//
//

ঔচিত্যবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর।

ঔচিত্যবাদ

সংস্কৃত অলংকারশাস্ত্রে ঔচিত্য সম্বন্ধে কী বলা হয়েছে এবং কাব্যের জগতে ঔচিত্যের গুরুত্বই বা কতটুকু সেই জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর অন্বেষণের আগে সহজভাবে ঔচিত্য বলতে কী বোঝায় তা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। ধরা যাক্ কোনো ব্যক্তি একটি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে তারই এক বন্ধুর বাড়ি গেছেন। আমন্ত্রিত ব্যক্তির উচিত অনুচিতের বোধটুকু থাকলে তা নিশ্চয় কোনো না কোনাো ভাবে প্রকাশিত হবে। যদি দেখা যায় ওই শোকানুষ্ঠানে তিনি খুব রঙচঙে জেল্লাদার জামাকাপড় পরে ও উৎকট সাজে সজ্জিত হয়ে উপস্থিত হয়েছেন তাহলে বুঝতে হবে তার ঔচিত্যবোধের অভাব আছে।

কারণ শোকানুষ্ঠানে যে কোনো রঙ বর্জনীয়। শান্তির রঙ সাদা, আর দুঃখশোকের রঙ কালো। তাই যে কোনো শোকানুষ্ঠানে ওই রঙের পোষাক পরিধান করাই শ্রেয়। খুব রঙচঙে জেল্লাদার জামাকাপড় যেহেতু শোকের পরিমণ্ডলটি নষ্ট করতে পারে তাই ওই জাতীয় পোষাক বর্জন করাই উচিত। লৌকিক জীবনে মানুষের যেমন উচিত-অনুচিতের জ্ঞান থাকে ঠিক তেমনি অলৌকিক কাব্য জগতের স্রষ্টা কবিদেরও এই জ্ঞানটুকু না থাকলে কাব্যরচনা ব্যর্থ হতে পারে।

অর্থাৎ কোন্ কাব্যে কোন্ চরিত্র সৃজন করলে, কোন্ চরিত্রের মুখে কি জাতীয় সংলাপ বসালে এবং সেই চরিত্রের কি জাতীয় আচরণ দেখালে তা ঔচিত্যের হানি ঘটাবে না বা অসংগত হবে না কবির সেই বোধটুকু থাকা চাই। কেবলমাত্র চরিত্র বা আচরণের ক্ষেত্রেই নয় পদ, বাক্য, অর্থ, গুণ, অলংকার, ক্রিয়া, দেশ, প্রতিভা, কারক, লিঙ্গ, বচন, উপসর্গ, কাল প্রভৃতির ঔচিত্য রক্ষিত হয়েছে কিনা তা দেখাও কবির কর্তব্য।

একাদশ শতকের কাশ্মীরি আলংকারিক আচার্য ক্ষেমেন্দ্র ঔচিত্যবাদকে কাব্যজগতে প্রতিষ্ঠা দিতে চেয়েছিলেন। তাঁর বিখ্যাত ‘ঔচিত্যবিচারচর্চা’ গ্রন্থে তিনি রসকে প্রধান স্থান দিয়ে ঔচিত্যকে প্রধান স্থান দেন। তিনি বলেছিলেন যে, লোকে রসকে কাব্যের আত্মা বললেও ঔচিত্যই হল সেই রসের প্রাণ। ক্ষেমেন্দ্র অলংকার, গুণ প্রভৃতিকে বাদ দিয়ে ঔচিত্যকে কাব্যের জীবন-স্বরূপ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন।

ঔচিত্যের অর্থ হল সদৃশতা বা সামঞ্জস্য। অর্থাৎ যার সঙ্গে যার মেলে বা খাপ খায় তাকে ঔচিত্য বলে। যেমন যে পদ যেখানে প্রয়োগ করলে সমগ্র অর্থের সঙ্গে তার সামঞ্জস্য দেখা দেবে সেখানে সেই পদই প্রয়োগ করা দরকার। অলঙ্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, উচিত স্থানে বিন্যাস করলেই অলঙ্কার দেহকে অলঙ্কৃত করতে পারে। এবং উচিত স্থান থেকে বিচ্যুত গুণগুলিকেও গুণ বলা যায় না।

