//
//

ইংরেজি সাহিত্যে চার্লস ডিকেন্সের অবদান আলোচনা কর।

চার্লস ডিকেন্স (১৮১২-১৮৭০)

ভিক্টোরিয়ান যুগে ইউরোপের সাহিত্যে এক নতুন বিপ্লবের নাম চার্লস ডিকেন্স (১৮১২-১৮৭০)। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক, সম্পাদক, সচিত্র প্রতিবেদক এবং সমালোচক ছিলেন। তবে চার্লস ডিকেন্সকে ইতিহাস মনে রাখবে তার অসাধারণ লেখনীর জন্য। ‘অলিভার টুইস্ট’, ‘অ্যা ক্রিস্টমাস ক্যারল’, ‘নিকোলাস নিকলবি’, ‘ডেভিড কপারফিল্ড’, ‘অ্যা টেল অফ টু সিটিস’ এবং ‘গ্রেট এক্সপেকটেশন’-এর মতো কালজয়ী উপন্যাসের রচয়িতা ডিকেন্সকে ঊনবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

বিখ্যাত সাহিত্যিক চার্লস ডিকেন্সের জন্ম ১৮১২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের পোর্টসমাউথ শহরে। বাবা জন ডিকেন্স এবং মা এলিজাবেথ বারো এর আট সন্তানের সংসারে চার্লস দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন। ডিকেন্সরা পারিবারিক দিক থেকে অসচ্ছল ছিলেন। জন ডিকেন্স কঠোর পরিশ্রম করতেন পরিবারের ভাগ্য বদলানোর জন্য, কিন্তু কোনোভাবেই তাদের অবস্থার উন্নতি হলো না। জনের নিকট পোর্টসমাউথ শহরকেই অভিশপ্ত লাগতে থাকে। তাই ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় সপরিবারে কেন্টের চাথাম শহরে গমন করলেন। নতুন শহরে নতুনভাবে সবকিছু শুরু করলেন তারা। শহরের রাস্তায় মুক্তভাবে চলাফেরা করতেন তিনি। মাঝে মাঝে রোচেস্টারের প্রাচীন প্রাসাদে ঘুরতে যেতেন ভাইবোনদের সাথে। মনে হচ্ছিলো এবার বুঝি ভাগ্য ফিরলো ডিকেন্সদের। কিন্তু চাথামেও স্থায়ী হতে পারলেন না তারা। ফলে ১৮২২ সালে লণ্ডনে স্থানান্তরিত হন তারা। চার্লস ডিকেন্সের শৈশবটুকু লণ্ডনেই কাটে। কিন্তু নতুন শহরে আরো বড় ঝামেলায় ফেঁসে গেলেন জন ডিকেন্স। ফলে শৈশবের আনন্দে ইস্তফা দিয়ে জীবনযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন কিশোর চার্লস। লণ্ডনের দরিদ্র পল্লীতে নতুন বসতি স্থাপন করেন জন ডিকেন্স। অর্থাভাবে নিরুপায় হয়ে তিনি প্রতিবেশীদের নিকট থেকে বেশ কিছু টাকা ঋণ করেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়সীমার পরেও তিনি অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হন। পাওনাদাররা রেগে গেলো। এভাবে আর কয়দিন? এবার তারা জনের নামে মামলা ঠুকে দিলো। মামলায় জন এবং তার পুরো পরিবারকে আসামী করা হলো। কয়দিন বাদে ডিকেন্সের বাড়ির সামনে পুলিশ এসে হাজির হলো। বেচারা ডিকেন্স অসহায় আত্মসমর্পণ করেন। ১৮২৪ সালে জন ডিকেন্স এবং তার পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদের গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

