রোমান্টিসিজম সম্পর্কে আলোচনা কর।
রোমান্টিসিজম
রোমান্টিকতাবাদ বা রোমান্টিসিজম (Romanticism) বা রোম্যান্টিক যুগ ছিল একটি শৈল্পিক, সাহিত্যিক, সাংগীতিক এবং মনীষাগত আন্দোলন যা অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে ইউরোপে উদ্ভূত হয়েছিল এবং বেশিরভাগ অঞ্চলগুলিতে আনুমানিক ১৮০০ থেকে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত সময়ে শীর্ষে ছিল। রোমান্টিকতাবাদ আবেগ এবং ব্যক্তিত্ববাদের উপর জোর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত অতীতচারীতা ও প্রকৃতির গৌরব দ্বারা চিহ্নিত হয়োছল, যা ধ্রুপদী যুগের চেয়ে সামন্তবাদী বৈশিষ্ট্যকে বেশি পছন্দ করেছিল।
অষ্টাদশ শতকে ইংরেজি সাহিত্যে প্রচলিত সাহিত্যতত্ত্ব তথা রীতির বিরুদ্ধে দ্রোহ, নিসর্গ প্রেম, দরিদ্র ও নিপীড়িত মানবাত্মার প্রতি সহানুভূতি, অতিপ্রাকৃতের প্রতি আগ্রহ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য গুলি এক বৃহত্তর সাহিত্য-আন্দোলনের দিকে অঙ্গুলি সংকেত করছিল যা পরে চিহ্নিত হয়েছিল রোমান্টিকতাবাদ নামে।
রোমান্টিকতাবাদ আংশিকভাবে শিল্প বিপ্লবের বা আধুনিকতার সমস্ত উপাদান যথা আলোকায়নের যুগের অভিজাত সামাজিক এবং রাজনৈতিক নিয়ম এবং প্রকৃতির বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদের প্রতিক্রিয়া ছিল। এটি দৃশ্যকলা, সংগীত এবং সাহিত্যে সবচেয়ে শক্তিশালীরূপে মূর্ত ছিল, তবে ইতিহাসধারা, শিক্ষা, দাবা, সামাজিক বিজ্ঞান এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের উপর এর প্রভাব পড়েছিল। রোমান্টিক চিন্তাবিদ্রা উদারবাদ, আমূলসংস্কারবাদ, রক্ষণশীলবাদ এবং জাতীয়তাবাদকে প্রভাবিত করে রাজনীতিতে এর উল্লেখযোগ্য ও জটিল প্রভাব ফেলেছিল।
ইউরোপীয় সাহিত্যে রোমান্টিসিজম
ইউরোপে এনলাইটেনমেন্ট বা আলোকপপ্রাপ্তির যুগের বিপুল কর্মকাণ্ড চলাকালীন জার্মানিতে অষ্টাদশ শতাব্দীর সাতের দশকে শুরু হয় ‘স্টর্ম এন্ড ড্রাং’ ঝড় ও চাপ (এটি ক্লিংগারের ১৭৭৬ সালের নাটকের উপশিরোনাম) আন্দোলন, ঘোষিত হয় কঠোর নিয়ম ও কৃত্রিমতার বিরুদ্ধে জেহাদ। গ্যেটের উপন্যাস তরুণ ওয়ের্খরের দুঃখ (১৭৭৪) ইউরোপে মুক্তির আধিক্যের বদলে কল্পনার ভাবালুতাকে প্রাধান্য দিয়ে এই আন্দোলনের প্রথম পর্ব প্রতিষ্ঠা করে। তৈরি হলো রোমান্টিক শিল্পীর ধারণা, যেখানে ‘শিল্পী’ হলো নির্বাচিত প্রাকৃতিক দৈবিক শক্তি এবং শিল্পকর্ম স্বতন্ত্র ও অভিনব। প্রাপ্ত-বয়স্কদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিপরীতে প্রাকৃতিক, শিশু, অসভ্যতা আদর্শ হিসেবে চিহ্নিত হলো, না পাওয়ার বেদনায় সার্থক হলো রোমান্টিক প্রেম।
