//
//

সাদৃশ্যমূলক অলংকার সম্পর্কে আলোচনা কর।

সাদৃশ্যমূলক অলংকার

যে অলংকারে দুটি বিজাতীয় বা অসম বস্তুর মধ্যে সাদৃশ্য বা মিল দেখানো হয়, তাকে বলে সাদৃশ্যমূলক অলংকার। সাদৃশ্যমূলক অলংকারের চারটি অঙ্গ—(ক) উপমেয় (খ) উপমান (গ) সাধারণ ধর্ম (ঘ) সাদৃশ্যবাচক শব্দ

(ক) উপমেয়

যে বস্তুটি বর্ণনীয়, অর্থাৎ যে বস্তুর সঙ্গে কোন বিজাতীয় বস্তুর সাদৃশ্য দেখানো হয়, তাকেই বলে উপমেয়। যেমন—

বুদ্ধের করুণ আঁখি দুটি

সন্ধ্যাতারা সম রহে ফুটি।

—রবীন্দ্রনাথ

এখানে বর্ণনীয় বিষয় বুদ্ধের আখি । বুদ্ধের আঁখির সঙ্গে সাদৃশ্য দেখানো হয়েছে সন্ধ্যাতারার। সুতরাং এখানে ‘আঁখি’ হল উপমেয়। এক কথায় যাকে তুলনা করা হয় (এখানে ‘আঁখি’) সে হল উপমেয়।

(খ) উপমান

বর্ণনীয় বস্তু বা উপমেয়র সঙ্গে যে বিজাতীয় বস্তুর সাদৃশ্য দেখানো হয়, সেই বিজাতীয় বস্তুকেই বলে উপমান। বা এককথায় যার সঙ্গে তুলনা করা হয় সেই হল উপমান। আগের উদাহরণে আঁখিকে তুলনা করা হয়েছে সন্ধ্যাতার সঙ্গে। তাই সন্ধ্যাতারা হল উপমান।

(গ) সাধারণ ধর্ম

যে ধর্ম বা গুণ উপমেয় ও উপমানের মধ্যে বিদ্যমান (Common) থাকে, তাকে বলে সাধারণ ধর্ম।

যেমন— ‘পদ্মের কলিকাসম ক্ষুদ্র তব মুষ্টিখানি।’ এখানে পদ্মের কলিও ক্ষুদ্র এবং মুষ্টিও ক্ষুদ্র। তাই সাধারণ ধর্ম হল ক্ষুদ্র। মুষ্টি— উপমেয়, পদ্ম— উপমান।

(ঘ) সাদৃশ্যবাচক শব্দ

সাদৃশ্যমূলক অলংকারে দুই বিজাতীয় বস্তুর মধ্যে সাদৃশ্য দেখানো হয়। এই সাদৃশ্য দেখানোর জন্য কখনো দরকার পড়ে এক বা একাধিক শব্দের। যেমন—মতো, সম, পারা, সদৃশ, যথা, যেন, শঙ্কাশ, পরায়, নিভ, প্রতিম, রীতি, হেন, প্রায়, তুল্য, ন্যায়, বৎ ইত্যাদি। এগুলিকেই বলে সাদৃশ্যবাচক শব্দ। আগের উদাহরণে আছে—পদ্মের কলিকাসম ক্ষুদ্র তব মুষ্টিখানি।

সাদৃশ্যমূলক অলংকারে দৃষ্টান্ত

সাদৃশ্যমূলক অলংকারগুলি হল— উপমা, রূপক, উল্লেখ, সন্দেহ, উৎপ্রেক্ষা, ভ্রান্তিমান, অপহ্নুতি, নিশ্চয়, প্রতিবস্তুপমা, দৃষ্টান্ত, নিদর্শনা, সমাসোক্তি, অতিশয়োক্তি, ব্যতিরেক, প্রতীপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!