্রফুল্ল’ কমল, ‘নিরস্ত্র’ সমর, ‘ছিন্ন’ চর্ম, ‘ভিন্ন’ বর্ম, ‘ভগ্ন’ অসি, ‘আকুল’ পরাণ, ‘নবীন’ ধান্য, ‘কাতর’ কপোত, ‘নীল’ অঞ্জন, ‘সজল’ মেঘ ইত্যাদি।

নাম-বিশেষণ আবার চার প্রকার—

১.ক. বিশেষ্যের বিশেষণ, ১.খ. বিশেষণের বিশেষণ, ১.গ. সর্বনামের বিশেষণ, ১.ঘ. অব্যয়ের বিশেষণ।

১.ক. বিশেষ্যের বিশেষণ

যে বিশেষণ পদে কোন বিশেষ্য পদের গুণ, প্রকৃতি বা অবস্থা বোঝায়, তাকে বিশেষ্যের বিশেষণ বলা হয়। যেমন: ‘সুন্দর’ ললাট, ‘অন্যায়’ সমর, ‘চকিত’ আলোক, ‘অমল’ বসন, ‘সুদূর’ গগন, ‘শূন্য-প্রায়’ দেবাঙ্গন, ‘স্বর্ণময়’ মধুভাণ্ড, ‘আলতো’ বাতাস, ‘হালকা’ হাওয়া, ‘শক্ত’ মাটি, ‘তাজা’ খুন, ‘শ্বেত’ কমল ইত্যাদি।

১.খ. বিশেষণের বিশেষণ

যে বিশেষণ পদে অন্য কোন বিশেষণ পদের গুণ, অবস্থা বা প্রকৃতি বোঝায়, তাকে বলে বিশেষণের বিশেষণ বা বিশেষণীয় বিশেষণ। যেমন: ‘নিতান্ত’ দুর্দান্ত, আমি ‘অতি’ হতভাগ্য, ‘একান্ত’ শান্তস্বভাব, ‘নিতান্ত’ মাতৃবৎসল, ‘অত্যন্ত’ গুরুতর, ‘অতি’ সহজ, ‘ভারি’ আশ্চর্য, ‘খুব’ একটা শক্ত রকম শপথ, ‘অত্যন্ত’ রুষ্ট ও বিরক্ত ইত্যাদি।

১.গ. সর্বনামের বিশেষণ

যে বিশেষণ পদে কোন সর্বনাম পদের গুণ, প্রকৃতি বা অবস্থা বোঝায়, তাকে সর্বনামের বিশেষণ বলে। যেমন: ‘চিরদিনে’র সেই আমি। ‘নির্বোধ’ সে। ‘বোকা’ তুমি সর্বদা ঠকো। ‘স্মরণীয়’ তারা, ‘বরণীয়’ তারা।

সর্বনামীয় বিশেষণ

সর্বনামীয় বিশেষণ সর্বনামের বিশেষণ থেকে পৃথক। সর্বনামীয় বিশেষণ হল সর্বনাম পদ থেকে জাত বিশেষণ পদ; অর্থাৎ, সর্বনাম পদ থেকে উদ্ভূত যে পদ বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হয়, তাকেই বলা হয় সর্বনামীয় বিশেষণ (Pronominal Adjectivel)। যেমন: ‘যত’ চাও ‘তত’ লও। ‘যেমন’ কুকুর ‘তেমন’ মুগুর। বল ‘কোন্’ তীরে ভিড়িবে তোমার সোনার তরী। ‘মদীয়’ ভবনে, ‘স্বকীয়’ চিন্তা, ‘তদীয়’ হস্তগ্রহ, এই বালক যদি, ঋষিকুমার না হয়, ‘কোন্’ ক্ষত্রিয় বংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছে?