এরপরে ক্লাসিক পর্বে গ্যেটে ছাড়াও লিখছেন হোল্ডারলিন, শিলার প্রমুখ। নোফালিস, টিক, শ্লেগেল ভ্রাতদ্বয়, একেরনাম-রা ১৮০০ নাগাদ শুরু করেন শেষ ‘রোমান্টিক’ পর্ব। জার্মানিতে রোমান্টিক আন্দোলনকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন কয়েক দশক আগে থেকেই ব্লপস্টক, উইলাভ, হার্ডার বা ফ্রান্সের রুশো, দিদেরো প্রমুখ। তারাই প্রথম এনলাইটেনমেন্টের একরৈখিক প্রগতি সম্পর্কে সন্দেহ ও প্রশ্ন করা শুরু করেন। জার্মানিতে দর্শন, রাজনীতি, ধর্ম, বিজ্ঞান, চিত্রকলা, সংগীত, সাহিত্য-শিন্নকলার সমস্তক্ষেত্রেই এআন্দোলনের বিশাল প্রভাব পড়েছিল।
ইংল্যান্ডে কিন্তু রোমান্টিক আন্দোলন প্রধানত সাহিত্য এবং বিশেষত কবিতার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল। ১৭৯৮-তে ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও কোলরিজের লিরিকাল ব্যালাড়স রোমান্টিক আন্দোলনের উর্বরপর্বের উদ্বোধন করে। প্রতিভাবান ইংরেজ কবি ব্রেক অবশ্য অনেক আগে থেকেই ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে ‘শিল্লী-পরিত্রাতা’-কে নতুন যুগের আহ্বায়ক হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। ইংল্যান্ডে রোমান্টিক আন্দোলন খানিকটা স্থানীয় রীতি অনুসারে গড়ে উঠেছিল। এছাড়া শিল্প-বিপ্লবের ফলে শহরের দূষিত পরিবেশের সৃষ্টি হলে তার বিরুদ্ধে প্রকৃতি প্রেমকে শ্রেষ্ঠ বলে প্রতিষ্ঠা করা রোমান্টিকতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে উঠেছিল। ধর্মের প্রতাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য খ্রিস্ট্রপূর্বযুগে অথবা ‘অজানা’ আফ্রিকা বা প্রাচ্যের সংস্কৃতিতে মাহাত্ম্য আরোপ করাও ছিল রোমান্টিক তত্ত্বের অংশ বিশেষ। তার উপর ইংল্যান্ডে পড়েছিল ফরাসি বিপ্লবের প্রভাবও। রোমান্টিক আন্দোলনের প্রথম পর্বে (১৭৯৮-১৮০৬) ওয়ার্ডসওয়ার্থের নেতৃত্বে কোলরিজ, ক্র্যাব, কেয়ার প্রমুখ লেখা শুরু করেন। ১৮০৫-১৮১০ কে বলা যায় স্কট ও ক্যাম্ববেল, মুর, সাদে প্রমুখের সময় এবং শেষপর্ব (১৮১৮-১৮২২) হল শেলি, কিউস, বায়রন প্রমুখের যুগ। (এ যুগ-গোষ্ঠী বিভাগ নিয়ে মতান্তরের সীমা নেই)। মোট কথা বিখ্যাত ইংরেজ কবিরা যখন প্রায় সকলেই মৃত, তখনই প্রতিবেশী রাজ্য ফ্রান্সে রোমান্টিক আন্দোলনের ঢেউ গিয়ে পড়ল।
১৮২০-তে লামারতিন-এর ‘মেদিতাসয় পোএতিক’ প্রকাশিত হয়। বলা যায় এ বইই রোমান্টিক আন্দোলনের সূচনা করে। ফ্রান্সে সাহিত্যকে নব্য ধ্রুপদী নিয়মের কবল থেকে মুক্ত করাই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। জার্মান কবিদের সঙ্গে মিশে মাদাম দ্য স্কাইল লেখেন ‘দ্য ল আলেমন’ (১৮১০)। শুধু তাই-ই নয়, ওঁর সালোঁয় আড্ডার নির্দিষ্ট কার্যাবলিতেই ছিল তরুণ কবিদের নতুন চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ করা। ফ্রান্সে সাধারণ পাঠক পাঠিকারাও নব্য ধ্রুপদী রুচিতে এতটা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল যে লামারতিন ভিনি, শাতোব্রিয়া দ্য মুসে প্রমুখের পক্ষে