//
//

থিয়েটারের ইতিহাসে গ্রান্ড ন্যাশানাল থিয়েটারের অবদান আলোচনা কর।

গ্রান্ড ন্যাশনাল থিয়েটার

(১৯১১-১৫)

বেঙ্গল থিয়েটারের বাড়িতে চুনীলালদেব গ্রান্ড ন্যাশনাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন, ১৯১১-এর ৯ ডিসেম্বর। অভিনীত হয় ‘রাজলক্ষ্মী’ নাটক। বাংলা থিয়েটারের পরিচিত সব শিল্পী এসে জড়ো হয়েছিলেন। চুনীলাল, নিখিলকৃষ্ণদেব, নেপা বোস, মন্মথনাথ পাল, শশিভূষণ মুখোপাধ্যায়, লীলাবতী, সরোজিনী, বসন্তকুমারী, কুসুমকুমারী, (বিষাদ) প্রভৃতি। প্রায় তিনবছর এই রঙ্গালয়টি একটানা অভিনয় চালিয়ে যায়। প্রায় পঞ্চাশটি নাটক, অপেরা, প্রহসন এখানে অভিনীত হয়েছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—দীনবন্ধুর জেনানা যুদ্ধ; মনোমোহন গোস্বামীর ‘পৃথ্বিরাজ’, ‘রিজিয়া’; গিরিশের আবু হোসেন, হীরার ফুল, নলদময়ন্তী, পাণ্ডবগৌরব, চৈতন্যলীলা, রূপসনাতন; দ্বিজেন্দ্রলালের তারারাষ্ট্র; ক্ষীরোদপ্রসাদের প্রমোদরঞ্জন, আলিবাবা; চুনীলালদেবের বাহবা, গুলরুজেরিনা, নবাবনন্দিনী; বঙ্কিমের উপন্যাস দেবীচৌধুরাণী, কৃষ্ণকান্তের উইল (ভ্রমর) ইত্যাদির নাট্যরূপ; রাজকৃষ্ণ রায়ের বনবীর ইত্যাদি নাটক খুবই সাফল্যের সঙ্গে অভিনয় করে। চুনীলালদেবের নবাবনন্দিনী (দামোদর মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে লেখা) নাটকটি পুলিশের নির্দেশে অভিনয় বন্ধ রাখতে হয় এবং বেশ কিছু অংশ বাদ দিয়ে তবে অভিনয়ের অনুমতি পাওয়া যায়। ১৯১২-এর ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রান্ড ন্যাশনাল কিছুদিন কলকাতার বাইরে নানা অঞ্চলে অভিনয় করতে যায়। ফিরে এসে মার্চ মাস থেকে অভিনয় শুরু করে। আবার ১৯১৩-এর ফেব্রুয়ারি মাসে পঞ্চকোটের রাজবাড়িতে অভিনয় করতে যায়। ফিরে এসে কলকাতায় অভিনয় করে গিরিশের চৈতন্যলীলা, রূপসনাতন, আবু হােসেন ; হরিশ্চন্দ্র সান্যালের ভীষ্ম, কপালকুণ্ডলার নাট্যরূপ, অমৃতলাল বসুর চোরের উপর বাটপাড়ি ; চুনীলালের আলুবকরা, তিনটি আপেল প্রভৃতি নাটক। ১৯১৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত গ্রান্ড ন্যাশনাল অভিনয় চালিয়ে যায়। ক্রমে এই নাট্যদল স্টার থিয়েটারের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে অভিনয় শুরু করে। শেষ পর্যন্ত প্রায় সব শিল্পীই চুনীলালদেবের সঙ্গে স্টার থিয়েটারে যোগ দেন। গ্রান্ড ন্যাশনালের অভিনয় শেষ হয়ে যায়।

এখানে প্রায় সবই পুরনো নাটকের অভিনয় হয়েছিল। অখ্যাতনামা নাট্যকারদের কয়েকটি নতুন নাটক এখানে অভিনীত হয়। পৌরাণিক, সামাজিক, ঐতিহাসিক নাটক, গীতিনাট্য-অপেরা এবং পঞ্চরং-প্রহসন এখানে অভিনীত হয়েছিল। বঙ্কিমের কয়েকটি উপন্যাসের নাট্যরূপও অভিনীত হয়েছিল। নাচে গানে নৃপেন বোস, কুসুমকুমারী এবং অভিনয়ে চুনীলাল দেব, মন্মথনাথ পাল, কুসুমকুমারী খুবই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। স্বল্পস্থায়ী গ্রান্ড ন্যাশনাল থিয়েটারের আর কোনো উল্লেখযোগ্য সংবাদ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!