১৮৩২ সালে চার্লস ডিকেন্স পিয়নের কাজ ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করা শুরু করেন। লণ্ডনের বিভিন্ন পত্রিকায় ছবি স্কেচ করা শুরু করেন তিনি। ফাঁকে ফাঁকে দু’চার পাতা লিখতেও থাকেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, চার্লস স্কেচের নিচে ছদ্মনামে স্বাক্ষর করতে থাকেন। তার সকল স্কেচের নিচে ‘বোজ’ বা ‘Boz’ নামে স্বাক্ষর করা থাকতো। ১৮৩৬ সালে চার্লস ডিকেন্স তার স্কেচগুলো একত্র করে বই আকারে প্রকাশ করেন ‘দ্য স্কেচেস বাই বোজ’ নামে। বই বিক্রির মাধ্যমে চার্লস ডিকেন্স বেশ কিছু অর্থ লাভ করেন। তার আর্থিক অবস্থার সামান্য উন্নতি ঘটে। এরপর ক্যাথেরিন হোগার্ট নামক এক নারীর প্রেমে পড়েন তিনি। তারা দ্রুত বিয়ে করে ফেলেন। বিয়ের পর যেন নতুন চার্লসের জন্ম হয়। তিনি বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন। তিনি এবার পত্রিকায় ধারাবাহিক উপন্যাস লেখার কাজে হাত দিলেন। লণ্ডনের একটি পত্রিকায় ছাপা হলো চার্লস ডিকেন্স রচিত ধারাবাহিক উপন্যাস  ‘The Posthumous Papers of the Pickwick Club’ গল্পের নাম দেখেই যেন পাঠকরা আগ্রহী হয়ে ওঠে। প্রথম পর্ব পড়ার পর পাঠকরা অভিভূত হয়ে যায়। দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশিত হওয়ার পর খুব দ্রুত সবগুলো কপি বিক্রি হয়ে গেলো। শেষে অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে, সবাই চার্লস ডিকেন্সের গল্প পড়তে চায়। ডিকেন্সের মূলনীতি ছিল— “পাঠকদের হাসাও, পাঠকদের কাঁদাও এবং তাদের অপেক্ষা করাও।”  ডিকেন্সের লেখার ধরন সাহিত্যে এক নতুন মাত্রার সৃষ্টি করলো। ১৮৩৭ সালে ‘The Posthumous Papers of the Pickwick Club’ সর্বাধিক পঠিত ধারাবাহিক উপন্যাস হিসেবে নির্বাচিত হয়।

চারদিক থেকে খ্যাতি অর্জন করতে থাকেন তিনি। ধারাবাহিকের সাফল্যে নতুনভাবে স্বপ্ন দেখা শুরু করেন চার্লস ডিকেন্স। একটি পত্রিকার সম্পাদকের চাকরিও লাভ করেন। ‘Bentley’s ‘Miscellany’ নামক পত্রিকায় সম্পাদক থাকাকালীন চার্লস ডিকেন্স নতুন ধারাবাহিক উপন্যাস রচনা শুরু করেন। এক অনাহারী অনাথ বালককে নিয়ে রচিত সেই ধারাবাহিকের নাম দেন ‘অলিভার টুইস্ট’। ভিক্টোরিয়ান যুগে ইংরেজি উপন্যাসের ইতিহাসে এর পূর্বে কখনো কোনো বালককে নায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়নি। ১৮৩৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে অলিভার টুইস্টের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয়। কিশোর অলিভারের মাঝে চার্লসের শৈশবের দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠে। প্রায় দু’বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত এই উপন্যাসের খ্যাতি ইংল্যাণ্ডের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। সুদূর যুক্তরাষ্ট্রের পাঠক সমাজেও জনপ্রিয়তা লাভ করে ‘অলিভার টুইস্ট’। ১৮৩৮ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয় উপন্যাসটি।

ধারাবাহিক উপন্যাসে সফলতার পর থেমে যাননি চার্লস। কারণ, তিনি আরো গল্প বলতে চান। সেই উদ্দেশ্যে নতুন করে লিখতে বসেন তিনি। একে একে রচনা করেন ‘নিকোলাস নিকলবি’ (১৮৩৮-৩৯), ‘দ্য ওল্ড কিউরিসিটি শপ’ (১৮৪০-৪১), ‘বারানাবি রিজ’ (১৮৪১) শিরোনামে তিনটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক উপন্যাস। লেখালেখির জগতে অভিষেকেই বাজিমাত করে ফেলা চার্লস ডিকেন্সের নাম ছড়িয়ে পড়ে পুরো ইউরোপ এবং আমেরিকায়। জীবনের পরবর্তী পর্বে চার্লসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা, যার নাম ‘যুক্তরাষ্ট্র’।

