//
//

ইংরেজি সাহিত্যে ঔপন্যাসিক টমাস হার্ডির কৃতিত্ব আলোচনা কর।

টমাস হার্ডি (১৮৪০-১৯২৮)

ভিক্টোরীয় যুগের অন্যতম ঔপন্যাসিক টমাস হার্ডি (১৮৪০-১৯২৮) এক প্রতিভাবান শিল্পী। ইংরেজি সাহিত্যে উপন্যাস রচনায় তাঁর কৃতিত্ব সর্বাধিক হলেও তিনি স্বভাবে ছিলেন কবি। তাঁর সেই কবিপ্রাণতার স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে উপন্যাসগুলিতে। শুধু জীবনচিত্রণে নয়, মানব অনুভূতি ও আবেগের রূপায়ণে তাঁর উপন্যাসগুলি স্বতন্ত্র। উপন্যাসের ধারায় তিনি ডিকেন্স ও থ্যাকারের থেকে স্বতন্ত্র পথে পদচারণা করেছেন। তিনি উপন্যাসের চরিত্রগুলিকে ক্রুর দৈবের অধীন এবং জীবনকে গভীর দুঃখবাদের ভিত্তিভূমিরূপে চিত্রিত করেছেন। যেমনটি দেখা যায়, বাংলা সাহিত্যে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের প্রথম দিকের কবিতায়। হার্ডি ঔপন্যাসিক হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করলেও তার মানসস্বভাব ছিল কবিসুলভ। তাই তিনি মাঝে মাঝে কবিতা লিখতেন। আসলে তার কবিসত্তা বা ঔপন্যাসিক সত্তার মূলে আছে সহজ সরল ভাষায় মানুষের স্বভাব ও অনুভূতিকে প্রকাশের দক্ষতা। এছাড়া তিন খণ্ডে রচিত তার মহাকাব্যিক নাটক ‘দি ডাইন্যাস্টস’ (‘The Dynasts’) ইংরেজি সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য।

হার্ডির উপন্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম হল— ‘আন্ডার দি গ্রীনউড ট্রি’ (‘Under The Greenwood Tree’), ‘ফার ফ্রম দি ম্যাডিং ক্রাউড’ (‘Far From The Madding Crowd’), ‘দি রিটার্ন অব দি নেটিভ’ (‘The Return of the Native’), ‘টেস অব দি ডি’ আরবারভিলস’ (‘Tess of The D’ Urbervilles’), ‘টু অন এ টাওয়ার’ (‘Two on A Tower’), ‘জুড দি অবস্কিওর’ (‘Jude The Obscure’) ইত্যাদি।

তাঁর তিন খণ্ডে প্রকাশিত ছোটগল্পগুলি হল— ‘ওয়েসেক্স টেলস’ (‘Wessex Tales’), ‘এ গ্রুপ অব নোবল ডেমস’ (‘A Group of Noble Damcs’), ‘লাইফস লিটল আয়রনিজ’ (‘Life’s Little Ironic’)। অন্যদিকে তাঁর কাব্য সংকলনগুলি হল— ‘টাইমস লাফিং স্টকস’ (‘Times Laughing stocks’), ‘স্যাটায়ারস অব সারকামস্ট্যান্স’ (‘Satires of circumstance’), ‘মোমেন্টস অব ভিসন’ (‘Moments of vision’) ইত্যাদি।