প্রতিভার জোরে জায়গা করে নেওয়া মোটেই সহজ ছিল না। ১৮৩০-এ ভিক্টর হুগো-র হেননানি নাউককে ঘিরে যে যুদ্ধ হলো তাতে অবশেষে রোমান্টিক যুগ স্বীকৃতি পেল। প্রখ্যাত ফরাসি রোমান্টিক কবি বোদলেয়ারের ‘লে ফ্লর দু মাল’ (১৮৫৭) রোমান্টিক ধারাকে অবলম্বন করেও সম্পূর্ণ নতুন এক পথের দিশা দিলে জন্ম হয় প্রতীকীবাদের। এক অর্থে রোমান্টিকতার মধ্যেই ছিল আধুনিকতার বীজ। স্তাদাঁল লিখেছেন সব আধুনিক সাহিত্যই রোমান্টিক, অর্থাৎ সব সাহিত্যিকই তার নিজের যুগে রোমান্টিক (এ অবশ্য নেহাতই অত্যুক্তি)। ফ্রান্সেও রোমান্টিক আন্দোলন কেবলমাত্র সাহিত্যের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল।
রোমান্টিকতাবাদ প্রধানত ত্রিদেশীয় হলেও ইতালিতে লিওপার্দি (১৭৯৮-১৮৩৭), যানজোন (১৭৮৫-১৮৭৩) ও ফোসকোলো (১৭৭৮-১৮২৭); পোল্যান্ডে মিকিউইক্স (১৭৯৮-১৮৮৫) ও স্লোওয়াকি ১৮০৯-৪৯); স্পেনে এস প্রোনসেডা (১৮০৮-৪২); রুশদেশের পুশকিন (১৭৯৯-১৮৩৭) ও লেরমেনতভ (১৮১৪-৪১) যুক্তরাষ্ট্রে মেলভিল (১৮১৯-৯৯) প্রমুখ এর অংশীদার ছিলেন।
রোমান্টিসিজমের বৈশিষ্ট্যসমূহ
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম তিন দশকের প্রধান লেখকদের মধ্যে যে ‘রোমান্টিক’ আদর্শ ও বৈশিষ্ট্যসমূহ লক্ষিত হয়, যা নিও-ক্লাসিক ধারা থেকে তাদের স্বতন্ত্র করেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১. বিষয়বস্তু, আঙ্গিক, রচনাশৈলীর ক্ষেত্রে গতানুগতিক প্রচলিত ধারা অনুসরণ করার পরিবর্তে রোমান্টিক সাহিত্য আন্দোলন ছিল নতুন কিছু সৃষ্টির প্রবণতা। প্রাচীন ক্লাসিকাল লেখকদের রীতির সঙ্গে মিল থাকার বিষয়টিকে তারা গুরুত্ব দিলেন না। রোমান্টিক কবিতার যাত্রা শুরু হলো এক ধরনের প্রতিবাদী বিদ্রোহাত্মক ঘোষণাপত্রের মধ্যে দিয়ে। ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও কোলরিজের ‘লিরিকাল ব্যালাডস’-এর দ্বিতীয় সংস্করণের (১৮০০) ভূমিকায় বলা হলো যে কবিতার বিষয় হবে ‘common life’ এবং তার ভাষা হবে “a selection of language really used by men.’’ রোমান্টিক কবিরা নিওক্লাসিক যুগের লেখকদের কাব্যিক ভাষা (poetic diction), মার্জিত সচেতন শালীনতা, নিয়ন্ত্রিত আবেগ পরিহার করলেন। তাদের কবিতায় একদিকে দেখা দিল সহজ সরল সাধারণ গ্রামীণজীবন, অন্যদিকে অতীন্দ্রিয় অপার্থিব জগৎ এবং রহস্যময় সুদূর অতীতের আবেগঘন উপলব্ধি।
২. ‘লিরিকাল ব্যালাডস’-এর ভূমিকায় ওয়ার্ডসওয়ার্থ বারবার ভালো কবিতাকে বর্ণনা করেছেন “the spontaneous overflow of powerful feelings” বলে। এখানে জোর পড়ল স্বতঃস্ফূর্ততার উপর; নিয়ম মানা; আয়াসসাধ্য, সচেতন শিল্পসৃষ্টির উপর নয়। নিওক্লাসিক পূর্বসূরিদের সঙ্গে অন্যতম মৌল পার্থক্য এখানেই। কীটস লিখলেন—“if poetry comes not as naturally as the leaves to a tree, it had better not come at all.”