১.ঘ. অব্যয়ের বিশেষণ

যে বিশেষণ পদ কোন অব্যয় পদের গুণ, প্রকৃতি বা অবস্থা প্রকাশ করে, তাকে অব্যয়ের বিশেষণ বা অব্যয়-বিশেষণ বলে। যেমন: ‘শত’ ধিক্ তোরে। ‘হাজার’ বাহবা তাকে।

২. ক্রিয়া-বিশেষণ

যে বিশেষণ পদে কোন ক্রিয়াপদের গুণ, প্রকৃতি বা অবস্থা প্রকাশিত হয়, তাকে বলে ক্রিয়া-বিশেষণ। যেমন: ‘সচকিতে’ বীরবর দেখিলা সম্মুখে। উত্তরিলা ‘কাতরে’ রাবণি। ‘বিষাদে’ নিঃশ্বাস ছাড়ি দাঁড়াইল বলী। আসিব ফিরিয়া ‘এখনি’। নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ‘প্রগলভে’ পশিল দম্ভী ইত্যাদি।

আরো কয়েক প্রকার বিশেষণ

১. উপাদান-বিশেষণ

যে বিশেষণের সাহায্যে বিশেষ্যটি কোন্ উপাদানে গঠিত তা ব্যক্ত হয়, তাকে উপাদান-বিশেষণ বলা হয়। যেমন: ‘মৃন্ময়’ ময়ূর, ‘চন্দন কাষ্ঠের’ চিতা, ‘লোহার’ নাল, ‘হরিণের শিঙের’ হাতল, ‘টিনের’ তোরঙ্গ, ‘কাঠের’ ফুটরুল, ‘নেবুর’ তেল, ‘কাঠের’ সেঁউতি, ‘সোনার’ সেঁউতি, ‘স্বর্ণময়’ মধুভাণ্ড, ‘সোনার’ সীতা, ‘সোনার’ দেবালয়, ‘কাঞ্চন’ কোকনদ, ‘ননীর’ পুতলি, ‘সিঙ্কের’ মোজা, ‘সোনার’ খাট, ‘মুক্তোর’ বালা, ‘চিত্রময়ী’ বাণী।

প্রয়োগ-দৃষ্টান্ত: অপরা তাপসী কুটীর হইতে ‘মৃন্ময়’ ময়ূর আনয়ন করিলেন। একগাছি ‘মুক্তার’ বালা। এমন ‘চন্দন কাষ্ঠের’ চিতা এ মুলুকে কেহ কখনও দেখে নাই। ‘কাঠের’ সেঁউতি মোর হৈল অষ্টাপদ। ‘সোনার’ সেঁউতি দেখি পাটনীর ভয়। নরনারীগণে ‘সোনার’ দেউলপানে তাকায়ে চলিয়াছে ছুটি। যেথা পাই ‘চিত্রময়ী’ বর্ণনার বাণী কুড়াইয়া আনি।

২. সংখ্যা বা পরিমাণবাচক বিশেষণ

যে বিশেষণ পদের দ্বারা বিশেষ্যের সংখ্যা বা পরিমাণ বোঝানো হয়, তাকে বলা হয় সংখ্যা বা পরিমাণবাচক বিশেষণ। যেমন: ‘এক’ বুলি, ‘এক’ জিগীর, ‘এক’ হতভাগা, জন-‘ছয়েক’, বাঙালী, ‘একটি’ টাকা, ‘দুইখানি’ পত্র, ‘পাঁচ’ ছেলে, ‘চার’ দস্যু, ‘দশহাজার’ টাকা পণ, ‘দুশোটা’ বাণ, ‘সপ্ত’ সিন্ধু, ‘দশ’ দিগন্ত, ‘হাজার’-ফুট গভীর, ‘একটা’ মোটর গাড়ীর কঙ্কাল, ‘তিনটে’ শালিক ইত্যাদি।

প্রয়োগ-দৃষ্টান্ত: ‘এক’ হতভাগা গ্রামের রাস্তার পাশে প্রয়োজনীয় কর্ম করতে এসেছিল। হলঘরে জন-‘ছয়েক’ বাঙালী মোটঘাট লইয়া বসিয়া আছে। ‘পাঁচ’ ছেলের পর যখন ‘এক’ কন্যা জন্মিল তখন, বাপমায়ে অনেক আদর করিয়া তাহার নাম রাখিলেন নিরুপমা। বরপক্ষ হইতে ‘দশহাজার’ টাকা এবং বহুল দান-সামগ্রী চাহিয়া বসিল। তারপর দ্রোণ তো একেবারে ‘দশবাণ’ ছুঁড়লেন। অর্জুন করলেন কি, একেবারে ‘দুশোটা’ বাণ দিলেন মেরে। ‘সপ্ত সিন্ধু’ ‘দশ দিগন্ত’ মাতাও যে ঝঙ্কারে।