হার্ডি নিজেই তার উপন্যাসগুলিকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করেছেন— (এক) চরিত্র ও পারিপার্শ্বিক-প্রধান উপন্যাস, (দুই) রোমান্স বা কল্পনাপ্রধান উপন্যাস এবং (তিন) কলাকৌশল প্রধান উপন্যাস। তবে তিনি যেভাবেই শ্রেণিবিন্যাস করুন না কেন, তার উপন্যাসের মূল সুর প্রায় এক। তাঁর সব উপন্যাসেই রয়েছে উদাসীন নিয়তির অমোঘবিধান, আদিম মানব স্বভাবের সৎ-অসৎ বিচারবোধ এবং আধুনিক সমাজের নিষ্ফল, মূঢ় ও ভ্রান্ত নীতিবোধ। তেমনি রয়েছে যান্ত্রিক সভ্যতার বিরুদ্ধে প্রচ্ছন্ন বিদ্রোহের ভাব। শিল্প-বাণিজ্যপ্রধান ঊনবিংশ শতকের মধ্যেও যে পুরাতন দিনের স্বরূপ লুকিয়ে রয়েছে, তাকে উন্মোচন করে দেখিয়েছেন উপন্যাসে। তিনি রোমান্টিক কবির মতো আধুনিক জীবনের যন্ত্রণা থেকে আহত পশুর মতো কোন এক নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে আশ্রয় খুঁজেছেন। তাঁর উপন্যাস তাই শ্রেণীসংগ্রামের কাহিনি নয়, ওয়েলসের বিজ্ঞানস্বপ্নের উজ্জ্বল প্রকাশ নয়, কিপলিং-এর শ্বাপদ নির্ঘোষ নয়, তাঁর উপন্যাস কবি চেতনার সহানুভূতিতে রূপোজ্জ্বল।

হার্ডির প্রথম উপন্যাস ‘ডেসপারেট রিমেডিজ’ (‘Desperate Remedies’) প্রকাশিত হয় ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর অধিকাংশ উপন্যাসের পটভূমি ইংলণ্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমের ডরসেট অঞ্চল। এজন্য হার্ডির বহু উপন্যাসকে ‘ওয়েসেক্স নভেল’ বলা হয়। তার ‘টেস অব দি ডি’ আরবারভিলস’ উপন্যাসটি উল্লেখযোগ্য। বাবা জন ও মা জোয়ান-এর আগ্রহে টেস তাদের এক ধনী আত্মীয় বাড়িতে কাজ করত। সরল স্বভাবের সুন্দরী টেস লম্পট ধনীপুত্র অ্যালেক (Alec)-এর কামনা ও প্ররোচনার শিকার হয়ে কুমারী অবস্থায় মা হয়। এরপর সে পিতার কাছে ফিরে আসে ও সেখানে তার সন্তানের মৃত্যু হয়। তার কিছুদিন পর টেস স্বাভাবিকভাবেই এক ডেয়ারি ফার্মে কাজে যুক্ত হয়। সেখানে এক শিক্ষিত উদার যাজক পুত্র অ্যাঞ্জেল ক্লেয়ার (Angel clare) টেস-এর প্রণয়প্রার্থী হয়। কিন্তু টেস পুরাননা স্মৃতি ভুলতে পারে না, তবুও উভয়ের বিবাহ হয়। বিবাহের রাতে টেস অ্যাঞ্জেলকে তার জীবনের পূর্ব কথা খুলে বলে। অ্যাঞ্জেল সব শুনে ঘৃণায় টেসকে প্রত্যাখ্যান করে। টেস ফিরে যায়। জীবনের এই চরম দুঃখ লাঞ্ছনার দিনে দেখা হয় অ্যালেকের সঙ্গে। অ্যালেকের ডাকে এই চরম দারিদ্রে বাধ্য হয়ে টেস অ্যালেককে গ্রহণ করে। ইতিমধ্যে ক্লেয়ার অনুতপ্ত হয়ে টেস-এর কাছে উপস্থিত হলে টেস, ক্লেয়ারকে প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু পরে সে উন্মাদিনী অবস্থায় অ্যালেককে হত্যা করে ক্লেয়ারের সঙ্গে পালিয়ে যায়। এরপরেও শেষরক্ষা হয় না। খুনের দায়ে ধরা পড়ে টেস এবং বিচারে তার প্রাণদণ্ড হয়। এখানেই কাহিনির সমাপ্তি। এই উপন্যাসে টেস-এর নিয়তি নির্যাতিত জীবনের বাস্তব চিত্র অঙ্কন করেছেন।

‘দি রিটার্ন অব দি নেটিভ’ উপন্যাসের এগডন হীথ (Egdon Heath) একটি চরিত্র বিশেষ। কেননা জড় প্রকৃতির মধ্যে থেকেও সেই সংশ্লিষ্ট মানবজীবনের উপর যে গ্রন্থ প্রভাব বিস্তার করে তা উপন্যাসে চিত্রিত হয়েছে। দার্শনিক সত্যপ্রকাশে উপন্যাসটি অনুপম।

