//
//

বৈষ্ণব পদাবলির উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা কর।

বৈষ্ণব পদাবলি

উৎস ও ক্রমবিকাশ

‘বৈষ্ণব’ আখ্যায়বিষ্ণু যাঁদের উপাস্য দেবতা, বিষ্ণুর উপাসক, বিষ্ণুভক্ত, বিষ্ণু সম্বন্ধীয় বোঝালেও বিষ্ণুর সঙ্গে কৃষ্ণকে অভেদে দেখার ঐতিহ্য ভারতীয় সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বহু প্রাচীন। আমরাও পদাবলীর বিশেষণ হিসাবে যে ‘বৈষ্ণব’ শব্দ ব্যবহার করেছি তা বাংলাদেশের কৃষ্ণকথাকে উদ্দিষ্ট করেই। তবে বাংলাদেশে কৃষ্ণ শুধু যশোদানন্দনই নন, তিনি শচীনন্দনও বটে; শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য ও শ্রীকৃষ্ণ-তাই বৈষ্ণব পদাবলীর বিষয় যেমন রাধাকৃষ্ণলীলা-কথা তেমনি গৌরলীলা-কথাও।

‘পদাবলি’ কথাটির মধ্যে ‘পদ’ শব্দটি গান বা গীতিকে বোঝায়। বহু প্রাচীনকাল থেকেই এর ব্যবহার। খ্রিস্টপূর্ব যুগে রামায়ণ, মহাভারত এবং হরিবংশ পুরাণ-এ গান বা গীত অর্থ বোঝাতেই ‘পদ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া পঞ্চরাত্র-সংহিতা এবং পুরাণগুলিতেও একই অর্থে ‘পদ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে লেখা ভরতের ‘নাট্যশাস্ত্র’ গ্রন্থেও গীত বা গান অর্থে ‘পদ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। খ্রিস্টীয় প্রথম থেকে চতুর্থ শতকের মধ্যে লেখা কালিদাসের কাব্য ও নাটকগুলির অনেক জায়গায় ‘পদ’ শব্দের অর্থ গান, গীতি বা সংগীত। কালিদাস তাঁর মেঘদূত কাব্যে বীণাধ্বনি প্রসঙ্গে ‘পদ’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন এবং তা গান, সুর ও সংগীতকেই বুঝিয়েছেন। সেইদিক থেকে বিচার করলে পদাবলি হল গীত বা গানের সমাহার। ‘পদাবলি’ শব্দটি বলতে আমরা আজ যা বুঝি তার প্রথম পরিচয় পাওয়া যায় জয়দেব-এর ‘গীতগোবিন্দম্’ কাব্যে। কবি স্বয়ং বলেছেন— ‘মধুরকোমলকান্তপদাবলীং শৃণু তদা জয়দেবসরস্বতীম্’। যদিও এর আগেও ‘পদসমুচ্চয়’ অর্থে ‘পদাবলি’ শব্দের প্রয়োগ করেছেন সপ্তম শতাব্দীর আলংকারিক দণ্ডী—‘শরীরাং তাবদিষ্টার্থ ব্যবচ্ছিন্না পদাবলি’। বাংলার বৈষ্ণবদের কাছেও ‘পদাবলী’ শব্দটি দীর্ঘকাল গান হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। শ্রীচৈতন্য যখন কৃষ্ণবিরহ ভাবনায় অস্থির হতেন তখন তিনি জয়দেব, বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাসের পদ শ্রবণ করে শান্ত হতেন। এইসময় থেকেই বৈষ্ণব সমাজে বৈষ্ণব সাধনার অঙ্গরূপে ‘পদাবলি’ শব্দের ব্যবহার চলতে থাকে। ‘বৈষ্ণব পদাবলি’ নামটিও তখন থেকেই সার্থকতা পেয়েছে। যাঁরা পদ রচনা করেছেন ভক্ত-সাধকের চোখে তাঁরা ‘মহাজন’; তাঁদের রচিত পদসমুচ্চয় ‘মহাজন-পদাবলি’। তাই বৈষ্ণব পদাবলির নামান্তর ‘মহাজন-পদাবলি’।

