রামায়ণের রচনাকাল সম্পর্কে আলোচনা কর।
রামায়ণের রচনাকাল
রামায়ণের রচনাকাল সম্বন্ধে বিতর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে পাশ্চাত্য পণ্ডিত Winternitz বলেছেন— ‘‘Probably in the period 400-200 B.C.’’. Winternitz ছাড়াও Weber, Jacobi, Barth প্রভৃতি পণ্ডিতগণ রামায়ণের রচনাকাল সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।
ওয়েবারের মতে রামায়ণ একটি রূপকমাত্র। কারণ রামায়ণে ঐতিহাসিক সভ্যতা খুবই সামান্য। তিনি মনে করেন, ভারতবর্ষে গ্রীক আক্রমণের পূর্বে রামায়ণ রচিত হয়েছিল। তাছাড়া খ্রিঃ পূঃ চতুর্থ শতকে পাটলিপুত্র নগরী নির্মিত হয় এবং খ্রিঃ পূঃ ৩৫০ শতকে তা এক বিশাল নগরীতে পরিণত হয়। রামায়ণে এই নগরীর উল্লেখ না থাকায় অনুমান করা হয় যে পাটলিপুত্র নগরী প্রতিষ্ঠার পূর্বেই রামায়ণ রচিত হয়েছিল। এছাড়া বৌদ্ধ ও জৈন যুগের সাকেত’ নগরীর পরবর্তীকালে নামকরণ হয় অযােধ্যা। রামায়ণে ‘সাকেত’ যুগের নাম না থাকায় অনুমান করা হয় যে, বৌদ্ধ যুগের বহু পূর্বেই রামায়ণ রচিত হয়েছিল। সুতরাং প্রাক্-বুদ্ধ যুগকে রামায়ণের রচনাকাল ধরলে খ্রিঃ পূঃ চতুর্থ শতাব্দীকে এর রচনাকাল রূপে স্বীকার করতে হয়।
অন্য এক পাশ্চাত্য সমালোচক Jacobi রামায়ণের রচনাকাল আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন, রামায়ণ হল বেদের ইন্দ্র-বৃত্র উপাখ্যানের নতুন রূপ। বৈদিক সাহিত্যে পাওয়া যায় ইন্দ্র বৃত্রকে বধ করে বৃত্র কর্তৃক আবদ্ধ জলরাশি উদ্ধার করেন। রামায়ণেও রামচন্দ্র রাবণকে বধ করে রাবণের দ্বারা অপহৃতা সীতাকে উদ্ধার করেন। তাই রামায়ণের রাম বৈদিক ইন্দ্রের ছায়ামাত্র। তাছাড়া রামায়ণের ভাষা লৌকিক সংস্কৃত। কিন্তু Jacobi-র এই মত সর্বাংশে সত্য নয়। কারণ সমগ্র ভারতে এককালে সংস্কৃত কথ্যভাষা ছিল বলে মনে হয়। আর যদি থেকেও থাকে তাহলে সংস্কৃতের পাশাপাশি আঞ্চলিক ভাষাগুলিরও প্রচলন ছিল।
চীনদেশের বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, বৌদ্ধ দার্শনিক বসুবন্ধুর সময়ে (খ্রিঃ চতুর্থ শতক) বৌদ্ধগণ রামায়ণ সম্পর্কে বিশেষ অবহিত ছিলেন। আবার খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকের জৈন কবি বিমলসুর রচিত ‘পউনচরিঅ’ নামক প্রাকৃত কাব্যে রামোপাখ্যান লিপিবদ্ধ করেছেন। এই সব প্রমাণ দ্বারা মনে করা হয় যে, খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকের পূর্বেই রামায়ণের পূর্ণাঙ্গ রূপ রচিত হয়ে থাকবে। তবে রামায়ণে প্রক্ষিপ্ত অংশ আছে, তা যে এক সময়ের রচনা নয়—সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কারণ বহুকাল ধরেই রামায়ণের মধ্যে সংযোজন ও পরিমার্জন চলেছিল।
Leave a Reply