তাঁর ‘জুড দি অবস্কিওর’ শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। গ্রন্থটি আধুনিক জীবনভাবনা ও দার্শনিকতার প্রকাশে উজ্জ্বল। ক্লাসিক্স-এর পাঠক জুড-কে আরাবেলা চতুর কৌশলে গ্রাস করে ও পালিয়ে যায়। জুড ভালবাসে বিদ্রোহিনী সু (Sue)-কে। ভালবাসার সূত্রে জুড স্যু-কে তার পূর্ব বিবাহের কথা বলে। স্যু এই খবর জেনে বেদনাহত হয়ে ফিরে যায়। ফলে জুড তীব্র মমর্যন্ত্রণায় আরাবেলা-র কর্মস্থানে গিয়ে জানতে পারে, আরাবেলা বিবাহিত। আরাবেলা জুড-এর কাছ থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ চাইলে, জুড রাজি হয়ে যায়। এরপর জুড ও স্যু বিয়ে না করে একত্রে বাস করতে থাকে, কারণ চার্চ ও সামাজিক বিবাহের প্রতি ছিল সু-র অবিশ্বাস। কিছুদিন পরে জুডও আরাবেলার বিকৃত সন্তান সু-র দুই পুত্রকে হত্যা করেও নিজে আত্মহত্যা করে। তার পাপের জন্য এ ধরনের ঘটনা একথা মনে করে স্যু ফিরে যায় স্বামী ফিলটসনের কাছে, ফিরে আসে বিধবা আরাবেলা, সে জডকে চার্চে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। স্যু জুড-এর জন্য ব্যাকুল অন্যদিকে আরাবেলা অন্য স্বামী পেতে মরিয়া। এই সময়ে মৃত্যু হয় জুড-এর। এখানেই কাহিনির সমাপ্তি। এই উপন্যাসের ট্রাজিক দিক পাঠককে স্পর্শ করে। নিষ্ঠুর নিয়তিই যে মানব জীবনের নিয়ন্তা—তা উপন্যাসে চিত্রিত হয়েছে। উপন্যাসটি একটি মহিমাময় ট্রাজেডি।

‘আন্ডার দি গ্রীনউড ট্রি’ উপন্যাসে গ্রামীণ কৃষকজীবনের আচার-সংস্কার ও বিশ্বাস চিত্রিত হয়েছে। এই উপন্যাসে নিষ্ঠুর নিয়তির লীলা চিত্রিত হয়নি বরং রোমান্সের জগৎ নির্মাণে লেখক অনেক বেশি যত্নবান।

‘ফার ফ্রম দি ম্যাডিং ক্রাউড’ উপন্যাসের পটভূমিকাও গ্রামীণ জীবনের। এর প্রেক্ষাপট অনেকখানি বিস্তৃত ও মানবীয় আবেগের দ্বারা সমৃদ্ধ। শান্তপ্রকৃতির ও সরল স্বভাবের গ্যাব্রিয়েল ওক ভালবাসে কৃষক কন্যা সরলা বাথসেবা-কে। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নায়ক-নায়িকার মিলনে কাহিনির সমাপ্তি।

‘দি মেয়র অব ক্যাস্টারব্রিজ’ উপন্যাসটি একটি ট্রাজিক উপন্যাস। মূল চরিত্র হেনচার্ডএর স্বরূপ উপন্যাসে চিত্রিত। প্রবৃত্তির দাস হিসেবে হেনচার্ড চরিত্রটি উপস্থাপিত।

