ধর্মমঙ্গল কাব্যধারার শ্রেষ্ঠ কবি ঘনরাম চক্রবর্তীর কৃতিত্ব আলোচনা কর।
ঘনরাম চক্রবর্তী
ধর্মমঙ্গল কাব্যের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি হলেন ঘনরাম চক্রবর্তী। ঘনরাম অষ্টাদশ শতাব্দীর শক্তিমান কবি। মঙ্গলকাব্যের ঐশ্বর্যযুগের শেষ পর্যায়ে রামেশ্বর ভট্টাচার্যের শিবায়ন, ঘনরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল এবং ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল নির্বাণোন্মুখ দীপশিখার মতো সর্বশেষ জ্যোতি। সুকুমার সেন লিখেছেন— “ধর্মমঙ্গল রচয়িতাদের মধ্যে সবচেয়ে শিক্ষিত ও দক্ষ ছিলেন ঘনরাম চক্রবর্তী। ঘনরাম সুলেখক ছিলেন। তাহার রচনা সর্বাধিক পরিচিত ধর্মমঙ্গল কাব্য” (বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৫১)। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ও লিখেছেন— “আধুনিক যুগের বাঙালী সমাজ তাহার কাব্য হইতেই ধর্মমঙ্গল কাব্যের নূতনত্ব উপলব্ধি করিয়াছিলেন। এই শাখার অন্যান্য শক্তিশালী কবি অপেক্ষা ঘনরাম অধিকতর ভাগ্যবান। কারণ ধর্মমঙ্গলের কবিদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম মার্জিত রুচির নাগরিক সমাজে পরিচিত হন।” (বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, তৃতীয় খণ্ড, দ্বিতীয় পর্ব, পৃষ্ঠা-৯৮)
ঘনরামের ব্যক্তি পরিচয় সম্পর্কে দীনেশচন্দ্র সেন ও সুকুমার সেন কিছু তথা জানিয়েছেন। সেই তথ্যাদি অনুসরণে দেখা যায়— ঘনরামের নিবাস বর্ধমান জেলার কইয়ড পরগনার কৃষ্ণপুর গ্রামে। তাঁর প্রপিতামহের নাম পরমানন্দ, পিতামহের নাম ধনঞ্জয়। ধনঞ্জয়ের দুই পুত্রশঙ্কর ও গৌরীকান্ত। ঘনরামের পিতা হলেন গৌরীকান্ত মাতা সীতা। (সুকুমার সেনের মতে— মা হলেন মহাদেবী)। ১৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে কবির জন্ম। কবি শৈশবে দুরন্ত স্বভাবের ছিলেন। সেজন্য কবির পিতা কবিকে সে সময়ে রামপুরের টোলে বিদ্যার্জনের জন্য প্রেরণ করেন। সেখানে তাঁর গুরু তাঁকে কবিপ্রতিভার জন্য ‘কবিরত্ন’ উপাধি প্রদান করেন।
বর্ধমানাধিপতি মহারাজ কীর্তিচন্দ্র রায়ের আদেশে ঘনরাম ধর্মমঙ্গল কাব্য রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। একটি ভণিতায় পাওয়া যায়—
অখিলে বিদ্যার কীৰ্ত্তি মহারাজ চক্রবর্তী
কীৰ্ত্তিচন্দ্র নরেন্দ্র প্রধান।
চিন্তি তার রাজোন্নতি কৃষ্ণপুর নিবসতি
দ্বিজ ঘনরাম রস গান।।
ঘনরাম অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগেই তাঁর কাব্য রচনা করেন। কবি সন তারিখ উল্লেখ করে কাব্য সমাপ্ত করেছেন—
সঙ্গীত আরম্ভকাল নাইক স্মরণ।
শুন সবে যে কালে হইল সমাপন।।
শক লিখে রামগুণ রসসুধাকর।
মার্গকাদ্য অংশে হংস ভার্গব বাসর।।
সুলক্ষ বলক্ষ পক্ষ তৃতীয়খ তিথি।
যামসংখ্য দিনে সাঙ্গ সঙ্গীতের পুথি।।
যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি এবং বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে ঘনরামের কাব্য সমাপ্তি কাল ১৬৩৩ শকাব্দ বা ১৭১১ খ্রিস্টাব্দ।
ধর্মবিশ্বাসে কবি ঘনরাম উদার ছিলেন। কবি ধর্মঠাকুরকে ব্যাপক অর্থে নীতিপরায়ণ দেবতারূপে গ্রহণ করেছেন। তিনি বিষ্ণু, শিব, কালী, দুর্গা প্রভৃতি সমস্ত দেবতার প্রতি ভক্তিমান ছিলেন। তবে ভক্তিধর্মে রামবাদে তার বিশেষ আস্থা ছিল। কবি ধর্মঠাকুরকে শ্রীরামচন্দ্রের সঙ্গে অভেদ মনে করতেন। কেননা, তিনি তার কাব্যের ভণিতায় বারবার রামভক্তির উল্লেখ করেছেন। যেমন, আশীর্বাদ কর যেন রাঘবে রয় মতি’, ‘প্রভু মোর কৌশল্যানন্দন কৃপাসন’, ‘শ্রীরাম কিঙ্কর দ্বিজ ঘনরাম গান’ ইত্যাদি।
ঘনরামের কাব্য রচনায় দেবতার স্বপ্নাদেশের কোন বিবরণ নাই। মনে হয় শুরুর আদেশেই তিনি কাব্য রচনা করেন। তবে কোথাও তিনি গুরু নাম উল্লেখ করেননি।
ঘনরামের কাব্যের নাম ‘অনাদিমঙ্গল’। তবে অনেক ক্ষেত্রে ‘শ্রীধর্মসঙ্গীত’, ‘মধুরভারতী’ প্রভৃতি নামও ব্যবহার করেছেন কবি। তাঁর কাব্য চব্বিশটি পালায় বিভক্ত এবং কাব্যের শ্লোক সংখ্যা ৯১৪৭। পালাগুলি হল—(১) স্থাপনা পালা, (২) ঢেকুর পালা, (৩) রঞ্জাবতীর বিবাহ পালা, (৪) হরিশ্চন্দ্র পালা, (৫) শালেভর পালা, (৬) লাউসেনের জন্মপালা, (৭) আখড়া পালা, (৮) ফলকনিৰ্মাণ পালা, (৯) গৌড়-যাত্রা পালা, (১০) কামাল বধ পালা, (১১) জামতি পালা, (১২) গোলাহাট পালা, (১৩) হস্তিবধ পালা, (১৪) কাঙুরযাত্রা পালা, (১৫) কামরূপ যুদ্ধ পালা, (১৬) কানাড়ার স্বয়ম্বর পালা, (১৭) কানাড়ার বিবাহ পালা, (১৮) মায়ামুণ্ড পালা, (১৯) ইছাই বধ পালা, (২০) অঘোরবাদল পালা, (২১) পশ্চিম উদয় আরম্ভ পালা, (২২) জাগরণ পালা, (২৩) পশ্চিম উদয় পালা এবং (২৪) স্বর্গারোহণ পালা। ঘনরামের কাব্যের বিভিন্ন প্রসঙ্গ বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
ঘনরামের কবিকৃতিত্ব
ধর্মমঙ্গলে বিষয়মহিমা ও কাহিনির বিচিত্র গতি থাকলেও একে কেবল কাহিনি বর্ণনায় পর্যবসিত না করে ঘনরাম তাঁর কাব্যে প্রকাশভঙ্গির চারুতা ও শিল্পরীতির মনোহারিতার সংযোগে রূপায়িত করেছেন। গতানুগতিক কাহিনি বর্ণনার মধ্যে ঘনরামের সচেতন মণ্ডনকলা, আলঙ্কারিক শিল্পচাতুর্য এবং সর্বোপরি মহৎ শিল্পীজনোচিত সংযম ও পরিমিতি বোধ, ঔচিত্যের ঔদার্য তার কাব্যকে বিশিষ্ট করেছে। মঙ্গলকাব্যের মধ্যে প্রত্যাশিত স্থূলতা ও অশ্লীলতার অতিক্রম করে ঘনরাম তাঁর মার্জিত ও শোভনরুচি, সূক্ষ্ম রসবোধ এবং প্রশান্ত কৌতুক, সংযমবোধ ও পরিণত শিল্পবোধের যে পরিচয় দিয়েছেন, তাঁর কৃতিত্বের পরিচয় তাতেই পাওয়া যায়।
