রঙ্গমঞ্চের ইতিহাসে রামজয় বসাকের নাট্যশালার অবদান লেখ।
রামজয় বসাকের বাড়ির নাট্যশালা
কলকাতায় নতুনবাজারে চড়কডাঙ্গায় (বর্তমান টেগোর ক্যাসল্ রোড) রামজয় বসাকের বাড়িতে নাট্যশালা স্থাপিত হয়।
ওরিয়েন্টাল থিয়েটারে রীতিমত ইংরেজি অভিনয় হলো। রাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের উপদেশে ওরিয়েন্টাল থিয়েটারের কেশব গঙ্গোপাধ্যায়, প্রিয়নাথ বসু, রাজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, জগদ্দুর্লভ বসাক প্রমুখ অভিনেতারা সেখানে বাংলায় নাটকের অভিনয় এবং দেশীয় ঐকতান বাদনের চেষ্টা করে বিফল মনোরথ হন। তখন তাঁরা সেই থিয়েটার থেকে বেরিয়ে এসে নিজেরাই একটি নাট্যসম্প্রদায় গঠন করেন। তাঁদেরই উদ্যোগে এবং ধনী রামজয় বসাকের অর্থানুকূল্যে তাঁরই বাড়িতে নাট্যশালা তৈরি করা হয়।
এখানেই প্রথম রামনারায়ণ তর্করত্নের ‘কুলীনকুলসর্বস্ব’ নাটকের অভিনয় হয়। ১৮ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে এই অভিনয়ের খবর পাওয়া যায়। নাটকটি এখানে চার রাত্রি অভিনীত হয়। অভিনয়ে অংশ নেন—রাধাপ্রসাদ বসাক, রামজয় বসাক, জগদুর্লভ বসাক, নারায়ণচন্দ্র বসাক, রাজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, বিহারীলাল চট্টোপাধ্যায়। সবকিছুর উদ্যোক্তা ছিলেন কেশবচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়। ওরিয়েন্টাল থিয়েটারের অভিনেতা রাজেন্দ্রলাল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জগদ্দুর্লভ বসাক দুজনেই ব্রাহ্মণ কুলীন পণ্ডিতের ভূমিকায় মাতিয়ে দিয়েছিলেন।
এই অভিনয়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খবর হলো, এই প্রথম বাঙালির নাট্যশালায় মৌলিক বাংলা নাটকের অভিনয় হলো। এর আগে যা হয়েছে, তার সবই হয় মূল ইংরেজি নাটক, সংস্কৃত নাটক বা কাহিনীর অনুবাদ, বিদ্যাসুন্দর পালার নাট্যরূপ। বাংলা রঙ্গালয়ে মৌলিক নাটকের অভিনয় শুরু হলো। তখন দেশে সমাজ-সংস্কার আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠেছে। কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে ‘কুলীনকুলসর্বস্ব’ নাটক রচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। রামনারায়ণ এই নাটক লিখে পারিতোষিক পেয়েছিলেন। বলা যায়, সমাজ-সমস্যামূলক নাটক বাংলায় এই প্রথম লিখিত হলো। কুলীন সমস্যা নিয়ে এই নাটক তখন কলকাতায় ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে খুব হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল।
Leave a Reply