রঙ্গমঞ্চের ইতিহাসে মেট্রোপলিটান থিয়েটারের অবদান আলোচনা কর।

রামগোপাল মল্লিকের মেট্রোপলিটান থিয়েটার

চিৎপুরের সিঁদুরিয়াপট্টিতে রামগোপাল মল্লিকের প্রাসাদে মেট্রোপলিটান থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে। ছয় বছর আগে এইখানেই মেট্রোপলিটান কলেজ স্থাপিত হয়েছিল। সেই স্থানেই মুরলীধর সেনের স্বত্ত্বাধিকারিত্বে এই থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয়। কেশবচন্দ্র সেন রঙ্গমঞ্চাধ্যক্ষ ছিলেন।

উমেশচন্দ্র মিত্রের ‘বিধবাবিবাহ’ নাটক এখানে অভিনীত হয় ২৩ এপ্রিল, ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে। দ্বিতীয়বার ওই একই নাটকের অভিনয় হয় ওই বছরেরই ৭ মে তারিখে। ১৮৫৬-তে বিধবাবিবাহ আইন চালু হওয়ার পর এদেশে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এই থিয়েটারের কর্তৃপক্ষ এবং নাট্যকার সকলেই বিধবাবিবাহের সপক্ষে ছিলেন। উমেশচন্দ্র মিত্র তাঁর নাটকে বিধবা নারীদের মর্মযাতনা এবং সমাজপতিদের নিষ্করুণ নিষ্ঠুরতা বর্ণনা করেছেন। বিধবাবিবাহের সপক্ষে বিপক্ষে এই সময়ে অনেক নাটক রচিত হয়েছিল। উমেশ মিত্রের এই মৌলিক নাটকটি এখানে অভিনয়ের জন্য দৃশ্যপটগুলি এঁকেছিলেন মিঃ হলবাইন। চিত্রপটগুলি সুচিত্রিত ছিল। সঙ্গীত খুবই মনোহর হয়েছিল। গান রচনা করেছিলেন দ্বারকানাথ রায় এবং সুর দেন রাধিকাপ্রসাদ দত্ত। কেশবচন্দ্র সেন ও তাঁর জীবনীকার প্রতাপচন্দ্র মজুমদার অভিনয়ে অংশ নেন। কেশবচন্দ্র ছাত্রজীবনে ‘হ্যামলেট’ নাটকে অভিনয়ে যে দক্ষতা অর্জন করেন, তাই এখানে কাজে লাগান। এছাড়া টোলপণ্ডিত, তর্কালঙ্কার, ভট্টাচার্য, সুখময়ী প্রভৃতি চরিত্রের অভিনয় উৎকৃষ্ট হয়েছিল।

বিদ্যাসাগর মেট্রোপলিটান থিয়েটারের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি দু’বারই ‘বিধবাবিবাহ’ নাটকটির অভিনয় দেখেন এবং দুঃখে চোখের জল ফেলেন। অবশ্য নাট্যাভিনয়ের উৎকর্ষের জন্য যতটা, তার চেয়ে অনেক বেশি ‘হিন্দু নারীর চিরবৈধব্য ভোগের কুফল’ মঞ্চে প্রত্যক্ষ করেই তার এই অশ্রুপাত!

এই মৌলিক সমাজসংস্কারমূলক নাটকটি অভিনয়ের ফলে কলকাতায় খুবই উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। ‘কুলীনকুলসর্বস্ব’ নাটকের ধারা বেয়েই সখের মঞ্চে সমাজসংস্কারমূলক নাটক আদৃত হতে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!