দীনেশচন্দ্র সেন ঘনরামের কাব্যে নিম্নলিখিত ক্রটি লক্ষ করেছেন— (১) একঘেয়ে বর্ণনা, (২) করুণরসের অভাব, (৩) বীরচরিত্র গঠনে ব্যর্থতা, (৪) “শাস্ত্রজ্ঞানের পুঞ্জীভূত ধূম্রপটল কবিকে এরূপ আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিয়াছিল যে স্বানুভূত জ্ঞানের কথা তিনি একটিও বলিবার অবকাশ পান নাই।” সুকুমার সেন ঘনরামের কাব্য আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন— “ঘনরামের কাব্যের প্রধান গুণ স্বচ্ছতা ও গ্রাম্যতাহীনতা।” তবে ইনি অনুপ্ৰাসজনিত ত্রুটির কথা বলেছেন।
ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য ঘনরামের কবিত্ব আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন— “স্বভাব কবিত্বের সঙ্গে পাণ্ডিত্যের সংযোগই ঘনরামের কাব্যকে বৈশিষ্ট্য দান করিয়াছে। পাণ্ডিত্যের প্রভাবে ঘনরামের সহজ কবিত্বকে কোন স্থানে প্রতিহত করিতে পারে নাই …। ঘনরামের ভাষা অত্যন্ত মার্জিত এবং উন্নত রুচির পরিচায়ক। যথাযথ অনুপ্রাস প্রয়োগ তাঁর রচনাকে অনেক সময় শ্রুতিমধুর করিয়াছে।” যেমন—
করপুট এ সঙ্কটে কাতরে কিঙ্কর রটে
উরঘটে পুর অভিলাষ।
অনুপ্রাস ধ্বনিযুক্ত বর্ণনায় চিত্রের ভাব ও রস সমাহার করাও কবির কৃতিত্ব। দারকেশ্বর নদীতে বান ডেকেছে, দামোদরের সঙ্গে তার যোগ হয়েছে। কবির কুশলী বর্ণনায় তার চমৎকার চিত্র—
বিপক্ষে দেখিয়া বড় নদে বাড়ে বান।
কুল কুল কুরব কমল কানে কান
পিছে রাখে বর্ধমান সরাই সহর।
দিগদণ্ড দিবায় দাখিল দামোদর।
কবির বাগবৈদগ্ধ্যের আরও চমৎকারিত্ব আছে প্রবচনমূলক উক্তিতে। ভারতচন্দ্রের মতোই তিনি বাংলা বুলির দক্ষশিল্পী। যেমন—
রোগ-ঋণ রিপু-শেষ দুঃখ দেয় রয়ে।
হাতে শঙ্খ দেখিতে দর্পণ নাহি খুঁজি।
ইন্দ্রজালে কোটাল ময়নায় নিদ্রা-মন্ত্র দিতে সকলেই নিদ্রাগত হল। সেই অবস্থার বর্ণনায় ঘনরামে সূক্ষ্ম কবিত্ব শক্তির পরিচয় দেখা যায়—
পণ্ডিত পুস্তক কোলে পড়ে যায় নি।
পাঁদাড়ে ঘুমায় চোর ঘরে কেটে সিঁদ।।
ঘোর ঘুমে ঘরে কেহ উঠানে পিঁড়ায়।
অনাথ-মণ্ডলে কত অতিথি ঘুমায়।।
কত নারী শিশুর বদনে দিয়ে স্তন।
ছায়ে মায়ে ভূমে গড়ে ঘুমে অচেতন।।
ছন্দ-প্রয়োগে ঘনরামের কুশলতা প্রশংসনীয়। সাধারণ পয়ার ছন্দেই কাব্য রচিত। মাঝে মাঝে ত্রিপদীর ব্যবহার আছে। চটুল রসের সৃষ্টিতে ঘনরাম পয়ারকে স্থিতিস্থাপক করে শ্বাসাঘাতপ্ৰধান ছন্দে রূপায়িত করেছেন। যুদ্ধের তীব্রতা বর্ণনায় দ্রুত গতি সঞ্চারের জন্য লঘু ত্রিপদী ব্যবহার করেছেন—
তনু ললাটাইয়া ক্ষিতি করিছে প্রণতি স্তুতি।
ভগবতী দুর্গতিনাশিনী।
যুদ্ধের আয়োজন ও অনুষ্ঠানের বর্ণনা ত্রিপদীতে ধীরগতিতে চলেছে এবং যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং তীব্রতা লঘু ত্রিপদীতে রূপলাভ করেছে।
শব্দের নির্বাচনে এবং শব্দ প্রয়োগে ঘনরামের দক্ষতা দেখা যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবেশ রচনায় বিভিন্ন শব্দের প্রয়োগে। তৎসম শব্দ ব্যবহার করে দেবীর স্তবে পৌরাণিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন—
শিবানী সৰ্বাণী শান্তি সৰ্ব্বকৃপাভৃতে।
