//
//

শব্দ ও পদের পার্থক্য আলোচনা কর।

শব্দ ও পদের পার্থক্য

পদ

বাক্যের অর্থ প্রতিটি অংশকে পদ বলে। পদ গঠিত হয় দুইভাবে—শব্দের সঙ্গে শব্দবিভক্তিযোগে নামপদ এবং ধাতুর সঙ্গে ধাতুবিভক্তিযোগে ক্রিয়াপদ।

শব্দ

নামপদের বিভক্তিহীন মূল অংশই শব্দ।

প্রতিটি শব্দই অর্থবাচক হওয়া চাই। এক বর্ণেও শব্দ হয়, একাধিক বর্ণের সঙ্গে সংযোগেও শব্দ হয়। অ, আ, এ, ও ইত্যাদি এক বর্ণের শব্দ। একাধিক বণের অর্থহীন সংযোগে কখনই শব্দ গঠিত হয় না।

শব্দ ও পদের পার্থক্য এই যে, শব্দ বিভক্তিযুক্ত হয়ে পদে পরিণত হলে তবেই বাক্যে জ্ঞানলাভের যোগ্যতা পায়। বাক্যে স্থানলাভের যোগ্যতা শব্দের নেই, শুধু পদেরই আছে। অতএব প্রত্যেকটি নামপদই মূলত শব্দ; কিন্তু কেবল শব্দ কদাপি পদ নয়।

শব্দের শ্রেণিবিভাগ

গঠনরীতির দিক দিয়ে শব্দ দুইপ্রকার— মৌলিক ও সাধিত।

মৌলিক শব্দ

যে শব্দকে বিশ্লেষণ করা যায় না তাকে মৌলিক শব্দ বলে। মা, ভাই, হাত, পা, নাক, কান, ঘোড়া, উট, এক, দুই, হাঁ, রে, না, উঃ, ও, ইশ, ধিক ইত্যাদি। প্র, পরা, অপ, সম, নি, অব প্রভৃতি উপসর্গগুলিও মৌলিক শব্দ, কারণ এদের নিজস্ব অর্থ আছে, এবং এদের বিশ্লেষণও করা যায় না। বাংলায় ব্যবহৃত বিদেশী শব্দগুলিরও বিশ্লেষণ করা যায় না, তাই তাদের মৌলিক শব্দ বলে গণ্য করা হয়।

সাধিত শব্দ

সমাসের দ্বারা গঠিত অথবা ধাতু বা শব্দের উত্তর প্রত্যয় যোগে গঠিত শব্দকে সাধিত শব্দ বলে। সাধিত শব্দমাত্রই বিশ্লেষণযোগ্য।

(ক) লজার সহিত বিদ্যমান=সলজ্জ। মনঃরূপ কোকনদ=মনঃকোকনদ; কাগজে ও কলমে=কাগজেকলমে। আয়তাক্ষর শব্দগুলি সমাজে সাহায্যে গঠিত সাধিত শব্দ।

(খ) গম্ (ধাতু)+অনট্ (প্রত্যয়)=গমন; মচ্ (ধাতু)+তি (প্রত্যয়)=মুক্তি; পড় (ধাতু)+অন্ত (প্রত্যয়)=পড়ন্ত। খা (ধাতু)+আ (প্রত্যয়)=খাওয়া। এখানে আয়তাক্ষর শব্দগুলি কৃৎ-প্রত্যয় যোগে গঠিত সাধিত শব্দ।

(গ) দশরথ (শব্দ)+ষ্ণি (প্রত্যয়)=দাশরথি; ঘর (শব্দ)+ওয়া (প্রত্যয়)= ঘরোয়া; ধূর্ত (শব্দ)+আমি (প্রত্যয়)=ধূর্তামি; রূপা (শব্দ)+আলি (প্রত্যয়)= রূপালী। এখানে আয়তাক্ষর শব্দগুলি তদ্ধিত-প্রত্যয়ের সাহায্যে গঠিত সাধিত শব্দ।