৩. ক্রমবাচক বা পূরণবাচক বিশেষণ

ক্রম বা পূরণ [order] বোঝাতে যে বিশেষণ পদ ব্যবহৃত হয়, তাকে বলা হয় ক্রম বা পূরণবাচক বিশেষণ। যেমন: ‘প্রথম’ শৃঙ্খল, ‘দ্বিতীয়’ দস, ‘দ্বাদশ’ বর্ষ, ‘পয়লা’ তারিখ, ‘পঁয়তাল্লিশ’ নম্বরের কয়েদী।

বাংলায় ক্রমবাচক বা পূরণবাচক শব্দগুলি বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হয়। এরা সাধারণত বাংলা সংখ্যাবাচক শব্দ থেকে গঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু পয়লা কিংবা ‘পহেলা’, ‘দোসরা’, ‘তেসরা’ ও ‘চৌঠা— এই কয়টি পূরণবাচক শব্দ হিন্দি ভাষা থেকে গৃহীত। বাংলা পূরণবাচক শব্দ-গঠনের নিয়মগুলি হল—১ তারিখ বোঝাতে এক থেকে আঠারো পর্যন্ত সংখ্যার সঙ্গে [পয়লা বা পহেলা, দোসরা, তেসরা ও চৌঠা ছাড়া] ‘—ই’ বা ‘—উই’ যুক্ত হয়। যেমন: পাঁচই বা পাঁচুই, ছয়ই বা ছউই, সাতই বা সাতুই, দশই বা দশুই, বারোই, পনেরোই, আঠারোই। উনিশ থেকে বত্রিশ পর্যন্ত সংখ্যার সঙ্গে ‘এ’ যুক্ত হয়। যেমন: উনিশে, বত্রিশে। ২. বস্তুর ক্রম বোঝাতে বাংলায় ‘র’ বা ‘-এর’ যুক্ত হয়। যেমন: পাঁচের পাতা, ‘তিনের ঘর।’ ৩. ‘নম্বর’ [ইং Number]-শব্দ যোগে বাংলায় ক্রম বোঝানো হয়ে থাকে। যেমন: ‘তিন নম্বর’ ঘর, ‘সাত নম্বর’ বেঞ্চ, ‘আট নম্বর’ ব্লক, ‘এগরো নম্বর’ বাড়ি, ‘বারো নম্বর’ খেলোয়াড়। ৪. বাংলায় বহু সংস্কৃত পূরণবাচক শব্দও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন: প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম, একাদশ, দ্বাদশ, এয়োদশ, চতুদশ, ষোড়শ, সপ্তদশ, অষ্টাদশ, ঊনবিংশ, বিংশ [স্মরণীয় ও ‘বিংশতি—কুড়ি, ‘বিংশ’—কুড়ি নম্বরের; ‘বিংশতি’—সংখ্যাবাচক শব্দ, ‘বিংশ’—পূরণবাচক শব্দ।], ঊনিশ থেকে আটাশ পর্যন্ত সংখ্যাবাচক শব্দের শেষের ‘তি’ লুপ্ত হয় অথবা ‘ম’ যুক্ত হয়। যেমন: ঊনবিংশ বা উনবিংশতিতম, অষ্টাবিংশ—অষ্টাবিংশতিতম। ঊনত্রিশ থেকে আটচল্লিশ পর্যন্ত সংখ্যাবাচক শব্দের শেষের ‘তি’ লুপ্ত হয় অথবা ‘তম’ যুক্ত হয়। যেমন: ঊনত্রিংশৎ—ঊনত্রিংশ বা ঊনত্রিংশত্তম, অষ্টচত্বারিংশৎ—অষ্টচত্বারিংশ বা অষ্টচত্বারিংশত্তম। ঊনপঞ্চাশ থেকে একশো পর্যন্ত সংখ্যাবাচক শব্দে কেবল ‘তম’ যুক্ত হয়। যেমন: উনপঞ্চাশৎ—উনপঞ্চাশত্তম। ষষ্টি [৬০]—ষষ্টিতম, সপ্ততি [৭০]—সপ্ততিতম, উনাশীতি [৭৯]—উনাশীতিতম। তেমনি—দ্ব্যশীতিতম, ত্র্যশীতিতম, চতুরশীতিতম, ‌ঊননবতিতম, ষণ্নবতিতম [ষট্+নবতিতম], অষ্টনবতিতম, নবনবতিতম [৯৯তম] বা ঊনশততম, শততম। ৫. স্ত্রীলিঙ্গের ক্ষেত্রে সংস্কৃত পূরণবাচক শব্দগুলির মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়—এই তিনটি শব্দের শেষে ‘আ’-প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন: প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়া কিন্তু চতুর্থ থেকে অষ্টাদশ পর্যন্ত শব্দের শেষে ‘ঈ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন: চতুর্থী, ষষ্ঠী, নবমী, একাদশী, পঞ্চদশী, ষোড়শী, অষ্টাদশী ইত্যাদি।

