লিঙ্গের সংজ্ঞাসহ উদাহরণ দাও।
লিঙ্গ
যে সকল শব্দ দ্বারা পুরুষ, স্ত্রী ও অচেতন বস্তুকে চিহ্নিত করা যায়, তাকে লিঙ্গ বলে। লিঙ্গ চার প্রকার— পুংলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ, ক্লীবলিঙ্গ এবং উভয় লিঙ্গ। লিঙ্গ প্রসঙ্গে আর একটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে— কেবলমাত্র প্রাণীবাচক শব্দগুলি পুংলিঙ্গ অথবা স্ত্রীলিঙ্গের পর্যায়ে পড়ে। অ-প্রাণীবাচক শব্দ ক্লীবলিগের অন্তর্গত। সংস্কৃত ব্যাকরণে উভয় লিঙ্গ বলে কোন কিছু নেই; কিন্তু ইংরেজি ব্যাকরণে Common Gender অর্থাৎ উভয় লিঙ্গ আছে।
১. পুংলিঙ্গ
যেসব শব্দ পুরুষ জাতিকে বোঝায়, তাদের পুংলিঙ্গ বলে। যেমন— মানুষ, শিক্ষক, ছাত্র, গোয়ালা, সিংহ ইত্যাদি।
২. স্ত্রী লিঙ্গ
যেসব শব্দ স্ত্রী জাতিকে বোঝায়, তাদের স্ত্রীলিঙ্গ বলে। যেমন— মা, ছাত্রী, শিক্ষিকা, সিংহী, ইত্যাদি।
৩. ক্লীবলিঙ্গ
এমন কিছু শব্দ আছে যাদের দ্বারা পুরুষ অথবা স্ত্রী না বুঝিয়ে অচেতন বস্তুকে বোঝায়, তাদের ক্লীবলিঙ্গ বলে। যেমন— গাছ, ফুল, জামা, বাড়ি, পর্বত, বৃক্ষ ইত্যাদি।
৪. উভয় লিঙ্গ
যেসব শব্দ দ্বারা পুরুষ ও স্ত্রী উভয়কে বোঝানো হয়, তাদের উভয় লিঙ্গ বলে। যেমন— ডাক্তার, শিশু, বন্ধু, কবি, শিল্পী ইত্যাদি।
নিত্য পুংলিঙ্গ
কতগুলি পুংলিঙ্গ শব্দ আছে যাদের কোন স্ত্রীলিঙ্গ হয় না। এদের নিত্য পুংলিঙ্গ বলে। যেমন— কাপুরুষ, পুরোহিত, মৃতদার, কৃতদার, কবিরাজ, বিপত্নীক ইত্যাদি।
নিত্য স্ত্রীলিঙ্গ
কতকগুলি স্ত্রীলিঙ্গ শব্দ আছে যাদের পুংলিঙ্গ হয় না। এদের নিত্য স্ত্রীলিঙ্গ বলে। যেমন— দেবতা, যোগিনী, বিধবা, সধবা, সতীন, ধাই, এয়ো, অবীরা, দুগ্ধবতী, গর্ভবতী, তড়িৎ, বিদ্যুৎ, সত্মা, অবলা, প্রতিমা, যামিনী ইত্যাদি।
উভয় লিঙ্গ শব্দ
বাংলায় কতকগুলি শব্দ আছে যাদের উভয় লিঙ্গ শব্দ বলা হয়। যেমন— শিশু, সন্তান, দমপতি, শাবক, বাচ্চা, ছানা, ছাগলছানা ইত্যাদি।
পুংলিঙ্গ থেকে স্ত্রীলিঙ্গে রূপান্তর করার নিয়ম
পুংলিঙ্গ শব্দকে প্রধানত তিনভাবে স্ত্রীলিঙ্গে রূপান্তরিত করা হয়। যথা— স্ত্রী প্রত্যয় যোগে, ভিন্ন শব্দ দ্বারা, স্ত্রী-বোধক শব্দ যোগে।
স্ত্রী প্রত্যয় যোগে
