শোভাবাজার প্রাইভেট থিয়েট্রিক্যাল সোসাইটির অবদান আলোচনা কর।
শোভাবাজার প্রাইভেট থিয়েট্রিকাল সোসাইটি
অনেক আগে, সেই ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে ওভাবাজারের রাজবাড়িতে রাধাকান্ত দেবের উদ্যোগে একটি বড় হলঘরের মধ্যে ছোট একটি মঞ্চ তৈরি করে দুটি ইংরেজি নাটকের (‘লাভার্স অফ সালামাক্কা’ ও ‘দি ফক্স অ্যান্ড দি উলফ’) অভিনয় হয়েছিল; ১৮৪৪-এর ১৯ অক্টোবর। সাঁ সুসি থিয়েটারের স্টেজ ম্যানেজার মিঃ ব্যারী তার অভিনেত্রী স্ত্রীকে নিয়ে এই নাট্যমঞ্চের মঞ্চ নির্মাণে ও নাট্য নির্দেশনায় সাহায্য করেন। প্রয়োজনীয় দৃশ্যপট দিয়ে ছোট মঞ্চটি সাজানো হয়। এই অভিনয়ের সঙ্গে মঁসিয়ে রজিয়ার-এর ‘টাইট অ্যান্ড স্লক রোপ’ নৃত্য দেখানো হয়েছিল। তারপর দীর্ঘকাল এখানে অভিনয় হয়নি। আবার শুরু হলো ১৮৬৫-তে।
রাধাকান্ত দেবের ভ্রাতুস্পুত্র দেবীকৃষ্ণ বাহাদুরের উদ্যোগে আবার রঙ্গমঞ্চ তৈরি করে নাট্যাভিনয় শুরু হয়। রাজবাড়ির ছেলেরা এবং বাইরের বেশ কিছু শিক্ষিত যুবক মিলে স্থাপন করেন শোভাবাজার প্রাইভেট থিয়েট্রিকাল সোসাইটি। কার্যনির্বাহক কমিটির সভাপতি ছিলেন কালীপ্রসন্ন সিংহ।
ধনী বাড়ির যুবকবৃন্দের নাট্যাভিনয়ের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানায় ‘হিন্দু পেট্রিয়ট’ পত্রিকা। ধনী যুবকেরা নীচ আমোদ-প্রমোদে অর্থ ও সময় ব্যয় না করে নাট্যাভিনয়ে মনোযোগ দেওয়াতে তাদের অভিনন্দন জানানো হয়।
এখানে প্রথম অভিনীত হয় মধুসূদনের প্রহসন ‘একেই কি বলে সভ্যতা?, ১৮ জুলাই, ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে। দ্বিতীয়বার অভিনয় হয় ২৯ জুলাই। ১৯ জন অভিনেতা অভিনয়ে অংশ নেন। নট-নটীর সঙ্গীত সুমধুর হয়েছিল। অভিনয়ে নববাবু, বৈরাগী, কর্তা, হরকামিনীর অভিনয় প্রশংসা অর্জন করে।
দর্শক ছিলেন রাজা দিগম্বর মিত্র, কালীপ্রসন্ন সিংহ, যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর প্রমুখ প্রায় একশো সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। কিছুদিন পরে সভাপতি কালীপ্রসন্ন সিংহ আও কিছু সদস্যের সঙ্গে এই থিয়েটারের সঙ্গে সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন করেন। তা সত্ত্বেও অভিনয় অব্যাহত থাকে। ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) মধুসূদনের ‘কৃষ্ণকুমারী’ নাটকের অভিনয় হয়। অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেন—
ভীমসিংহ—বিহারীলাল চট্টোপাধ্যায়, বলেন্দ্ৰসিংহ—প্রিয়মাধব বসুমল্লিক, জগৎ সিংহ—কুমার উপেন্দ্রকৃষ্ণ, সত্যদাস—কুমার আনন্দকৃষ্ণ, ধনদাস—মনমোহন সরকার, কৃষ্ণকুমারী—কুমার ব্রজেন্দ্রকৃষ্ণ, বিলাসবতী—হরলাল সেন, মদনিক—রামকুমার মুখোপাধ্যায়। এদের মধ্যে ধনদাস, মদনিকা, ভীমসিংহ, বলেন্দ্ৰসিংহ চরিত্রের অভিনয়ের প্রশংসা হয়েছিল।
রঙ্গমঞ্চের ইতিহাসে শোভাবাজার প্রাইভেট থিয়েট্রিক্যাল সোসাইটির অবদান
এই নাট্যশালা সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য কথা হলো—
- কর্তাব্যক্তিদের সাহায্য ছাড়াই যুববৃন্দ উৎসাহে ও পারদর্শিতায় নাট্যাভিনয় করেছিল।
- এই রঙ্গালয়ই প্রথম মধুসূদনের ‘একেই কি বলে সভ্যতা?’ ও ‘কৃষ্ণকুমারী’ নাটকের অভিনয়ের সাহস ও কৃতিত্ব দেখিয়েছিল। কেননা, এই প্রহসন ও নাটকটি মধুসূদন বেলগাছিয়ার জন্য লিখলেও সেখানে নানা প্রতিকূলতার কারণে নাট্যশালার কর্তৃপক্ষ অভিনয় করতে পারেননি। এতদিন ধরে অন্য কোথাও অভিনীত হয়নি। এতদিনের অক্ষমতা শোভাবাজার প্রাইভেট থিয়েট্রিকাল সোসাইটি দূর করতে সমর্থ হয়েছিল। তা সত্ত্বেও দেখি কিছু সংবাদপত্রের কাছে প্রহসনটির অনেকাংশ সুরুচি, সুনীতির পরিপন্থী বলে মনে হয়েছিল।
Leave a Reply