কণ্ঠে মেখলা বা কোমরবন্ধন পরলে এবং নিতম্বে হার পরলে সেই অলংকারের কোনো মর্যাদা থাকে না। বীরত্ব একটি গুণ হলেও ভীত ব্যক্তির মধ্যে সেই গুণের প্রকাশ ঘটানো হাস্যকর। তেমনিভাবে কোনো নাট্যকার যদি প্রবল পরাক্রান্ত কোনো রাজার চিত্র অঙ্কন করেন তবে তিনি তার এমন কোনো আচরণ দেখাবেন না যেটা অসংগত ও অসম্ভব। যেমন যদি নাট্যকার দেখান রাজা যুদ্ধে গিয়ে বিপক্ষ সৈন্য দলের সাতটা হাতিকে একা পাজাকোলা করে তুলে সাত হাত দূরে ছুঁড়ে ফেললেন, তবে সেই বর্ণনা বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে ও ঔচিত্যের সীমা পেরিয়ে যাবে।

মনে রাখা দরকার যে রাজা যত পরাক্রমী বীরই হোন না কেন তিনি মানুষ। তাঁর পক্ষে ওই জাতীয় অমানুষিক আচরণ সম্ভব নয়। আবার মহাকবি কালিদাস যখন ‘কুমারসম্ভবম্’ কাব্যে হরপার্বতীর শৃঙ্গারের বর্ণনা করেছেন তখন তা গ্রাম্যতা দোষে দুষ্ট হয়নি। কারণ গ্রাম্য শৃঙ্গাররসের পরিবেশন দেবদেবীর শৃঙ্গার বর্ণনার ঔচিত্য হানি ঘটাতো। কালিদাস মহৎ কবি ছিলেন বলেই তাঁর কাব্যে ঔচিত্যের হানি ঘটেনি।

উন্নত চরিত্রে যেমন পাণ্ডিত্য শোভা পায়, তেমনি কোনো মহাকাব্যের মধ্যে বাক্যগুলি যদি এমনভাবে রচিত হয় যাতে বর্ণনীয় বিষয়টি সমুচিত ভাবে নিজেকে সপ্রমাণ করে তোলে বা প্রাণময় হয়ে ওঠে তাহলে তাকে বাক্যের ঔচিত্য বলা যেতে পারে। যথোপযুক্ত বিশেষণ দিলে প্রবন্ধের ঔচিত্য সাধিত হয়। যেমন যক্ষ যখন মেঘকে প্রিয়ার কাছে দূত করে পাঠানোর পরিকল্পনা করেন তখন তিনি তাকে নানা বিশেষণে ভূষিত করেছিলেন।

ক্ষেমেন্দ্র বলেছিলেন, কাব্যের মধ্যে রসের উপযুক্ত বাক্যবিন্যাস হলে তাকে গুণৌচিত্য বলে। রসের অনুকূল কিংবা অর্থের অনুকূল পদের ব্যবহারকে অলঙ্কারৌচিত্য বলে। ক্ষেমেন্দ্র কোন রসের সঙ্গে কোন রসের মিলনে রসৌচিত্য হয় তারও ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন কোন রসের সঙ্গে কোন রসের মিলন সম্ভবপর।

ক্ষেমেন্দ্রের ঔচিত্য বিষয়ক আলোচনায় কারকৌচিত্য, লিঙ্গৌচিত্য, বচনৌচিত্য, বিশেষণৌচিত্য, উপসগৌচিত্য, নিপাতৌচিত্য, কালৌচিত্য, দেশৌচিত্য, কুলৌচিত্য, ব্রতৌচিত্য, তত্ত্বৌচিত্য, অভিপ্রায়ৌচিত্য, স্বভাবৌচিত্য, সারসংগ্রহৌচিত্য, প্রতিভৌচিত্য, অবহৌচিত্য নামৌচিত্য প্রভৃতি ঠাই পেয়েছিলো। ঔচিত্যই যে কাব্যের প্রাণ ক্ষেমেন্দ্র তা জোরের সঙ্গে ঘোযণা করেছিলেন।