১৮৪২ সালে পাঁচ মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান চার্লস ডিকেন্স এবং তার স্ত্রী। সেদেশের পাঠক সমাজ তাকে বিশাল সংবর্ধনার মাধ্যমে বরণ করে নেয়। অবকাশ যাপনের উদ্দেশ্যে বিদেশ ভ্রমণ করলেও চার্লস সেখানে বেশ কয়েকটি লেকচারের আয়োজন করেন। ভার্জিনিয়ায় থেকে শুরু করে মিসৌরি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কয়েকটি লেকচারে তিনি বার বার দাসপ্রথার বিরোধিতা করে সচেতনতার আহ্বান করেন। তার লেকচারে এত বিশাল সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করে যে, স্বয়ং আয়োজকদেরও লেকচার হলের বাইরে দাঁড়িয়ে লেকচার শুনতে হয়েছিলো। বিখ্যাত লেখক জে বি প্রিস্টলির মতে— “আমেরিকার ইতিহাসে অন্য কাউকে এত শ্রদ্ধার সাথে স্বাগতম জানানো হয়েছে কিনা আমার জানা নেই”। ডিকেন্স নিজেও অভিভূত ছিলেন। তিনি নিজে স্বীকার করেছেন— “আমাকে তারা যেভাবে ঘিরে রেখেছিলেন, মনে হচ্ছিলো আমি কোনো তারকা।” যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেই ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে তিনি দুটি গ্রন্থ রচনা করেন—‘American Notes’ এবং ‘Martin Chuzzlewit’। দেশে ফিরে যেন চার্লস ডিকেন্স নতুনভাবে জ্বলে উঠলেন। নতুন দুটি গ্রন্থ রচনার পর তিনি একটি নতুন উপন্যাস রচনা করেন। ‘অ্যা ক্রিস্টমাস ক্যারল’ শিরোনামের নতুন উপন্যাসটি ছিল সেবারের বড়দিনে পাঠকদের প্রতি ডিকেন্সের উপহারস্বরূপ। পরবর্তীতে চার্লস ইতালি ভ্রমণ করেন। দেশে ফিরে তিনি ধারাবাহিক উপন্যাসের বদলে পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস রচনার কাজ হাতে নেন।

চার্লস ডিকেন্স তাঁর ধারাবাহিক উপন্যাসগুলোর জন্য হয়তো বড়জোর কয়েক যুগ পর্যন্ত পাঠকদের নিকট জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারতেন। চার্লস নিজেও তা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই এবার তিনি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস রচনায় নজর দেন। প্রথমেই বের করেন ‘Dealings with the Firm of Dombey and Son’ নামক উপন্যাস। তৎকালীন লণ্ডনের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি সামাজিক গল্পকে শৈল্পিক স্পর্শের দ্বারা জীবন্ত উপাখ্যানে রূপ দেন চার্লস। পাঠক সমাজ এবারও তাকে হতাশ করেনি। দেশের বিখ্যাত বইমেলাগুলোতে তার বইয়ের লক্ষাধিক কপি বিক্রি হয়ে যায়।