ঔপন্যাসিক টমাস হার্ডির রচনাশৈলীর বিশিষ্টতা

  • হার্ডির উপন্যাসগুলিতে গ্রীক ট্রাজেডির মতো নিয়তির অমোঘ রূপ ও মানব জীবনের বিষাদময় পরিণতি ও বেদনাবোধ চমৎকাররূপে চিত্রিত হয়েছে।
  • তাঁর উপন্যাসে প্রকৃতির সঙ্গে মানবমনের সম্পর্ক ও ভাব-বিনিময়ের স্বরূপ কবিসুলভ দৃষ্টিভঙ্গিতে উপস্থাপিত হয়েছে। ওয়ার্ডসওয়ার্থ যেখানে প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ককে ক্ষণিকরূপে দেখিয়েছেন, হার্ডি সেখানে এই সম্পর্ককে দেখিয়েছেন শাশ্বত রূপে।
  • তাঁর উপন্যাসের পরিকল্পনা ও রীতি পদ্ধতি কাব্যধর্মী। তাই তার এক একটি উপন্যাস যেন মহাকাব্যের সুদূরপ্রসারী পটভূমিকার উপর গীতিকবিতায় ঘনপিনদ্ধ ও অর্থব্যঞ্জনায় সমৃদ্ধ।
  • তাঁর উপন্যাসের বিস্তৃতি ও বৈচিত্র্য যথেষ্ট। পাহাড়-পর্বত, জলাভূমি, বন্যস্থান, কৃষ্ণঅরণ্য এবং সর্বোপরি নিশীথ রজনী তাঁর উপন্যাসের পটভূমিস্থল।
  • তাঁর উপন্যাসে শেষপর্যন্ত পটভূমি অতিক্রান্ত হয়ে বৃহত্তম সত্তায় উত্তীর্ণ হয়। জীবন, সৃষ্টি হয় বিশ্বানুভূতির অসীম ব্যঞ্জনা।
  • চরিত্রচিত্রণের ক্ষেত্রে তিনি মিশ্ররীতি গ্রহণ করেছেন। কেননা, তিনি যখন সরল আদিম মনোবৃত্তির চিত্রায়ণ করেছেন তখন তিনি সহজ-সরল ও সাবলীল। কিন্তু নাগরিক চরিত্রের রূপায়ণে তিনি অনেক বেশি নাটকীয় রূপকে আঁকড়ে ধরেছেন। তবে তিনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নাগরিক জীবন পরিত্যাগ করে ওয়েসেক্সের শান্ত জীবনকেই অবলম্বন করেছেন।
  • কাহিনি বিন্যাসে হার্ডি স্থপতি শিল্পীর মতো। সেজন্য প্রতিটি ঘটনা এক অনিবার্য পরিণতির সূচক, ভাগ্য বা নিয়তিই মানবজীবনের নিয়ন্ত্ৰীশক্তি। তার উপস্থাপিত কাহিনির মধ্যে রয়েছে এক ধরনের দুঃখবাদ। এই দুঃখবাদের পেছনে রয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দীর জড়ধর্মী সুখবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের প্রতিবাদ। হার্ডি জীবনকে দেখেছেন নিষ্ঠুর ও উদ্দেশ্যহীন রূপে। মানুষকে নিয়তি লাঞ্ছিত জেনে মানুষের প্রতি তার মমত্ববোধ তীব্র হয়ে উঠেছে। তাঁর এই মানবমমতা সমকালীন শিল্পীদের মধ্যে খুব কম দেখা যায়। অনুভূতির এই তীব্রতা তাঁর উপন্যাসগুলিকে দিয়েছে স্বতন্ত্র মর্যাদা। কাহিনি বিন্যাসের ও গল্প কথনের সজীবতা তার ঔপন্যাসিক সত্তার বিশেষ দিক। কাহিনি বিন্যাসের সূত্রে তার চিত্রিত চরিত্রগুলি অবলীলাক্রমে ঠাই পেয়ে যায়। বিশেষ করে গ্রামজীবনের চরিত্রগুলি অসাধারণ। তাঁর নারীচরিত্রগুলি সহানুভূতির স্পর্শে যেমন জীবন্ত তেমনি গতিশীল। সরলা, চতুরা, বুদ্ধিমতী প্রভৃতি সব শ্রেণির নারীচরিত্র তিনি চিত্রিত করেছেন। ঔপন্যাসিকের সহানুভূতি মূলত প্রেমিকা চরিত্রের প্রতি।
  • টমাস হার্ডির প্রকাশভঙ্গি ছিল স্বচ্ছন্দ ও অনাবিল। প্রকৃতিচেতনা তার উপলব্ধির স্বরূপকে দিয়েছে সাবলীলতা। জীবনের সুগভীর ব্যর্থতা সুর ও অপরিসীম বেদনার আর্তি তাঁর উপন্যাসে তীব্র হাহাকারের মতো ধ্বনিত। তাঁর উপন্যাসে এক সুদুর্লভ সমুন্নত মহিমা ও গাম্ভীর্য পাঠক হৃদয়কে স্পর্শ করে। হার্ডির সবচেয়ে বড়ো পরিচয় তিনি শিল্পী— “….as an artist as a painter of certain concrete aspects of that life, he is among the greatest in English Literature.’’
  • বিশেষ করে হার্ডির কবিকল্পনা তাঁর উপন্যাসগুলিকে দিয়েছে স্বতন্ত্র মর্যাদা। তিনি তাঁর উপন্যাসে একটি ভাব বা আদর্শকে জয়যুক্ত করতে চেয়েছেন। আবার প্রকৃতিচিত্রণেও তিনি আদর্শবাদী। সেজন্য প্রকৃতি ও মানবের সম্পর্কের বন্ধন ছিন্ন হলে মানুষের জীবনে বিপর্যয় আসতে পারে—তিনি এই বিশ্বাস করতেন।

