উৎপ্রেক্ষা অলংকারের সংজ্ঞাসহ শ্রেণিবিভাগের বিস্তারিত বর্ণনা দাও।
উৎপ্রেক্ষা
‘উৎপ্রেক্ষা’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি হল— উৎ-প্র-ঈক্ষ (দর্শন করা, বিতর্ক করা) + অ + আ (স্ত্রীঃ)। এর আভিধানিক অর্থ ‘প্রকৃত বস্তুতে অপ্রকৃত বস্তুর আরোপ, উপমেয়তে উপমান স্বরূপে যে সম্ভাবনা বা সংশয় হয়, বর্ণনীয় বিষয়ের সহিত বিষয়ান্তরের অভেদকল্পনা। সাধারণ ভাবে ‘উৎপ্রেক্ষা’ শব্দের অর্থ সংশয় বা সন্দেহ। সাদৃশ্যমূলক অলংকারগুলির মধ্যে উৎপ্রেক্ষা একটি প্রধান অলংকার। এর সংজ্ঞা হল— প্রবল সাদৃশ্যের জন্য উপমেয়কে যদি উপমান বলে প্রবল সংশয় দেখা দেয়, তবে উৎপ্রেক্ষা অলংকার হয়।
উদাহরণ:
পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।
ব্যাখ্যা: এখানে উপমেয়-চাঁদ, উপমান-রুটি। চাঁদও গোলাকার, ঝলমলে রুটিও গোলাকার, ঝলসানো। তাই চাঁদে ও রুটিতে প্রবল সাদৃশ্য এবং সেইসূত্রে কবির মনে প্রবল সংশয়। ‘যেন’ শব্দ ব্যবহারে সেই সংশয় বোঝা যাচ্ছে এবং উপমান রুটি প্রাধান্য পাচ্ছে। উপমেয়কে উপমান বলে প্রবল সংশয় হওয়ার জন্যই উৎপ্রেক্ষা অলংকার হয়েছে।
উৎপ্রেক্ষার শ্রেণিবিভাগ
উৎপ্রেক্ষা প্রধানত দুই প্রকার— বাচ্যোৎপ্রেক্ষা এবং প্রতীয়মানোৎপ্রেক্ষা।
বাচ্যোৎপ্রেক্ষা
যে উৎপ্রেক্ষা অলংকারে উপমেয়কে উপমান বলে প্রবল সংশয় জাগে এবং বাক্যের মধ্যে সংশয়সূচক শব্দটির উল্লেখ থাকে তাকে বাচ্যোৎপ্রেক্ষা বলে।
উদাহরণ:
সীতা হারা আমি যেন মণি হারা ফণী।
ব্যাখ্যা: এখানে উপমেয়— আমি (রামচন্দ্র) এবং উপমান—ফণী। উপমেয় আমি এবং উপমান ফণীতে বিশাল সাদৃশ্য কারণ স্ত্রী সীতাকে হারিয়ে রামচন্দ্রের যে দুরবস্থা, মাথার মণি হারিয়ে ফণীরও সেই একই অবস্থা। প্রবল সাদৃশ্যের জন্য কবির মনে সংশয় জেগেছে এবং সংশয়সূচক শব্দ ‘যেন’ বাক্যের মধ্যে উপস্থিত আছে। তাই এটি বাচ্যোৎপ্রেক্ষা অলংকার।
প্রতীয়মানোৎপ্রেক্ষা
যে উৎপ্রেক্ষা অলংকারে উপমেয়কে উপমান বলে প্রবল সংশয় জাগে কিন্তু বাক্যের মধ্যে সংশয়সূচক শব্দটির উল্লেখ থাকে না তাকে বলে প্রতীয়মানোৎপ্রেক্ষা অলংকার।
উদাহরণ:
এ ব্রহ্মাণ্ড ঝুলে প্রকাণ্ড রঙ্গীন মাকাল ফল।
ব্যাখ্যা: এখানে উপমেয়— ব্রহ্মাণ্ড এবং উপমান— মাকাল ফল। ব্রহ্মাণ্ডকে কবির মাকাল ফল বলে প্রবল সংশয় জেগেছে কিন্তু সংশয়সূচক শব্দটির কোনো উল্লেখ এখানে নেই। তাই এটি প্রতীয়মানোৎপ্রেক্ষা অলংকার।
Leave a Reply