//
//

গোরক্ষবিজয়ের কাহিনি সংক্ষেপে আলোচনা কর।

গোরক্ষবিজয়ের কাহিনি

আদ্যদেব-আদ্যাদেবী কর্তৃক দেবতারা সৃষ্ট হলে মীননাথ, গোরক্ষনাথ, হাড়িপা ও কানুপা— এই চারজন সিদ্ধার জন্ম হয়। এর পর জন্মান গৌরী। আদ্যদেবের আদেশে শিব গৌরীকে বিয়ে করে মর্ত্যলোকে চলে আসেন। চার সিদ্ধা জন্মেই যোগাভ্যাসে মগ্ন হলেন। গোরক্ষনাথ মীননাথের এবং কানুপা হাড়িপার ভৃত্যরূপে পরিচর্যা করতে লাগলেন।

একদা ক্ষীরোদসাগরে জলের ওপর টঙে বসে গৌরী যখন শিবের কাছ থেকে মহাজ্ঞান শুনছিলেন তখন মীননাথ মাছের রূপ ধরে বা মাছের পেটে থেকে সে মহাজ্ঞান শুনে ফেললেন। এ ছলনার কথা জানতে পেরে গৌরী তাঁকে মহাজ্ঞান বিস্মৃত হওয়ার অভিশাপ দিলেন। শিব রইলেন গৌরীকে নিয়ে কৈলাসে। চার সিদ্ধা চারদিকে চলে গেলেন। হাড়িপা গেলেন পূর্বদেশে, কানুপা দক্ষিণে, গোরক্ষনাথ পশ্চিমে এবং মীননাথ উত্তরে। গৌরীর ইচ্ছা সিদ্ধারা বিয়ে করে সংসার করুন। শিব জানালেন তাঁদের কাম নেই, তারা বিয়ে করবেন না। গৌরী তাদের পরীক্ষা করতে চাইলেন। শিব ধ্যানযোগে সিদ্ধাদের ডেকে আনলেন। গৌরী মোহিনীরূপে অন্ন পরিবেশন করতে গেলেন। এতে মীননাথ হাড়িপা কানুপা তিন জনেরই চিত্তচাঞ্চল্য ঘটল, কেবল গোরক্ষনাথের মনে দেবীকে দেখে শিশুভাব জাগল । দেবী তখন অভিশাপ দিলেন। দেবীর অভিশাপে মীননাথ কদলীর দেশে গিয়ে ষোলশত রমণীসহ বিলাসে মত্ত রইলেন। হাড়িপী রানী ময়নামতীর পুরীতে হাড়ির কাজ নিলেন। কানুপ ডাহুকের দেশে বন্ধু নিয়ে ক্রীড়া করতে গেলেন। গোরক্ষনাথকে দেবী নানাভাবে কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমেও আদর্শচ্যুত করতে পারলেন না।

গোরক্ষনাথ একদিন বকুলতলায় বসেছিলেন। তখন আকাশপথে কানুপা উড়ে যাচ্ছেন। তার ছায়া গোরক্ষনাথের গায়ে পড়লে তিনি ক্রোধে পাদুকা ছুঁড়লেন। পাদুকা কানুপাকে ধরে নিয়ে এল। কানুপা বললেন, তুমি বড় সিদ্ধ হয়েছ, তোমার শুরু কদলীর নারীদের মোহে জরাজীর্ণ, তার আয়ু মাত্র তিন দিন। গোরক্ষনাথ জানালেন, তোমার শুরু ময়নামতীর পুত্র রাজা গোপীনাথ কতৃর্ক মাটির তলায় বন্দি। তখন দুজন চললেন নিজ নিজ গুরু উদ্ধারে ।

গোরক্ষনাথ যমালয়ে গিয়ে গুরু মীননাশ্বের আয়ুর হিসাব কেটে দিলেন। তারপর কদলীদেশে প্রথমে ব্রাহ্মণবেশে এবং পরে যোগীবেশে মীননাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলেন। মীননাথ এখন দুই পাটরানী ও ষোলশত সেবিকা নিয়ে মগ্ন। নর্তকী ছাড়া আর কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে পারে না, তা গোরক্ষনাথ নর্তকীবেশে সভায় প্রবেশ করে মাল বাজিয়ে নৃত্য শুরু করলেন। গোরক্ষনাথ মাদলের বোলে মীননাথকে পূর্বের কথা স্মরণ করালেন এবং আত্মাজ্ঞান দিলেন। তাতেও চৈতন্য না হলে তার কানে কানে গানের মাধ্যমে মহাজ্ঞান পৌছিয়ে দিলেন। কিন্তু মীননাথের চৈতন্য হলেও মোহ কাটে না। গোরক্ষনাথ মীননাথের পুত্রকে আছড়িয়ে মেরে আবার জীবিত করে তুললেন। এতে মীননাথের পূর্ণ চৈতন্য হল। এদিকে কালীরমণীরা মীননাথকে ছাড়তে রাজি নয়। তারা গোরক্ষনাথকে মেরে ফেলতে চাইল। গোরক্ষনাথ শাপ দিয়ে তাদের বাদুড় করে ফেললেন। তারপর গুরুকে নিয়ে বিজয়নগরে ফিরে এলেন।

গোরক্ষবিজয়ে দেবতার স্থান নেই। এখানে গোরক্ষনাথ নিজেই দেবতার আসন গ্রহণ করেছেন। তাই এতে অলৌকিকতা ও আজগুবি কাহিনির ছড়াছড়ি।

Publication date:
Author: Admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!