জয়দেব

বাংলাদেশে রাধাকৃষ্ণলীলার গান একটি সুসম্পূর্ণ কাব্যের আধারে আমাদের প্রথম উপহার দিয়েছিলেন জয়দেব। রাধাকৃষ্ণের বহুবিচিত্র লীলার একটি মাত্র অংশ ‘বসন্তরাস’ জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দম্’ কাব্যে রূপায়িত হয়েছে। বারোটি সর্গে বিভক্ত ‘গীতগোবিন্দম্’ কাব্য নাটকীয় ভঙ্গিময় একটি গীতিকাব্য। তাঁর কাব্যের একটি অসাধারণ সম্পদ হল বাক্‌শিল্প। সংস্কৃতে লিখিত হলেও কাব্যটির শব্দভাণ্ডার বাংলাভাষার দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করছে। শ্রীচৈতব্যদেবের বিশেষ আস্বাদন গীতগোবিন্দের বিষয়বস্তু ও ভাবধারাকে পরবর্তী গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মে আবৃত করেছে। আবার অন্যদিকে তাঁর ভাষা ও ছন্দের ললিতহিল্লোল আধুনিক বাংলা কবিতাকেও প্রভাবিত করেছে।

বড়ু চণ্ডীদাস

বাংলা ভাষায় রাধাকৃষ্ণলীলা কথার প্রথম পূর্ণাঙ্গ কাব্যকার বড়ু চণ্ডীদাস। তাঁর কাব্যকে সম্পাদক বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ নামে চিহ্নিত করেছেন। তেরোটি খণ্ডে বিভক্ত কাব্যটির উপাদান সংগ্রহে কবি পুরাণ ও সংস্কৃত সাহিত্যের সঙ্গে লোকজীবন-প্রচলিত কাব্যকথাকে সযত্নে স্থান দিয়েছেন। তাঁর কাব্যের প্রবণতা ও পটভূমি-উভয়ই গ্রামীণ। জয়দেবের কাব্যে আদি রস স্থান পেলেও ভক্তির প্রকাশও রয়েছে। কিন্তু বড়ু চণ্ডীদাসের কাব্যে কৃষ্ণের ঈশ্বরত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা থাকলেও, জয়দেবের মতো প্রত্যক্ষ ভক্তির প্রসঙ্গ আমরা পাই না। তাই পুরাণ থেকে কাব্যের উপাদান সংগ্রহ করলেও এটি আসলে দেবতার খোলসের আড়ালে মানুষের কাব্য।

বিদ্যাপতি

বিদ্যাপতি মিথিলার কবি হয়েও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে আছেন। ‘চৈতন্যচরিতামৃত’ গ্রন্থ থেকে আমরা জানতে পারি চৈতন্যদেব বিদ্যাপতির পদ আস্বাদন করতেন। সে যুগে বাংলা ও মিথিলার সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ব্যাপকভাবে চলত বলে বিদ্যাপতির পদাবলীও বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। বাংলাদেশে রচিত কাব্য ‘গীতগোবিন্দম্’ থেকে ঋণ গ্রহণ করে বিদ্যাপতি রাজা শিবসিংহের কাছ থেকে ‘অভিনব জয়দেব’ উপাধি লাভ করেছিলেন। অন্যদিকে চৈতন্যোত্তর পদাবলী সাহিত্যেও বিদ্যাপতির প্রভাব বিস্তৃত হয়েছে। গোবিন্দ দাস বিদ্যাপতির মণ্ডনমাধুর্যকে আত্মসাৎ করে নিজেই ‘দ্বিতীয় বিদ্যাপতি’ উপাধি ধারণ করেছেন। তাই বিদ্যাপতি বাংলাদেশের অধিবাসী না হলেও বাঙালির নিজস্ব কবি।

চণ্ডীদাস

পদাবলিকার চণ্ডীদাস মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ভাবে ও ভাষায় এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। কিন্তু তাঁর ব্যক্তি-পরিচয় নিয়ে বাংলা সাহিত্যিকদের ঐতিহাসিকদের বিতর্ক এখন স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। কিন্ত একথা বলা যায় শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের রচয়িতা বড়ু চণ্ডীদাস এবং পদাবলীর চণ্ডীদাস আলাদা ব্যক্তি। চণ্ডীদাস সজহতম ভাষায় প্রেমের গভীর আনন্দ-বেদনার রূপকার। চৈতন্য-পূর্ববর্তী দুই কবি জয়দেব ও বিদ্যাপতির কাব্যের কৃষ্ণলীলার বর্ণনায় যে পরিশীলিত নাগরিকতার পরিচয় পাওয়া যায় চণ্ডীদাস তাঁর বিপরীত। তিনি গ্রামীণ কবি। বাংলা পল্লী জীবনের রূপ,রং,রস ও তার বর্ণবিরল সহজ প্রগাঢ় শ্যামলিমা নিয়ে চণ্ডীদাসের পদে উপস্থিত। চণ্ডীদাসের কাব্য রাধাময়। তাঁর রাধা বাংলাদেশের এক লোকগঞ্জনাভীতা কুলবধূ। কিন্তু তার অসাধারণত্ব কৃষ্ণপ্রেমের বিশিষ্টতায়। চণ্ডীদাসের পদাবলীর সর্বত্র ছড়িয়ে আছে এই কৃষ্ণপ্রেমের জন্য রাধার হৃদয়ে ব্যাকুল আর্তি ও যন্ত্রণা।