কুন্তুকও ঔচিত্য বিষয়ে কিছু মূল্যবান কথা বলেছেন। তিনি তাঁর ‘বক্রোক্তিজীবিতম্’ গ্রন্থে উত্তম কাব্যের দুটি গুণ থাকা আবশ্যক বলে মনে করেছিলেন। এই দুটি হ’ল ‘ঔচিত্য’ ও ‘সৌভাগ্য’। যেখানে বর্ণনীয় বিষয়ের স্বরূপটি কবির পরিকল্পনার দ্বারা বা কবি-পরিকল্পিত বক্তা বা শ্রোতার স্বভাবের দ্বারা একটি নতুন মাহাত্ম্যে বা উৎকর্ষে মণ্ডিত হয় সেখানে ঔচিত্য হয়। কুন্তক ঔচিত্য বোঝাতে গিয়ে ‘রঘুবংশম্’ থেকে একটি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন—

শরীরমাত্রেণ নরেন্দ্র তিষ্ঠন্

আভাসি তীর্থপ্রতিপাদিতর্দ্ধিঃ

আরণ্যকোপাত্তফল প্রসূতিঃ

স্তম্বেন নীবার ইবাবশিষ্টঃ

এর বঙ্গানুবাদ—

যোগ্য পাত্রে করি দান বিভব তোমার,

হে রাজ, আজি তুমি দেহমাত্র সার।

নীবার স্তুবক হতে ধান্যের সম্ভার

বনবাসী নিলে যথা বৃত্ত শোভে তার। 

রঘুবংশের এই শ্লোকে মুনি নিজের চরিত্রানুগভাবে ও নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজাকে বর্ণনা করেছেন। নীবার তৃণধান্য যেমন তার সমস্ত ধান অপরকে বিলিয়ে দিয়ে নিজের বৃন্তটি নিয়ে শোভা পায়, তেমনি নরশ্রেষ্ঠ রাজা তার সমস্ত ধন সৎপাত্রে দান করে কেবল দেহখানি নিয়ে শোভা পাচ্ছেন। এখানে লক্ষ করলে দেখা যাবে, মুনি তার অভিজ্ঞতার পরিধি থেকে রাজাকে বর্ণনা করেছেন। মুনি রাজাকে এমন কিছুর সঙ্গে তুলনা করেননি যে অভিজ্ঞতার শরিক মুনি নন। এমনটা হলে ঔচিত্য দোষ ঘটতে পারতো। এই যে দেশ, কাল, বক্তা, শ্রোতা প্রভৃতির অনুরূপভাবে বিষয়বস্তুকে দেখা, কুম্ভক একেই ঔচিত্য বলেছেন।

আলংকারিক মহিমভট্ট ঔচিত্যকে দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন—শব্দৌচিত্য এবং অর্থৌচিত্য। বিভাব, অনুভাব, ভাব যদি রসের আনুকূল্য না করে তাহলে সেখানে অন্তরঙ্গ বা অর্থানৌচিত হয়। আর শব্দবিন্যাসের অপটুত্ব বা ত্রুটিজনিত কারণে রসের অভিব্যক্তিতে ব্যাঘাত ঘটলে বহিরঙ্গ বা শব্দানৌচিত্য হয়। মহিমভট্ট অনৌচিত্যকে কাব্যের দোষ বলে স্বীকার করেছেন; কিন্তু আনন্দবর্ধন অনৌচিত্য মাত্রই রসপ্রতীতির ব্যাঘাত, এ কথা মানতে রাজি ছিলেন না।