পাঠকরা যখন নতুন উপন্যাস পড়ায় ব্যস্ত, তখন কিন্তু চার্লস বসে থাকেননি। তিনি একের পর এক উপন্যাস লেখতে থাকেন। পরবর্তী কয়েক বছরে তার সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাসগুলো প্রকাশিত হতে থাকে। ‘ডেভিড কপারফিল্ড’, ‘ব্লিক হাউস’, ‘হার্ড টাইমস’, ‘অ্যা টেল অফ টু সিটিস’ এবং ‘গ্রেট এক্সপেকটেশন’ এর মতো কালজয়ী উপন্যাসের মাধ্যমে পাঠকদের মনে পাকাপাকিভাবে আসীন হন চার্লস। নিজের ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা প্রকাশ পেতে থাকে উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্রে। ‘ডেভিড কপারফিল্ড’ উপন্যাসের ‘উইলকিনস মিকাওবার’ চরিত্রের মাধ্যমে তিনি তার ঋণগ্রস্ত পিতার ছবি ফুটিয়ে তুলেন। হয়তো এই কারণেই ডেভিড কপারফিল্ডের প্রতি চার্লসের সামান্য দুর্বলতা ছিল। যদি চার্লসকে প্রশ্ন করা হতো— “আপনার লেখা সেরা উপন্যাস কোনটি?” তিনি নির্দ্বিধায়  উত্তর দিতেন— “অবশ্যই ডেভিড কপারফিল্ড।”  যদিও সাহিত্য সমালোচকগণ তার সাথে একমত নন। তাদের দৃষ্টিতে ‘গ্রেট এক্সপেকটেশন’ ছিল চার্লসের সেরা উপন্যাস। তিনি সর্বমোট পনেরটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন।

১৮৬৫ সালে এক রেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন চার্লস ডিকেন্স। সেবার একটুর জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই দুর্ঘটনার পর আর কখনও সুস্থ হতে পারেননি ডিকেন্স। অসুস্থতার দরুন লেখালেখি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ডিকেন্স বেশিদিন লেখালেখি ছেড়ে বিশ্রাম নিতে পারেননি। পাঠকদের ভালোবাসায় তিনি অসুস্থ অবস্থাতেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যান। পাঠ করে শোনান তার উপন্যাসগুলো। এমনকি নতুন করে শুরু করেন উপন্যাস লেখা। কিন্তু ‘দ্য মিস্ট্রি অফ এডউইন ড্রুড’ নামক উপন্যাসটি শেষ করতে পারেননি তিনি। ১৮৭০ সালের ৯ জুন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে ৫৮ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন লেখক চার্লস ডিকেন্স।লেখকের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাকে ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবেতে বিভিন্ন বিখ্যাত সাহিত্যিকদের সাথে সম্মানের সহিত সমাধিত করা হয়। তার শেষকৃত্যে লাখো ভক্তের সমাগম হয়। তার মৃত্যু উপলক্ষ্যে ইংল্যাণ্ডে জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়।

