//
//

বিশেষ্যর সংজ্ঞাসহ বিভিন্ন ভাগ আলোচনা কর।

বিশেষ্য

যে শব্দে কোনো ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, জাতি, গুণ, ধর্ম, অবস্থা, কার্য, সমষ্টি ইত্যাদির নাম বোঝায়, তাহাকে বিশেষ্য পদ বলে।

রবীন্দ্রনাথ (ব্যক্তিনাম), লোহা (বস্তুর নাম), মহাভারত (গ্রন্থের নাম), কোলকাতা (স্থান নাম), বৌদ্ধ (সম্প্রদায়ের নাম), মমতা (গুণের নাম ) এই গুলি সবই বিশেষ্য। বিশেষ করে কিছু বলে বলেই এগুলি বিশেষ্য।

বিশেষ্যের শ্রেণিবিভাগ

১. নামবাচক বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য

যে বিশেষ্যপদ নির্দিষ্টভাবে কোনো ব্যক্তি, স্থান, দেশ, নদনদী, গ্রন্থ, প্রতিষ্ঠান, পর্বত, পত্র-পত্রিকার নাম প্রকাশ করে, তাকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য বলে। নাম প্রকাশ করে বলে এদের নামবাচক বিশেষ্যও বলে।
যেমন—

ব্যক্তিনাম— রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, রামমোহন, নজরুল, আব্দুল কালাম, বায়রন ইত্যাদি।

স্থাননাম— কোলকাতা, দিল্লী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, পুরুলিয়া, শিলিগুড়ি, ঝাড়্গ্রাম  ইত্যাদি।

দেশের নাম— ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ, জাপান, আমেরিকা, ইংল্যাণ্ড, রাশিয়া, নেপাল, ভুটান ইত্যাদি।

নদ-নদীর নাম— গঙ্গা, পদ্মা, কংসাবতী, শিলাবতী, দামোদর, অজয়, নীলনদ, ইত্যাদি।

পাহাড়-পর্বতের নাম— হিমালয়, আল্পস, অযোধ্যা, শুশুনিয়া, বিহারীনাথ, বিন্ধ্য, আরাবল্লী ইত্যাদি।

গ্রন্থ নাম— গীতা , গীতাঞ্জলী , মহাভারত , রামায়ন , কোরান,বাইবেল , বেদ ইত্যাদি।

প্রতিষ্ঠান— কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী, বসু বিজ্ঞান মন্দির ইত্যাদি।

পত্র-পত্রিকার নাম— দেশ পত্রিকা, আনন্দবাজার, প্রথম আলো, অমৃতবাজার, শুকতারা ইত্যাদি।

সমুদ্রের নাম— প্রশান্ত মহাসাগর,ভারত মহাসাগর,বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর, আটলান্টিক ইত্যাদি ।

২. জাতি বাচক বা শ্রেণিবাচক বিশেষ্য

যে বিশেষ্যপদ কোনো জাতি, শ্রেণি বা একই বৈশিষ্ট্য (ধর্ম) সম্পন্ন ব্যক্তি, প্রাণী বা অপ্রাণীকে বোঝায় তাকে জাতিবাচক বা শ্রেণিবাচক বিশেষ্য বলে।

জাতিবাচক বিশেষ্য কোনো কিছুকে নির্দিষ্ট করে না। জাতিবাচক বিশেষ্য নির্দিষ্টভাবে প্রযুক্ত হলে সংজ্ঞা বাচক বিশেষ্যে পরিণত হয়। যখন আমরা বলি— ‘পাখি গান করে।’ তখন কোন পাখি গান করে তা নির্দিষ্ট নয়। টিয়া, ময়না, ফিঙ্গে, শ্যামা, কাকাতুয়া যে কোনো পাখি হতে পারে। তাহলে ‘পাখি’ জাতিবাচক বিশেষ্য। কিন্তু যখন বলি— ‘শ্যামার নরম গান শুনেছিল।’ তখন আমরা অন্য কোনো পাখিকে না বুঝে শুধু ‘শ্যামা’-কেই বুঝি। এখানে ‘শ্যামা’ সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য। যেমন— মানুষ , পাখি , গরু , বাঘ, কীট , গাছ, হিন্দু,মুসলমান , খ্রিস্টান , বৌদ্ধ , মাছ ইত্যাদি।