আনন্দবর্ধনের আলোচনায় কেবল অন্তরঙ্গ বা অর্থানৌচিত্যই গুরুত্ব পেয়েছিল কিন্তু মহিমভট্ট অনৌচিত্য বলতে রসপ্রতীতির ব্যাঘাত ছাড়াও শব্দ ব্যাপারজনিত দোষকে বুঝেছিলেন। মহিমভট্টের আলোচনায় শব্দানৌচিত্যই বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল। শব্দানৌচিত্য বলা হল এই কারণে যে মহিমভট্ট ঔচিত্যকে দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করলেও আলোচনার সময় ঔচিত্য অপেক্ষা অনৌচিত্যকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। আনন্দবর্ধন অর্থৌচিত্যের বিস্তৃত আলোচনা করেছিলেন বলে মহিমভট্ট তার আর পুনরাবৃত্তি করেননি।

আলংকারিক ভোজ তার ‘সরস্বতীকণ্ঠাভরণ’-এ ঔচিত্য সম্পর্কে অতিসংক্ষেপে আলোচনা করেছিলেন। ভোজ ঔচিত্যের আলোচনাকে রীতি ও ভাষার অঙ্গীভূত করে নিয়েছিলেন। তিনি ছয় প্রকারের ঔচিত্যের কথা বলেছিলেন— বিষয়ৌচিত্য, বাচৌচিত্য, দেশৌচিত্য, সময়োচিত্য, বক্তৃবিষয়ৌচিত্য ও অথোচিত্য।

ভোজের ঔচিত্য বিষয়ক আলোচনায় বেশ অভিনবত্ব আছে। যেমন বাচৌচিত্যের আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন প্রসঙ্গে সংস্কৃত প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা ব্যবহারের ঔচিত্য নিয়ে আলোচনা করেছেন। এছাড়া দেশ অনুসারে ভাষার পার্থক্য, সময়ানুযায়ী ভাষার ব্যবহার, বক্তার মান ও স্তর অনুযায়ী ভাষার ব্যবহার ও বিষয় অনুযায়ী গদ্য ও পদ্যের ব্যবহার ভোজের ঔচিত্য-বিষয়ক আলোচনায় ব্যাখ্যাত হয়েছিল। তবে ভোজ ঔচিত্যকে কখনই কাব্যাত্মা বলেননি।

‘কাব্যানুশাসন’ গ্রন্থের রচয়িতা হেমচন্দ্রও ঔচিত্য সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন। দোষ এবং গুণের অঙ্গীভূত করে ঔচিত্যের আলোচনা করার জন্যে তার আলোচনায় ঔচিত্যের প্রাধান্য অনেকটা খর্ব হয়েছে। তিনি বক্তা, বিষয় ও রচনা— এই তিনের মধ্যে ঔচিত্যের অনুসন্ধান করেছেন।

আনন্দবর্ধন ও অভিনবগুপ্ত ঔচিত্য, অনেীচিত্য নিয়ে চিন্তা ভাবনা করেছিলেন। আনন্দবর্ধন রসসৃষ্টির দিক থেকে ঔচিত্য-অনৌচিত্যের বিচার করেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘অনৌচিত্য ছাড়া রসভঙ্গের কোনো কারণ নেই। অর্থাৎ যে রচনায় ঔচিত্য রক্ষিত হয় সেই রচনা রসসৃষ্টিরও সহায়ক হয়। অনৌচিত্যই একমাত্র রসের অপরিপোষকতা করে।

আনন্দবর্ধন কবিকর্ম বলতে কাব্যে রসের অভিব্যঞ্জনার উপযোগী করে ঔচিত্য অনুযায়ী। বাচ্য ও বাচকের (শব্দ ও অর্থের) যোজনাকে বুঝেছিলেন। কাব্যে শব্দ, অর্থ, রীতি,অলংকার গুণ এ সবকিছু বিচারের একমাত্র মাপকাঠি হল এরা রসসৃষ্টিতে কতটা সহায়ক হয়েছে। এই ঔচিত্যতত্ত্বই হল রসতত্ত্বের পরম উপনিষৎ। ঔচিত্যের আলোকে অর্থ, রীতি, অলংকার, গুণ ইত্যাদি সবকিছুই বিচার্য কারণ এগুলি শেষ পর্যন্ত রসসৃষ্টিরই আনুকূল্য করে। অনুরূপভাবে বিচার্য কাব্যে চিত্রিত চরিত্রগুলি।