ডিকেন্সের ঔপন্যাসিক-প্রতিভার বৈশিষ্ট্য

  • মানবতাবাদী ডিকেন্স তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির উদারতায়, জীবনবোধের ব্যাপ্তিতে, পর্যবেক্ষণের আন্তরিকতায় এক রসময় ও স্পন্দমান মানবজগৎ পাঠককে উপহার দিয়েছেন। দ্রুত শিল্পায়ন ও যান্ত্রিকতার যুগে আত্মতুষ্টি, উদাসীনতার সামগ্রিক নিরুৎসাহের মাঝেও ডিকেন্স মানুষের বিশ্বাস হারাননি।
  • ডিকেন্সের বাস্তববোধ ও প্রখর পর্যবেক্ষণশক্তি সর্বজনস্বীকৃত। সংখ্যায় ও বৈচিত্র্যে অবিস্মরণীয় ডিকেন্সের চরিত্রসমূহ তার স্বাক্ষর বহনকারী। যে কোনো জনপ্রিয় কথাশিল্পীর জনপ্রিয়তা তাঁর চরিত্রগুলির অমরত্বের ওপর নির্ভরশীল। চরিত্র সৃষ্টিতে ডিকেন্সের সাফল্য পৌঁছেছিল কিংবদন্তির পর্যায়ে। ডিকেন্সের চরিত্রগুলিকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়—ক) যারা সহজ ও স্বাভাবিক, খ) যারা অদ্ভুত বা অস্বাভাবিক। প্রথম শ্রেণিতে উল্লেখ করা যায় ডিকেন্সের বেশিরভাগ কাহিনির নায়ক-নায়িকা এবং শিশু চরিত্রগুলিকে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হবে তাঁর ব্যঙ্গাত্মক চরিত্রসমূহ, খলনায়ক তথা অসংখ্য অদ্ভুত ও উৎকেন্দ্রিক অপ্রধান চরিত্র। তাঁর এই দ্বিতীয় শ্রেণির চরিত্রগুলিই অনেক বেশি প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয়। জীবনধর্মী শিল্পসাহিত্য কখনো শুদ্ধ সাহিত্য হতে পারে না। শেক্সপীয়রের মতো ডিকেন্সের সাহিত্যেও হাসি-কান্না মিলে মিশে আছে। ডিকেন্সের হাস্য পরিহাস তাঁর চরিত্রসমূহের বাহ্যিক আচরণ উৎকেন্দ্রিকতাকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে এবং তাতে আতিশয্য যথেষ্ট স্পষ্ট। তবে ডিকেন্সের হাস্যরস সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীঁ হয়েছে যখন তা মিশেছে অশ্রুর সঙ্গে। বিশেষ করে যখন তাঁর নিজের জীবনের কথা বলেছেন তিনি।
  • মানুষের সামাজিক জীবন আর তার সময়কার সমাজজীবনের বাস্তবচিত্র ডিকেন্সের উপন্যাসের অন্যতম সম্পদ। তাঁর প্রথাগত সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক মতাদর্শ হয়তো তাঁর রচনায় সেভাবে পরিস্ফূট হয়নি কিন্তু প্রথমাবধি ডিকেন্স সমাজ সংস্কারকের এক আন্তরিক স্পৃহা লালন করেছিলেন। দারিদ্র ও দলিত, মানবাত্মার ক্রন্দন ও তার নিরসনের দাবি সর্বদা প্রতিধ্বনিত হয়েছে ডিকেন্সের রচনায়।
  • ডিকেন্সের ভাষা ও শৈলী খুব পরিপাটি এবং পাণ্ডিত্যপূর্ণ নয়। কিন্তু মোটের ওপর পরিচ্ছন্ন ও সাবলীল। তাঁর স্বাচ্ছন্দ্য প্রাণোচ্ছ্বলতা, কাব্যিকতা ও সবোর্পরি সরসতা পাঠকমনে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
  • প্রতিকূল পরিবেশে সংগ্রাম করে বেড়ে ওঠা কিশোর চার্লস ডিকেন্স একদিন পৃথিবী জয় করেছিলেন। সেকারণে তার উপন্যাসের মাধ্যমে তৎকালীন সমাজে খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ এবং সামাজিক অসঙ্গতির চিত্র ফুটে উঠেছে। তবে সাধারণ বন্ধুত্ব কিংবা প্রেমের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্বাসরুদ্ধ উপন্যাস উপহার দেয়ার জন্যও তিনি ছিলেন সকলের প্রিয় সাহিত্যিক। অধ্যাবসায় আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি কোটি পাঠকের ভালোবাসা অর্জন করেছেন। হাজারো মানুষের নিকট চার্লস ডিকেন্স এক অনুপ্রেরণা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি পার্থিব জগতে মৃত্যুবরণ করলেও, তার কর্মের মাঝে তিনি বেঁচে থাকবেন চিরকাল। অলিভার টুইস্টের সেই অনাথ অলিভারের পথচলাতে তিনি বারবার ফিরে আসবেন আমাদের নিকট। সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন তিনি। এমনকি একবিংশ শতাব্দীর লাইব্রেরিগুলোতেও ডিকেন্সপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়।

তথ্যসূত্র:

ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসDownload
ইংরাজী সাহিত্যের ইতিহাস – শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়Download
ইংরেজি সাহিত্য পরিচয় – অরবিন্দ পোদ্দারDownload
ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস – কুন্তল চট্টোপাধ্যায়Download
ইংরেজি সাহিত্যের ইতিবৃত্ত ও মূল্যায়ন – বিমলকৃষ্ণ সরকারDownload
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস – অরুণ ভট্টাচার্যDownload

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!