পুংলিঙ্গ শব্দের পরে আ, ঈ, আনী, ইত্যাদি প্রত্যয় যোগ করে স্ত্রী লিঙ্গে রূপান্তর করা যায়। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল—
‘আ’ প্রত্যয় যোগে: মহাশয়>মহাশয়া, প্রিয়>প্রিয়া, শ্রেষ্ঠ>শ্রেষ্ঠা, অধম>অধমা, পাপিষ্ঠ>পাপিষ্ঠা, উত্তম>উত্তমা, শারদীয়>শারদীয়া, নবীন>নবীনা, অশ্ব>অশ্বা, বয়স্ক>বয়স্কা, ভীত>ভীতা, কৃপণ>কৃপণা, মাননীয়>মাননীয়া, পূজনীয়>পূজনীয়া। চঞ্চল>চঞ্চলা, শীষ্য>শীষ্যা, ক্ষুদ্র>ক্ষুদ্রা, মনোহর>মনোহরা, রমনীয়>রমণীয়া, শিক্ষিত>শিক্ষিতা, দরিদ্র>দরিদ্রা, চতুর>চতুরা, লজ্জিত>লজ্জিতা, কোমল>কোমলা, নির্মল>নির্মলা, কোকিল>কোকিলা, নিন্দিত>নিন্দিতা, হীন>হীনা, কল্যাণীয়>কল্যাণীয়া, অপমানিত>অপমানিতা।
কিছু কিছু ‘অক’ ভাগান্ত পুংলিঙ্গ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ করার সময় ‘অক’ স্থানে ‘ইক’ হয় এবং শেষে ‘আ’ যোগ হয়। যেমন—
বালক>বালিকা, পালক>পালিকা, শিক্ষক>শিক্ষিকা, সাধক>সাধিকা, গায়ক>গায়িকা, পাচক>পাচিকা, সেবক>সেবিকা, বাহক>বাহিকা, নায়ক>নায়িকা, শ্যালক>শ্যালিকা, অধ্যাপক>অধ্যাপিকা, পরিচালক> পরিচালিকা, অভিভাবক>অভিভাবিকা, গ্রাহক>গ্ৰাহিকা, লেখক>লেখিকা, ঘোষক>ঘোষিকা, চালক>চালিকা, সম্পাদক>সম্পাদিকা।
‘ঈ’ প্রত্যয় যোগে: নদ>নদী, মৃগ>মৃগী, মানব>মানবী, ঘোটক>ঘোটকী, ঈশ্বর>ঈশ্বরী, পুত্র>পুত্রী, কিশোর>কিশোরী, বৈষ্ণব>বৈষ্ণবী, দাস>দাসী, ছাত্র>ছাত্রী, তরুণ>তরুণী, কাকা>কাকী, গরু>গৌরী, দৌহিত্র>দৌহিত্রী, দানব>দানবী, চাতক>চাতকী, সহচর>সহচরী, সুন্দর>সুন্দরী।
‘আনী’ প্রত্যয় যোগে: শিব>শিবানী, মহেন্দ্র>মহেন্দ্রানী
ভব>ভবানী, মাতুল>মাতুলানী, বরুণ>বরুণানী, ইন্দ্র>ইন্দ্রানী।
ভিন্ন শব্দ দ্বারা
পিতা>মাতা, জনক>জননী, স্বামী>স্ত্রী, যুবক/যুবা>যুবতী, পুত্র>কন্যা, সভাপতি>সভানেত্রী, বর>বধূ, পুরুষ>নারী, বাপ>মা, ভ্রাতা>ভগিনী, রাজা>রানী, কর্তা>গিন্নী।
স্ত্রীবোধক শব্দ যোগে
কবি>মহিলা কবি, প্রভু>প্রভুপত্নী ঔপন্যাসিক>মহিলা ঔপন্যাসিক, শিল্পী>মহিলা শিল্পী, কর্মী>মহিলা কর্মী, সাহিত্যিক>মহিলা সাহিত্যিক, কৃষক পুত্র>কৃষক দুহিতা, মুনি>মুনি পত্নী, বেটাছেলে>মেয়েছেলে, বোনপো>বোনঝি, ডাক্তার>লেডি ডাক্তার, কামার>কামার বৌ।
Leave a Reply