চরিত্রানুযায়ী তাদের বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলতে পারলে ঔচিত্যের ব্যাঘাত ঘটে। তাই কোনো মহৎ চরিত্রে কোনো নীচভাবের আরোপ প্রত্যাশিত নয়। দেবদেবীর সম্ভোগ বর্ণনায় গ্রাম্য শৃঙ্গারের আরোপ রসভঙ্গ ঘটাতে পারে। একটি রসের বর্ণনা করতে গিয়ে বিরুদ্ধরসের বর্ণনা প্রত্যাশিত নয়। একই বিষয়ের আলোচনার পুনরাবৃত্তি ঔচিত্যহানি ঘটিয়ে রসদৃষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটায়। আকস্মিক ভাবে কোনো রসের বর্ণনা কিংবা প্রত্যাশিত বর্ণনীয় বিষয় হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া এসবই রসভঙ্গ করে বলে সবই ঔচিত্য বিরোধী কাজ।

আনন্দবর্ধনের কাছে কোনো রচনার রসস্ফূর্তি হয়েছে না রসভঙ্গ হয়েছে—তা বিচারের একমাত্র মানদণ্ড রচনাটিতে সর্ববিষয়ে ঔচিত্য রক্ষিত হয়েছে কিনা। এইভাবে আমরা দেখি আনন্দবর্ধনের ঔচিত্য বিষয়ক আলোচনা মানেই রসের সার্থকতা-অসার্থকতা বিষয়ক আলোচনা। তাই ‘অনৌচিত্য ছাড়া রসভঙ্গের কোনো কারণ নেই’— মন্তব্যটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়।

আমরা ঔচিত্য বিষয়ক দীর্ঘ আলোচনা করলেও মনে রাখা দরকার যে কোনো কবি বা সাহিত্যিক ঔচিত্যের পাঠ নিয়ে কাব্য-রচনায় অবতীর্ণ হন না। কবিতা হল বলিষ্ঠ অনুভূতির স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ। কবিপ্রতিভা যাঁর আছে তিনিই পারেন এই অনুভূতিকে প্রকাশ করতে। কাব্যিক অনুভূতিকে প্রকাশের জন্য কবিকে যেমন পৃথকভাবে যত্নশীল হতে হয় না, ঠিক তেমনি কোন্ জাতীয় রচনায় কি জাতীয় শব্দ ও অলঙ্কার ব্যবহৃত হবে, কোন্ রীতিতে লিখলে রচনা সার্থক হবে, চরিত্রে কোন স্বভাব যুক্ত হলে চরিত্রটি রসসৃষ্টির ব্যাঘাত ঘটাবে না, বিষয়ের উপযোগী ভাষা কী হবে, সময়োপযোগী কোন্ ভাষা ব্যবহার করলে রচনা সার্থক হবে এ সব ঔচিত্যের বোধ প্রতিভাধর কবির মধ্যে আপনা-আপনি এসে পড়ে। তাই যে কোনো শ্রেষ্ঠ কবির রচনাই রসের পরিপোষক হয়। ঔচিত্যের প্রতি অতিমাত্রায় যত্নশীল ও সচেতন থেকে কতটা সার্থক কবিতা রচিত হতে পারে সে প্রশ্ন তাই থেকেই যায়। ঔচিত্যের প্রতি পৃথকভাবে যত্নশীল হতে হয় না; ঔচিত্যবোধ শ্রেষ্ঠ কবির স্বতঃস্ফূর্ত ধর্ম। এই ধর্মই কাব্যের রসসৃষ্টির সহায়ক।

তথ্যসূত্র:

১. কাব্যতত্ত্ব সমীক্ষা: অচিন্ত্য বিশ্বাস

২. কাব্যজিজ্ঞাসা: অতুলচন্দ্র গুপ্ত

৩. কাব্যালোক: সুধীরকুমার দাশগুপ্ত

৪. ভারতীয় কাব্যতত্ত্ব: অবন্তীকুমার সান্যাল

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!