টমাস হার্ডি ও বাংলা সাহিত্য

বাংলা সাহিত্যে হার্ডির প্রভাব তেমন না থাকলেও প্রকৃতিচিত্রণে তিনি বিভূতিভূষণ ও তারাশঙ্করের দোসর। নিশ্চিন্দিপুর কিম্বা নাঢ়া বইহারের প্রকৃতি কিম্বা রাঢ় জীবনের প্রকৃতি আর ওয়েসেক্সের প্রকৃতি সমান্তরাল। এর কারণ হার্ডি, বিভূতিভূষণ ও তারাশঙ্কর—এরা সকলেই প্রকৃতিচিত্রণে বাস্তবধর্মী, প্রকৃতিকে এরা কোন প্রতীকের মাধ্যমে চিত্রিত করেননি।

বিভূতিভূষণের পল্লীবাংলার চিত্র, গাছ-পালা, হাট-বাজার, জনজীবন-এর সঙ্গে হার্ডির উপন্যাসে চিত্রিত গ্রামীণ জীবনের মিল থাকলেও বিভূতিভূষণের ঈশ্বর বিশ্বাস বা আস্তিক্যবাদী জীবনদর্শন হার্ডির মধ্যে অনুপস্থিত। বিভূতিভূষণের প্রকৃতি মানুষকে দেয় শান্তির আশ্রয় কিন্তু হার্ডি-র প্রকৃতি নিষ্ঠুর ও উদাসীন।

অন্যদিকে তারাশঙ্কর যে রাঢ়ের জনপদকে চিত্রিত করেছেন সেই আঞ্চলিকতার সঙ্গে হার্ডির আঞ্চলিকতার মিল আছে। ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’, ‘কবি’, ‘নাগিনী কন্যার কাহিনি’ প্রভৃতি উপন্যাসে আঞ্চলিক জীবনের চিত্র বাস্তব দৃষ্টিতে উপস্থাপিত হয়েছে। হার্ডিও সেই আঞ্চলিকতার চিত্রণে ক্ষয়িষ্ণু গ্রাম সমাজের ভাঙনকে দেখিয়েছেন। প্রকৃতি যেন তার নিজের সন্তানদের উপর বিমুখ, তারাশঙ্করও ‘কালিন্দী’ উপন্যাসে ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততন্ত্রের ছবি এঁকেছেন। তবে এই সাদৃশ্যের চেয়ে বৈসাদৃশ্যই বেশি। কারণ তারাশঙ্কর হার্ডির মতো প্রকৃতির উপর কোন দার্শনিক সত্য আরোপ করেননি।

হার্ডি-র কবিস্বভাবের দুঃখবাদের সঙ্গে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের দুঃখবাদের মিল রয়েছে। হার্ডির মতো যতীন্দ্রনাথও দুঃখবাদী কবি। অবশ্য দার্শনিক দিক থেকে উভয় শিল্পীর মতাদর্শগত পার্থক্য রয়েছে।

তথ্যসূত্র:

ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসDownload
ইংরাজী সাহিত্যের ইতিহাস – শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়Download
ইংরেজি সাহিত্য পরিচয় – অরবিন্দ পোদ্দারDownload
ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস – কুন্তল চট্টোপাধ্যায়Download
ইংরেজি সাহিত্যের ইতিবৃত্ত ও মূল্যায়ন – বিমলকৃষ্ণ সরকারDownload
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস – অরুণ ভট্টাচার্যDownload

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!