ক) মানুষ মরণশীল।
খ) ‘কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি।’
গ) ‘হিন্দু  না মুসলিম  ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?’
ঘ) বনে থাকে বাঘ।
ঙ) একটি গাছ একটি প্রাণ।

৩. বস্তুবাচক বিশেষ্য

যে বিশেষ্য অ-প্রাণীবাচক জিনিস বা পদার্থের নাম বোঝায় তাকে বস্তুবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন— লোহা, চিনি, কাগজ, জল, তেল, আকাশ, টাকা, কয়লা ইত্যাদি। প্রয়োগ দৃষ্টান্ত: ‘কালি কলম মন লেখে তিন জন।’

৪. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য

যে বিশেষ্যপদ বস্তু, প্রাণী, বা ব্যক্তির সমষ্টি বোঝায় তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে। সমষ্টিবাচক বিশেষ্য সাধারণত সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্যের সমষ্টি বোঝায়। সাধারণত একবচন থেকে বহুবচন করার সময় সমষ্টিবাচক বিশেষ্যগুলি ব্যবহার করে বহুবচন করা হয়। যেমন—দল, সভা, সমিতি, শ্রেণি, পাল, সংঘ, সমাজ, জনতা, গুচ্ছ, স্তবক, বাহিনী,  ঝাঁক, মালা, গোষ্ঠী ইত্যাদি।

প্রয়োগ দৃষ্টান্ত: পদ্মকোশের বজ্রমণি ওই আমাদের ছেলের দল।’ ‘আমরা বেঁধেছি কাশেরগুচ্ছ ,গেঁথেছি শেফালিমালা।’ বুরুণ্ডির মাঠে আজ সভা আছে। সমস্ত কাজ পরিচালনা করছে লক্ষ্মীবাঈ মহিলা সমিতি। ‘রাখাল গরুর পাল যায় মাঠে।’ ছাত্র-সংঘের  অনুষ্ঠান চলছে। ছাত্র-সমাজ আগামীর পথনির্দেশক। ‘রোডেডেনড্রণ গুচ্ছ’ ‘এক ঝাঁক  বলাকা পথ হারালো।’

৫. সংখ্যাবাচক বিশেষ্য

বিভিন্ন সংখ্যাবাচক শব্দগুলি যখন বিশেষ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় তখন তাকে সংখ্যাবাচক বিশেষ্য বলে। এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত ইত্যাদি সংখ্যাবাচক শব্দ যখন শুধু সংখ্যামাত্রের বোধক হয়, তখন তা বিশেষ্য। যেমন—একে একে দুই হয়। আবার যখন কোনো পদের সংখ্যাবোধক হয় , তখন বিশেষণ। যেমন—গাছের ডালে পাঁচটি পাখি বসে আছে।

প্রয়োগ দৃষ্টান্ত: ‘আমি সাতে-পাঁচে থাকি না।’ ‘দশে মিলি করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ।’

৬. গুণবাচক বিশেষ্য

যে বিশেষ্যপদ কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর দোষ, গুণ, প্রকৃতি, ধর্ম, ভাব ইত্যাদি প্রকাশ করে তাকে গুণবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন—স্নেহ, মমতা, নিষ্ঠা, সরলতা, শ্রদ্ধা, পাপ, প্রতিভা, সাহস, ভক্তি, ইত্যাদি।