প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দের দুইটি অংশ। প্রথম অংশ শব্দ কিংবা ধাতু, দ্বিতীয় অংশ প্রত্যয়। প্রথম অংশকে বলা হয় প্রকৃতি।

প্রকৃতি

প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দের প্রথম অংশ যে শব্দ বা ধাতু তাকে প্রকৃতি বলে। প্রকৃতি দুইপ্রকার— (১) শব্দ-প্রকৃতি বা প্রতিপদিক, (২) ক্রিয়া-প্রকৃতি বা ধাতু। বিভক্তিযুক্ত নয় এমন বিশেষ্য, সর্বনাম ও বিশেষণই হইল প্রাতিপদিক।

শব্দের অর্থগত বা বুৎপত্তিগত বিভাগ

সাধিত শব্দকে অর্থের দিক দিয়ে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়— যৌগিক, রূঢ় ও যোগরূঢ় শব্দ।

যৌগিক শব্দ

যে সাধিত শব্দের অর্থ প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের সম্মিলিত অর্থ থেকে পাওয়া যায়, তাই যৌগিক শব্দ। বাংলা ভাষায় যৌগিক শব্দের সংখ্যাই সর্বাপেক্ষা বেশী। কৃ ধাতুর অর্থ করা; অনীয় প্রত্যয়টি উচিত অর্থে প্রযুক্ত হয়। এখন উভয়ের সম্মিলনে করণীয় শব্দটির সষ্টি। এই শব্দটির অর্থ হইতেছে ‘করা উচিত’। এই অর্থটি প্রকৃতি-প্রত্যয়ের সম্মিলিত অর্থের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। অতএব করণীয় শব্দটি যৌগিক।

রূঢ় শব্দ

যে সকল সাধিত শব্দ প্রকৃতি-প্রত্যয়জাত অর্থ বহন না করে কেবল লোকপ্রচলিত অর্থ বহন করে তাদের যোগরূঢ় শব্দ বলে। রূঢ় শদের সংখ্যা বাংলা ভাষায় অত্যন্ত অল্প। মণ্ডপ (=মণ্ড-Ö পা+ক) শব্দের প্রকৃতি-প্রত্যয়গত অর্থ ‘মণ্ড বা ফেন পান করে যে।’ কিন্তু ‘মণ্ডপ’ শব্দটি এই অর্থ কোথাও প্রযুক্ত হয় না; ‘দেবালয়’ বা ‘গৃহ’ অর্থেই শব্দটির প্রয়োগ সীমাবদ্ধ।

যোগরূঢ় শব্দ

যে-সকল শব্দ প্রকৃতি-প্রত্যয়গত অর্থগুলির মধ্যে একটি বিশেষ অর্থেই প্রসিদ্ধ, তাদের যোগরূঢ় শব্দ বলে।

একাধারে যৌগিক ও রঊঢ় বলেই নাম যোগরূঢ়। প্রকৃতি-প্রত্যয়গত অর্থের সঙ্গে যোগ থাকায় যৌগিক, অথচ প্রত্যয়জাত অর্থগুলির মধ্যে একটি বিশেষ অর্থে সীমাবদ্ধ বলে রূঢ়। পঙ্কজ (=পক-জন্+ড) শব্দটির প্রকৃতি-প্রত্যয়জাত অর্থ ‘যাহা পঙ্কে জন্মে।’ শেওলা, শামুক, শালুক, কেঁচো, মাগুর, পাকাল, পদ্ম— অনেককিছুই পঙ্কে জন্মায়। অথচ ‘পঙ্কজ’ শব্দটির অর্থ কেবল পদ্মফুলেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। পদ্ম পঙ্কে জন্মে তাই, পঙ্কজ যৌগিক; আবার পঙ্ক শব্দটি অন্য সমস্ত অর্থ বাদ দিয়েও কেবলমাত্র পদ্ম অর্থেই লোকপ্রসিদ্ধ হওয়ায় শব্দটি রূঢ়ও বটে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!