৪. একপদ বিশেষণ

একটি মাত্র বিশেষণ পদে বিশেষ্য পদের গুণ, প্রকৃতি বা অবস্থা বোঝালে তাকে একপদ বিশেষণ বলা হয়। যেমন: ‘নিঠুর’ চাষীরা, ‘শূন্য’ মাঠখানি, ‘গৈরিক’ বসন, ‘প্রবল’ জ্বর, ‘বিদেশী’ লোক, ‘কালো’ ছাতা।

৫. বহুপদ বিশেষণ বা বাক্যাত্মক বিশেষণ

একাধিক পদ বা একটি বাক্য-সদৃশ পদ-সমষ্টি যখন বিশেষণরূপে বিশেষ্যের গুণ, প্রকৃতি বা অবস্থার পরিচয় দান করে, তখন তাকে বলা হয় বহুপদ বিশেষণ বা বাক্যাত্মক বিশেষণ। যেমন: ‘দিগন্তজোড়া’, ‘নক্‌সী কাঁথার মাঠ’, ‘স্বামী-বিরহ-বিধুরা’, ‘কক্ষচ্যুত-ধূমকেতু প্রায়’, ‘বাঘ-আঁকা’ জামা, ‘ঘুঁটে-কুড়োনোর’ গল্পটা, ‘রাঙারোদ-মাখানো’ গাছ, ‘সব-পেয়েছির’ দেশ, ‘সবার-পরশে-পবিত্র-করা’ তীর্থনীরে।

৬. সমস্তপদ বিশেষণ

কোন সমস্ত পদ বা সমাসবদ্ধ পদ বিশেষণ-রূপে কোন বিশেষ্যের গুণ, প্রকৃতি বা অবস্থা বোঝালে তাকে সমস্তপদ বিশেষণ বলা হয়। যেমন: বাড়বাগ্নিরাশিসম, রাক্ষস-কুল-ভরসা, ধর্মপথগামী, বন্দ্যবংশখ্যাত, মুখবংশজাত, নৃপতি-নির্মিত, দরদর-উদ্বেলিত, পিলে-চমকানিয়া, ‘তপোবনবিরুদ্ধ’ আচরণ, ‘ধ্যানগম্ভীর’ এই যে ভূধর, ‘নদীজপমালাধৃত’ প্রান্তর।

৭. সম্বন্ধ-বিশেষণ

কোন সম্বন্ধ পদ [‘র’, ‘এর’ বা ‘কার’-বিভক্তিযুক্ত] বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হলে তাকে সম্বন্ধ-বিশেষণ বলা হয়। যেমন: ‘ছেঁড়া পাতার’ ভরপুর গন্ধে এই সব ‘চোরাবাজারের’ দিনে, ‘জুয়োচুরির’ দিনে, ‘মিথ্যে-কথার’ দিনে, ‘রক্তমাংসের’ দেহ।

