//
//

বাংলা নাট্যশালার ইতিহাসে দমদম থিয়েটারের অবদান আলোচনা কর।

দমদম থিয়েটার

উদ্বোধন: ১৮১৭

কলকাতায় চৌরঙ্গী থিয়েটারের রমরমার সময়ে দমদম অঞ্চলে আকারে ছোট কিন্তু দেখতে অতি সুন্দর এই দমদম থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয়। মিলিটারী সৈন্যদের আস্তানার কাছেই একটি করে রঙ্গালয় তৈরি করা সেই সময়কার ইংরেজদের মধ্যে লক্ষ করা যায়। দমদমে বিরাট সৈন্যদের ছাউনি ছিল। সেখানে ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে এই রঙ্গালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। অভিনয়ের গুণে এবং নাট্যোপস্থাপনের কৃতিত্বে ও কুশলী শিল্পীদের আকর্ষণে দমদম থিয়েটার খ্যাতিলাভ করে। কলকাতা থেকেও প্রচুর দর্শক চৌরঙ্গী থিয়েটারের সাফল্যের দিনেও উপকণ্ঠের দমদমে নাটক দেখতে যেত। এটা গৌরবের কথা। চৌরঙ্গী থিয়েটারকে ইন্ডিয়ান ডুরিলেন থিয়েটার নাম দিয়ে ইংলন্ডের বিখ্যাত থিয়েটারের সঙ্গে তুলনা করা হও। দমদম থিয়েটারকে বলা হতো ‘লিটল ডুরিলেন থিয়েটার’। এই অনুষঙ্গ মর্যাদাব্যঞ্জক।

এখানে অভিনেত্রী ছিলেন মিসেস লীচ, মিসেস ফ্রান্সিস, মিসেস গটলিয়েব, মিসেস ব্ল্যান্ড। এখান থেকেই এঁরা খ্যাতি অর্জন করে কলকাতার থিয়েটারে যোগ দেন। এই থিয়েটারের প্রাণপুরুষ ছিলেন এক সৈনিক, নাম চার্লস ফ্রাঙ্কলিং। তিনি এসে দমদমে যোগ দেবার পরই এই থিয়েটারের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তিনিই ছিলেন পরিচালক ও প্রধান অভিনেতা। তাঁর একনিষ্ঠ প্রচেষ্টার ফলেই লোকে চৌরঙ্গীর অভিনয় ফেলে দমদমে ছুটে আসত। ১৮১৭ থেকে ১৮২৪ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন থিয়েটারের প্রাণপুরুষ। ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে দমদমে তাঁর মৃত্যু হয়। বিদেশী রঙ্গালয়ে যে কয়জন অভিনেতা ও পরিচালক তাদের প্রতিভা ও নিষ্ঠার গুণে সম্মান-শ্রদ্ধা পেয়েছিলেন ফ্রাঙ্কলিং তাঁদের অন্যতম। তাঁর মৃত্যুতে ইন্ডিয়া গেজেট পত্রিকা সম্পাদকীয় স্তম্ভে তাঁর কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখ করেছিল।

এখানে অভিনীত কয়েকটি নাটক হলো—ব্রোকন সোর্ড, পেজেন্ট বয়, দি উইল, দি ওয়াটার ম্যান, রেজিং দি উইন্ড, দি হানিমুন। এখানে বিয়োগান্ত নাটক ও হাল্কা প্রহসন দু’ধরনের অভিনয়ই সাফল্য লাভ করেছিল।

১৮২৪-এ ফ্রাঙ্কলিং-এর মৃত্যুর পর, নামকরা অভিনেত্রীরা সব কলকাতার থিয়েটারে চলে যাওয়ায় দমদম থিয়েটার ম্রিয়মান হয়ে পড়ে ও শেষে বন্ধ হয়ে যায়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!