শ্রীচৈতন্যদেব ও পদাবলি

ষোড়শ শতাব্দীতে চৈতন্যদেবের আবির্ভাব সমগ্র বাঙালি জাতিকেই নতুন ভাবে জাগিয়ে তুলেছিল। বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতিটি রন্ধ্রে তাঁর মহাজীবনের প্রভাব এখনো বিদ্যমান। বাংলা সাহিত্য, সঙ্গীত, ধর্ম ও সমাজ জীবনে কোনো একটা মানুষের প্রভাব এতটা লোকায়ত হয়নি। বাংলা পদাবলী সাহিত্যেই শ্রীচৈতন্যের প্রভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। বাংলা সাহিত্যে পদাবলির ধারা জয়দেব থেকে বিদ্যাপতি চণ্ডীদাসের মধ্যে দিয়ে চৈতন্যযুগে প্রবেশ করেছে। চৈতন্য-পূর্ববর্তী কবিগণ যে রাধাকৃষ্ণলীলা বর্ণনা করেছেন সেখানে মধুর রসাত্ম লীলাই সর্বাধিক গুরুত্ব লাভ করেছে। কিন্তু চৈতন্যদেবের আবির্ভাবের পর পদাবলি সাহিত্যের প্রকরণ ও ভাব-দুদিক থেকেই দেখা দিল অজস্র বৈচিত্র্য। এখন আর শুধু রাধাকৃষ্ণলীলা নয়, চৈতন্যদেবের সন্ন্যাস জীবন এবং সন্ন্যাস-পরবর্তী জীবন নিয়ে রচিত হল একাধিক গৌরচন্দ্রিকা ও গৌরাঙ্গ-বিষয়ক পদ। মধুর রসের সঙ্গে সঙ্গে বাৎসল্য ও সখ্যরসের একাধিক পদ রচিত হল যা চৈতন্য-পূর্ববর্তী যুগে ছিল না। চৈতন্যদেবের প্রভাবে বৈষ্ণব দর্শন ও অলংকার শাস্ত্র পদাবলির ধারাকে নিয়ন্ত্রিত করল। যা আগে ছিল কেবলমাত্র পদাবলী তা এখন পরিণত হল গৌড়ীয় বৈষ্ণব পদাবলি।

শ্রীচৈতন্য সমকালীন ও অব্যবহিত পরবর্তী কবিগণ

ষোড়শ শতাব্দীকে বলা হয় বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের স্বর্ণযুগ। শ্রীচৈতন্যদেবের প্রত্যক্ষ প্রভাবে এই সময় অসংখ্য পদকর্তা পদ রচনায় প্রবৃত্ত হন। শ্রীচৈতন্যের সঙ্গে যে-সব ভক্ত মিলিত হয়েছিলেন তাঁরা হলেন—নরহরি সরকার, মুরারি গুপ্ত, গোবিন্দ ঘোষ, বাসুদেব ঘোষ, মাধব ঘোষ, শিবানন্দ সেন, বংশীবাদন আচার্য, মুকুন্দ দত্ত, বাসুদেব দত্ত, বলরাম দাস, পরমেশ্বর দাস, পুরুষোত্তম দাস প্রমুখ। এঁরা প্রত্যেকেই গৌরচন্দ্রিকা ও গৌরাঙ্গ-বিষয়ক পদ রচনায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন।

বলরাম দাস

চৈতন্য সমসাময়িক পদকর্তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বলরাম দাস। গৌরাঙ্গবিষয়ক পদরচনায় কৃতিত্ব দেখালেও তাঁর কবি প্রতিভার চূড়ান্ত বিকাশ ঘটেছে বাৎসল্য ও সখ্য রসে। বলরাম দাসের বাৎসল্য রসের প্রধান চরিত্র দুটি-স্নেহবিমুগ্ধা জননী যশোদা এবং মাতৃস্নেহ সিঞ্চিত বালক শ্রীকৃষ্ণ। পটভূমিতে বলরাম-জননী রোহিণী, বলরাম, শ্রীদাম, সুদাম প্রভৃতি। এই বাৎসল্য রসের পদে যশোদা ও শ্রীকৃষ্ণের সম্পর্ক দেশকাল নির্বিশেষ হলেও তা বাঙালি পরিবারের মাতা ও সন্তানের সহজ স্বাভাবিকতার উপর প্রতিষ্ঠিত। বলরাম দাসের পদে বাৎসল্য বর্ণনায় যেন মাধুর্য নির্গলিত। সেই মাধুর্যের প্রকাশ জননী যশোদার উদ্বেগে এবং চঞ্চল বালকের অজস্র অসঙ্গত আচরণ সত্ত্বেও তার প্রতি সশঙ্ক স্নেহে। বলরাম দাসের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল সরলতা এবং অনাড়ম্বর ভাব। তিনি সরল আবেগময় প্রকাশে বিশ্বাস করতেন। তাই তাঁর বাৎসল্য রসের ক্ষেত্রে অতি সূক্ষ্ম ভাবানুভূতি কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেনি।