৮. শবদ্বৈত-ঘটিত বা বীপ্সামূলক বিশেষণ

কোন পদ দু’বার প্রযুক্ত হয়ে কোন বিশেষ পদের গুণ, প্রকৃতি বা অবস্থা বোঝালে তাকে শব্দদ্বৈত-ঘটিত বা বীপ্সামূলক বিশেষণ বলা হয়। যেমন: ‘মুঠি মুঠি’ ধান, ‘ভাঙা-ভাঙা’ মেঘে ঢাকা আকাশ, ‘ছল-ছল’ চোখে, ‘ভাসা-ভাসা’ চোখে, ‘কাঁদ-কাঁদ’ মুখে, ‘হাসি-হাসি’ ভাব।

৯. শব্দদ্বৈত-ঘটিত ক্রিয়া-বিশেষণ

শব্দদ্বৈত-ঘটিত কোন পদ ক্রিয়ার গুণ, প্রকৃতি বা অবস্থা বর্ণনা করলে তাকে শব্দদ্বৈত-ঘটিত ক্রিয়া-বিশেষণ বলা হয়। যেমন: ‘ঝরকে ঝরকে’ ঝরিবে বকুল, দুয়ার জানালা করে উঠে ‘ঝনঝন’, দমকে দামিনী ‘বারে বার’, ‘থরথরি’ কাঁপিলা বসুধা।

১০. বাক্য-বিশেষণ

একপদ বা বহুপদ বিশেষণ কোন বাক্যের গুণ, প্রকৃতি বা অবস্থা বর্ণনা করলে তাকে বাক্য-বিশেষণ বলা হয়। যেমন: বিজয়ী কর্ণ—‘যে মানুষের চিরকালের চোখের জলে জাগিয়া রহিল।’ নীলের কোলে শ্যামল সে দ্বীপ ‘প্রবাল-দিয়ে-ঘেরা’।

১১. বিধেয়-বিশেষণ

বাক্যের বিধেয় অংশে ব্যবহৃত বিশেষণ কর্তার গুণ, প্রকৃতি বা অবস্থা প্রকাশ করলে তাকে বিধেয়-বিশেষণ বলা হয়। যেমন: হে কাশী, কবীশ দলে তুমি ‘পূণ্যবান’। বিষাদে নিশ্বাস ছাড়ি দাড়াইল বলী ‘নিষ্কল’।

১২. ভাবমূলক বিশেষণ

ক্রিয়ার অন্য নাম ভাব। ক্রিয়াপদ দিয়ে কোন বিশেষণ পদ গঠিত হলে তাকে ভাবমূলক বিশেষণ বলা হয়। ভাবমূলক বিশেষণের সঙ্গে কৃদন্ত বিশেষণের সাদৃশ্য আছে। যেমন: ‘উড়ন্ত’ চিল, ‘মরা’ মানুষ।

১৩. সর্বনামীয় বিশেষণ

সর্বনাম পদ বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হলে তাকে সর্বনামীয় বিশেষণ বলে। যেমন: ‘যত’ চাও ‘তত’ লও। ‘যেমন’ কুকুর ‘তেমন’ মুগুর। বল ‘কোন্’ তীরে ভিড়িবে তোমার সোনার তরী?’ ‘মদীয়’ ভবন, ‘স্বকীয়’ চিন্তা, ‘তদীয়’ হস্তগ্রহ। এই বালক যদি ঋষিকুমার না হয়, ‘কোন্’ ক্ষত্রিয় বংশে জন্ম গ্রহণ করিয়াছে। ‘যাদৃশী’ ভাবনা, তাদৃশী সিদ্ধি— এগুলি সর্বনামীয় বিশেষণ।

কিন্তু স্মরণীয় ও সর্বনামের বিশেষণ ও সর্বনামীয় বিশেষণের মধ্যে পার্থক্য আছে। সর্বনামের বিশেষণ সর্বনামের গুণ প্রকাশ করে, কিন্তু সর্বনামীয় বিশেষণ সর্বনাম থেকে জাত বিশেষণ পদ। যেমন: ‘নিষ্ঠুর’ তুমি গরীবের দুঃখ বুঝিবে না [সর্বনামের বিশেষণ]। সেই পথ লক্ষ করে ‘স্বীয়’ কীর্তি ধ্বজা ধরে আমরাও হব বরণীয় [সর্বনামের বিশেষণ]।