প্রয়োগ দৃষ্টান্ত: মাতৃস্নেহ  পরম রত্ন। কর্মে  নিষ্ঠা  থাকলে সাফল্য অবশ্যম্ভাবী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্য জগতে বিরল প্রতিভা।

৭. অবস্থাবাচক বিশেষ্য

যে বিশেষ্যপদে কোনো ব্যাক্তি বা বস্তুর অবস্থা প্রকাশ পায় ,তাকে অবস্থাবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন—শৈশব, বার্ধক্য, যৌবন, সুখ, দুঃখ, স্বাধীনতা, যন্ত্রণা, শান্তি ইত্যাদি।

প্রয়োগ দৃষ্টান্ত: ‘সুখে আছে সর্ব চরাচর।’ স্বাস্থে-সম্পদে আমরা ভালোই আছি। শান্তিতে বাস করো।

৮. ভাববাচক বিশেষ্য

যে বিশেষ্যপদে প্রাণীর মনের বিশেষ ভাব প্রকাশিত হয় তাকে ভাববাচক বিশেষ্য বলে। যেমন— সুখ, তৃপ্তি, আনন্দ, বেদনা, উল্লাস, ক্রোধ, নৈরাশ্য ইত্যাদি।

প্রয়োগ দৃষ্টান্ত: জীবনে সুখ নাই। আনন্দ, বেদনা জীবনেরই অঙ্গ।
ভাববাচক বিশেষ্য প্রয়োগের কারণে কখনো কখনো অবস্থাবাচক বিশেষ্য ও হতে পারে। জীবনে সুখ নাই। (ভাববাচক বিশেষ্য)। সে সুখেই আছে। (অবস্থাবাচক)।

৯. ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য

যে বিশেষ্যপদে কোনো কাজের নাম বোঝায় বা ক্রিয়ার  ভাব নির্দেশ করে, তাকে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বলে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো যে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য ও ক্রিয়াপদ  এক জিনিস নয়। ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য শুধুমাত্র কাজটির নামকে বোঝায়, কিন্তু ক্রিয়াপদ ইচ্ছা করা, হওয়া, থাকা ইত্যাদিকে বোঝায়। যেমন—চলন, গমন, শয়ন, পঠন, আসা, যাওয়া, দর্শন, খাওয়া, শোনা ইত্যাদি।

প্রয়োগ দৃষ্টান্ত: ‘গল্পটা অন্তত পাঁচ জনের মুখে শোনা হয়েছে।’ অনেকেরই খাওয়া হয়নি। ‘আমার নাই বা হলো পারে যাওয়া।’ ‘লিখন তোমার ধুলায় হয়েছে ধূলি।’

বিশেষ্যের রূপগত শ্রেণিবিভাগ

রূপের দিক থেকে বিশেষ্যকে তিনভাগে ভাগ করা যায়— রূপাত্মক বিশেষ্য, অরূপাত্মক বিশেষ্য এবং অর্ধ-রূপাত্মক বিশেষ্য। রূপাত্মক বিশেষ্যের একটি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য রূপ আছে। সংজ্ঞাবাচক, জাতিবাচক, বস্তুবাচক এবং সমষ্টিবাচক— এই চারপ্রকার বিশেষ্য চোখে দেখা যায় বলে এগুলি রূপাত্মক বিশেষ্য। অরূপাত্মক বিশেষ্যের কোনো রূপ নেই। সুতরাং এক শ্রেণির বিশেষ্যগুলিকে চোখে দেখা যায় না। গুণবাচক, ভাববাচক এবং ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যগুলি হল অরূপাত্মক বিশেষ্য। অর্ধ-রূপাত্মক বিশেষ্য সম্পূর্ণ রূপাত্মকও নয়, অরূপাত্মকও নয়। এদের চোখে দেখা যায় না কিন্তু এদের অস্তিত্ব উপলব্ধি করা যায়। অবস্থাবাচক, সংখ্যাবাচক এবং কিছু কিছু ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য এই শ্রেণিতে পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!