৩. রোমান্টিক কাব্যে বহিপ্রকৃতি, গাছপালা, ফল-ফুল-পাখি, নদী সমুদ্র আকাশ পর্বত প্রভৃতিকে দেখা গেল নিরাভরণ সৌন্দর্যের মধ্যে। এই কাব্যে প্রকৃতির চিত্র পাওয়া গেল একদিকে ইন্দিয়গ্রাহ্য সৌন্দর্যানুভূতির মধ্যে, অন্যদিকে আধ্যাত্মিক অতীন্দ্রিয় উপলব্ধির মধ্যে এবং প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকলো মানবিক ক্রিয়াকলাপ। ওয়ার্ডসওয়ার্থ উচ্চারণ করলেন যে মানুষের মনই হচ্ছে—“my haunt, and the main reign of my songs.”
৪. নিওক্লাসিক কবিতার বিষয়বস্তু হচ্ছে অন্য মানুষ, কিন্ত রোমান্টিক কবিতার বিষয় প্রধানত কবি নিজে, সেখানে তার আপন চিন্তা, ভাবনা, আবেগ, অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা মূর্ত হয়ে ওঠে। অনেক সময় এটা ঘটে প্রত্যক্ষভাবে। বহু গীতিকবিতায় আমরা তা দেখি। ওয়ার্ডসওয়ার্থের ‘প্রিলিউড’-এও তার পরিচয় স্পক্ট। কখনো কখনো এর প্রকাশ ঘটে পরোক্ষ। কবি নিজের নামে কথা বলেন না, কিন্তু তাকে চিনে নিতে পাঠকের কষ্ট হয় না। স্মরণ করুন বায়রনের ‘চাইন্ড হ্যারন্ড’-এর কথা। তবে রোমান্টিক বিষয়বস্তু, তথা ব্যক্তি, কবি নিজে হন কিংবা অন্য কেউ হন, তিনি কোনো সুসংগঠিত সমাজের অংশ নন, বরং তাকে আমরা দেখি একাকী, নিঃসঙ্গ, সভ্য-সমাজের গতানুগতিক গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসা, প্রায়ই বিদ্রোহী রূপে।
৫. ফরাসি বিপ্লবের মধ্যে মানুষের সীমাহীন সম্ভাবনার ষে প্রতিশ্রুতি ছিল তা রোমান্টিক কবিদের সুস্পষ্টভাবে প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত করেছিল। তারা মানুষকে দেখলেন বিপুল সম্ভাবনাময়রূপে। সকল প্রকার অন্যায় অবিচারকে হটিয়ে দিয়ে, সকল কৃত্রিম বাধা ও শৃঙ্খল ছিন করে মানুষ তার মহত্বকে জয়যুক্ত ও প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে এই বিশ্বাসে তারা ছিলেন উজ্জীবিত! ব্যর্থ হলেও তাদের উদ্দেশ্যের নিষ্কলঙ্ক শুত্রতা ও মহত্ব মানুষকে গৌরবান্বিত করবে। রোমান্টিক ফুগের কয়েকটি দীর্ঘ কবিতায় এর প্রতিফলন লক্ষণীয়। স্মরণ করুন শেলীর ‘প্রমিথিউস আনবাউন্ড’ এবং কীটস-এর ‘হাইপেরিয়ন’-এর কথা।
রোমান্টিকতাবাদ আন্দোলনের উদ্ভব ও বিস্তার সম্পর্কে ধারণা কিছু রাজনৈতিক ঘটনায় মনোযোগ দিতে হয়। যারা বলেন আমেরিকার স্বাধীনতাযুদ্ধ (১৭৭৬) এবং ফরাসি বিপ্লব (৭৮৯) রোমান্টিকতার ঐতিহাসিক ভিত্তিভূমি প্রস্তুত করেছিল, তারা এই অর্থেই বলেন—এই দুটি বিপ্লবে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের বহুকাল প্রচলিত, বিধিবদ্ধ ও যান্ত্রিক নিয়মাবলির শৃঙ্খল ভেঙে দেশের জনতার ক্ষোভ, প্রত্যাশা, স্বপ্ন ও সংগ্রাম বাস্তবায়িত হয়েছিল। এই সমগ্র জনতা গড়ে উঠেছিল এক-একজন ব্যক্তি মানুষকে নিয়ে। প্রতিটি সাধারণ মানুষ যে পূর্বনির্ধারিত প্রশাসনবিধির অধীনে বাধ্যতামূলক নিপীড়িত