দুর্গতি নাশিনী দুর্গে দেবী নমোস্তুতে।।
বিবাহের বর্ণনায়— তৎসম শব্দ ব্যবহার করেছেন—
ব্রাহ্মণে বেদরটে গন্ধাদি হেমঘটে।
পরশ করি শেষ কালে।
কথোপকথনে অনেক সময় চটুল শব্দ ব্যবহার করে তিনি বিশেষ পরিবেশ রচনায় এবং ব্যক্তি চরিত্রের বিকাশে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন—
এত শুনি কোপে তাপে ভট্ট কম হাঁকি।
কি কোস্ বেটাকে তোর থরথরাতে ফাঁপি।
ঘনরাম সংস্কৃতে সুপণ্ডিত ছিলেন এবং শাস্ত্র, পুরাণ ও পৌরাণিক কাব্যে তার যথেষ্ট অধিকার ছিল। তিনি কাব্য রচনায় রামায়ণ, মহাভারত ও শ্রীমদ্ভাগবত দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। ভক্তের আহ্বানে ঈশ্বর যে সাড়া না দিয়ে পারেন না তা উল্লেখ করতে গিয়ে লাউসেন বলেছেন—
প্রহ্লাদের প্রতিজ্ঞা বনে রক্ষা করি।
দেখা দিল ফটিকে নৃসিংহ রূপ ধরি।।
রেখেছ ধ্রুবের পণ আপনি গোঁসাই।
শ্রীমদ্ভাগবতের চতুর্থ স্কন্ধে ধ্রুবের কাহিনি এবং সপ্তম স্কন্ধে প্রহ্লাদের কাহিনি স্মরণীয়।
ভারতচন্দ্রের কাব্যে আধুনিকতার দাবি করা হয় তার বিভিন্ন শব্দের প্রয়োগে। তিনি সংস্কৃত ছাড়াও হিন্দি, আরবি, ফারসি ইত্যাদি ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন এবং কাব্যে তার ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু ঘনরাম ভারতচন্দ্রের পূর্বেই আরবি-ফারসি শব্দ বাক্যে ব্যবহার করেছে। সেদিক দিয়ে ঘনরাম পথিকৃৎ। ঘনরাম কেবল বিচ্ছিন্ন শব্দ প্রয়োগই করেনি, মুসলমান সমাজের বর্ণনায় এবং কথোপকথনে তিনি আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার করে চরিত্র-চিত্রণে ও পরিবেশ রচনায় নৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন। কামদল বাঘের অত্যাচার প্রসঙ্গে কবি বর্ণনা করেছেন—
মীর মিয়া মোগল মহলে দিল দাগা।
বাঁদি বলে ফতেমা বিবি ফুফায় খেলে বাঘা৷৷
ঘনরাম শব্দ প্রয়োগে অনেক সময় দুরূহ ও জটিলতা মুক্ত হতে পারেনি। উষা বোঝাতে ঘনরাম লিখেছেন— ‘গোবিন্দ নয় সুত-জায়া’, উত্তর দিক্ বোঝাতে ‘বিরাটতনয় মুখ’, বাহু বোঝাতে ‘সিংহিকা তনয়’। অনুপ্রাস প্রয়োগেও অনেক ক্ষেত্রে অষ্টাদশ শতকীয় রীতিকে বর্জন করতে পারেননি। মোটামুটি বৈদগ্ধ্য ও সরস কাব্যরীতি, পাণ্ডিত্য ও সূক্ষ্ম অনুভূতি, শোভন ও সরস প্রকাশভঙ্গি এবং সমগ্র কাব্যে প্রসারিত এক সংবেদনশীল হৃদয়ের পরিচয় ঘনরামের ধর্মমঙ্গলকে বিশিষ্ট মর্যাদায় ভূষিত করেছে। সরস বর্ণনা, ভাষার মাধুর্য, কল্পনার সৌন্দর্য প্রভৃতি যে সব গুণ উন্নত কবিত্বের উপযোগী— ঘনরামের কাব্যে তা আছে।
তথ্যসূত্র:
১. বাংলা মঙ্গলকাব্যের ইতিহাস: আশুতোষ ভট্টাচার্য
২. বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত: অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
৩. বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস: সুকুমার সেন
Leave a Reply