জ্ঞানদাস

জ্ঞানদাসের প্রতিভার স্ফূর্তি ঘটেছে পূর্বরাগ, অনুরাগ, রূপানুরাগ ও রসোদ্‌গারের পদে। স্নিগ্ধ মাধুর্যের অবিরল উৎসারণ জ্ঞানদাসের পদের বৈশিষ্ট্য। পূর্বরাগ ও অনুরাগেও সেই স্নিগ্ধতার প্রকাশ। প্রথম দিকে জ্ঞানদাস চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতি উভয়কেই অনুসরণ করেছেন কিন্তু বিদ্যাপতির পদে যেখানে শুধুমাত্র রাধার রূপের বর্ণনা প্রাধান্য পেয়েছে, জ্ঞানদাস সেখানে সুকৌশলে নায়ক-নায়িকার প্রথম মিলনের চিত্রটিকেও মনস্তত্ত্বসম্মতভাবে উপস্থিত করেছেন কিন্তু জ্ঞানদাসের প্রতিভা যখন আত্মপ্রকাশের নিজস্ব পথ খুঁজে পেয়েছে, তখন তাঁর পূবর্রাগ-অনুরাগের পদে সঞ্চারিত হয়েছে অনাড়ম্বর ভাষায় সেই মার্জিত লাবণ্য। তাঁর ‘রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর’-পদটিতে শ্রীকৃষ্ণের রূপ এবং গুণ দুই রাধাকে আকর্ষণ করেছেন। দেহ মিলনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা ধরা পড়েছে পদটির মধ্যে। বিদ্যাপতির রাধার অনুরাগ সবসময় দেহকামনাসর্বস্ব, অন্যদিকে চণ্ডীদাস অনুভূতিসর্বস্ব। কিন্তু জ্ঞানদাসের পদে দেহ এবং মন-উভয়ের নিবিড় সম্পর্ক একাত্মতা লাভ করেছে।

গোবিন্দদাস

গোবিন্দদাস মধ্যযুগীয় সাহিত্যের এক ভাস্বর প্রতিভা। রাধাকৃষ্ণলীলা নিয়ে রচিত তাঁর পদাবলীর বিষয়বস্তু পূর্ববর্তী কবিদের ধারানুবর্তী। কিন্তু অলংকার ব্যবহারে, মণ্ডনকলা নৈপুণ্যে, অপূর্ব ছন্দঝংকারে এবং শব্দ ব্যবহারের সুমিত কুশলতায় গোবিন্দদাস বিদ্যাপতির সার্থক উত্তরসূরি। তাই বল্লভদাস কবিকে ‘দ্বিতীয় বিদ্যাপতি’ নামে অভিহিত করেছেন। গোবিন্দদাস ভক্তের শ্রদ্ধা, শিল্পীর রূপদর্শনের মুগ্ধতা ও তন্ময়তা নিয়ে রাধাকৃষ্ণের রূপবর্ণনা করেছেন। কিন্তু জ্ঞানদাসের মতো তিনি আবেগের আতিশয্যে তন্ময় হয়ে পড়েননি। অত্যন্ত সচেতনভাবে নিজস্ব অনুভূতি দিয়ে তিনি রাধাকৃষ্ণের রূপ বর্ণনা করেছেন। কেবল রাধাকৃষ্ণলীলা নয়, গৌরাঙ্গবিষয়ক পদ রচনাতেও গোবিন্দদাস অসামান্য কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর অপূর্ব কাব্যসৌন্দর্যময় ভক্তিমিশ্রিত ও ভাবসমৃদ্ধ গৌরাঙ্গবিষয়ক পদ বৈষ্ণপ পদাবলী সাহিত্যের মূল্যবান সম্পদ। এই পর্যায়ের তিনি শ্রেষ্ঠ কবি। শ্রীচৈতন্যকে তিনি স্বচক্ষে দেখেননি। কিন্তু নিজ কবিহৃদয়ের কল্পনা এবং ভক্তহৃদয়ের আকুতি মিশিয়ে তিনি অপরূপ সৌন্দর্যময় শ্রীগৌরাঙ্গের ভাবতন্ময় দিব্যমূর্তি অঙ্কন করেছেন। তাঁর পদের মধ্যেই আমরা শ্রীচৈতন্যের পূর্ণরূপ লাভ করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!