জীবনযাপন করছিল, সেই বৃত্ত ভেওে বেরিয়ে এসে নিজের পৃথিবী গড়ে নিয়ে সেখানে স্বাধীন পদক্ষেপ রাখতে চেয়েছিল সাধারণ মানুষ। যে কোনো দেশেই যে কোনো বিপ্লব তখনই সফল হয়, যখন এভাবে প্রত্যেক ষতন্ত্র ব্যক্তির মনের তরঙ্গগুলো একস্রোতে বাহিত হয়ে সৃষ্টি করে জনসমুদ্র। এই যে রাজা তথা প্রশাসক ব্যক্তি নাগরিককে মুল্য দিতে বাধ্য হলো—এখানেই নিহিত আছে রোমান্টিকতার বীজ ব্যক্তি-অনুভবের মুক্তি এবং স্বাতন্ত্র্য।
যদিও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, বিশেষত জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডে একইসঙ্গে রোমান্টিকতার প্রথম ধারণা অনুভূত হতে শুরু করেছিল তবু এ ব্যাপারে জার্মান দর্শনবিদদের কথা বলতে হবে প্রথমে। অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে, যখন শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে গ্রিক শিল্প ধারণার ধ্রুপদী লক্ষণসমূহ তথা ক্ল্যাসিসিজম ছিল সর্বতোস্বীকৃত তখনও কিন্তু ক্লাসিসিজমের সঙ্গে রোমান্টিসিজমের বিচ্ছেদের ক্ষেত্র একেবারে অসম্ভব হয়নি।
১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ‘ট্র্যাজেডির জন্ম’ নামক গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে ফ্রিডরিক নিটশে রূপাবয়বের বিন্যাসগত সৃষ্টি এবং যুক্তি-বন্ধন-বিহীন প্রবল ভাবাবেগের অনিয়ন্ত্রিত উচ্ছ্বাসের পার্থক্য করে দুটিকে স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন। এখান থেকেই ক্ল্যাসিকের ধারণার রূপগত এবং সংহতি-ঘন প্রাঞ্জল সৌন্দর্যের সৃষ্টিজগৎ ভেঙে অবয়ব-সংগতি বর্জিত তীব্র হৃদয়াবেগের শৈল্পিক অস্তিত্ব স্বীকার করে নেয়া হলো। আত্মস্থ ক্ল্যাসিক নির্মাণ ভেঙে দেখা দিল রোমান্টিকতাবাদ আন্দোলনের মর্মছেড়া যন্ত্রণা। নিটশের মতে চিরকালই ছিল এই সংযোগের পরিসর।
তথ্যসূত্র:
কাব্যজিজ্ঞাসা – অতুলচন্দ্র গুপ্ত | Download |
কাব্যতত্ত্ব: আরিস্টটল – শিশিরকুমার দাস | Download |
কাব্যমীমাংসা – প্রবাসজীবন চৌধুরী | Download |
ভারতীয় কাব্যতত্ত্ব – নরেন বিশ্বাস | Download |
ভারতীয় কাব্যতত্ত্ব – অবন্তীকুমার সান্যাল | Download |
কাব্যজিজ্ঞাসার রূপরেখা – করুণাসিন্ধু দাস | Download |
কাব্য-শ্রী – সুধীরকুমার দাশগুপ্ত | Download |
কাব্যালোক – সুধীরকুমার দাশগুপ্ত | Download |
কাব্যপ্রকাশ – সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত | Download |
নন্দনতত্ত্ব – সুধীর কুমার নন্দী | Download |
প্রাচীন নাট্যপ্রসঙ্গ – অবন্তীকুমা সান্যাল | Download |
পাশ্চাত্য সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্যভাবনা – নবেন্দু সেন | Download |
সাহিত্য প্রকরণ – হীরেণ চট্টোপাধ্যায় | Download |
সাহিত্য জিজ্ঞাসা: বস্তুবাদী বিচার – অজয়কুমার ঘোষ | Download |
Leave a Reply