//
//

অর্থালংকারের সংজ্ঞাসহ শ্রেণিবিভাগ কর।

অর্থালংকার

যে অলংকার একান্তভাবে অর্থের ওপর নির্ভরশীল, অর্থ অক্ষুন্ন রেখে শব্দ। বদলে দিলেও যে অলংকার অক্ষুণ্ন থাকে, তাকেই বলে অর্থালংকার। যেমন—‘পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নটোরের বনলতা সেন।’ (জীবনানন্দ)। বনলতা সেনের চোখের সঙ্গে পাখির নীড়ের তুলনা করা হয়েছে। পাখির নীড় যেমন পাখির আশ্রয়স্থল বনলতা সেনের চোখও কবির কাছে গভীর আশ্রয়। এই তুলনার মধ্যেই কবি আবেগটি রূপ পেয়েছে। এভাবেই বাক্যটি সুন্দর হয়ে উঠেছে। এই তুলনা তাই অলংকার হয়ে উঠেছে। অর্থই এখানে প্রধান বিষয়, ধ্বনি নয়। তাই এটি অর্থালংকার। এবার এর কিছু শব্দ অদল বদল করে দেওয়া যাক। ‘পাখির বাসার মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন’ কিংবা ‘পাখির নীড়ের মতো আঁখি তুলে নাটোরের বনলতা সেন’ অথবা ‘বিহঙ্গের নীড় সম চক্ষু তুলে নাটোরের বনলতা সেন।’ এখানে শব্দ পাল্টে দিলেও, অর্থ একই থাকছে। অর্থাৎ অলংকার অক্ষুণ্ন থাকছে। বোঝাই যাচ্ছে, শব্দ বা ধ্বনিগুচ্ছ নয়, তার অর্থটিই এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থালংকারের শ্রেণিবিভাগ

অর্থালংকার মূলত পাঁচপ্রকাশ— সাদৃশ্যমূলক, বিরোধমূলক, শৃঙ্খলামূলক, ন্যায়মূলক, গূঢ়ার্থ-প্রতীতিমূলক। বিরোধমূলক অলংকারগুলি হল— বিরোধাভাস, বিভাবনা, বিশেষোক্তি, অসঙ্গতি, বিষম। শৃঙ্খলামূলক অলংকারগুলি হল— কারণমালা, একাবলী, সার, মালাদীপক। ন্যায়মূলক অলংকারগুলি হল—কাব্যলিঙ্গ, অর্থাপত্তি, অনুমান, পর্যায়, পরিবৃত্ত, সমুচয়। গুঢ়ার্থ-প্রতীতিমূলক অলংকারগুলি হল— অপ্রস্তুত-প্রশংসা, অর্থান্তরন্যাস, ব্যাজস্তুতি, স্বভাবোক্তি, আক্ষেপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!