১৪. গুণবাচক বিশেষণ

বিশেষ্যের বিশেষ গুণ-প্রকাশক বিশেষণকে গুণবাচক বিশেষণ বলে। যেমন: বুদ্ধের ‘করুণ’ আঁখি দুটি। ‘সুন্দর’ ধরাতল। ‘সুখী’ পরিবার। ‘নিশুতি’ রাত। ‘মেঘলা’ বিকেল।

১৫. অবস্থাবাচক বিশেষণ

বিশেষ্যের বিশেষ অবস্থা-প্রকাশক বিশেষণকে অবস্থাবাচক বিশেষণ বলে। যেমন: ‘পড়ন্ত’ বেলা। এই ‘অধঃপতিত’ জাতি। ‘অনুন্নত’ সম্প্রদায়। ‘উন্নত’ দেশ। ‘ভগ্নপ্রায়’ সৌধ। ‘বর্ষণমুখর’ আকাশ। ‘উদীয়মান’ সূর্য।

১৬. প্রশ্নবাচক বিশেষণ

যে বিশেষণ পদের দ্বারা বিশেষ্য সম্পর্কে প্রশ্ন দ্যোতিত হয়, তাকে প্রশ্নবাচক বিশেষণ বলে। যেমন: ‘কোন্’ সাগরের পারে? ‘কোন্’ মা আমারে দিলি শুধু এই খেলাবার বাঁশি? আর ‘কত’ দূরে লয়ে যাবে মোরে, হে সুন্দরী? ‘কেমন’ মানুষ তুমি?

১৭. কৃদন্ত বিশেষণ

কৃৎ-প্রত্যয়ান্ত বিশেষণকে কৃদন্ত বিশেষণ বলে। যেমন: ‘পড়ন্ত’ বেলা। ‘বাড়ন্ত’ গড়ন। ‘চলন্ত’ গাড়ি। ‘বহমান’ নদী। ‘ধাবমান’ অশ্ব। ‘অপগত’ সংশয়। ‘অপরাজিত’ বাণী।

১৮. তদ্ধিতান্ত বিশেষণ

তদ্ধিত প্রত্যায়ান্ত বিশেষণকে তদ্ধিতান্ত বিশেষণ বলে। যেমন: ‘গ্রাম্য’ পথ। ‘শহুরে’ মানুষ। ‘বৈঠকী’ গল্প। ‘বাদশাহী’ মেজাজ। ‘ঐতিহাসিক’ উপন্যাস। ‘বৈজ্ঞানিক’ দৃষ্টি। ‘দার্শনিক’ তত্ত্ব।

১৯. অব্যয়জাত বিশেষণ

অব্যয় পদ বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হলে তাকে অব্যয় বিশেষণ বলে। যেমন: ‘হঠাৎ’ ধনী। ‘অকস্মাৎ’ আবির্ভাব। ‘পুরা’ কাহিনী। ‘চিরন্তন’ দুঃখ।

২০. বিশেষ্য পদের বিশেষণরূপে ব্যবহার

বিশেষ্য পদ কখনও কখনও বিশেষণ পদরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন: ‘ছেলে’ মানুষ। ‘রাজা’ লোক। ‘সন্ন্যাসী’ মানুষ। ‘লক্ষ্মী’ ছেলে। ‘সোনা’ মেয়ে। ‘জমিদার’ বাবু। ‘উকিল’ সাহেব।

২১. বিশেষণ পদের বিশেষ্যরূপে ব্যবহার

বিশেষণ পদ কখনও কখনও বিশেষ্য পদরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন: ‘ক্ষুধিতেরে’ অন্নদান সেবা। ‘দরিদ্রের’ দুঃখ। ‘ধনীদের’ জীবন। ‘ব্যথিতের’ ব্যথা। ‘দুঃখীর’ ইমান। ‘নির্বাসিতের’ কথা। ‘বন্যেরা’ বনে সুন্দর। ‘সুন্দরে’র মন্দির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!