অতিশয়োক্তি অলংকারের শ্রেণিবিভাগসহ বিভিন্ন ভাগের বর্ণনা দাও।
অতিশয়োক্তি
যে সাদৃশ্যমূলক অলংকারে উপমান উপমেয়কে গ্রাস করে নেয়, অর্থাৎ উপমেয়র পরিবর্তে উপমানই বর্ণিত হয়, উপমেয়র উল্লেখ হয় না, তাকে অতিশয়োক্তি বলে।
উদাহরণ:
মারাঠার যত পতঙ্গপাল কৃপাণ অনলে আজ,
ঝাঁপদিয়া পড়ি ফিরে নাকো যেন গর্জিলা দুমরাজ।
ব্যাখ্যা: এখানে উপমান— ‘পতঙ্গপাল’, উপমেয়— ‘সৈনিকবৃন্দ’ উহ্য। উপমেয়র সঙ্গে উপমানের অভেদ্যত্বের জন্য উপমান পতঙ্গপাল উপমেয় সৈনিকবৃন্দকে একেবারে গ্রাস করে ফেলেছে। সুতরাং উপমান পতঙ্গপালের সর্বেসর্বারূপে প্রতিষ্ঠার জন্য এটি অতিশয়োক্তি অলংকার হয়েছে।
অতিশয়োক্তি অলংকারের শ্রেণিবিভাগ
অতিশয়োক্তি পঁচপ্রকার— ভেদে-অভেদ, অভেদে-ভেদ, সম্বন্ধে অসম্বন্ধ, অসম্বন্ধে সম্বন্ধ, কার্যকারণের পৌর্বাপর্যবিপর্যয়।
ভেদে-অভেদ অতিশয়োক্তি বা রূপকাতিশয়োক্তি
যে অতিশয়োক্তি অলংকারে দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বস্তুতে অভেদ কল্পিত হয় এবং উপমেয়কে উপমান সম্পূর্ণ গ্রাস করে উপমানই প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে ভেদে অভেদ অতিশয়োক্তি বলে।
উদাহরণ:
সাগরে যে অগ্নি থাকে কল্পনা সে নয়
তোমায় দেখে অবিশ্বাসীর হয়েছে প্রত্যয়।
ব্যাখ্যা: উপমান— সাগরে থাকা অগ্নি, উপমেয়— বিদ্যাসাগর (উহ্য)। উপমান ও উপমেয় সম্পূর্ণ ভিন্ন বস্তু। এখানে উপমান উপমেয়কে গ্রাস করেছে। তাই ভেদে-অভেদ অতিশয়োক্তি হয়েছে এখানে।
অভেদ-ভেদ অতিশয়োক্তি
এই অলংকারে একই বস্তুকে কল্পনায় দুই পৃথক বস্তু (উপমেয় ও উপমান) হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
উদাহরণ:
মা আমার বড়ো বেশি মায়ের মতন।
ব্যাখ্যা: এখানে একই ‘মা’ এর মধ্যে কল্পনায় দুই ‘মা’ এর উপস্থাপনে বাক্যটিতে অভেদে-ভেদ অতিশয়োক্তি হয়েছে।
সম্বন্ধে-অম্বন্ধ অতিশয়োক্তি
যে অতিশয়োক্তি অলংকারে চির সম্বন্ধযুক্ত দুটি বস্তুকে কল্পনায় সম্বন্ধহীন হিসেবে দেখানো হয়, তাকে সম্বন্ধে-অসম্বন্ধ অতিশয়োক্তি বলে।
উদাহরণ:
আমার হৃদয় প্রাণ সকলি করেছি দান।
কেবল সরমখানি রেখেছি।
ব্যাখ্যা: হৃদয়, প্রাণ ও সরম অবিচ্ছেদ্য, চিরসম্বন্ধযুক্ত। কিন্তু এখানে সরমকে কল্পনায় পৃথক করা হয়েছে। এই হিসেবে এটি সম্বন্ধে-অসম্বন্ধ অতিশয়োক্তি অলংকার।
অসম্বন্ধে-সম্বন্ধ অতিশয়োক্তি
এখানে সম্বন্ধহীন দুটি বস্তুর মধ্যেগভীরসম্বন্ধ কল্পনা করা হয়।
উদাহরণ:
আমি নইলে মিথ্যা হত সন্ধ্যাতারা ওঠা,
মিথ্যা হ”ত কাননে ফুল ফোটা।
ব্যাখ্যা: কবি এখানে সন্ধ্যাতারা ও কাননের ফুলের অসম্বন্ধে কল্পনায় সম্বন্ধ স্থাপন করেছেন। ফলে এখানে অসম্বন্ধে-সম্বন্ধ অতিশয়োক্তি হয়েছে।
কার্যকরণের পৌর্বাপর্যবিপর্যয় অতিশয়োক্তি
এখানে কারণের আগেই কার্য ঘটে। অর্থাৎ আগে কার্য, পরে কারণের বিন্যাস ঘটে।
উদাহরণ:
আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ
চুনি উঠল রাঙাহয়ে।
গোলাপকে বললুম সুন্দর সুন্দর হল সে।
ব্যাখ্যা: রবীন্দ্রনাথ পান্না এমনিতেই সবুজ, চুনি রাঙা, গোলাপ সুন্দর। এগুলিকে দেখেই বলা যায়— পান্না সবুজ, চুনি রাঙা, গোলাপ সুন্দর। কিন্তু কবি বলেছেন ঠিক বিপরীত কথা। তাঁরই চেতনার রং নিয়ে পান্না সবুজ, চুনি রাঙা; তাঁরই কথা মতো নাকি গোলাপ সুন্দর হয়েছে। এখানে কার্যকারণ বিপর্যয় দেখা গেছে।
Leave a Reply